বিসমিল্লাহির-রাহমানির রাহীম আল্লাহ
তা‘আলা ইরশাদ করেন, আর যখন তাহাদিগকে বলা হয়, তোমরা ঈমান আন, যেমন ঈমান আনিয়াছে লোকেরা, তখন তাহারা বলে, আমরা কি ঈমান আনিব যেমন ঈমান আনিয়াছে নির্বোধেরা! শোনো, আসলে তাহারাই নির্বোধ। তবে তাহারা তাহা জানে না।
ফায়দা-
এই আয়াতে মুনাফিকদের কথা বলা হইয়াছে যে, তাহারা নিজেদিগকে খুব বুদ্ধিমান মনে করিত। আর তাহাদের নিকট তাহাদের নিফাকই ছিলো বুদ্ধির প্রমাণ। কারণ নিফাকের মধ্যে তাহারা সাময়িক লাভ দেখিতে পাইত। পক্ষান-রে ছাহাবা কেরমাকে তাহারা মনে করিত নির্বোধ, আর তাহাদের মতে নির্বুদ্ধিতার প্রমাণ ছিল ছাহাবা কেরামের ঈমান গ্রহণ করা। কারণ বাহ্যত ঈমান তাঁহাদের জন্য বহু কষ্টভোগের কারণ ছিল। আল্লাহ তা‘আলা জোরাল ভাষায় তাহাদের ধারণা খণ্ডন করিয়া বলিতেছেন, আসল নির্বোধ ত তাহারা। কারণ দুনিয়াতেও তাহারা যিল্লতি ভোগ করিতেছে, আর আখেরাতের অনন- জীবনের যিল্লতি ত আছেই। পক্ষান-রে ছাহাবা কেরামের জন্য দুনিয়াতেও রহিয়াছে মর্যাদা ও সুখস্বাচ্ছন্দ্য, আর আখেরাতের অনন- সৌভাগ্য ত আছেই। এই আয়াতে মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহ তা‘আলা চিন-া-চেতনা, ঈমান-আকীদা এবং আখলাক ও চরিত্র সম্পর্কে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক একটি দিকনির্দেশনা দান করিয়াছেন। তাহা এই যে, কেয়ামত পর্যন- আনেওয়ালা উম্মতের জন্য ছাহাবা কেরামই হইলেন মানদণ্ড বা সত্যের মাপকাঠি। কিন' ইসলামের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য শত্রুরা শুরু হইতেই ছাহাবা কেরামকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করিয়া ইসলামের গোড়া কাটিবার চেষ্টা করিয়াছে। তবে আধুনিক মুনাফিকরা আরো কৌশলী, তাই তাহারা ঈমানের প্রসঙ্গ উত্থাপন না করিয়া চরিত্রগত দিক হইতে ছাহাবা কেরামের উপর আক্রমণ করিয়া বলিতে চায় যে, তাহারা সত্যের মাপকাঠি নহেন। অর্থাৎ উদ্দেশ্য অভিন্ন, আক্রমণের কৌশলটা শুধু ভিন্ন। সুতরাং এযুগেও আমরা বলিব, যাহারা ছাহাবা কেরামের পরিমণ্ডলের বাহিরে থাকিয়া দ্বীন বুঝিতে বা বুঝাইতে চায়, আর বলে যে, দ্বীন ও শরী‘আতের এই সকল অর্থ ছাহাবগণ বুঝিতে পারেন নাই তাহারাই আসলে নির্বোধ, অর্থাৎ দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ। আলোচ্য আয়াতের আলোকে উম্মতের একমাত্র করণীয় এই যে, তাহাদের ঈমান, আমল, আখলাক সবকিছু যেন ছাহাবা কেরামের অনুরূপ হয়, তবেই আল্লাহর নিকট উহা গ্রহণযোগ্য হইবে। আলোচ্য আয়াতে এ যুগের ওলামায়ে উম্মতের জন্যও রহিয়াছে বিরাট সান-্বনা। কারণ বোঝা যায় যে, ওলামায়ে ওম্মত সিলসিলাপ্রম্পরায় ছাহাবা কেরামের নিকট হইতে যাহা কিছু বর্ণনা করিবেন, দ্বীনের মনগড়া ব্যাখ্যাদাতারা এই বলিয়া তাহাদের কথা ঝুটলাইবে এবং তাহাদিগকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করিবে যে, আমরা কি ঐ সব ব্যাখা্যাই গ্রহণ করিব যাহা এই যুগের নির্বোধ লোকেরা বলিতেছে?
কোরআন সম্পর্কে
মশহূর ধারণামতে কোরআনের আয়াত-সংখ্যা হলো ছয়হাজার ছয়শ ছিষট্টি আয়াত। কিন' এটা সম্পূর্ণ ভ্রান- ধারণা, এর স্বপক্ষে দলিল-প্রমাণ বলতে কিছু নেই। সে যুগে ইলমুল ক্কিরাআতের যে সকল মারকায ছিলো সেসব মারকাযের ইমাম ক্কারীগণ কোরআনের আয়াত গণনা করেছেন, তবে ওয়াকফ-এর তারতম্যের কারণে তাদের গণনায় কিছু পার্থক্য দেখা দিয়েছে। কুফার ক্কারীগণের গণনা অনুযায়ী কোরআনের আয়াত-সংখ্যা হলো ছয়হাজার দুইশ বত্রিশ।