লেখা হলো লেখকের হৃদয়ের অংশ। একজন লেখক কোথায় লেখেন এবং কী দিয়ে লেখেন! আমি বলবো, কাগজের পাতায় লেখেন এবং কলমের কালি দিয়ে লেখেন। যাদের শুধু দৃষ্টি আছে, অন্তর্দৃষ্টি নেই কাগজ ও কালি-কলম ছাড়া আর কিছু তার দেখবে কীভাবে! তারা কীভাবে জানবে, যা দেখা যায় তা সত্য নয়, যা না দেখা যায় সেটাই সত্য! দৃষ্টির সীমানার পরে শুরু হয় যাদের অন-র্দৃষ্টি তারা বলে এবং সত্য বলে, লেখক তার হৃদয়ের পাতায় লেখেন এবং লেখেন হৃদয়ের নির্যাস দিয়ে। সুতরাং লেখার প্রতি লেখকের মমতা ও ভালোবাসা তেমনই হয় যেমন সন্তানের প্রতি হয় মাতৃহৃদয়ের মমতা ও ভালোবাসা। মায়ের কোল থেকে তার সন-ান হারিয়ে যাওয়া যেমন মর্মানি-ক ও বেদনাদায়ক, একজন লেখকের কাছ থেকে তার লেখা হারিয়ে যাওয়া এর চেয়ে কম মর্মান্তিক এবং কম বেদনাদায়ক নয়। সন্তানের জন্য মা হাসি- মুখে প্রাণ দিতে পারে। একজন লেখক তার লেখার জন্য কী দিতে পারে? এর চেয়ে ভালো এ প্রশ্ন করা যে, কী দিতে পারে না? একজন লেখক তার লেখার জন্য দিতে পারে জীবনের সবকিছু! দিতে পারে তার যৌবনের সর্বস্ব। লেখকের লেখা হারিয়ে যাওয়া আসলে তার জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে ‘মুহব্বতের কোরবানির’ পরীক্ষা। লেখা তো আসলে আসমান থেকে নেমে আসা আল্লাহর দান। তো আল্লাহ কখনো কখনো তাঁর দান তুলে নিয়ে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ দেখতে চান, লেখক কী জন্য লেখে? নিজের তৃপ্তি ও প্রাপ্তির জন্য, না আল্লাহর সন'ষ্টির জন্য? যদি তার লেখা হয় আল্লাহর সন'ষ্টির জন্য তাহলে হারিয়ে যাওয়া লেখার জন্য লেখকের হৃদয়ে যত রক্তক্ষরণই হোক, তার ভিতরে শোক ও সন্তানের যত দহন ও জ্বালা সৃষ্টি হোক, সে থাকে পরম শান্ত ও সংযত। পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের আকুতি নিয়ে সে বলে এবং বলতে পারে, ‘যা দিয়েছেন তাও আল্লাহর, যা নিয়েছেন তাও আল্লাহর!’ লেখা হারিয়ে যায় লেখকেরই ভালোর জন্য, লেখককে ঊর্ধ্বজগতের নতুন কোন আলো দান করার জন্য। লেখার শোকে লেখক কেমন যন্ত্রণাদগ্ধ হয়! তার হৃদয় থেকে কীভাবে রক্ত ঝরে এবং চোখ থেকে অশ্রু ঝরে তা আমি জানি। কিন' তিনি যখন ছবর করেন, আল্লাহ তখন তাকে দান করেন আরো সুন্দর, আরো আলোকিত নতুন লেখা, বরং নতুন নতুন লেখা। হারিয়ে যাওয়া লেখার লেখক আসলে শব্দ ও নৈঃশব্দের লেখক, শব্দের লেখা আলো দান করে পাঠককে, আর নৈঃশব্দের লেখা আলো দান করে লেখকের হৃদয় ও আত্মাকে। যার লেখা সত্যের জন্য তিনি তো সত্যের সৈনিক, তার কলম তো সত্যের তরবারি। তার হারিয়ে যাওয়া লেখা তো ঊর্ধ্বজগতে লাভ করে শাহাদাতের মর্যাদা। তাই তিনি বলতে পারেন, ‘ফুযতু ওয়া রাব্বিল কা‘বাতি’। (এই লেখাটির বীজ’ লাভ করেছি আদীব হুযূরের একটি বক্তব্য থেকে, তাঁর প্রতি আমার আন-রিক কৃতজ্ঞতা)