রমযান ১৪৩০ হিঃ (১৩)

রোযনামচার পাতা

একসাথে ঈদের আনন্দ

লিখেছেনঃ সাদিয়া বিনতে রাশীদ

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট
১-১০-২৯ হিঃ আমার ঈদের নতুন কাপড় হয়েছে তিনজোড়া। একটির চেয়ে একটি সুন্দর। আব্বু এনেছেন দুই জোড়া, আম্মু দিয়েছেন একজোড়া। আব্বু এনেছে বাজার থেকে, আর আম্মু তৈরী করেছেন ঘরে নিজের হাতে। কী যে খুশী হলাম! ভাবলাম, সকালে পরবো আম্মুরটা, দুপুরে, আর বিকেলে পরবো আব্বুরটা। আম্মু-আব্বু দু’জনই খুশী হবেন। আব্বু যদি বলেন, আমারটা আগে পরলে না যে! যদি বলি, আম্মু তো নিজের হাতে সেলাই করেছেন, তাহলে তো আব্বু কষ্ট পাবেন, আর বলবেন, আমি কি সেলাই করতে পারি! পারলে তো তোমার আম্মুর মত আমিও সারা রাত জেগে তোমাকে আরো সুন্দর কাপড় বানিয়ে দিতাম। তাহলে! তাহলে এককাজ করবো, একটার উপর আরেকটা পরবো! বাহ, কী মজা, দু’জনেই খুশী হবেন! সায়মাদের বাড়ীতে গেলাম। ভাবলাম, ওর কাপড় দেখবো, তারপর ওকে সঙ্গে করে এনে আমার কাপড়গুলো দেখাবো। গিয়ে দেখি, মন খারাপ করে বসে আছে। বললাম, কিরে! ঈদের রাতে মন খারাপ করে বসে আছিস যে! তোর ঈদের কাপড় এসেছে, দেখা তো! সায়মা বললো, এবার আমার ঈদের কাপড় হবে না। আব্বুর হাতে পঁয়সা নেই। এই ছেঁড়া জামা পরেই ঈদ করতে হবে। আমার খুব দুঃখ হলো, মনে মনে লজ্জাও পেলাম। আমার ঈদের কাপড় তিনজোড়া, আর সায়মার নেই এক জোড়াও, অথচ ওকে আমি কত ভালোবাসি! তাহলে আগে কেন ওর খোঁজ নেইনি! বাসায় এসে আম্মুকে বললাম, আম্মু, সায়মার না, ঈদের কাপড় আসেনি, আমি ওকে একজোড়া দিয়ে দিই! আম্মু বললেন, খুব ভালো, যেটি তোমার বেশী পছন্দ সেটিই দাও। আল্লাহ খুশী হবেন। আমি ঠিক করলাম, আব্বু তো দু'জোড়া এনেছেন, তা থেকে একজোড়া দেবো। তখনই সায়মাদের বাসায় গেলাম, দেখি, আগের মতই মন খারাপ করে বসে আছে। কাপড়ের প্যাকেটটি ওড়নার নীচে ছিলো, তাই সায়মা দেখতে পায়নি। আমি বললাম, চোখ বন্ধ কর্‌ তো সায়মা! ও কিছু বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে তাকালো, তারপর চোখ বন্ধ করলো। আমি ওর চোখের সামনে কাপড়টি খুলে ধরে বললাম, এবার খোল্‌। ও চোখ খুলে মেলে ধরা কাপড়টি দেখলো এবং অবাক হয়ে বললো, বাহ! সুন্দর তো, তোর আব্বু এনেছে বুঝি! আমি মৃদু হেসে বললাম, আমি এনেছি, তোর ঈদের উপহার! আনন্দে সায়মার চোখে পানি এসে গেলো। ও আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষণ চুপ করে থাকলো। ঈদের দিন সেই কাপড় পরে সায়মা প্রথমেই আমাদের বাড়ীতে এলো। আম্মুকে আব্বুকে সালাম করলো, আর আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো। ও এমনিতেই সুন্দর, হাসলে ওকে আরো সুন্দর লাগে। সবুজের উপর কাজ করা কাপড়টি ওকে মানিয়েছে খুব। যেন সবুজ পাতার মাঝে একটি ফুল ফুটে আছে! ওর মুখের হাসি দেখে আমার খুব ভালো লাগলো। আমরা একসাথে ঈদের আনন্দ করলাম। এমন আনন্দের ঈদ আমার জীবনে আর কখনো আসেনি। আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, প্রতিবছর সায়মাকে আমি ঈদের পোশাক উপহার দেবো। আমরা দু’জন একসঙ্গে ঈদের আনন্দ ভোগ করবো।
শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা