আল কুদসসংখ্যা (৩/২)

আল কুদসসংখ্যা (বিশেষ).

ওআইসির জরুরি শীর্ষ সম্মেলন সমাপ্ত ঃ বিশেষ ইশতিহার ঐতিহাসিক ঘোষণা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

ভবিষ্যতের প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় এবং  ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে তুরস্কের বাণিজ্যিক নগরী ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ১৩ই ডিসেম্বরের জরুরি শীর্ষ সম্মেলন সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। সম্মেলনশেষে প্রকাশিত ইশতিহারে পূর্বজেরুসালেমকে ফিলিস্তীনের রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছে। খরব আলাজাযিরা, বিবিসি, মিডলইস্ট আই ও আনাদোলু।

নিজেদের সব মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে রেখে সর্বসম্মত এ ঘোষণা দেয় মুসলিমরাষ্ট্রগুলো।

ইশতিহারে ফিলিস্তীনী রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়া এবং পূর্বজেরুসালেমকে এ রাষ্ট্রের রাজধানীরূপে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সব দেশকে আহ্বান জানানো হয়।

এতে আলকুদস (জেরুসালেম) নগরীকে ইসরাইলের তথাকথিত রাজধানী ঘোষণায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের একতরফা সিদ্ধান্তের কঠোর নিন্দা করে বলা হয়, এটা আইনগতভাবে অবৈধ এবং ফিলিস্তীনী জনগণের ঐতিহাসিক জাতীয় অধিকারের উপর আঘাত। এ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি।

ইশতিহারে পূর্বজেরুসালেমকে ফিলিস্তীনের (ইসরাইলকর্তৃক) দখলকৃত রাজধানী হিসাবে ঘোষণা দিতে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের, আন্তর্জাতিক আইনের এ ‘ভয়াবহ লঙ্ঘনের’ বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তাপরিষদ কোন পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে  বিষয়টি জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে নেয়ারও প্রত্যয় ঘোষণা করা হয় ৫৭ দেশের প্রতিনিধিত্ব-কারী এই সংস্থার পক্ষ হতে।

এছাড়া ঘোষিত ইশতিহারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়,  যুক্তরাষ্ট্র তার এ অবৈধ সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না এলে এর যাবতীয় দায় তাকেই বহন করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পবিত্র নগরী জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানীরূপে স্বীকৃতি দেয়ার পর এই ইশতিহারকে মুসলিম বিশ্বের পক্ষ হতে সবচে’ সুনির্দিষ্ট শক্তিশালী পদক্ষেপ মনে করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ওআইসি হচ্ছে মুসলিম বিশ্বে এবং জাতিসঙ্ঘের পর বিশ্বে সবচে’ বৃহৎ সংস্থা। ওআইসির যে কোন ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করতে পারে। সংস্থাটির সদর দফতর সউদী আরবের জিদ্দায়। সউদী বাদশাহ এবং সউদী ক্রাউন প্রিন্সের সম্মেলনে যোগ না দেয়াটা ছিলো খুবই দুঃখজনক, তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে এর ফলে সম্মেলনের ভবিষ্যত কর্মপন্থা খুব একটা ব্যহত হবে বলে মনে হয় না, বরং সউদী আরবের নিজস্ব ভাবমর্যাদাই তাতে ভীষণভাবে ক্ষুণœ হবে।

উল্লেখ, ১৯৬৯ সালের ২১ আগস্ট চরমপন্থী ইহুদিদের দ্বারা আলমসজিদুল আকছায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটার পর জরুরি ভিত্তিতে সকল মুসলিম দেশের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে ওআইসি গঠিত হয়। তারপর থেকে ওআইসি নিয়মিত শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

তুরস্ক ওআইসির বর্তমান চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে জরুরি সম্মেলন ডাকা এরদোগানের পক্ষে সহজ হয়েছে বলে মনে করা হয়।

 

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে

ইস্তাম্বুলঘোষণার ভবিষ্যত

 

যুক্তরাষ্ট্্েরর গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল পলিসি ইনস্টিটিউট আয়োজিত সম্মেলনে বিশ্লেষকরা বলেছেন, ইসলামী সহযোগিতাসংস্থা ওআইসি পূর্বজেরুসালেমকে ফিলিস্তীনী রাষ্ট্রের রাজধানী হিসাবে যে ঘোষণা দিয়েছে তা স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তীনী জাতির জন্য ‘নতুন মোড়’ বলে প্রমাণিত হবে।

তুরস্কের বাণিজ্যিক রাজধানী ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ৫৭টি দেশের সংস্থা আয়োজিত সম্মেলনে পূর্বজেরুসালেমকে ফিলিস্তীনের রাজধানী ঘোষণার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশকেও অভিন্ন  সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। গবেষক ও পর্যালোচকগণ মনে করেন এ আহ্বান হচ্ছে এমন এক ‘কৌশলগত আক্রমণ’ যা ট্রাম্পবিরোধী আন্তর্জাতিক প্রচারণাকে অত্যন্ত জোরালো করবে।

তারা মনে করেন, ১৩ই ডিসেম্বর বুধবার অনুষ্ঠিত সম্মেলনের  ঘোষণা, যা ইতিমধ্যে ‘ইস্তাম্বুলঘোষণা’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে, এর মাধ্যমে জেরুসালেমকে ইসরাইলি রাজধানী হিসাবে মার্কিন স্বীকৃতির সিদ্ধান্তটি ইসলামী সহযোগিতাসংস্থা ও তার সদস্যদেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করলো।

গবেষক ও পর্যবেক্ষকগণ লক্ষ্য করেছেন যে, সউদী আরবের  নেতিবাচক ভূমিকা সত্ত্বেও ইস্তাম্বুল সম্মেলন অতীতের অন্যান্য সম্মেলনের তুলনায় সদস্যদেশগুলোর মধ্যে অনেক  বেশী উদ্যম, উদ্দীপনা ও প্রত্যয় সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।

উক্ত গবেষণা ইনিস্টিটিউটে বক্তব্য রেখেছেন মুসলিম অধিকারের পক্ষের সংগঠন কাউন্সিল অব আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস-এর প্রধান নিহাদ আওয়াদ। এরদোগানের বক্তব্য ‘মার্কিন সিদ্ধান্ত হচ্ছে ইসরাইলের রাষ্টীয় সন্ত্রাসের পুরস্কার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরদোগান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যে আহ্বান জানিয়েছেন, অবশ্যই তারা সে আহ্বানে সাড়া দেবেন এবং চীন ও রাশিয়ার মত দেশগুলো মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে উৎসাহ বোধ করবে।

ইনিস্টিটিউটে একই প্যানেলে  দেয়া বক্তব্যে সংবাদবিশ্লেষক মার্টিন সিয়েফ ‘অতীতে চারশ বছর উছমানী সালতানাতের অধীনে জেরুসালেম শান্তিপূর্ণ ছিলো’ উল্লেখ করে বলেন, ইস্তাম্বুল বৈঠকের বড় ধরনের গুরুত্ব রয়েছে। ঘোষণাটি দশকের পর দশক প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে এবং অঞ্চলটির পরিস্থিতিতে নতুন  মোড় আসবে। এর রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, কিংবা কৌশলগত প্রয়োগ ইতিবাচক ফলাফল হাজির করতে সক্ষম হবে।

প্রায় সকল পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক বলেছেন, ‘আমেরিকা বড় ধরনের ভুল করেছে’, ইস্তাম্বূলসম্মেলন এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা