রজব ১৪৩৯ হিঃ (৩/৩)

কাশগর ও কায়রো

হেকমত ইয়ারের নতুন হেকমত!!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

¡গুলবুদ্দিন হেকমত ইয়ার আফগানিস্তানের অপরিচিত কোন মুখ নন। একসময় তার একটা গৌরবময় ভূমিকা ছিলো আফগানিস্তানের স্বাধীনতাযুদ্ধে। হিজবে ইসলাম পার্টির প্রধান, শুধু এই পরিচয়ে তাকে আবদ্ধ করা সম্ভব নয়। দলকে অতিক্রম করে তার পরিচয় সাহস ও বীরত্বে এবং লড়াকু ব্যক্তিত্বে পরিব্যাপ্ত হয়েছিলো। তাকে বলা হতো বীর মুজাহিদ, যেমন আহমদ মসঊদকে বল হতো শেরে পাঞ্জশির।

কিন্তু সবকিছু পাল্টে গেলো ক্ষমতার দ্বন্দ্বে, যা ছিলো আফগানিস্তানে তালিবান-উত্থানের প্রধান কারণ। হিকমত ইয়ার সবকিছু ভুলে তালিবানের বিরোধিতায় নেমে পড়েন। মসঊদ তো রীতিমত মার্কিন জোটের পক্ষে সশস্ত্র ভূমিকা পালন শুরু করেন। ঘটনাপ্রবাহের এক পর্যায়ে হেকমত ইয়ার স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান। গত জুন মাসে তিনি তার স্বেচ্ছানির্বাসন থেকে ফিরে এসেছেন। অবশ্য এর আগে তালিবান বিরোধিতার পুরস্কার হিসাবে আমেরিকা এবং তার ইশারায় কাবুলের পুতুলসরকার হিকমত ইয়ার ও তার দলকে সন্ত্রাসের কালো তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত এক শান্তিচুক্তির অধীনে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করেন।

পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, মূলত আমেরিকার ইঙ্গিতেই তিনি দেশে ফিরেছেন। বর্তমান তাবেদার সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হিসাবে আমেরিকা এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করা হয়।

দেশে ফেরার পর কিছু দিন তিনি নীরব ছিলেন, সম্ভবত অবস্থা পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে।

সম্প্রতি ৬৯ কছর বয়সী এই সাবেক মুজাহিদ প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন পরবর্তী পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের। এক বিবৃতিতে বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আফগানিস্তানে যথাসময়ে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজন। ইতিমধ্যে তিনি জনসভাও করতে শুরু করেছেন, যাতে প্রচুর লোকসমাগম হচ্ছে বলে খবরে প্রকাশ। সম্প্রতি পূর্বাঞ্চলীয় খোস্ত প্রদেশে এক বিরাট জনসভায় তিনি বলেন, দেশে ক্ষমতা ও উন্নয়ন কর্মকা-ের সুষম বণ্টনের জন্য যথাযথ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তিনি তালিবানের বিপুল প্রভাবের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, দেশের মধ্যে আরেক দেশ চলছে। এর অবসান হতে হবে।

উল্লেখ্য, ১৬ বছর আগে এক রক্তক্ষয়ী সামরিক অভিযানের মাধ্যমে আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে তালিবানের ইসলামী সরকারকে উৎখাত করা হয়েছিলো। কন্টেইনারে আবদ্ধ করে ছয়শ তালিবান যোদ্ধাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করার মত নিষ্ঠুর ঘটনারও জন্ম দিয়েছিলো মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। ষোল বছরের দীর্ঘ চেষ্টা এবং বিভিন্ন কলাকৌশল প্রয়োগের পরো আফগানিস্তানের মাটি থেকে তালিবানকে উৎখাত করা সম্ভব হয়নি। বরং একই রকম জনপ্রিয়তা নিয়ে আফগান জনগণের অন্তরে তালিবান বিরাজ করছে।

কিছু দিন আগে তালিবানের সঙ্গে সমঝোতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার কথাও মার্কিন সরকার জোরেশোরে প্রচার করেছে। এ উদ্দেশ্যে তারা কাতারে তলিবানের দফ্তরও খুলিয়েছিলো। তাতেও খুব একটা কাজ হয়নি।

পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, সর্বশেষ কৌশল হিসাবে মার্কিন সরকার ‘হেকমতকার্ড’ ব্যবহার করতে চাচ্ছে প্রধানত দু’টি উদ্দেশ্যে। প্রথমত বর্তমান তাবেদার সরকারকে চাপে রাখা, দ্বিতীয়ত তালিবান ঢেউ সামাল দেয়া। ভবিষ্যতই বলতে পারবে, কী হবে এর পরিণাম। তবে পর্যবেক্ষক মহলের দৃঢ় বিশ্বাস, তালিবানের অবিচল ধৈর্য ও নিষ্ঠা এবং ত্যাগ ও কোরবানির জয় অবশ্যম্ভাবী। আফগানিস্তানের মাটিতে অতীত ফিরে আসার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এখন যা প্রয়োজন তাহলো সব চক্রান্তের মুখে ঐক্য...

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা