আমার বাগানে একটি বুলবুলি ছিলো। বুলবুলিরা যেমন সুন্দর হয় তেমনি সুন্দর! বুলবুলিরা যেমন মায়াদার তেমনি মায়াদায়। ইচ্ছে হতো, হাত বুলিয়ে বুলবুলিকে আদর করি। এবং আদর করতাম! অবাক হলে বুঝি! সত্যি বলছি, বুলুবুলি আমাকে এতটুকু ভয় পেতো না! বাগানে যখন যেতাম, সবুজ পাতার ফাঁকে বুলবুলির লেজটা দেখেই আমার মুখে হাসি ফুটতো। আমি বুলবুলিটির কাছে যেতাম। গায়ে হাত বুলিয়ে, লেজটা নাড়া দিয়ে আদর করতাম। বুলবুলিটি আমার আদর বুঝতো এবং গ্রহণ করতো! তার কণ্ঠে তখন মিষ্টি সুরের গান আসতো! বুলবুলিদের গান তো এমনিতেই মধুর! কিন্তু আমার আদর পেয়ে বুলবুলি যে গানটি গাইতো তা এমন মধুর হতো যে, কী বলবো! মনে হতো, এ বুলবুলি পৃথিবীর বুলবুলি নয়, জান্নাতের বাগান থেকে আসা বুলবুলি! বাগানে গেলাম, গাছ নিয়ে ফুল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম, বুলবুলির কথা হয়ত ভুলে গেলাম! তখন বুলবুলির ভারি অভিমান হতো! সেই অভিমান ভাঙ্গাতে আমাকে ডাকতে হতো আদর করে! তখন বুলবুলি উড়ে এসে বসতো আমার হাতের পিঠে। আমার দিকে তাকাতো মায়াদার চাহনিতে! তখন মনে হতো, আমি খু-উ-ব সুখী!
***
বুলবুলির সঙ্গে আমার কথা হতো। বুলবুলির কথা আমি বুঝতাম, আমার কথাও বুলবুলি বুঝতো! কী কথা হতো আমার সঙ্গে বুলবুলির! বুলবুলি বলতো তার সুখের কথা, দুঃখের কথা। বাগানে যখন বসন্ত আসে তখন তার কত আনন্দ হয়! বসন্তের গান গাইতে কত ভালো লাগে! তার ভালো লাগার কথা আমাকে সে বলতো। আমি তন্ময় হয়ে শুনতাম! শুনতে আমার ভালো লাগতো।
বুলবুলি আরো বলতো, বাগান থেকে বসন্ত যখন চলে যায় তখন তার কত দুঃখ হয়! বুলবুলি বলে, তখনো আমি গান গাই, তবে তা বসন্তের গান নয়, বসন্তের বিদায়ে দুঃখের গান! বুলবুলি আরো বলে, তোমরা শুধু আমার বসন্তের গান শুনতে পাও। আমার দুঃখের গান শুনতে পাও না। বুলবুলি আরো অনেক দুঃখের কথা বলতো। সুখের চেয়ে দুঃখের কথাই বলতো বেশী। আমি তন্ময় হয়ে শুনতাম। আমার ভালো লাগতো! বুলবুলিকে আমি কিসের কথা বলতাম! আমার সুখের কথা, দুঃখের কথা! যখন আমার কলম থেকে লেখা ঝরে তখন কত আনন্দ হয় সেই আনন্দের কথা বলতম! যখন হৃদয়ের ঝর্ণা শুকিয়ে যেতো, আর লেখা হারিয়ে যেতো তখন কত দুঃখ হতো সেই দুঃখের কথা বলতাম।
***
একদিন..!
ছোট্ট খোকা ছোট্ট খুকি! এর পর আমি আর লিখবো না! কী হলো সেই বুলবুলিটির! তোমরা কল্পনা করো, আর সেই কল্পনাকে কাগজের পাতায় তুলো ধরো! যার কলমের লেখা ও হাতের লেখা হবে সুন্দর, তার জন্য পুরস্কার!সবার লেখাই যদি সুন্দর হয়! হোক না, ভালোই তো! সবাইকে পুরস্কার দেয়া যাবেখন!
(তন্ময় হয়ে শোনা, জানতাম, বোঝবে না। মানে খুব মন দিয়ে শোনা!)