মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ

কাশগর ও কায়রো

মদীনা শরীফে বিনোদন ও পর্যটন

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রী ও ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমান কোন সীমারেখাই যেন আর মানতে ‘চাইছেন’ না। তিনি যেন ভুলেই গিয়েছেন, রাজনৈতিক হাওয়াবদলের ধারাবাহিকতায় তার দেশ আজ দুই পবিত্র ভূমির মুহাফিয। একসময় গর্বের সঙ্গে বলা হতো, খাদেমুল হারামাইন। সেজন্য শতত্রুটিবিচ্যুতি সত্ত্বেও সউদী রাজা ও রাজপরিবার খাদেমুল হারামাইনরূপে মুসলিবিশ্বের অখণ্ড ভক্তিশ্রদ্ধার পাত্র ছিলো।

কিন্তু সউদী যুবরাজ খাদেমুল হারামাইন উপাধির প্রতি অনীহা প্রকাশ করেছেন। দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে! অথচ খৃস্টজগতের প্রধান পোপ তার ধর্মীয় মর্যাদা ধরে রাখার বিষয়ে কত সচেতন! জানি না, তিনি বুঝতে পারেন কি না, তার একেকটি পদক্ষেপ মুসলিম বিশ্বের অন্তরে কী গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে থাকে! কে তাকে বোঝাবে যে, দেশের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি., আর ধর্মহীনতা এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও জীবনবোধের  অনুসরণ এক বিষয় না। উন্নয়ন করুন, অবশ্যই করুন, শিল্পবিপ্লব সৃষ্টি করুন, আমাদের কোন আপত্তি নেই, কিন্তু হারামাইনের মর্যাদা তো রক্ষা করুন! ইহুদিবাদের তোষণ তো বন্ধ করুন! কিছুটা তো লেহায করুন! বলিউড, হলিউডের নগ্ন নায়ক-নায়িকাদের ডেকে এনে নাচগানের উদ্দাম আয়োজন করে দেশের যুবসমাজকে কেন ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছেন! ভেবে দেখুন, চূড়ান্ত বিচারে এর মূল্য কাকে শোধ করতে হবে। আমার তো মনে হয়, তুরস্কের সউদী দূতাবাসে ‘নৃশংস অপরাধ’ সঙ্ঘটিত করে তিনি যতটা না ঘৃণা কুড়িয়েছেন তার চেয়ে অনেক বেশী ঘৃণা কুড়িয়েছেন পবিত্র ভূমিতে সাংস্কৃতিক বেহায়াপনার প্রসার ঘটিয়ে। কারণ তিনি কবুল করুন বা না করুন, তার দেশ এখন নিছক একটা ভৌগোলিক সীমারেখার দেশ নয়। তার দেশ পুরো মুসলিম বিশ্বের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রাণকেন্দ্র এবং এই সুবাদে তার দেশ বিশ্ব-দরবারেও আলাদা মর্যাদা ভোগ করে থাকে।

শোনা যয়, আবদুল ওয়াহাব নাজদীর অনুসারী রাজপরিবার প্রচণ্ড তাওহীদবাদী! শিরকের চিহ্ন পর্যন্ত বরদাশত করতে রাজী নয়। এ জন্য ইসলামের সমস্ত ঐতিহাসিক নির্দশন নির্দয় -ভাবে মুছে ফেলা হয়েছে। ওদিকে খবরে প্রকাশ, বলিউডের ‘আধা মুসলিম, আধা হিন্দু’ নায়ক সালমান খানের হাতের চিহ্ন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে! জানতে ইচ্ছা করে, এমন অনন্য মর্যাদা কি ‘সালমান’ নামটির কারণে!

আরেকটি মারাত্মক অপরাধ তিনি করেছেন, হজ্ব-ওমরার সফরে নারীদের জন্য মাহরামের বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়ে। এখন যে কোন দেশের যে কোন নারী নিজের উদ্যোগে একা হজ্ব ও ওমরায় যেতে পারবে। তিনি কি জানেন, যে কোন অজুহাতই বলুন, এটা শরীয়তের স্বীকৃত বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন! তাহলে এতদিন তারই দেশ, তারই পরিবার তারই বাপদাদা মুসলিম নারীদের জন্য মাহরামের বাধ্যবাধকতা কেন কার্যকর করেছিলেন! তিনি কি বুঝতে পারছেন, ইহুদি-খৃস্টানচক্র এভাবে তাকে মুসলিম উম্মাহর জনগণ থেকে সুকৌশলে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার ব্যবস্থা করছে! কুশনার শুধু তো ইহুদি নন, রীতিমত ইহুদীবাদী। ইহুদীবাদের প্রতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের যে পৃষ্ঠপোষক সংগঠন, তিনি তার রীতিমত নীতিনির্ধারক সদস্য। সেই কুশনার সম্পর্কে তিনি গর্ব করে বলেন, আমার অকৃত্রিম বন্ধু! তিনি হয়ত বুঝতে পারেননি তার কাঁধে বন্দুক রেখে বিশ্ব-ইহুদিবাদী চক্র জেরুজালিমের দিকে কীভাবে থাবা বিস্তার করলো!

