রবিউছ ছানী ১৪৪৫ হিঃ

এসো কলম মেরামত করি

এ যুগে অস্ত্রের যুদ্ধ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ কলমের যুদ্ধ। সৈনিকের জন্য অস্ত্রের প্রশিক্ষণ, আর লেখকের জন্য কলমের প্রশিক্ষণ একই রকম অপরিহার্য।

আজকের প্রসঙ্গ: লেখার সহজ উপায়!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

আজকের প্রসঙ্গ ঃ   লেখার সহজ উপায়!

একজন লেখক কখন লিখতে বসেন? গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন! এটি যদি বুঝতে পারি, লেখার অঙ্গনে আমার কলম সহজেই একধাপ এগিয়ে যাবে।একজন লেখক লিখতে বসেন যখন তার চিন্তায় লেখার কোন বীজ তৈরী হয়। কারণ বীজ ছাড়া যেমন চারা হয় না, তারপরে সবুজ বৃক্ষ হয় না, তেমনি লেখার বীজ ছাড়া কোন লেখা তৈরী হতে পারে না। কলম নিয়ে দীর্ঘ সময় বসে থাকলেও না।এখানে একটি কথা, বীজ যদি  তোমার চিন্তায় আসে মস্তিষ্ক থেকে, বুদ্ধিবৃত্তি থেকে তাহলে লেখা অবশ্যই হবে, তবে লেখার প্রকৃতি হবে একরকম; মনে করো কাগজের বা প্লাস্টিকের ফুল, অথবা মনে করো, বৈদ্যুতিক আলো। পক্ষান্তরে বীজটি যদি আসে হৃদয় থেকে, হৃদয়বৃত্তি থেকে তাহলে যে লেখাটি হবে তা একেবারে অন্যরকম, মনে করো বাগানের সুন্দর বর্ণের তাজা সুবাসের তাজা ফুল; অথবা মনে করো, মোমের আলো, চাঁদের জোসনা!এখানেই বলতে হয়, যদি তুমি সেই লেখক হতে চাও, যার প্রতীক্ষায় থাকে দেশ, সমাজ ও জাতি; যার কলম ও কালি মানুষের মধ্যে প্রাণের সাড়া জাগাতে পারে এবং পারে উদ্যম -উদ্দীপনার তরঙ্গজোয়ার সৃষ্টি করতে! যদি তুমি চাও এমন লেখক হতে তাহলে তোমাকে অবশ্যই অর্জন করতে হবে এমন একটি হৃদয় যা হবে ন¤্র, বিন¤্র এবং কোমল ও ¯িœগ্ধ। তারপর কথা হলো, তার হৃদয় ও আত্মা হবে হবে এমন পবিত্র, যাতে আল্লাহ্র সঙ্গে তার সম্পর্ক হয় গভীর, নিবিড় ও ...! তোমার কলম যদি রাব্বুল কলমের করুণার ছায়া গ্রহণ করতে পারে, যেমন তিনি বলেছেন, ‘আল্লামা বিল কলম’ তাহলেই তুমি হবে সেই লেখক যার...!ইচ্ছে করেই বীজের আলোচনায় হৃদয়ের প্রসঙ্গ আনলাম। কারণ লেখার যে বীজ তা কিন্তু রোপণ করতে হয় হৃদয়ের ভ‚মিতে, হৃদয়ের উর্বর মাটিতে!যাক, তোমার চিন্তায় একটি বীজ এলো। এখন তুমি লিখতে বসবে। প্রশ্ন হলো, কীভাবে লেখার সূচনা করবে? তো এর উদাহরণ হিসাবে ইচ্ছে ছিলো বর্তমান সংখ্যার কোন একটি লেখার উদাহরণ দেবো যে, কীভাবে বীজটা চিন্তায় এলো, তারপর কীভাবে ধীরে ধীরে সেই বীজ থেকে লেখার বিস্তার ঘটলো এবং সমাপ্তি লাভ করলো, অর্থাৎ ডালে ডালে, শাখায় শাখায় কীভাবে ফুল ও ফলের সমাবেশ ঘটলো!কিন্তু এখানে ঘটলো এক আশ্চর্য ঘটনা! এ লেখা যখন শুরু করেছি, সময় তখন রাত তিনটার কিছু কম বা বেশী। উম্মে মুহম্মদ আমার পাশে ছিলেন! তিনি বললেন, কষ্ট করে ঐ যে গøাসটা একটু দেবে!লেখা থামিয়ে গøাসটা দিতে গেলাম, আর তখনই হৃদয়ে তরঙ্গ সৃষ্টি হলো একং আমার চিন্তায়, বরং আমার হৃদয়ে লেখার বীজ তৈরী হলো! ‘কেন দেবো না, অবশ্যই দেবো! তোমার জীবনে আল্লাহ্ আমাকে এনেছেন, মৃত্যু পর্যন্ত তোমাকে দিয়ে যাওয়ার জন্যই তো! আবার আমার জীবনে আল্লাহ্ তোমাকে এনেছেন, মৃত্যু পর্যন্ত আমাকে সুখ-শান্তি, সুক‚ন ও সাকীনা দিয়ে যাওয়ার জন্যই তো! কিছু দেয়া, কিছু নেয়া, এরই নাম তো জীবন। তবে যারা দেয় উদারতার সঙ্গে এবং নেয় কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তাদের জীবনই হয় সুন্দর ও সার্থক। যে দেয়া এবং নেয়ার মধ্যে প্রীতি-ভালোবাসার বন্ধন, সে জীবনই হয় জান্নাত থেকে আসা জীবনের ছায়া ও ছবি।... অনেক দীর্ঘ কথা হলো উম্মে মুহম্মদের সঙ্গে, সবটুকু লেখা সম্ভব হলো না।হঠাৎ মনে হলো, এটাই তো হতে পারে এ বিভাগের লেখা ও বিষয়বস্তুর, তথা বীজের উদাহরণ! দেখো না, এখানে লেখার বীজটি কী! ‘দেয়া ও নেয়া’, বীজ থেকে অঙ্কুরিত যেন দু’টি পাতা, দু’দিক থেকে তোমার কলম যদি অগ্রসর হতে থাকে, একটি লেখার Ñহোক না ছোট বা বড়, অবয়ব দাঁড়িয়ে যাবে, যাতে থাকবে জীবনের জন্য কোন না কোন বার্তা।কথা অনেক দীর্ঘ হতে পারে, এ পর্যন্তই থাক।একটি কথা, তোমার চিন্তায় বীজ এলো, কিন্তু তখন কলম নিয়ে বসার সুযোগ নেই; তখন একদু’টি বাক্যে লেখার মূল বীজটি ধরে রাখো, তারপর যখন সুযোগ হয়...এভাবে তোমার কাছে লেখার বীজের ভালো একটা সংগ্রহ গড়ে উঠতে পারে।***০ তবে কলম নিয়ে, লেখা নিয়ে কখনো তামাশা করো না; কলম ও কালিকে কখনো অসম্মান করো না। বহু বছর আগে আমার এক তালিবে ইলম আমার এই ‘বীজতত্ত¡’ সম্পর্কে রস করে লিখেছিলো, ‘এটা বীজের দোকান, এখানে লেখার বীজ পাওয়া যায়’। বীজের মূল্য সম্পর্কে অবশ্য কিছু লেখেনি! তাকে কিছু বলিনি, তবে কষ্টটা এখনো আছে!০ ‘দেয়া ও নেয়া’ এই বীজ থেকে একটি লেখা দেখো, ১২ সংখ্যায় ২৪ পৃষ্ঠায়।


***

লেখার জন্য পড়া এবং পড়ার জন্য লেখা!শিরোনামটি যথেষ্ট কৌত‚হল সৃষ্টি করছে, তাই না! আচ্ছা সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে বলো দেখি, এই যে, ‘এসো কলম মেরামত করি’র আজকের লেখাটি, আমার কিন্তু কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছিলো না, আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চেয়ে, সত্যি সত্যি সাহায্য চেয়ে কলম হাতে নিলাম, আর দেখো, তিনি চিন্তায় একটি বীজ দান করলেন, আর লেখাটি দেখতে দেখতে তরতর করে এগিয়ে গেলো এবং তৈরী হয়ে গেলো।আমার কথা থেকে তোমার হৃদয়ের গভীরে যদি কোন অনুভব ও উপলব্ধি সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে বলো দেখি, গায়ব থেকে যে সাহায্য এসেছে তাতে কি কোন সন্দেহ আছে!ব্যস্ এটাই এতদিন ধরে তোমাদের বোঝাতে চাচ্ছি যে, যাকিছু তুমি লিখতে চাও, লেখার জন্য নিজেকে, নিজের হৃদয়কে, নিজের চিন্তাসত্তাকে কীভাবে প্রস্তুত করবে এবং কীভাবে কলমের সঙ্গে রাব্বুল কলমের বন্ধন তৈরী করবে।এখানে হওয়ার কথা ছিলো ‘রাব্বুল কলমের সঙ্গে কলমের বন্ধন’ কিন্তু শব্দের ছোট বড় আকারের কারণে আলঙ্কারিক প্রয়োজনে ওভাবে লেখা হয়েছে।জায়গা ফুরিয়ে আসছে, এবার আসো মূল প্রসঙ্গে! লেখার জন্য তোমাকে পড়তে হবে এবং প্রচুর পড়তে হবে। প্রথমে পড়তে হবে ভাষা ও সাহিত্যে সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য যথোপযুক্ত লেখা, তারপর পড়তে হবে তথ্য ও মা‘লূমাত অর্জনের জন্য যথোপযুক্ত লেখা। উভয় ধারায় যত বেশী পড়বে তোমার লেখা তত উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে, হতে থাকবে, ইনশাআল্লাহ্। এবারের ‘তাকে’ লেখাটি দেখো, ‘তৈ তৈ’ নামের সেই ছোটকালের পড়া কবিতা থেকে কী সুন্দর সাহায্য পেয়েছি! যদি পড়া না থাকতো এবং মনে না পড়তো! পড়ার জন্য লেখা, এর মানে হলো, নিজের লেখাগুলো, কঠিন সমালোচনার দৃষ্টিতে পড়া এবং বারবার পড়া, যা আমাদের লেখক জীবনে কমই হয়। কথা আরো অনেক ছিলো... আল্লাহ তাওফীকদাতা। 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা