কিশোর বন্ধুরা! আমার সালাম নাও। তোমাদের কেউ কেউ মাঝে মধ্যেই আমার কাছে আসে এবং প্রশ্ন করে, বাংলাভাষা কীভাবে শিখবো? আমি অবাক হই এবং কিছুটা বিরক্তও হই। এ প্রশ্নের উত্তর তো অনেকবার অনেকভাবে দিয়েছি পুষ্পের পাতায়! তারপরো কেন প্রশ্নের নামে অযথা জ্বালাতন!
যাক, আজ এখানে যথাসম্ভব সংক্ষেপে এ প্রশ্নের জবাব দিতে চেষ্টা করছি। আশা করি এর পর কেউ এ প্রশ্ন নিয়ে আমাকে আর বিরক্ত করবে না।
ভাষার দু'টো দিক; শুদ্ধভাবে বলা এবং শুদ্ধভাবে লেখা।
শৈশব থেকেই আমরা খুব সহজে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা শিখতে পারতাম, যদি আমাদের পারিবারিক পরিমণ্ডলে শুদ্ধভাষায় কথা বলার প্রচলন থাকতো। সেটা ছিলো না বলেই আমরা শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা শিখতে পারিনি। যদি শিখতে পারতাম তাহলে বইখাতা ছাড়া এবং কোন মেহনত ছাড়া বাংলাভাষা অর্ধেক শেখা হয়ে যেতো! ভাগ্যে যা ছিলো না তা হয়নি, সে জন্য আফসোস করে লাভ নেই। এখন আমরা এককাজ করতে পারি; তিন/চার/পাঁচ বন্ধু মিলে প্রতিজ্ঞা করতে পারি যে, সর্বাবস্থায় আমরা নিজেদের মাঝে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলবো এবং উচ্চারণও যথাসম্ভব বিশুদ্ধ রাখতে চেষ্টা করবো। ‘চইলা, বইলা, কইরা, আইসা’ এবং ‘আসতেছে, করতেছে, পড়তেছে’ ইত্যাদি সর্বোতভাবে পরিহার করবো।
হয়ত উপহাস ও বিদ্রূপের শিকার হতে হবে, কিন্তু কোন প্রতিকূলতার কাছে আত্মসমর্পণ করা চলবে না। এভাবে একমাস চেষ্টা করলেই দেখা যাবে, আমূল পরিবর্তন এসে গেছে। আর আমাদের আরেকটি প্রতিজ্ঞা হোক এই, আমাদের আগামী প্রজন্ম যেন মুখে কথা ফোটার দিন থেকেই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারে। ওদের মুখ যেন অশুদ্ধ ভাষার দোষে দুষ্ট হতে না পারে। আমরা যা পারিনি, ওরা যেন তা পারে।
দ্বিতীয় হলো শুদ্ধভাবে লেখা, তো তুমি যদি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলো তাহলে শুদ্ধ ভাষায় লেখা এমনিতেই সহজ হয়ে যাবে। তোমার শুধু করণীয় হলো, যত্নের সাথে নিয়মিত পুষ্প পড়া এবং নিয়মিত রোযনামচা লেখা, আর প্রতিদিন তিনটি নতুন শব্দের বানান শেখা। এভাবে তিনশ পয়ষট্টি দিন চেষ্টা করো, দেখবে তোমার মুখের ও কলমের ভাষা নির্ভুল হয়ে গেছে। হয়ত তুমি বিরাট সাহিত্যিক হয়ে যাবে না, কিন্তু কেউ একথা বলতে পারবে না যে, তোমার মুখের ভাষা, কিংবা কলমের ভাষা অশুদ্ধ।
নাও, ইচ্ছে হয় আমার পরামর্শ গ্রহণ করো, ইচ্ছে হয় গ্রহণ করো না, কিন্তু এই একই বিষয় নিয়ে আমাকে আর বিরক্ত করো না। আমি তো তোমাদেরই সেবায় নিয়োজিত থাকি! অন্তত ভাষা ও সাহিত্যের জগতে এবং চিন্তা ও ভাবনার অঙ্গনে আমি তোমাদের কিছু খোরাক দিয়ে যেতে চাই।