জুমাদাল উলা ১৪৩২ হিঃ (২০)

তোমাদের পাতা

এক ঘণ্টার বানানভ্রমণ

লিখেছেনঃ ওছমানগনী / টাঙ্গাইল

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

বিভিন্ন উদ্দেশ্যে মানুষ ভ্রমণে বের হয়। নিছক আনন্দ করার জন্যও আনন্দভ্রমণে যায় অনেকে। কী কারণে যেন সেদিন আমার কৌতূহল হলো বানানভ্রমণে বের হওয়ার। বানানভ্রমণ মানে হলো পথে ঘুরে ঘুরে সাইনবোর্ডগুলোর বানানের ভুল-শুদ্ধ পরীক্ষা করা। তাতে মাশাআল্লাহ অল্পসময়ে ধারণার চেয়ে অনেক বেশী অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে ফিরে এলাম।

বানানভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে যে বিষয়টি সম্পর্কে আমি নিশ্চিত হয়েছি তা এই যে, আমাদের দেশে একুশে ফেব্রুয়ারীর বাঙ্গালী আছে যথেষ্ট পরিমাণে এবং পয়লা বৈশাখের পান্তাইলিশের বাঙ্গালী আছে প্রচুর পরিমাণে, কিন্তু বাংলা- ভাষার বাঙ্গালী দু’চারজনের বেশী হবে না কিছুতেই। নইলে কি বানানের এমন অনাচার পথে ঘাটে চলতে পারে!

মাদরাসা থেকে বের হয়ে হাঁটতে লাগলাম শিথিল পদক্ষেপে। কারণ বিশেষ কোন গন্তব্য ছিলো না। পথে নযর নীচু রাখার হুকুম। তবে আজ যেহেতু উদ্দেশ্য হচ্ছে বানান পর্যবেক্ষণ তাই মজবূরির কারণে গোনাহটা মাফ হবে বলেই আশা করলাম। প্রধান সড়কের মুখে এসে প্রথমেই নযরে পড়লো ‘জাহান ষ্টোর’, তারপর বাম দিকে ‘ষ্টার টেইলার্স’ হতে পারে বেচারা ‘খলিফা’, কাপড় কাটা, আর সেলাই করাই হলো তার কাজ। শুধু বানানের না আছে সাধ, না আছে সাধ্য। কিন্তু ‘পরফেসর সাব’ কীভাবে লিখতে পারেন ‘বুক ষ্টল’? তারও কি ফুরসত নেই বানান দেখার? তারপর আছে ‘ডায়াগনষ্টিক সেণ্টার’। (ট-এর সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় মূর্ধন্যষ এবং মূর্ধন্যণ হবে, তবে বিদেশী শব্দে দমত্ম্যস ও দমত্ম্যন হবে।)

সামনে কিছু দূর অগ্রসর হলাম। ডানপাশে বিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থিত ‘বিলাস বহুল পেক্ষা গৃহ’। মাত্র চারটি শব্দের অর্ধেকেই যদি ভেজাল থাকে তাহলে ভিতরে  যা প্রদর্শিত হয় তা কতটা নির্ভেজাল হবে? যারা সেখানে গমনাগমন করে তারাই বা কতটা খাঁটি?

বাঁয়ে মোড় নিয়ে কিছু দূর এগুলেই এ এলাকার প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রধান ফটকে বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘বেরোও দেশের কল্যানে’ । এখানকার শিক্ষক মহাশয়দের নিকট জানতে ইচ্ছে করে, দমত্ম্যন দিয়ে কি দেশের আসলেই কোন কল্যাণ হবে?

আচ্ছা, এবার শিক্ষিত এলাকা হিসাবে পরিচিত এলাকাটা একটু ঘুরে আসা যাক। প্রথমেই আছে একটি দন্তচিকিৎসালয়। যার পরিচিতিফলকে লেখা আছে, ‘এখানে দাতের উন্নতমানের...

দাঁতের চিকিৎসা যদি হয় চন্দ্রবিন্দু ছাড়া তাহলে তো সুস্থ দাঁতগুলোও হারানোর আশঙ্কা ষোলো আনা।

কিছু দূর গিয়ে ডানে মোড় নিলে একটি প্রসিদ্ধ কোচিং সেন্টার, যাদের প্রধান  বৈশিষ্ট্য হলো ‘নিয়মানুবর্তীতা’। সামান্য একটা বানানের নিয়ম যারা রক্ষা করতে পারে না তারা কতটা নিয়মানুবর্তী হতে পারে? আরো সামনে এগুবো ভাবছি, এমন সময় দেখি আমার মেজাজটা উপরের দিকে চড়তে শুরু করেছে। মেজাজ চড়লে আমার আবার হুশ থাকে না। এর মধ্যে দেখি একটি বিজ্ঞাপনে ‘অনুরোদ’ করা হচ্ছে। নাহ, কারো কোন অনুরোধ এখন আর রক্ষা করা সম্ভব নয়, তার চেয়ে তাড়াতাড়ি মাদরাসায় ফিরে যাওয়াই নিরাপদ।


শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা