আল কুদসসংখ্যা (৩/২)

আল কুদসসংখ্যা (বিশেষ).

বেলফোরঘোষণা কী ও কেন?

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

উপরে প্রথমে হলো তৎকালীন বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার বেলফোরের কাছে ইহুদি ধনকুবের ও বেংকার লর্ড রথচাইল্ডের লেখা পত্রের অনুলিপি। দ্বিতীয়টি হলো বেলফোরের স্বাক্ষর করা সেই পত্র যা তিনি লিখেছিলেন ইহুদিবাদী ঐ লর্ডকে, একটি ইহুদি আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, যা আজ বেলফোর ঘোষণানামে পরিচিত। মাত্র ৬৭ শব্দের একটি ঘোষণা। কিন্তু সময় প্রমাণ করছে এটি আসলে ছিলো মুসলিম উম্মাহর বুকে বিঁধানোর জন্য শান দেয়া ৬৭টি খঞ্জর। ষাটষট্টি শব্দের সেই খঞ্জরের আঘাতে আজো রক্ত ঝরছে মুসলিম উম্মাহর বুক থেকে।

বেলফোর লিখেছেন। ‘মহামান্য বৃটিশ রাজার সরকার ফিলিস্তীনে ইহুদিদের জন্য একটি জাতীয় বসতি স্থাপনের বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এবং এই লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। এটা পরিষ্কারভাবে বলা হচ্ছে, এমন কিছুই করা হবে না যাতে ফিলিস্তীনে বিদ্যমান অ-ইহুদি সম্প্রদায়ের নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার ক্ষুন্ন হয়, অথবা অন্যকোন দেশে বসবাসকারী ইহুদিদের উপভোগকৃত অধিকার ও রাজনৈতিক অবস্থানের ক্ষতিসাধন করে।’

বস্তুত বেলফোর ঘোষণার উদ্দেশ্য ছিলো একটি ভূখণ্ডের বৈধ অধিবাসিদের উৎখাত করে সেখানে অন্য একটি জনগোষ্ঠীকে স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দেয়া, যার কোন আইনগত অধিকার বা নৈতিক বৈধতা বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের ছিলো না। কারণ নিজেদের তৈরী আইনের বলেই তাদের দায়িত্ব ছিলো শুধু ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত অঞ্চলের জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা।

বেলফোর ঘোষণার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যটা তাহলে কী ছিলো? সেটা বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে বেলফোর ঘোষণারও পিছনের দিকে।

ভূমধ্যসাগরের পূর্ব-উপকূল, ভারতবর্ষ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে থাকা বৃটিশ উপনিবেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগের জন্য সুয়েজখালের গুরুত্ব ছিলো অপরিসীম। যতদূর মনে পড়ে, এখন হাওয়ালা দিতে পারছি না, হযরত ওমর রা. কঠোরভাবে নিষেধ করেছিলেন যখন তাঁর সামনে সুয়েজের খাল খননের প্রস্তাব করা হয়েছিলো। তিনি খোলাছা ছিলো সম্ভবত এরকম, ‘খাল কেটে কুমির আনার চিন্তা করো না।’ তো সেই সুয়েজই কাল হয়ে দাঁড়ালো মুসলিম উম্মাহর জন্য। সুয়েজের আশেপাশে বৃটিশের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে এমন বিশ্বস্ত মিত্রের প্রয়োজন বৃটিশ তীব্রভাবে অনুভব করছিলো। মূলত সেখান থেকেই বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের মাথায় একটি বিভাজক রাষ্ট্রের ধারণা জন্ম লাভ করে। এই বিভাজক রাষ্ট্রটির আরো কাজ হবে এশিয়া ও আফ্রীকার মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরী করা যাতে এই রাষ্ট্রগুলো কখনো ঐক্যবদ্ধ না হতে পারে।

অন্যদিকে ইহুদিবাদী শক্তির স্বপ্ন ছিলো যে কোন মূল্যে ফিলিস্তীনে ইহুদিদের জন্য একটি বাসভূমি প্রতিষ্ঠা করা যা তারা বহু চেষ্টা করেও সুলতান আব্দুল হামীদের কারণে পারেনি। এভাবে ইহুদিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ উভয়ের স্বার্থ একত্র হয়ে যায়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ উভয় স্বার্থকে আরো কাছে আসার সুযোগ করে দেয়। কেননা যুদ্ধে জয়লাভের জন্য তখন বৃটেনের প্রয়োজন ছিলো আমেরিকাকে যে কোন মূল্যে মিত্রশক্তির পক্ষে আনা, যা শুধু মার্কিন ইহুদি লবির পক্ষেই সম্ভব ছিলো। ইহুদিবাদী চক্র এটাকে অত্যন্ত সুবর্ণ সুযোগ মনে করে। বিশ্ব ইহুদিবাদী সংস্থার প্রধান থিয়োডর হার্জেল ১৯০২ সালেই বলেছিলেন, আমাদের যদি ফিলিস্তীন দাও, আমরাই হতে পারি তোমাদের কথিত বিভাজক রাষ্ট্র।

গোপন সমঝোতার ভিত্তিতে মার্কিন ইহুদি লবির জোর প্রচেষ্টায় আমেরিকা মিত্রশক্তির পক্ষে যোগ দেয় ১৯১৭ সালের মার্চে। এরই প্রতিদান হচ্ছে ২/১১এর বেলফোর ঘোষণা।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা