মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ

বিজ্ঞান বিচিত্রা

ছয়কোটি বছর আগের রহস্যময় গুহা ফিংগালস!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

আল্লাহর সৃষ্টি মহাবিশ্বের কথা আর কী বলবো, মহাবিশ্বের তুলনায় ক্ষুদ্র বালুকণার চেয়েও ক্ষুদ্র এই যে পৃথিবী, এরও রহস্যের কোন শেষ নেই! প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে, এমনকি আমাদের আদিপিতা হযরত আদম এবং আদিমাতা হযরত হাওয়া আ.-এর মাধ্যমে আল্লাহর আদেশে যখন থেকে পৃথিবীতে মানবজাতির বসবাসের শুরু তারও বহু পূর্ব থেকে এখানে এমনসব অদ্ভুত স্থান ও ঘটনার উদ্ভব হয়েছে, যা বিজ্ঞানী ও অনুসন্ধানী মানুষের মনে শুধু কৌতুহল, ভয় ও বিস্ময় এবং অন্তহীন রহস্য ও প্রশ্নেরই শুধু জন্ম দিয়েছে।

মানুষ যখন কিছুই জানতো না তখন কল্পনার ডানায় ভর করে অনেক কথা ও কল্পকথা অবশ্য সৃষ্টি করেছে, যার কোন ভিত্তি নেই। পক্ষান্তরে আজকের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির  চরম উৎকর্ষের যুগেও মানুষ ‘বৈজ্ঞানিক’ ব্যাখ্যার নামে আন্দায অনুমান করে যা কিছু বলছে তাও সত্যের খুব কাছে বলে মনে করার তেমন কারণ নেই। আসল কথা হলো, প্রকৃত রহস্য জানেন শুধু আল্লাহ্, যিনি পৃথিবী ও মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। তিনি সত্য বলেছেন:ألا يَـعْـلَـمُ مَـن خَـلَـقَ وَهُوَ اللَّـطِـيـفُ الـخَـبِـيـر তিনিই কি জানবেন না, যিনি সৃষ্টি করেছেন, অথচ তিনিই পরম সূক্ষদর্শী সর্ব  বিষয়ে অবগত! এ জন্যই আল্লাহ্ তা‘আলা মানুষকে আন্দায অনুমানে বলা কথাকে সত্য মনে না করে, সকল বিষয়ের প্রকৃত জ্ঞানকে একমাত্র আল্লাহর মহাজ্ঞানের সমীপে অর্পণ করতে বলেছেন।

***

পৃথিবীর রহসপূর্ণ বহু স্থানের মধ্যে একটি হলো বিভিন্ন স্থানে বিদ্যমান গুহা। এমন অনেক গুহা আছে যা সৃষ্টির পর হতে এই সেদিন পর্যন্ত মানুষের অজ্ঞাত ছিলো। আবার (সম্ভবত) এমনো গুহা রয়েছে যার  খোঁজ মানুষ এখনো পায়নি।

তো পৃথিবীর জানা-অজানা বহু রহস্যপূর্ণ গুহার একটি হলো ফিংগালস। এর অবস্থান হলো স্কটল্যন্ড থেকে .... দূরে ... দিকে স্টাফা দ্বীপপুঞ্জে। এখনো এটি জনমানবহীন দ্বীপ, তবে পার্থক্য এই যে, আগে দুঃসাহসী নাবিক, দস্যুরাও সেখানে যেতে সাহস করতো না। কারণ প্রচলিত বিশ্বাস ছিলো এই দ্বীপ ও তার গুহা দানবদের সৃষ্টি এবং দানবেরাই সেখানে বাস করে। গুহার ভিতর থেকে নাকি ভয়ঙ্কর সব শব্দ শোনা যেতো, যা দানবদের চলাফেরার কারণে সৃষ্টি হতো। এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে মানুষ নতুন ‘বৈজ্ঞানিক’ কুসংস্কারে আক্রান্ত হলেও প্রাচীন হাস্যকর কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়েছে। এখন দৈত্তদানব গল্পের পরিমন্ডলেই শুধু বাস করে, বাস্তবে নয়। তাই এখন ফিংগালস গুহা থেকে ভয়ঙ্কর অভয়ঙ্কর কোন শব্দ আর শোনা যায় না।

এখন উত্তাল সাগরের মাঝে অবস্থিত ঐ দ্বীপ ও তার গুহা রীতিমত পর্যটকদের ‘তীর্থস্থান’। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্ব হলো ওখানকার পর্যটন মৌসুম। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত রহস্যপ্রিয় পর্যটকদের সমাগমে বেশ মুখরিত থাকে দ্বীপটি। তখন যেন তিল ধারণেরও স্থান থাকে না। দ্বীপটির পর্যটন থেকে স্কটল্যান্ড প্রচুর আয় করে থাকে। স্কটল্যান্ডের স্থলভাগ থেকে স্টাফা দ্বীপ পর্যন্ত যাতায়াতের সুন্দর ও আরামদায়ক নৌব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, যদিও তা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। পর্যটকরা গুহাটির যথেষ্ট ভিতরেও যেতে পারেন। তাতে অদ্ভুত রোমাঞ্চ অনুভূত হয়। দুর্বলচিত্ত যারা তাদের আবার গা ছমছম করে। তারা বেশী দূর না গিয়ে বলতে গেলে গুহার মুখ থেকেই ফিরে আসে। শিক্ষিত ও স্মার্ট গাইডের ব্যবস্থা রয়েছে সরকারী ও বেসরকারী উভয় রকমের। তারা বেশ আগ্রহের সঙ্গে পর্যটকদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখান দ্বীপ ও তার গুহা। বলাবাহুল্য, সেটা যথেষ্ট পরিমাণ কাঁচা মুদ্রার বিনিময়ে।

তবে গাইড নামের ভদ্রলোকগুলো আধুনিক ও প্রাচীন তথ্য নামে যথেষ্ট কৌতুহলোদ্দীপক বিভিন্ন তথ্য শোনালেও আসলে তারা নিজেরাই তেমন কিছু জানেন না। তবে এটা অবশ্যই জানেন, মানুষের ভিতরের রহস্য ও কৌতুহলপ্রিয় মনকে কীভাবে খোরাক যোগাতে হয়। সেটা অবলম্বন করেই তাদের আয়রোযগার ভালোই হয়।আশ্চর্যের বিষয় হলো, পর্যটন এবং তা থেকে উপার্জনের এমন আকর্ষণীয় সুযোগ থাকা সত্তেও এখনো সেখানে রাত্রিবাসের কোন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। তাই দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে হয় স্কটল্যান্ডের স্থলভাগে। হয়ত অদূরভবিষ্যতে সে ব্যবস্থাও হবে। কিছু কিছু পরিকল্পনার কথা অবশ্য এখনই শোনা যাচ্ছে।

ভূতত্ত্ববিদদের আন্দায- অনুমাননির্ভর বিভিন্ন গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা থেকে মনে করা হয়, স্টাফা দ্বীপটির বয়স কম করে হলেও ছয়কোটি বছর। আজ থেকে প্রায় ছয়কোটি বছর আগে। সম্ভবত.... আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে এর গুহাটির উৎপত্তি। লাভা মানে হলো গলিত পাথর, যা তরল আকারে ¯ স্রোতের রূপ ধারণ করে গড়িয়ে যায় বহু দূর, এমনকি যার নীচে তলিয়ে যায় গোটা শহর জনপদ, মানবজাতির ইতিহাসে এর বহু নযির রয়েছে যেমন রোমান সাম্রাজ্যের ...তো এখানেও গলিত পাথর দ্বীপের খড়িমাটির উপর দিয়ে গড়িয়ে যেতে যেতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কারণে গুহাটি বিশেষ আকার লাভ করেছে। 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা