মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ

বিজ্ঞান বিচিত্রা

হায়, নির্বোধ বিজ্ঞান!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

একজন মুসলিম বিশ্বাস করে, আমরা যা কিছু দেখি এবং দেখি না, সৃষ্টিজগত, এর একজন, মাত্র একজন স্রষ্টা রয়েছেন, যিনি সবকিছু একা সৃষ্টি করেছেন, যিনি সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান, সৃষ্টিজগতের কোন কিছু যার অজ্ঞাত নয়, যিনি দয়াময়, করুণাময়। এ বিষয়ে কোরআনে অসংখ্য আয়াত রয়েছে।

অবশ্য যারা অমুসলিম তারাও প্রায় সবাই কোন না কোন আকারে ও প্রকারে ঈশ্বর ও সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে। তাদের কথা আলাদা করে এখানে আমরা আনছি না। যারা ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে না, বা বিশ্বাস করতে চায় না, নিদেন-পক্ষে যারা ঈশ্বর ও স্রষ্টা সম্পর্কে নির্লিপ্ততা প্রকাশ করার মাধ্যমে একধরনের দম্ভ প্রকাশ করতে চায়, এখানে আমরা তাদের সম্পর্কেই আলোচনা করতে চাই। 

আল্লাহ্ তা‘আলা, যিনি বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি স্বয়ং মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন সৃষ্টিজগত সম্পর্কে চিন্তা করার এবং সৃষ্টির রহস্যরাজি উদ্ঘাটনে আত্মনিয়োগ করার, যাতে তারা সৃষ্টির মাধ্যমে স্রষ্টার কুদরত অনুধাবন করতে পারে। এজন্য মানুষকে তিনি ‘ইয়া উলিল আলবাব’ (হে জ্ঞানীগণ) বলে সম্বোধন করে সম্মান জানিয়েছেন।

***

প্রথম আলো’র আয়োজনে প্রকাশিত বিজ্ঞানচিন্তা এবং কিশোর আলো সাময়িকী দু’টি সৃষ্টিজগত সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, যা অবশ্যই সাধুবাদ লাভের যোগ্য। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা এই যে, একই সঙ্গে কিশোর ও তরুণ প্রজন্মকে স্রষ্টাবিমুখ করার ক্ষেত্রেও তাদের ‘প্রকান্ড’ ভূমিকা রয়েছে। বিজ্ঞান ও বিশ্বজগত সম্পর্কে জটিল জটিল আলোচনা হবে, রহস্যের পর রহস্য উন্মোচন করা হবে, অথচ যিনি এসবের স্রষ্টা তার নামটি পর্যন্ত উচ্চারিত হবে না, এটা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে! স্বয়ং মানুষও কি মানুষের ক্ষেত্রে এ আচরণ গ্রহণ করতে পারে?

প্রয়োজনের কারণে যখনই কিশোর আলো বা বিজ্ঞানচিন্তা হাতে নেই, উপকৃত হওয়ার কারণে কৃতজ্ঞতা বোধ করি, সেই সঙ্গে উপরোক্ত অনুভূতির কারণে ব্যথিতও হই। কিন্তু এবার যেন কষ্টটা সীমা ছাড়িয়ে গেলো। কারণ আমার মনে হয়েছে, আবুল বাশার নামের লেখক মহোদয় ‘মহাবিশ্ব কী দিয়ে তৈরী’ শীর্ষক লেখাটিতে স্রষ্টা সম্পর্কে অমার্জনীয় নির্লিপ্ততা প্রদর্শন করেছেন। মহাবিশ্ব কী দিয়ে তৈরী, এত সাড়ম্বরে তা আলোচনা হবে, অথচ যিনি তৈরী করেছেন তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতার সামান্য প্রকাশ পর্যন্ত থাকবে না, আসলেই কি এটা মূর্খতা নয়?

‘মহাবিশ্ব কী দিয়ে তৈরী?’ প্রশ্নের উত্তরে যা বলা হয়েছে তার সারসংক্ষেপ হলো, ‘প্রাচীনকালে গ্রীক দার্শনিকেরা ভেবেছিলেন, মহাবিশ্বের মৌলিক উপাদান চারটি, পানি, আগুন, মৃত্তিকা ও বায়ু। তখনকার ভারতীয় দার্শনিকদের ধারণা ছিলো, মহাজগত পাঁচটি ‘ভূত’ বা উপাদানে তৈরী; মাটি, পানি, শক্তি, বাতাস ও আকাশ দ্বারা গঠিত। তাই মৃত্যুকে পঞ্চত্বপ্রাপ্তি বলা হতো। কারণ মৃত্যুর পর মানুষের দেহ পাঁচ ভূতে মিশে বিলীন হয়ে যায়। তবে জ্ঞান-বিজ্ঞান যতই অগ্রসর হয়েছে, দেখা গিয়েছে মহাবিশ্বের মূল উপাদান এগুলো নয়, বরং বস্তুকণার কোন ক্ষুদ্রতম একক দিয়ে বস্তুজগত গঠিত, যার নাম দেয়া হয়েছিলো অ্যাটম বা পরমাণু। পরমাণু সম্পর্কে ধারণা ছিলো, তা অবিভাজ্য। অর্থাৎ বস্তুকে বারবার বিভাজনের পর যখন আর বিভাজন করা যায় না, সেই বিভাজন-অযোগ্য কণাকেই বলে অ্যাটম বা পরমাণু।তবে বিংশশতাব্দীর আরো অগ্রসর গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, পরমাণু বস্তুর পরম একক নয়, বরং তা বিভাজনযোগ্য। পরমাণুর বিভাজনের পর পাওয়া যায় প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেক্ট্রন। প্রোটন ও নিউট্রনও বিভাজনযোগ্য। এ দু’টির বিভাজন থেকে পাওয়া যায় কোয়ার্ক নামের আরো ক্ষুদ্র কণা, যাকে বর্তমানে মনে করা হয় পদার্থের একক ও মৌলিক কণা।প্রোটন ও নিউট্রন মিলে তৈরী হয় পরমাণুর নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রীয় অংশ। আর এর চারপাশে ঘূর্ণমান অবস্থায় থাকে ইলেক্ট্রন। এভাবে প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেক্ট্রন মিলে তৈরী হয় পরমাণু। আর কয়েকটি পরমাণু দ্বারা গঠিত হয় একটি অণু। এভাবেই গঠিত হয় বস্তু, অর্থাৎ আমাদের দৃশ্যমান বস্তুজগত।এরপর লেখকের মন্তব্য হলো, ‘হাজার হাজার বছর ধরে লাখো মানুষের শ্রম, মেধা ও সাধনার মাধ্যমে আমরা এই জ্ঞান অর্জন করেছি। সেজন্য আমরা মানবজাতি নিজেরাই নিজেদের পিঠ চাপড়ে নিতে পারি।

...স্রষ্টা নিজেই তো ‘ইয়া উলিল আলবাব’ বলে মানুষের পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন! আমাদের তো কর্তব্য হলো স্রষ্টার উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা, যিনি বস্তুজগত ও বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছেন, তারপর মানুষকে মেধা ও মস্তিষ্ক দান করেছেন যাতে মানুষ সৃষ্টিজগত সম্পর্কে চিন্তা করতে পারে। তো এই অকৃতজ্ঞতার জন্য  স্রষ্টা যদি মানুষের পিঠে দু’চার ঘা চাবুক লাগিয়ে দেন, দোষ দেয়া যাবে!

***

লেখককে ধন্যবাদ যে, মানুষের অজ্ঞতাকে স্বীকার করে তিনি লিখেছেন, ‘মহাবিশ্বে মাত্র পাঁচ শতাংশ সম্পর্কে কিছু কিছু জানি, বাকি বিশাল অংশ সম্পর্কে এখনো আমরা কিছুই জানি না। আমাদের জানা ও অজানা সম্পর্কে বাস্তবতার কাছাকাছির ঊদাহরণটা হতে পারে এমন-  হাজার হাজার বছর ধরে হাতি সম্পর্কে গবেষণা করে আমরা মাত্র হাতির লেজ সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছি, হাতির পুরো দেহ সম্পর্কে জানা এখনো বাকি। তাছাড়া যতটুকু জানি তার উপরো ভরসা করার উপায় নেই। হয়ত ভবিষ্যতের নতুন কোন আবিষ্কার বিদ্যমান জানাকে বাতিল করে নতুন সত্য প্রতিষ্ঠিত করবে, যেমন প্রাচীন মানুষের ধারণা বা জ্ঞান আমাদের আবিষ্কার দ্বারা ভুল প্রমাণিত হয়েছে! ভবিষ্যতের মানুষ হয়ত আমাদের অজ্ঞতা সম্পর্কে ভেবে অবাক হবে, যেমন আমরা হই। ...প্রশ্ন হলে এমন ‘কচুপাতার পানি’ অবলম্বন করে স্রষ্টার বাণী ও বক্তব্যকে উপেক্ষা করা এবং নিজেদের জানাকেই চরম ও পরম মনে করা কি নির্বুদ্ধিতা নয়?

কীভাবে ভাবা যায়, মানুষ বানরের উত্তর পুরুষ। অথচ যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করছেন তিনি নিজে মানুষের আদি পুরুষ আদমকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন! *

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা