দূর শৈশবে, যখন আমার বয়স... পঞ্চাশ থেকে পঁয়তাল্লিশ বাদ দাও; কত থাকলো! পাঁচ! তো যখন আমার বয়স মোটে পাঁচ! সকালে সবুজ মাঠে বেড়াতে যাই বাবার সঙ্গে, বাবার হাত ধরে! কখনো আমি বাবার হাত ধরি, কখনো বাবা, আমার হাত ধরেন। ধানের সবুজ চারাগুলো বাতাসে দোল খেতো! কী যে ভালো লাগতো! ধান পেকে যখন সোনালী রঙ হতো! কী যে ভালো লাগতো! কখনো দেখি, সারা মাঠ জুড়ে হলুদ সর্ষে ফুল! যেন হলুদের গালিচা! আলতো করে হাত বুলাতাম হলুদ ফুলের গায়ে! কী যে ভালো লাগতো! ফুলে ফুলে মৌমাছিরা উড়ে বেড়াতো! দেখতে কী যে ভালো লাগতো! মৌমাছিরা নাকি ফুল থেকে রস সংগ্রহ করে, আর মৌচাকে নিয়ে জমা করে। তাতে নাকি মধু হয়! আমাদের বাড়ীতে বড় গাছটার ডালে মৌমাছিরা চাক বাঁধে! মৌমাছিরা সারাক্ষণ গুনগুন করে আসে আর যায়। একসময় মধু হতো! মধু খেতে কী যে ভালো লাগতো!
এখনো মাঠজুড়ে সবুজ ধানের ক্ষেত আছে। এখনো ধান পেকে সোনালী রঙ হয়! এখনো মাঠজুরে হলুদ সর্ষেফুল আছে। এখনো মৌমাছিরা ফুলে ফুলে ওড়ে বেড়ায়। এখনো মৌমাছিরা ঐ বুড়ো গাছটার ডালে চাক বাঁধে; মধূ হয়। কিন্তু..এখন বাবা নেই এবং নেই শিশুটি! কোথায় গেলেন বাবা! ঐ যে কবরটা, তার ভেতরে! কোথায় গেলো শিশুটি! এক বুড়ো মানুষের জামার ভেতরে!
এখন ধানক্ষেতের সবুজ ভালো লাগে না! ভালো লাগে না ধানের সোনালী রঙ! এখন মাঠজুড়ে হলুদ সর্ষেফুল ভালো লাগে না! ভালো লাগে না মৌমাছিদের ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ানো! এখন ভালো লাগে না মৌচাকের কাছে গিয়ে দাঁড়াতে! ভালো লাগে না মৌচাকে মৌমাছিদের গুঞ্জন!
তবে যখন মনে পড়ে সেই মধুর দিনগুলোর কথা তখন আমার খুব ভালো লাগে! ইচ্ছা হয়, আবার যেন বাবা ফিরে আসেন! আবার যেন আমি সেই শিশুটি হই! আবার যেন বাবার হাত ধরে সবুজ মাঠে যাই, সর্ষেফুল দেখতে পাই!....
এখন আমি আমার ছোট্ট মেয়েটির হাত ধরে সবুজ মাঠে যাই! মাঠজুড়ে হলুদ সর্ষেফুল দেখতে পাই!... তখন আমার মনে পড়ে বাবাকে, আর সেই শিশুটিকে.. আমার খুব ভালো লাগে। খুশিতে চোখদু’টো ভিজে ওঠে!আমার ছোট্ট মেয়েটি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়, আর জানতে চায়, বাবা, তুমি কাঁদো কেন! আমি কিছু বলি না, শুধু আলতো করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেই।
আমার তখন খুব ভালো লাগে...।