আল কুদসসংখ্যা (৩/২)

প্রথম পাতা

কোরআনের আলো / হাদীসের আলো

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

কোরআনের আলো

বিসমিল্লাহির-রাহমানির রাহীম

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, বনী ইসরাইলের যাহারা কুফুরি করিয়াছে, তাহাদিগকে অভিশাপ দেওয়া হইয়াছে দাউদ ও ঈসা ইবনে মারয়ামের যবানে। তাহা এই জন্য যে, তাহারা অবাধ্যতা করিয়াছে, আর তাহারা সীমালঙ্ঘন করিতেই থাকিত।

ফায়দা

এই আয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলা মুমিনীন ও মুমিনাতকে ইহুদিদের চরিত্রগত কতিপয় জঘন্যতার উল্লেখপূর্বক তাহাদের বিষয়ে সতর্ক করিয়াছেন। প্রথম কথা হইল

তাহারা নবিগণকর্তৃক অভিশাপপ্রাপ্ত। আর অভিশপ্ত কোন সম্প্রদায়ের সহিত আন্তরিক সম্পর্ক, সমূহ ক্ষতির কারণ হইতে পারে। তাহারা আসমানি কিতাবের আদেশ-নিষেধ এবং নবিগণের উপদেশ অমান্য করিত। তাহাদের অবাধ্যতার বহু ঘটনা বর্ণিত হইয়াছে কোরআনে। তৃতীয়ত সর্বদা তাহারা সীমালঙ্ঘন করিত। আল্লাহর হক যেমন নষ্ট করিত, তেমনি বান্দার হকও নষ্ট করিত। হযরত দাউদ আ. তাঁহার যুগের ইহুদিসম্প্রদায় সম্পর্কে বলেন, ‘তাহাদের মধ্যে একজনও সৎকর্মশীল ব্যক্তি নাই। তাহারা প্রতিবেশীর সহিত সদাচারের কথা বলে, কিন্তু তাহাদের অন্তরে আছে মন্দ ইচ্ছা....।’

হযরত ঈসা আ. তাঁহার যুগের ইহুদিসম্প্রদায় সম্পর্কে বলিয়াছেন, তোমাদিগের জন্য আফসোস, তোমরা সামান্য বিষয়ে তো খুব আড়ম্বর কর, কিন্তু বিধানের বড় বড় বিষয়গুলি উপেক্ষা কর। তোমরা বিধবাদের ঘর দখল কর। তোমরা ছোট্ট ফড়িং সম্পর্কে ত সতর্কতা প্রদর্শন কর, কিন্তু আস্ত উট গিলিয়া ফেল। ...

তাহাদের বড় দোষ ছিল এই যে, মন্দ কাজ করিতে দেখিলে একে অপরকে বাধা দিত না, বরং নিজেরাও মন্দে জড়াইয়া পড়িত। অন্যান্য আয়াতেও ইহুদিদের স্বভাবের নীচতা, চরিত্রের হীনতা এবং মুসলমানদের প্রতি তাহাদের বিদ্বেষ সম্পর্কে বলা হইয়াছে, যেন, কেয়ামত পর্যন্ত উম্মত তাহাদের বিষয়ে সতর্ক থাকে। আজ যে মুসলিম উম্মাহ ইহুদিদের ফিতনায় পতিত হইয়াছে, ইহার কারণ আর কিছু নহে, শুধু এই যে, তাহাদের সম্পর্কে যত সতর্কবাণী কোরআনে উচ্চারিত হইয়াছে, হাদীছে বর্ণিত হইয়াছে মুসলিমগণ তাহা ভুলিয়া গিয়াছে। আল্লাহ বলিয়াছেন, ওয়াদাভঙ্গ করা, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া তাহাদের জাতীয় চরিত্র, অথচ আমরা তাহাদের কথায় আস্থা রাখিয়া তাহাদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করিয়াছি। তাহারা কোন চুক্তি, কোন প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করে নাই। সুতরাং তাহাদের বিষয়ে সাবধান হওয়া খুবই জরুরি।

আলকোরআন সম্পর্কে

কোরআনের প্রতি আমাদের সবচে’ বড় অবিচার এই যে, ইহুদি ও নাছারাদের সম্পর্কে যেভাবে সতর্ক করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে আমরা কোরআনের কোন সতর্কবাণী অনুসরণ করিনি। কোরআন সতর্ক করেছে এই বলে যে, তারা পরস্পর বন্ধু, তাদের তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।

তারা যে পরস্পর বন্ধু, আজকের মত এত স্পষ্টরূপে আর কবে তা প্রমাণিত হয়েছে? কিন্তু আমরা?!

 

হাদিসের আলো

বিসমিল্লাহির-রাহমানির রাহীম

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের পথ ও পন্থা অনুসরণ করিবে, বিঘত বিঘত করিয়া এবং হাত হাত করিয়া (অর্থাৎ ছোটবড় সকল বিষয়ে পরিপূর্ণ অনুসরণ); এমনকি যদি তাহারা গুইসাপের গুহায় প্রবেশ করে, তোমরাও তাহাদের অনুসরণ করিবে। আমরা বলিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইহুদি ও নাছারাগণ? তিনি বলিলেন, তবে আর কাহারা! (বুখারী)

ফায়দা

ইহার চেয়ে বড় সতর্কবাণী আল্লাহর নবীর পক্ষ হইতে তাঁহার উম্মতের জন্য আর কী হইতে পারে?! এত সুস্পষ্ট সতর্কবাণী, যেন তিনি যাহা বলিয়াছেন বর্তমান যুগের অবস্থা প্রত্যক্ষ করিয়াই বলিয়াছেন!

ইসলাম আমাদের জন্য একটি সম্পূর্ণ জীবনবিধান। জীবনের কোন অঙ্গনে এমন কোন বিষয় নাই যাহার সম্পর্কে আল্লাহ এবং তাঁহার রাসূল আমাদিগকে সতর্ক করেন নাই।

কিন্তু জীবনের সকল ক্ষেত্রে, শিক্ষা-দীক্ষা বলি, জীবনযাপনের পদ্ধতি বলি, যখন ইহুদি ও নাছারাসম্প্রদায় নতুন কিছুর প্রচলন করে, চক্ষু বন্ধ করিয়া আমরা উহার অনুসরণে লাগিয়া যাই। কত প্রজ্ঞাপূর্ণ মিছাল দিয়াছেন ইহুদি-নাছারাদের পূর্ণ অনুসরণের বিষয়টি বুঝাইতে গিয়া! ‘গুইসাপের গুহায় ঢুকিয়া যাওয়া!’

একটি উদাহরণ দেওয়া যায়, ইহুদি-নাছারারা গলায় টাই বাঁধে, মুসলিমরাও উহা বাঁধিতে শুরু করিয়াছে। উহার উপকারিতা কী? প্রয়োজনীয়তাই বা কী? একবারও চিন্তা করিবার যেন সুযোগই হয় নাই। এমনকি শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রেও সন্তানদিগকে আমরা পাশ্চাত্যের জীবনাচার ও সংস্কৃতি শিক্ষা দিতেছি। সালাম ভুলিয়া আমাদের সন্তান বলে, ‘বাই, টাটা’, আমরা শুনিয়া আনন্দিত হই। এইভাবে ঐ হাদীছও সত্য হইতেছে যাহাতে বলা হইয়াছে, ‘প্রতিটি শিশু ফিতরতের উপর জন্মগ্রহণ করে, মা-বাবা তাহাকে ....!!

বর্তমানে আমাদের যে যিল্লতি, লাঞ্ছনা ও দুর্গতি, ইহার বড় কারণ, আমরা ইহুদি-নাছারাদের অনুসরণে জীবন যাপন করি। ইসলামের জীবনাচার আমরা ভুলিয়া গিয়াছি। যে জাতির সংস্কৃতি গ্রহণ করিব, চিন্তাচেতনায় তাহাদের প্রভাব পড়াই তো স্বাভাবিক। আর তাহাতে অন্তরে হীনমন্যতা সৃষ্টি হওয়াও স্বাভাবিক। বর্তমান অবস্থা হইতে মুক্তির উপায় হইল ইসলামের দিকে পূর্ণরূপে ফিরিয়া আসা এবং..

বিশ্বনবী সম্পর্কে

ইহুদি আলিমগণ নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত ছিলো। তাদের ধর্মগ্রন্থে আখেরি যামানার আখেরি নবীর সমস্ত পরিচয় ও আলামত স্পষ্টরূপে বর্ণিত ছিলো। কিন্তু তাদের অন্তরে ছিলো স্বভাববিদ্বেষ। তাই তারা নিজেরা যেমন নবীকে সত্য বলে গ্রহণ করেনি, তেমনি সাধারণ মানুষের কাছে নবীর পরিচয় গোপন রেখেছিলো, যাতে তারাও নবীকে গ্রহণ করতে না পারে। এযুগেও ইহুদি-নাছারাগণ নবীর পরিচয় গোপন করে রেখেছে। আমাদের কর্তব্য, এ বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করা.এবং

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা