আল কুদসসংখ্যা (৩/২)

আল কুদসসংখ্যা (বিশেষ).

জেরুসালেমট্রাজেড, বিক্ষোভে উত্তাল মুসলিবিশ্ব

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

যা আশঙ্কা করা হয়েছিলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে যে সম্ভাব্য ভয়াবহ পরিস্থতি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিলো তাই এখন ঘটে চলেছে এবং দিন দিন তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। জেরুসালেমসহ সমগ্র ফিলিস্তীন, সমগ্র আরবভূখণ্ড, গোটা মুসলিম বিশ্ব আজ ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে। ভয়ঙ্কর কোন আগ্নেয়গিরি যেন গর্জন করে অগ্নি ও লাভা উদ্গীরণ করতে শুরু করেছে। কেউ জানে না, এর শেষ কোথায়? কী এর শেষ পরিণতি?

ইসরাইল ও মার্কিনবান্ধব আরব-শাসকরা এখন জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তারা মৌখিক প্রতিবাদ  জানিয়ে জনগণের সঙ্গে কিছুটা হলেও সম্পর্ক রক্ষা করার  চেষ্টা করছেন। এমনকি ইহুদি মায়ের সন্তান বলে কথিত মিশরের অবৈধ সামরিক জান্তা আব্দুল ফাত্তাহ সিসি পর্যন্ত জনরোষ ও গণছিছি থেকে আত্মরক্ষার পথ খুঁজছেন কাগুজে প্রতিবাদের মধ্যে। কিন্তু ইস্তাম্বুলসম্মেলন তাদের মুখোশ যেন ছিঁড়ে ফেলেছে মুখ লুকোবার কোন উপায় আর থাকছে না।

নিরস্ত্র প্রতিবাদী জনতার উপর সশস্ত্র নৃশংসতার ঘটনা ঘটছে প্রতিদিনই। মানুষ নিহত হচ্ছে, আহত হচ্ছে। আর প্রতিটি হৃদয়ে হচ্ছে রক্তক্ষরণ। ঘৃণা ও বিদ্বেষ যেন টগবগ করছে এবং  বেরিয়ে আসার পথ খুঁজছে। সবচে’ গুরুতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে অবরুদ্ধ গাজা অঞ্চলে। গুলি ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেও বিক্ষোভ দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। শেষপর্যন্ত আশ্রয় নিতে হয়েছে বিমানহামলার। হয়ত অস্ত্রের ভাষার কাছে ক্ষুব্ধ জনতার প্রতিবাদের ভাষা একসময় দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে যাবে, কিন্তু ঘৃণা দিন দিন আরো পুঞ্জীভূতই হতে থাকবে।

ইন্তিফাদা মানে গণঅভ্যুত্থান বা কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত জনতার সর্বাত্মক প্রতিরোধ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দখলদার বা স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও প্রতিরোধের অসংখ্য নযির রয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তীনের নিরস্ত্র জনতার ইনতিফাদা প্রতিরোধের ইতিহাসে এক অনন্য মর্যাদার অধিকারী। ফিলিস্তীনের শিশু-কিশোর ও তরুণ প্রজন্ম শুধু পাথর হাতে কীভাবে বুলেটের আঘাতের জন্য বুক পেতে দাঁড়াতে পারে? কীভাবে বুকের রক্তে রাজপথ লাল করতে পারে তা চোখে না দেখে বিশ্বাস করা কঠিন। দখলদার ইহুদি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রথম ইনতিফাদা ঘটেছিলো ১৯৮৭ সালে এবং অব্যাহত ছিলো ১৯৯৪ পর্যন্ত। ফিলিস্তীনের ইসলামী প্রতিরোধ শক্তির নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত ঐ ইন্তিফাদা ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলের অস্তিত্ব কাঁপিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ- তাবাদী নেতৃত্ব আপোষকামিতার আশ্রয়গ্রহণ করার কারণে বৃহত্তম ঐ ইনতিফাদা সফল পরিণতিতে          উপনীত হতে ব্যর্থ হয়। তবে বিশ্বকে নাড়া দিতে এবং ইহুদী সন্ত্রাসবাদকে চ্যালেঞ্জ করতে পেরেছিলো, এটাই ছিলো প্রথম ইনতিফাদার অনেক বড় বিজয়।

দ্বিতীয় ইনতিফাদা শুরু হয়েছিলো দুই হাজার সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর (২৭/৬/১৪২১ হি.) রোয বৃহস্পতিবার। ইহুদী সন্ত্রাসবাদী ডানপন্থী লিকুইড পার্টির নেতা এরিয়েল শ্যারোন মসজিদুল আকছায় প্রবেশের প্রতিবাদে হামাস দ্বিতীয় ইনতিফাদার ডাক দিয়েছিলো। শ্যারোন ‘মাত্র’ তিনহাজার পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মসজিদুল আকছায় আসেন। তার এ সফরের উদ্দেশ্য ছিলো মসজিদুল আকছা ভেঙ্গে তার ধ্বংসাবশেষের উপর তথাকথিত উপাসনালয় নির্মাণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।

ফিলিস্তীনের মুত্যুভয়হীন জিহাদ ও শাহাদাতের প্রেরণায় উদ্দীপ্ত শিশু-কিশোর, তরুণ এবং সাধারণ জনগণ অভাবনীয় ত্যাগ ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ইন্তিফাদা অব্যাহত রাখেন।

তৃতীয় ইন্তিফাদার ডাক আসে ফিলিস্তীনের ইসলামী প্রতিরোধ সংস্থা হামাসের পক্ষ হতে, যা ইসরাইলি সেনাদের নিষ্ঠুরতার সমান্তরালে ধীরে ধীরে ভয়াবহ আকার ধারণ করে চলেছে। এর মধ্যেই দশজনের মত ফিলিস্তীনী যুবক শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার।

১৫ই ডিসেম্বর শুক্রবার অধিকৃত ফিলিস্তীন ও জেরুসালেমসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রচ- বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এ ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে এবং সহিংসতার দিকে যাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের পর্যবেক্ষকগণ জানিয়েছেন।

শুক্রবার জুমার পর বিক্ষোভের ডাক দেয়া হয়েছিলো আগে থেকেই। এ উপলক্ষে গাজা, পশ্চিমতীর, ও বাইতুল মাকদিসে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।

পূর্বজেরুসালেমের আলআকছা মসজিদে জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পর শত শত ফিলিস্তীনী রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। একপর্যায়ে মিছিলটি পুরোনো শহরে প্রবেশের চেষ্টা করে কিন্তু ইসরাইলী বাহিনীর কঠোর বাধাপ্রদানের কারণে মিছিলটি সেখানে যেতে পারেনি। বাধার মুখে সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে ইমামুল আকছা-এর পক্ষ হতে বলা হয়, শত শত বছর ধরে আলআকছা আমাদের ছিলো, জেরুসালেম আমাদের ছিলো, ফিলিস্তীন আমাদের ছিলো, এখনো আমাদের আছে, কেয়ামত পর্যন্ত আমাদের থাকবে। সুতরাং তাতে হস্তক্ষেপের অধিকার ইসরাইল বা আমেরিকা কারো নেই।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পবিত্র জেরুসালেমকে একতরফা -ভাবে ইসরাইলের রাজধানী বলে ঘোষণা করার পরিণতিতে মুসলিমবিশ্বে, এমনকি অমুসলিম দেশেও বিক্ষোভ হচ্ছে, যা ক্রমেই সহিংসতার দিকে চলে যাচ্ছে। হিজবুল্লাহনিয়ন্ত্রিত লেবাননে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। ট্রাম্পের ছবিতে আগুন দিয়ে এবং দূতাবাস দখলের চেষ্টার মাধ্যমে মানুষ তাদের ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করছে।

লেবানন যখন বিক্ষোভে উত্তাল  তখন কায়রোতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে ‘অস্থিতিশীলতার উৎস’ বলে কঠোর নিন্দাজ্ঞাপন করেছেন, যদিও মিয়ানমার ও ফিলিস্তীন, দু’খানে দুই চেহারার পুতিনকে  দেখে জনগণ বুঝতে পারছে না পুতিনের কোন্ চেহারাটি সত্য। আসল কথা হলো, বিবেকবর্জিত আধুনিক কূটনীতিতে স্বার্থই হলো মূল সত্য।

মিশরের বিভিন্ন শহরে সেনাবাহি -নীর তাক করা অস্ত্রের মুখেও ক্রুদ্ধ জনতা রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে। তারা বিভিন্ন মার্কিন প্রতিষ্ঠানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে আমেরিকার প্রতি তাদের ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করছে।

মার্কিনবান্ধব আরবদেশগুলোর রাজপথে কোন বিক্ষোভ না হলেও শোকাহত জনগণের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সবচে’ বেশী ‘শান্ত’ অবস্থা বিরাজ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিয় রাজতন্ত্রের দেশ সউদী আরবে, সব অর্থেই যাকে বলা যায় ‘কবরের শান্তি’। হারামের ইমামগণ জোরেশোরে প্রচার করছেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, এখানে সন্ত্রাসের স্থান  নেই।

তারা বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন, বা ভুলে থাকতে চাচ্ছেন, ইসলাম যেমন শান্তির ধর্ম তেমনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠারও ধর্ম। জালিমের সামনে হককথা বলার শ্রেষ্ঠ জেহাদেরও ধর্ম।

মতলবী বয়ান কায়েমি স্বার্থ রক্ষায় সাময়িক সফল হলেও জনগণের ভক্তি ও শ্রদ্ধা থেকে চিরতরে বঞ্চিত হতে হয়, এ সত্য যত দ্রুত উপলব্ধিতে আসে ততই কল্যাণ।

পাকিস্তানের করচী, লাহোর, পেশোয়ার ও ইসলামাবাদ গত ১৩ই ডিসেম্বর বিক্ষোভের নগরীতে পরিণত হয়েছিলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংযম প্রদশনের কারণে বিক্ষোভ শুধু শ্লোগানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। ইসরাইল নিপাত যাক, আমেরিকা তুমি ধ্বংস হও, জেরুসালেম আমাদের রাজধানী, প্রভৃতি শ্লেগানে প্রতিটি রাজপথ ছিলো মুখরিত। ইসলামাবাদে বিক্ষোভ মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। ফলে উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাথর নিক্ষেপ করে এবং টায়ায়র জ্বালিয়ে ...। পুলিশের দৃঢ়তা ও সংযমের কারণে পরিস্থিতি খারাপের দিকে মোড় নিতে পারেনি। পকিস্তানের সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষ শুরু থেকেই ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। এটিও জনরোষ নিয়ন্ত্রণে থাকার একটা বড় কারণ বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

ভারতে বিক্ষোভের মূলকেন্দ্রগুলো হচ্ছে নয়াদিল্লী, লৌখনো, কানপুর, কোলকাতা ও হায়দারাবাদ। নয়াদিল্লীতে পুলিশের বাড়াবাড়ির কারণে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছে, তবে তা গুলির আঘাতে, না টিয়াশেলের আঘাতে জানা যায়নি।

মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখিস্তান, উজবেকিস্তান সর্বত্রই আছড়ে পড়ছে বিক্ষোভের উত্তাল ঢেউ।

তাবেদার শাসকনিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের কাবুলে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। আফগান পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহণে বাধ্য হয়েছে অনেকেটা জনরোষেরই ভয়ে।

তুরস্কের কথা আলাদা করে বলতেই হবে। বস্তুত আরব শাসকদের শীতল অনুভূতির বিপরীতে তুরস্কই মার্কিন রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সাহসিকতা ও নির্ভীকতার সঙ্গে ধরে রেখেছে মুসলিম উম্মহার প্রতিবাদী চেহারা। তুরস্কের উদ্যোগ আয়োজনের কারণেই আজ অনুষ্ঠিত হতে পেরেছে ওআইসির জরুরি শীর্ষ সম্মেলন এবং সম্ভব হয়েছে কঠোর ও হুঁশিয়ারিমূলক অবস্থান গ্রহণ করা, যার কারণে  পাশ্চাত্য বুঝতে পেরেছে মুসলিম বিশ্বের শিরার স্পন্দন। তুরস্কের প্রেডিন্টেও ঘোষণা করেছিলেন, ওআইসিসম্মেলনের মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানিয়ে দিতে চান জেরুসালেম ইস্যুতে মুসলিমবিশ্ব একতাবদ্ধ। সুতরাং এত সহজ হবে না জেরুসালেমকে হজম করা।

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা এবং বাণিজ্যিক শহর ইস্তাম্বুলে প্রতিদিনই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে হাজার হাজার জনতার। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে তুরস্কের জনগণ স্পষ্টরূপেই বুঝিয়ে দিয়েছে যে, জানকবুল করে তারা এসে দাঁড়িয়েছে তাদের প্রাণপ্রিয় নেতার ডাকে। ফিলিস্তীনের জন্য আগেও তারা প্রাণ দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে। জিহাদের ডাক এলে এখনো তারা প্রস্তুত বুকের রক্ত ঢেলে দিতে।

হয়ত তুর্কী জনতার এ জাযবার কারণেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অন্যান্য দেশের বিক্ষোভ-প্রতিবাদকে হালকাভাবে নিলেও তুরস্কের বিক্ষোভ-প্রতিবাদকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করছে। আবার বিক্ষোভ প্রতিবাদের উপর  বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনও প্রচার করছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলিমদের নাগরিক অধিকার এবং সহায়তাদানকারী বৃহত্তম সংগঠন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন ইনিস্টিটিউট ও আরো দশটি সংগঠন যৌথ ঘোষণা দিয়েছিলো ১৫ই ডিসেম্বর শনিবার হোয়াইট হাউযের সামনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠানের। হাজার হাজার মানুষ শনিবার ভোর থেকে হোয়াইট হাউজের সামনে জমায়েত হতে শুরু করে। সংবাদমাধ্যমের মতে এটি ছিলো সাম্প্রতিককালের সবচে’ বড় বিক্ষোভ সমাবেশ। সমাবেশের আয়োজকবৃন্দ, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার হঠকারী সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবী জানিয়েছেন।

আমেরিকান মুসিলম ফর প্যালেস্টাইনের পরিচালক উসামা আবু ইরশাদ বলেন, ট্রাম্প অথবা তার বন্ধু যুদ্ধাপরাধী নেতানিয়াহু মানুন বা না মানুন, ফিলিস্তীনের চিরস্থায়ী রাজধানী হলো জেরুসালেম।

তিনি আরো বলেন, জেরুসালেম কখনোই ট্রাম্প বা ইসরাইলের সম্পত্তি নয় এবং ফিলিস্তীনীদের কাছ থেকে এটি ছিনিয়ে নেয়ার কোন অধিকার নেই কারো।

ট্রাম্পের জেরুসালেমঘোষণার প্রতিবাদে বিশ্বে এ পর্যন্ত যত বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ হচ্ছে গত ১৮ই ডিসেম্বর রোববার ইন্দোনেশীয় রাজধানী জাকার্তায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ- সমাবেশ। আন্তর্জাতিক সংবাদ-মাধ্যমের মতে অন্তত আশি হাজার মানুষ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বিক্ষোভে অংশ নেয়। তবে স্থানীয় গণমাধ্যমের মতে বিক্ষোভীদের প্রকৃত সংখ্যা হবে দ্বিগুণ। জাকার্তার শীর্ষ মুসলিম নেতৃবৃন্দ এ বিক্ষোভের ডাক দেন। বিশ্বের বৃহত্তম এ মুসলিম দেশটিতে দশমদিনের মত বিক্ষোভসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং অনির্দিষ্টকাল তা চলবে বলে জানানো হয়।

সমাবেশ থেকে মার্কিন পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হয় ইন্দোনেশিয়া ও বিশ্বমুসলিমের প্রতি। ইন্দোনেশিয়া উলামা কাউন্সিলের নেতা আনোয়ার আব্বাস পণ্যবর্জনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘জেরুসালেমঘোষণা’ বাতিল না করা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বর্জন করুন। তাদের পণ্যের উপর নির্ভশীলতা পরিত্যাগ করুন।

এসময় ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিস্তীনের পতাকা হাতে বিক্ষোভকারী বিপুল জনতা ‘বর্জন বর্জন’ গর্জনে আকাশ প্রকম্পিত করে তোলেন।

জাকার্তা পুলিশ জানায়, জাকার্তার জাতীয় স্মৃতিশৌধ পার্ক থেকে মার্কিন দূতাবাস পর্যন্ত প্রায় তিনকিলোমিটার এলাকায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিরাপত্তা-বাহিনীর বিশহাজার সদস্য বিক্ষোভ এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলো।

বিক্ষোভসমাবেশে ধর্মীয় নেতাদের পক্ষ হতে একটি ‘ফরমান’ পড়া হয়। তাতে বলা হয়, ‘ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর যে স্বীকৃতি দিয়েছেন, অবিলম্বে তা বাতিল করতে হবে। এটা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের প্রতি সরাসরি আঘাত। এটা ফিলিস্তীনিদের মানবাধিকারের প্রতি অপমানজনক আঘাত। এটা শান্তিপ্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করে দিয়েছে।

বৃটেনের সবচে’ বড় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে লন্ডনে। তবে  বিক্ষোভের আয়োজনের পিছনে কোন মুসলিম সংস্থা ছিলো না। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার ডাকে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, বৃটেন ও বৃটিশ জাতি ট্রাম্পের এ অপরাধে সমান অংশীদার। কারণ একশবছর আগে বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার বেলফোর ‘ ‘বেলফোর ডিক্লারেশন’-এর মাধ্যমে এ মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছিলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে শতবর্ষপূর্তি উদযাপন করে তাতে সমর্থন যুগিয়েছেন। বৃটেনের উচিত ফিলিস্তীনী জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

বক্তাগণ আরো বলেছেন, ফিলিস্তীনের ভূমি না তখন বৃটেনের সম্পত্তি ছিলো, না এখন তা ট্রাম্পের ‘রিয়েলস্টেট সম্পত্তি’। সুতরাং ইসরাইলকে তা দান করার অধিকার তখনো কারো ছিলো না, এখনো নেই।

জাপানের রাজধানী  টোকিওতেও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদসমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। উক্ত সমাবেশে বিভিন্নদেশের মুসলিম কম্যুনিটি যেমন অংশ নিয়েছে  তেমনি জাপনিজ মানবাধিকার কর্মীরাও অংশ গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়।

উল্লেখ্য, জাপানিজ গণমাধ্যম টোকিউর বিক্ষোভ ও খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছে।*

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা