রবিউছ ছানী ১৪৪৫ হিঃ

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার

আগে আমরা জেনেছি অগ্ন্যাশয় সম্পর্কে; আজ জানবো অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার সম্পর্কে। অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার খুবই জটিল ও প্রাণঘাতী রোগ। সুতরাং এ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা এবং সতর্ক থাকা খুবই জরুরি।অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার মানে কী? পাকস্থলীর পিছনের গহŸরে বিদ্যমান অগ্ন্যাশয়ের কলায় যখন ক্যানসারের কোষ জন্ম নেয়, আর আগ্ন্যাশয়ের কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে গিয়ে পিÐ আকার ধারণ করে তখন বলা হয়, অগ্ন্যাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে।চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতায় বলে, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার সাধারণত চল্লিশ বছর বয়সের আগে হয় না। অনিয়ন্ত্রিত জীবনের কারণে রোগের উপযোগী পরিবেশে অনেক আগে থেকেই এটা হতে পারে। অগ্ন্যাশয়ে ক্যানসারের বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করে ধূমপান ও তামাকসেবন, মদ ও মাদকাসক্তি, ওজনবৃদ্ধি বা স্থ‚লত্ব এবং ডায়াবেটিশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা।ক্যানসারবিশেষজ্ঞরা বলেন, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে মহিলাদের চেয়ে পুরুষেরা বেশী আক্রান্ত হয়, তবে এর দেহগত কারণ কী, তা এখনো বলা সম্ভব হচ্ছে না।অগ্ন্যাশয়ে ক্যানসারের লক্ষণ ও উপসর্গ সম্পর্কে বলা হয়, উপরের পেটে ব্যথা ও বমি বমি ভাব, এ দু’টি হচ্ছে প্রধান উপসর্গ ও লক্ষণ, যা দেখা দেয়ামাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের   কাছে যাওয়া অপরিহার্য। দেহের চামড়া হলুদ হয়ে যাওয়া, এটিও একটি উপসর্গ, যা অনেক সময় জন্ডিসের উপসর্গ বলে ভুল করা হয় এবং ভুল চিকিৎসা দেয়া বা নেয়া হয়।শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অগ্ন্যাশয় সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. আখতার আহমেদ বলেন, অগ্ন্যাশয় হচ্ছে আমাদের দেহের একটি গøান্ড বা গ্রন্থি, যা পাকস্থলীর পিছনে আড়াআড়ি ভাবে থাকে। এই গøান্ড বা গন্থির প্রধান কাজ আসলে দু’টি, ইনসুলিন তৈরী করা এবং হজমের রস তৈরী করা।লক্ষণ ও উপসর্গ সম্পর্কে তিনি বলেন, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে লক্ষণ ও উপসর্গ নির্ভর করে, অগ্ন্যাশয়ের কোন অংশে ক্যানসার হয়েছে তার উপর। আমরা জানি, অগ্ন্যাশয়ের তিনটি ভাগ আছে, মাথা, দেহ ও লেজ। এর মধ্যে দেহে ও লেজে, মানে শরীরের বামদিকে যদি ক্যানসার হয় তাহলে শুধু পেটের বামপাশে তীব্র ব্যথা অনুভ‚ত হয়, যা পিঠেও ছড়িয়ে পড়ে।পক্ষান্তরে ক্যানসার যদি হয় অগ্ন্যাশয়ের মাথায়, অর্থাৎ শরীরের ডান দিকে তাহলে উপসর্গ হলো জন্ডিস হওয়া, হজমে সমস্যা বা অরুচি হওয়া এবং ব্যাখ্যাহীনভাবে ওজন কমে যাওয়া।অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার দেরীতে সনাক্ত হওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশে^ই অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার শেষ পর্যায়েই ধরা পড়ে। যদি যথাসময়ে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার শনাক্ত হয় তাহলে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের চিকিৎসা হলো সার্জারি, এক্ষেত্রে নিরাময়ের সম্ভাবনা থাকে বলে আমি মনে করি। পক্ষান্তরে পরবর্তী পর্যায়ে বলতে গেলে নিরাময় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন পলিয়েটিভ অপারেশন করা হয়, যা...। এর পরবর্তী পর্যায়ে শুধু চেষ্টা করা হয় রোগীর কষ্ট ও যন্ত্রণার উপশম।  