সালামানের বেটা, জীবনে যত অপরাধ করেছেন, তার মধ্যে সবচে’ গুরুতর এবং আমাদের আশঙ্কা, এটাই হয়ত তার পতন ডেকে আনবে। না আমি খাশোগির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা বলছি না, এটা আসলে রাজনীতির যে কোন খেলোয়াড়ের জন্য কোন বিষয় না। কিন্তু একজন মুমিনের জন্য আল্লাহর ঘর, আর নবীর শহর বড়ই সংবেদনশীল বিষয়। খবরে প্রকাশ বিন সালমান সউদী আরবের বিভিন্ন শহরে সিনেমা হল তৈরী করেছেন যুবক-যুবতীদের ‘নির্দোষ’ বিনোদনের জন্য। ঐ সিনেমাহলগুলোতে মিশর, হলিউড ও বলিউডের  সবধরনের ছায়াছবির প্রদর্শনের ব্যবস্থা হয়েছে। উদ্দেশ্য হিসাবে বলা হয়েছে, আধুনিক সউদী সমাজকের যুবক-যুবতীদের নির্দোষ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিনোদনের ব্যবস্থা করা। কারণ এর আগে সউদী যুবক-যুবতী এ উদ্দেশ্যে মিশরে এবং ইউরোপ-আমেরিকা ও মুম্বাই ভ্রমণ করতো, এখন দেশের মধ্যে থেকেই তারা বিশ্বসংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবে।

এমনকি হিজাযের পবিত্র ভূিমকেও বিন সালমান কোন ছাড় দেননি। খবরে প্রকাশ জিদ্দায় বেশ ক’টি এবং মদীনা শরীফে একাধিক প্রেক্ষাগৃহ তৈরী করা হয়েছে এবং ছবিপ্রদর্শনও শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের আল্লামা মুফতী মুহম্মদ তাক্বী উছমানী, ভারতের  মওলানা সালমান নদবীসহ মুসলিম বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আলিমে দ্বীন এ ঘৃণ্য পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এমনকি জেলযুলুম ও নির্যাতন নিপীড়নের সমস্ত ভয়ভীতি উপেক্ষা করে হকপন্থী কতিপয় সউদী আলিম কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ অপরাধে এমনকি হারামের এক তরুণ ইমাম কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। হারামের ‘প্রধান’ ইমাম শায়খ সুদায়সী অবশ্য যথারীতি নীরবতা অবলম্বন করেছেন। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে শায়খ সুদাইস, বিন সালমানের সফর-সঙ্গী হয়ে আমেরিকা ভ্রমণ করেছিলেন। খবরমতে সেখানে তিনি একসাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছিলেন, আমেরিকা ও সউদী আরব মিলে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।

প্রসঙ্গক্রমে বিন সালমানকে আমরা জানাতে চাই যে, উছমানী খলীফাগণ মদীনা শরীফের আযমত ও মর্যদার প্রতি কতটা যত্নবান ছিলেন! মসজিদের নির্মাণকাজ তারা এমনভাবে করতেন যাতে সামান্য আওয়াযও না হয়।***আমাদের দেশের একটি খবর। ছোট্ট করে ভিতরের পাতায় এসেছে, হয়ত অনেকেরই নযরে পড়বে না। তবে যাদের নযরে পড়বে, তাদের হৃদয় অবশ্যই ক্ষত বিক্ষত হবে। আমাদের জতীয় ফুটবলদল অনুশীলন করার জন্য সাতদিনের সফরে মদীনা শরীফ গিয়ে যথারীতি ফিরেও এসেছে।বিন সালমানের শেষ খবর। মদীনা শরীফে পর্যটনশিল্পকে গতিশীল করার জন্য তিনি এক বিরাট প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। ফ্রান্সের একটি নির্মাণসংস্থাকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, হজ্ব একসময় পর্যটনে পরিণত হওয়ার যে ভবিষ্যদ্বাণী হাদীছ শরীফে করা হয়েছে শেষ পর্যন্ত তা বিন সালমানের মাধ্যমে পূর্ণ হতে যাচ্ছে, যেমন কুসতুনতুনিয়া জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী সম্পন্ন হয়েছে মুহম্মদ আলফাতিহের মাধ্যমে! নামে তো দু’জন অভিন্ন, কিন্তু কর্মে! বিন সালমানের জন্য খুবই ভালো হবে, এখনই পিছন দিকে ফিরে আসা। *

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা