শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ | তোমাদের পাতা

ফুলের প্রতি কৃতজ্ঞতা

ফুল যেখানেই ফোটে. আমার মাটির  বাগানে, বা আমার বুকের বাগানে, ফুলের প্রতি রয়েছে আমার গভীর কৃতজ্ঞতা!মাটির বাগানে, গাছের ডালে যখন অজস্র ফুল ফোটে সেই ফুল আমাকে যেমন সুবাস দেয়, মাটির বাগানের ফুলের সংস্পর্শে যখন আমার বুকের বাগানে সবুজ শাখায় অসংখ্য ফুল ফোটে সেই ফুলেরা আমার ভিতরের সত্তাকে সুবাসিত করে এবং আমার উন্মুখ আত্মাকে সুরভিত করে। আমরা চোখের সামনে, এই যে বাগানজুড়ে এত গাছ; ডালে ডালে এত ফুল, এই বাগানের প্রতি, এখানকার প্রতিটি ফুলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ এই ফুলের সৌন্দর্য আমার মুগ্ধ করে, এই ফুলের সুবাস আমাকে আপ্লুত করে! এই ফুলের স্পর্শ আমাকে আশ্চর্য রকম স্নিগ্ধ অনুভূতি দান করে! এখানেই থেমে যায় না আমার প্রতি এই বাগান ও তার ফুলের অবদান। বাগানে, গাছের সবুজ পাতা,  ফুলের স্নিগ্ধ সৌন্দর্য ও কোমল সুবাস এগুলো সব মিলেমিশে আমার অন্তর্জগতে অভূতপূর্ব এক বিপ্লব সাধন করে! বাইরের প্রকৃতি আমার ভিতরের প্রকৃতিতে এমন আশ্চর্য এক তরঙ্গ-দোলা সৃষ্টি করে যাতে আমি পরম সত্তার, আমার স্রষ্টার অসীম মমতার আলোকস্পর্শ অনুভব করি। ফুলের সৌন্দর্যে, ফুলের সুবাসে তখন আমি স্রষ্টার সৌন্দর্য এবং স্রষ্টার সুবাস অনুভব করি। তিনি দেখা দেন না, তবু ফুলের সৌন্দর্যে তাঁকে আমি দেখতে পাই। নিজেকে তিনি প্রকাশ করেন না, তবু ফুলের পাপড়িতে, ফুলের সুবাসে সৌরভে তাকে আমি চিনতে পারি! এমনকি আমার তো বলতে ইচ্ছা হয়, ফুলকে স্পর্শ করে আমি পরম সত্তার মমতার স্পর্শ অনুভব করতে পারি, কারণ যিনি ফুলের স্রষ্টা তিনি আমারো স্রষ্টা এবং বিশ্বজগতের ছোট বড় সবকিছুর স্রষ্টা।

ফুলের সৌন্দর্যে, ফুলের সুবাসে এবং ফুলের পাপড়ির স্পর্শে একসময় আমার হৃদয়ের মাটি নরম হয়, হৃদয়ের আকাশ থেকে যেন বৃষ্টি ঝরে, হৃদয়ের মাটি পূর্ণ উর্বরতা লাভ করে। আকাশের উদ্যোগে কারা যেন হৃদয়ের মাটিতে ফুলের বীজ বপন করে, ফুলের চারা হয়, সবুজ বৃক্ষ যেন ছায়া বিস্তার করে, আর নানা বর্ণের নানা সুবাসের ফুল ফোটে। বাইরের মাটিতে বাগান, গাছ, ফুল আমি বেশ দেখতে পাই, হৃদয়ের মাটিতে বাগান ও তার গাছ, ফুল কিছুই দেখতে পাই না, তবে স্পষ্ট অনুভব করতে পারি! এই যে ভিতরে আমি কেমন সবুজ সজীব হয়ে উঠেছি! কেমন শুভ্র, পবিত্র ও সুবাসিত হয়ে উঠেছি!মাটির বাগানে ফুলের সান্নিধ্যে যদি যেতে চাও, ফুলের পাপড়ির স্পর্শ যদি পেতে চাও, তোমাকে কাঁটাগুলো এড়িয়ে যেতে হবে, বা কাঁটার আঘাত সহ্য করতে হবে। কাঁটাগুলো যারা এড়িয়ে যেতে পারে না, বা কাঁটার সামান্য আঘাত যারা সহ্য করতে পারে না, ফুলের সান্নিধ্য, ফুলের পাপড়ির স্পর্শ তারা কখনো পায় না। তোমার আমার হৃদয়ের বাগানেও ফুলের পাশে রয়েছে কাঁটা। হৃদয়ের বাগানেও যদি তুমি ফুলের সান্নিধ্য পেতে চাও, ফুলের স্নিগ্ধতা ও পবিত্রতা অর্জন করতে চাও, তোমাকে লোভলালসার কাঁটা, হিংসা-বিদ্বেষের কাঁটা, হিংস্রতা ও পাশবিকতার কাঁটা, এই সব কাঁটা তোমাকে এড়িযে যেতে হবে, বা এগুলোর আঘাত তোমাকে নীরবে ধৈর্যের সঙ্গে সহ্য করতে হবে। তাহলেই তুমি পাবে।....বাইরের বাগান এবং হৃদয়ের বাগান, উভয় বাগানের ফুলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

******

আরেকটি ফুলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ! সেই ফুল ফোটে জান্নাতের বাগানে ফোটা ফোটা রক্ত দিয়ে, শহীদের রক্ত! শহীদের রক্ত দিয়ে জান্নাতের বাগানে যে লাল ফুলগুলো ফোটে সেই ফুলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ সেই ফুল আমাকে দান করে অমরত্ব! সেই ফুল আমাকে দান করে স্রষ্টার সর্বোত্তম সান্নিধ্য, সর্বোত্তম সন্তুষ্টি।শহীদী রক্তের এই জান্নাতী ফুল, এ ফুলের সান্নিধ্য অর্জন করতে হলে তোমাকে বুক পেতে নিতে হবে তীরের আঘাত, তালোয়ারের আঘাত! নিতে হবে গুলি, গোলা ও বোমার আঘাত! তোমাকে পাড়ি দিতে হবে ঝড়তুফান এবং আগুন-খুনের দরিয়া।

*******

ইচ্ছে ছিলো, আজ ভোরের রাঙ্গা আকাশের প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা লিখবো- ফুলের কথা, ফুলের প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা লিখবো, ভাবিনি! বারান্দায় ছোট্ট টবের মাটিতে যে গোলাব ফুলটি আজ ফুটেছে তা দেখে, তার সৌন্দর্যে এমনই মুগ্ধ হলাম! আমার হৃদয়জগতে এমনই আলোড়ন সৃষ্টি হলো যে, নিজের অজান্তেই যেন কলম....একটি ফুলের সান্নিধ্য-সুবাস, একটি ফুলের প্রতি মুগ্ধতা তোমার কলমকে তাহলে কত সমৃদ্ধ করতে পারে! আর যিনি আছেন ফুলের সৌন্দর্যের আড়ালে....