অগ্ন্যাশয়ের বেশীর ভাগ ক্যানসারের উৎপত্তি হয় ঐ অংশ থেকে যা পাচক রস উৎপন্ন করে।ক্যানসারে মৃত্যুর হার পৃথিবীতে এখন শীর্ষরোগগুলোর একটি, তবে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে মৃত্যুর হার সপ্তম স্থানে। ২০১২ সালে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে মৃত্যু হয়েছে তিনলাখ ত্রিশহাযার ব্যক্তির, যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, প্রকৃত সত্য এই যে, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার চিকিৎসাযোগ্য ব্যাধি নয়, তবে উপশমক চিকিৎসা, বা কিছু পরিচর্যামূলক ব্যবস্থা দেয়া হয়, যাতে ব্যথা ও যন্ত্রণা কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। এ রোগের কারণে মৃত্যুসম্পর্কে চিকিৎসক-সমাজ এমন কিছু কথা বলেন, যা আমরা বলি না, বলা উচিতও মনে করি না। কারণ মৃত্যু যথাসময়েই আসবে, না আগে, না পরে। আর মৃত্যুর সময়ক্ষণ বলা মানুষের কাজ নয়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, সাধারণত অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা ও পরিচর্যা ছাড়া একবছর বাঁচতে পারে ২৫ভাগ। পক্ষান্তরে উপশমক চিকিৎসা ও পরিচর্যার মাধ্যমে পাঁচবছর বাঁচে ৫ভাগ। তবে ভাগ্য -ক্রমের প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ-নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বাঁচার সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ ভাগ। অবশ্য একথাও স্বীকার করা হয় যে, কোন কোন রোগী (আল্লাহ্র কুদরতে) পঞ্চাশ বছরও বেঁচে ছিলেন। পরিশেষে আল্লাহ্র কাছে আমাদের সকাতর প্রার্থনা, আল্লাহ্ যেন আমাদের সবাইকে সমস্ত রোগ বালাই থেকে, বিশেষ করে যাবতীয় সাইয়িউল আসকাম (কঠিন ও মন্দরোগ) থেকে হেফাযত করেন, আমীনচিকিৎসকগণ চিকিৎসার পাশাপাশি পরিচর্যামূলক ব্যবস্থার কথা সবসময় বলেন। তবে আমরা এখানে এমন একটি ব্যবস্থার কথা বলবো, যার সঙ্গে চিকিৎসাশাস্ত্রের কোন পরিচয় নেই, তবে আমাদের পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পেয়ারি উম্মতকে তা শিখিয়েছেন। সেটা হলো, এই দু‘আটি বেশী বেশী পড়াÑاللهُمَّ إنِّـي أَعُـوذُ بِـكَ مِـنَ الـبَـرَصِ والـجُـنُـونِ والـجُـذام، وَمِـنْ سَـيِّءِ الأسْـقامআয় আল্লাহ্, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শে^তকুষ্ঠ থেকে এবং মস্তিষ্কবিকৃতি থেকে এবং কুষ্ঠরোগ থেকে এবং যাবতীয় মন্দরোগ থেকে।আরেকটি দু‘আ হলোÑاللهُمَّ اشْـفِـنـا وَاشْـفِ مَـرضـانـا وَ مَـرْضَـى الـمُـسْـلِـمـيـنَআয় আল্লাহ,্ আপনি শেফা দান করুন আমাদের এবং আমাদের অসুস্থদের এবং মুসলমানদের মধ্যে যারা অসুস্থ, তাদের।তাছাড়া সাধ্যমত রোগীদের কুশল জিজ্ঞাসা করা, সেবা করা এবং যথাসাধ্য চিকিৎসায় সাহায্য করা।এর দ্বারা আশা করা যায়, আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদেরকে যাবতীয় রোগব্যাধি থেকে বিশেষভাবে দূরারোগ্য ও কঠিন ব্যাধি থেকে নিরাপদ রাখাবেন। আমীন।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা