প্রিয় পাঠক!
লেখক ও সম্পাদকের জন্য পাঠকের আদালতই নাকি বড় আদালত! হয়ত তাই। এজন্য পুষ্পের মজলিসে পাঠকের আদালত কায়েম করা হলো এবং হে ‘মহামান্য পাঠক’ আপনাকে বিচারকের আসনে বসানো হলো। আশা করি আপনি ‘ইনছাফের তারাজু’ সামনে রেখে পুষ্পের লেখা, বিষয়, সজ্জা এবং অন্য যে কোন বিষয় সম্পর্কে আপনার সুচিন্তিত ও ন্যায়ানুগ ফায়ছালা জানাবেন। আমরা সে আলোকে সামনের পথ ও পন্থা নির্ধারণের চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ!
আমার পক্ষ হতে শুধু একটা পরামর্শ। আদালতে ইনছাফের চোখে সবসময় পট্টি বাঁধা থাকে, আপনি কিন্তু চোখের পট্টিটা খুলে নেবেন। আর মর্জির খেলাফ ফায়ছালা করলে কী ‘হাশর’ হয় তার নমুনা দেখেছেন নিশ্চয়!! সুতরাং ... (Ñসম্পাদক)
পুষ্পের আরাকানসংখ্যা ‘প্রথমবারের মত’ পড়া সমাপ্ত হয়েছে। ব্যবসায়িক, পারিবারিক এবং সামাজিক ব্যস্ততার মধ্যে সময়কে খুব সঙ্কীর্ণই মনে হয়। আল্লাহর শোকর, এর মধ্যেও পড়ার সুযোগ হয়েছে। যানজটকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। বাসা-দফতর যাওয়া আসার পথে গাড়ীতে বসে পড়ার যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়।
এখন পুষ্পের নিয়মিত সংখ্যার জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু না, আমাদের বিস্মিত আনন্দের মধ্যে যা এলো তার নাম ‘আলকুদসসংখ্যা’!! পাঠকের আদালত থেকে আমি শুধু বলতে পারি, এই সময়ের মধ্যে এই কাজ! কোন অসম্পূর্ণতা যদি থেকেও থাকে, ‘সাত খুন মাফ’!
আমি তো পাঠক-আদালতের ‘মহামান্য’ বিচারক! সুতরাং গোঁফে তা দিয়ে রায় তো জারি করতেই পারি! তো আমার রায় হলো, ‘যেমন হয়েছে তেমন না হলে খুবই অসুন্দর হতো! ভাষা ও সাহিত্যের দিক থেকে একটা বড় ত্রুটি এই যে, হাতে নেয়ার পর সবকিছু ভুলে গিয়ে স্ত্রীর বকুনি খেতে হয়, ‘পুষ্প না কী একটা পেয়েছো; তাতে মজে থাকলেই চলবে? বলি, বাজারে যাবে কে?
তথ্যের দিক থেকে বড় ত্রুটি, আমার বিচারে যা, তা এই যে, রীতিমত একটা সাগর তৈরী করা হয়েছে, পাঠকের তাতে হাবুডুবু খেয়েই নাজেহাল হতে হবে। দক্ষ ডুবুরী ছাড়া এই তথ্যসাগরে ঝাঁপ দেয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
তবে সম্পাদকের ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ হলো, আমাদের নিরুপদ্রব ও শান্তিপূর্ণ জীবনে তিনি বেদনার ঝড় তুলেছেন। হৃদয়ে কান্নার এমন ঢেউ সৃষ্টি করেছেন যে, সংসারের কিছুতে আর মন বসে না! চোখদু’টো অনেকদিন শুকনো ছিলো। সেই শুকনো চোখে পুষ্প অশ্রƒধারা প্রবাহিত করেছে।
আমি জানতে চাই, এসব করার কী প্রয়োজন ছিলো?! অভ্যস্ত জীবনে বিঘœ সৃষ্টি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে কেন বিবেচিত হবে না, আগামী সংখ্যায় তার কারণ দর্শাতে আদেশ দেয়া হলো।
হাঁ, ‘বাইতে হানূন’ লেখাটির কথা বিবেচনা করে বেকসুর খালাস দেয়া যেতে পারে! ‘তাছাড়া নামায পড়তে গেলো যতজন, বের হলো তার দ্বিগুণ, বাত কেয়া হ্যয়!!’ উর্দূর মিশ্রণে বাক্যটি সত্যি বেশ উপভোগ্য হয়েছে!
দুশমনকে আমরা বুঝিয়ে দিয়েছি, ‘বুকের দুধ দিয়ে যাদের প্রতিপালন করেছি তাদের বুকের রক্ত এত সহজে ঝরতে দেবো না...!! বুকের দুধ, বুকের রক্তÑ অপূর্ব এক ভাবতরঙ্গ সৃষ্টি করে! অনেক ভেবেও খুঁজে পাইনি, এ বাক্যটির এর চেয়ে সুন্দর কী হতে পারতো!
... (মুহাম্মাদ ইয়াসীন, ঢাকা)
‘আমার স্মৃতি; কিছু সুখের, কিছু দুঃখের’ শিরোনামটি খুব সার্থক হয়েছে মনে হয়। হযরত তাকী উছমানী মু. নাম দিয়েছেন ‘ইয়াদেঁ’ যার তরজমা হতে পারে, স্মৃতিসমূহ; তবে তা হবে খুবই নিরস। একটু ভাব তরজমা হতে পারে, আমার জীবনকথা/আত্মকথা, এটা খুবই সচরাচর। এর মধ্যে তেমন আবেদন নেই। পুষ্পে নির্বাচিত শিরোনামটি যেমন বাস্তবানুগ তেমনি আবেদনপূর্ণ।
ডাক দিয়ে যায় মুসাফির নামটিও অত্যন্ত সার্থক। সম্পাদক নিজেই বড় সুন্দর ব্যখ্যা দিয়েছেন। বোঝা যায়, প্রতিটি বিষয়ে কী গভীর ও দীর্ঘ চিন্তা কাজ করে। Ñনাফীসা, টাঙ্গাইল
পুষ্পের আলকুদস্সংখ্যা পড়ে ফিলিস্তীনী জাতির প্রাণপুরুষ আলহাজ আমীন আলহোসায়নি রহ. সম্পর্কে জানতে পারলাম। বলা যায়, সংক্ষিপ্ত পরিসরে তাঁর গৌরবময় জীবনের একটা পূর্ণাঙ্গ ও সমুজ্জ্বল চিত্র পাওয়া গেলো। এ জন্য পুষ্পকে ধন্যবাদ!
পরে ইসলামী বিশ্বকোষ পড়লাম। তাঁর সম্পর্কে অনেক কিছু লেখা হয়েছে, দীর্ঘ তথ্যপঞ্জী দেয়া হয়েছে, কিন্তু আলকুদস ও আলআকছার মুক্তির জন্য অস্থির বে-কারার মানুষটিকে তাতে খুঁজে পাওয়া যায় না। আসলে এখানেই পার্থক্য কলমের লেখা ও কলবের লেখার মধ্যে এবং হৃদয়ের লেখা ও মস্তিষ্কের লেখার মধ্যে।
হযরত আলী মিয়াঁ রহ. এর একটি বাক্যই যথেষ্ট আমীন আলহোসায়নীকে চেনার জন্য, ‘ফিলিস্তীন ছিলো তাঁর জন্য সন্তানের মত। অন্যদের জন্য ফিলিস্তীন ছিলো জাতীয় সমস্যা, যার সমাধানের জন্য তারা ত্যাগ ও আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত, কিন্তু তাঁর কাছে ফিলিস্তীন ছিলো পারিবারিক বিপর্যয় এবং ব্যক্তিজীবনের শোকাবহ ঘটনা।’ ....
বশির বিন শাকের
পুষ্প, আমার তিনটি পর্যবেক্ষণ
পুষ্প সম্পর্কে আমার প্রথম পর্যবেক্ষণ হলো, প্রতিটি লেখা পাঠকের জন্য কোন না কোন মূল্যবান বার্তা বহন করে, যা হৃদয় দিয়ে যদি গ্রহণ করা যায়, জীবন ফুলের মত সুন্দর হতে পারে। এমনকি একশ শব্দের ছোট্ট একটি লেখার মধ্যে পাঠকের জন্য থাকে বিরাট বার্তা। আর কোন লেখার আসল মূল্য তো তার বার্তার মধ্যেই।
রম্য রচনাটিও নিছক ‘রম্য’ নয়, সেটিও বেশ তির্যকভাবে তুলে ধরে জীবনের অনেক অসঙ্গতি ও সত্য-মিথ্যা, যা জীবন ও সমাজকে বোঝার ক্ষেত্রে হয় অত্যন্ত সহায়ক।
আমার দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণ হলো, ভাষাসৌন্দর্য, হৃদয়গ্রাহিতা। শুরু থেকে শেষ, প্রতিটি লেখা এমনভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে পাঠকহৃদয় যে, ইচ্ছে হয়, চিরকাল ধরে রাখি, চিরকাল পড়তে থাকি!
তৃতীয় পর্যবেক্ষণ হলো, যখনই কোন কারণে মনটা বিষণœ হয়, একটু হতাশা ভর করে, পুষ্প হাতে নিলে মনের সব বিষণœতা, সব হতাশা দূর হয়ে যায়। আবার ফিরে আসে আগের সজীবতা, আগের প্রশান্তি!! এ পর্যবেক্ষণ আমার একার নয়। যার সঙ্গেই কথা হয়েছে, বিশেষ করে আমাদের নারীসমাজে, সবাই একথা বলেছেন। আসলে বিষণœতা, হতাশা, দুঃখ-দুর্দশা ও কষ্ট-বেদনা তো আমাদের জীবনে অনেক বেশী, তাই পুষ্পকে আমাদের মনে হয় ‘ব্যথার উপশম’ Ñ
জনৈকা মা