রবিউছ ছানী ১৪৪৫ হিঃ

কুরআন ও হাদিস

কোরআনের আলো

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন:

আর (এতীমের মালে ‘তছরুফ’ করা থেকে) তারা যেন ভয় করে যারা, যদি নিজেদের পিছনে দুর্বল বাচ্চাদের রেখে যায় তাহলে তাদের বিষয়ে তারা আশঙ্কায় থাকে। তো (এখনকার এতীমদের বিষয়ে) তারা যেন আল্লাহ্কে সমীহ করে, আর সঠিক সঠিক কথা বলে। সূরাতুল বাকারাহ: ১৮৬

** ফায়দা: মুমিনহৃদয়ে আপনা থেকেই যেন এতীমের প্রতি দয়া, মায়া ও কোমলতা সৃষ্টি হয় এবং তা স্থায়ী হয় তাই এমন সর্বসুন্দর শৈলীর ব্যবহার এবং হৃদয় বিগলিত হওয়ার মতো এমন অনুপম উদাহরণ! আসলে মানুষের কালামে এর তুলনা পাওয়া সম্ভব নয়।বস্তুত এমন কে আছে যে নিজের জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারে! প্রত্যেকের অন্তরেই তো মৃত্যুর ভয় থাকার কথা! তখন তো তার মনে এ ভয় ও আশঙ্কা অবশ্যই দোলা দেবে যে, আমার মৃত্যুর পর আমার  ছোট ছোট ও দুর্বল সন্তানও তো এতীম হতে পারে, যেমন আমার সামনে এখন রয়েছে উম্মতের কিছু এতীম! তখন তো আমার সন্তানদেরও প্রয়োজন হবে রহমদিল মানুষের যে তাদের সঙ্গে সদাচার ও কোমল আচরণ করবে।বস্তুত এটা হলো মানবহৃদয়ের সবচে’ দুর্বল ও সংবেদনশীল স্থান! তো দুর্বলতম ও নাযুকতম বিষয়টিকেই আল্লাহ্ মুমিনের সামনে তুলে ধরেছেন, যাতে তার অন্তরে নিজের সন্তানের এতীমির দৃশ্যটি জাগ্রত থাকে, যাতে তার সামনে থাকা এতীমানের প্রতি সদাচার ও কোমল আচরণে সে উদ্বুদ্ধ হয়।এখানে প্রচ্ছন্নরূপে আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ হতে মুমিন বান্দাকে এ নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে যে, যদি মুমিন বান্দা এতীমের প্রতি কোমল ও সদয় আচরণ করে তাহলে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে প্রাচুর্যের সঙ্গে দীর্ঘায়ু করবেন। ফলে তার সন্তানেরা এতীম হওয়ার যন্ত্রণা ও লাঞ্ছনা থেকে বেঁচে যাবে।পক্ষান্তরে যদি তাকদীরের বিধান অনুযায়ী তার সন্তান এতীম হয়ও, তখন আল্লাহ্ তা‘আলা কোন না কোন রহমদিল ও দয়ালু মানুষের ব্যবস্থা করে দেবেন, যে তার এতীমানের প্রতি ঐ রকমেরই খেয়াল রাখবে যেমন সে তার সামনে আসা এতীমানের প্রতি খেয়াল রেখেছে, বরং তার চেয়ে অনেক বেশী খেয়াল রাখবে। কারণ এটি তো নেক আমল। আর নেক আমলের আজর তো আল্লাহ্ অনেকগুণ করে দান করে থাকেন।

 

** তথ্যকণিকা ১-  সূরাতুল আহযাব, ৬৯ আয়াতেও কাওলে সাদীদের কথা এসেছে। সেখানে উদ্দেশ্য হলো, এমন কথা, যা সত্য, যা আল্লাহ্র পছন্দ, যাতে রয়েছে মানুষের কল্যাণ। কোমলতা ও কঠোরতার সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই, বরং যেখানে কোমলতা উপযোগী সেখানে কোমলতা হবে, আর যেখানে কঠোরতা উপযোগী সেখানে কঠোরতা হবে।

* নিসা ও আহযাব উভয় সূরায় ‘সাদীদ’ এর আগে আল্লাহ্র বিষয়ে তাক্বওয়া অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে, তাতে বোঝা যায়, মুত্তাকীর প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো কাওলে সাদীদ।

* হাদীছ শরীফে سـديـد (সঠিক কথা) এবং سداد  (সঠিকতা) উভয় শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।* সূরা নিসার মধ্যে এতীমের প্রসঙ্গ এভাবে এমন গুরুত্বের সঙ্গে বলার মর্ম সম্ভবত একথা বোঝানো যে, এতীমের প্রতি নারীদের রয়েছে স্বভাবজাত মমতা! পক্ষান্তরে পুরুষকে তা অর্জন করতে হয় নিরন্তর চেষ্টা-সাধনার মাধ্যমে।

** তথ্যকণিকা ২-   পুরো কোরআন কারীমে এতীমের প্রসঙ্গ এসেছে ২৩ বার। তার মধ্যে স্বয়ং নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেছেন, ‘তিনি কি আপনাকে এতীমরূপে পাননি, অনন্তর আপনার জন্য তিনি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন! তারপর আল্লাহ্র নবীকে নিষেধ করে বলা হয়েছে- সুতরাং এতীমের প্রতি কঠিন আচরণ করবেন না! (৯৩/ ৬ ও ৯)

* আয়াতের ব্যাখ্যাসূচক বন্ধনীতে অবশ্য বলা হয়েছে এতীমের মালের তছরুফ প্রসঙ্গ। তবে যখন মীরাছ বণ্টনের সময় এতীমরা বুকে কিছু আশা নিয়ে হাযির হয়, তখন তাদের প্রতি যেন উপেক্ষার আচরণ না করা হয় সে বিষয়টিও আয়াতের অন্তর্ভুক্ত।

* আয়াতের শেষ অংশে আল্লাহ্র বিষয়ে তাক্বওয়া অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে, আর বলা হয়েছে قَـوْلٌ سَـدِيـدٌ এর কথা। এখানে সাদীদ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এমন কথা যাতে এতীমের প্রতি সহানুভ‚তি ও সান্ত¡না প্রকাশ পায়, আর তার মনে কষ্ট না হয়।

** কোরআন সম্পর্কে:  কোরআন সম্পর্কে স্বয়ং কোরআন কী বলে? কোরআনের সত্যতায় কোন সন্দেহ নেই। কোরআন হলো মানুষের জন্য হিদায়াতের মাধ্যম এবং মুত্তাকীনের জন্য হিদায়াতের উপর অবিচল থাকার মাধ্যম। কোরআন মানুষের অন্তর নরম করে। মুমিনের কোমলতা ও ঈমান বৃদ্ধি করে। কোরআন হলো মহাপ্রজ্ঞাপূর্ণ কিতাব। কোরআন হলো সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী। কোরআনকে আল্লাহ্ লাইলাতুল কদরে নাযিল করেছেন, যা হাযার মাসের চেয়ে উত্তম। কোরআন যদি আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো রচনা হতো তাহলে মানুষ অবশ্যই তাতে বহু স্ববিরোধ ও ভিন্নতা পেতো।..... 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা