হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হইতে বর্ণিত যে, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন প্রতিপালকের নিকট হইতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা‘আলা বলিয়াছেন, আমি আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণার অনুরূপ আচরণ করি। আর আমি তাহার সঙ্গে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে। সুতরাং যখন সে আমাকে মনে মনে স্মরণ করে তখন আমিও তাহাকে মনে মনে স্মরণ করি, আর যখন সে আমাকে কোন মজলিসে স্মরণ করে তখন আমি তাহাকে আরো উত্তম মজলিসে সম্মরণ করি। আর বান্দা যখন আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, আমি তাহার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যখন সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়, আমি তাহার দিকে দুই হাত অগ্রসর হই, আর বান্দা যখন আমার দিকে হাঁটিয়া আসে, আমি তাহার দিকে দৌড়াইয়া যাই। (বুখারী) ফায়দা- এই হাদীছে পরম দয়াময় আল্লাহার সীমাহীন দয়া ও করুণারই অপূর্ব প্রকাশ ঘটিয়াছে। আমরা যদি আল্লাহ সম্পর্কে উত্তম ধারণা করি তবে অবশ্যই তিনি আমাদের সহিত উত্তম আচরণ করিবেন। যেমন আমরা যদি বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ তাহাই করেন যাহা আমার জন্য কল্যাণকর, তবে সচ্ছলতা বা দারিদ্র্য, সুস্থতা বা অসুস্থতা, শোক বা আনন্দ যাহাই আমার জীবনে আসুক, উহা আমার জন্য অবশ্যই কল্যাণকর হইবে, আর আখেরাতে অবশ্যই তিনি আমার জন্য জান্নাতের ফায়ছালা করিবেন। তাই ওলামায়ে কেরামের মতে বান্দার কর্তব্য হইল বেশী বেশী নেক ‘আমল করিয়া এবং গোনাহ হইতে যথাসম্ভব দূরে থাকিয়া আল্লাহর নিকট রহমত ও মাগফিরাতের অশাা রাখা, আর সমস্ত ‘আমল ও তাওবার কবুলিয়াতের বিশ্বাস রাখা। আল্লাহর যিকির করিবার সঙ্গে সঙ্গে যদি বান্দার অন্তরে এই বিশ্বাস থাকে যে, আল্লাহ আমাকে স্মরণ করিতেছেন তবে উহা বান্দার অন্তরে কত না আনন্দ সৃষ্টি করিবে! তাই উলামায়ে কেরাম বলেন, যিকিরের চেয়ে উত্তম কোন ইবাদত নাই। অবশ্য কোরআন তিলাওয়াত, নামায, ওয়ায-নছীহত, চিন্তা-ফিকির, সকলই যিকিরের অন্তর্ভুক্ত। আলোচ্য হাদীসে কুদসীতে আল্লাহর দয়া ও মুহব্বতের সীমাহীনতা বুঝাইবার জন্য এই উপমা দেওয়া হইয়াছে যেন বান্দা ‘আমলের প্রতি উৎসাহী হয়। নতুবা আল্লাহ তো সর্বপ্রকার আকৃতির ক্ষুদ্রতা হইতে চিরপবিত্র। মতলব হইল, বান্দা সামান্য ‘আমল করিলেও আল্লাহ তা‘আলা উহার অসামান্য আজর দান করেন। বান্দা যত বেশী ‘আমল করে আল্লাহ তা‘আলা আজর ও ছাওয়াব পরিমাণ তত বাড়াইয়া দেন। আল্লাহর নিকট বান্দার প্রার্থনা হয় দুই প্রকার। প্রথমত বান্দার নিজের ক্ষুদ্রতা ও অযোগ্যতার প্রেক্ষিতে। দ্বিতীয়ত আল্লাহর দয়া ও করুণার অসীমতার প্রেক্ষিতে। তো আলোচ্য হাদীছে আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে তারগীব দিয়াছেন যেন সে আল্লাহ সম্পর্কে সর্বোচ্চ সুধারণা পোষণ করে এবং নিজের গোনাহের পরিবর্তে আল্লাহর অসীম রহমতের দিকে তাকাইয়া আল্লাহর শান মোতাবেক প্রার্থনা করে। যেমন এক হাদীছে এই দু‘আ আসিয়াছে- হে আল্লাহ আপনি আমাদের সহিত ঐরূপ আচরণ করুন যাহা আপনার উপযুক্ত, ঐরূপ আচরণ নহে যাহার আমরা উপযুক্ত। বস্তুত আল্লাহর দয়া ও রহমত এবং করুণা ও মাগফিরাত তো এমনই অসীম যে, বান্দা একশত মানুষ হত্যা করিয়া যখন তাওবার নিয়তে নেককারদের গ্রামের দিকে রওয়ানা হইল আর পথে মারা গেলো তখন তিনি গ্রামের দিকের পথটিকে আদেশ করিলেন যেন উহা সংকুচিত হইয়া যায়, আর ফিরেশতাদিগকে পথ পরিমাপ করিবার আদেশ দিলেন, এভাবে তাহার তাওবার ব্যবস্থা করিলেন, যেমন হাদীছ শরীফে আসিয়াছে।
বিশ্বনবী সম্পর্কে
নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কাজ নিজে করতে ভালোবাসতেন। তিনি নিজে ঘর ঝাড়- দিতেন, নিজে বকরী দোহন করতেন এবং নিজের হাতে নিজের জুতা সেলাই করতেন। ছাহাবা কেরামের সঙ্গে যখন সফরে বা জিহাদে বের হতেন তখন তিনি সবার সঙ্গে কাজ ভাগ করে নিতেন। এটাই ছিলো তাঁর সারা জীবনের আমল। তাঁর খাদেম বলেন, দশবছরে আমি তাঁর যত না খেদমত করেছি তার চেয়ে বেশী খেদমত তিনি আমার করেছেন।