আনারস, তার পুষ্টিগুণ এবং...
আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাদের জন্য নেয়ামতরূপে যত ফল সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে অত্যন্ত সুস্বাদু ও উপকারী একটি ফল হচ্ছে আনারস।আনারসের উৎসভ‚মি হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ। আনারসের সঙ্গে ইউরোপীয়দের প্রথম পরিচয় ঘটে ১৪৯৩ সালে। তারপরই আনারসের সঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পরিচয় ঘটে। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কমবেশী আনারসের চাষ হচ্ছে, তবে কোস্টারিকা, ব্রাজিল ও ফিলিপাইন, এই তিনটি দেশ একত্রে বিশে^র প্রায় একতৃতীয়াংশ আনারস উৎপাদন করে। ২০১৮ সালে বিশে^ ২৭৯ লক্ষ টন আনারস উৎপাদিত হয়েছে। সর্বোচ্চ উৎপাদক ছিলো কোস্টারিকা। তারপর যথাক্রমে ফিলিপাইন, ব্রাজিল ও থাইল্যান্ড।আমাদের দেশে মোমেনশাহীর মুক্তাগাছা ও মধুপুর অঞ্চলেই প্রধানত আনারসের উৎপাদন হয়। বলা হয়, মধুরপুর হচ্ছে আনারসের রাজধানী।ইংরেজিতে সাধারণত এটিকে চরহবধঢ়ঢ়ষব পাইনএ্যাপেল বলা হয়। তবে এর বৈজ্ঞানিক নাম অহধহধং ঈড়সড়ংঁং বা সংক্ষেপে আনানাস। দক্ষিণ আমেরিকার একটি ভাষার শব্দ হলো হধহধং যার অর্থ হলো চমৎকার ফল। তো শুরুতে অ যুক্ত হয়ে অহধহধং হয়েছে। শব্দের ক্ষেত্রে এরকম পরিবর্তন খুব স্বাভাবিক বিষয়। যেমন আমরা ‘ন’ কে ‘র’ দ্বারা পরিবর্তন করে বলছি ‘আনারস’।আনারসের পুষ্টিগুণ বলে শেষ করা যায় না, যদি বলি আনারস হলো আমাদের জন্য ‘পুষ্টিভাÐার’ তাহলে যথার্থই বলা হবে। আনারসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও সি রয়েছে এবং রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস, যা আমাদের দেহের জন্য খুবই জরুরি উপাদান।আনারসে ফাইবার বেশী, ফ্যাট কম। তাই আনারস আমাদের দেহের ওজন কমাতে যথেষ্ট সহায়ক।ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিক রাখে, যা আনারসে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। পক্ষান্তরে ম্যাঙ্গানিজও রয়েছে প্রচুর, যা হাড় মজবূত করে এবং ক্ষয় রোধ করে। মৌসুমে খাদ্যতালিকায় পরিমিত পরিমাণে আনারস রাখলে হাড়ের যাবতীয় সমস্যা দূর হতে পারে, অন্তত কমে আসতে পারে।দাঁত ও মাড়ির যে কোন সমস্যায় উপকার দেয়, বিশেষ করে দাঁতে জীবাণুর আক্রমণ রোধ করে। চোখের একটি কঠিন রোগ আছে যা চোখের রেটিনা নষ্ট করে ফেলে, আর ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি শেষ হয়ে যায়। নিয়মিত আনারস গ্রহণ করলে রেটিনা সুস্থ ও নিরাপদ থাকে।আনারসে রয়েছে ‘ব্রোমেলিন’ নামে একটি উপাদান, যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে খুবই সহায়ক। তাই হজমজনিত যে কোন সমস্যায় আনারস হতে পারে আমাদের উত্তম বন্ধু!রক্তবাহী নালির দেয়ালে রক্ত জমাট বেঁধে বা চর্বি জমে কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হয়। আনারস সাধারণভাবে রক্তের জামাট বাঁধা দূর করে এবং বিশেষভাবে রক্তনালির দেয়ালে চর্বি জমা দূর করে।আনারস হচ্ছে ক্রিমিনাশক। নিয়মিত আনারস গ্রহণ করলে ক্রিমিজনিত অপুষ্টি থেকে সহজেই আমরা রক্ষা পেতে পারি।আনারস সম্পর্কে বলার মত আরো কিছু কথা রয়েছে, তবে আজকের পরিসরে তা আলোচনা করার সুযোগ নেই। সম্ভব হলে আগামী সংখ্যায় কিছু কথা বলা যেতে পারে। কামনা করি, আল্লাহ্র রহমতে সবাই সুস্থ থাকুন। *