শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ | তোমাদের পাতা

উচ্চতর স্তরের তালিবানের ইলমের উদ্দেশ্যে আদীব হুযূরের বয়ান

দরদী মালীর কথা শোন: আমার কিছু কষ্টের কথা!

উচ্চতর স্তরের তালিবানে ইলমের উদ্দেশ্যে আদীব হুযূরের বয়ান

আ মা র  কি ছু  ক ষ্টে র  ক থা!

 

বিসমিল্লাহির-রাহমানির-রাহীম

হামদ ও ছানা এবং দুরূদ ও সালামের পর।

আমার পেয়ারে তালিবানে ইলম।

السلام علـيكم ورحـمـة الله وبـركاتـه

মাদানী নেছাব ও মাদরাসাতুল মদীনাহ্র পথচলা তো শুরু হয়েছে, আজ থেকে প্রায় চারদশক আগে, তবে এসম্পর্কে আমার বস্তুনিষ্ঠ চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে যখন আমি নূরিয়া মাদরাসায় শিক্ষতার মহান খেদমতে নিয়োজিত! বরং আরো যদি সুনির্দিষ্টভাবে বলি, যখন আমি জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়ায়, তারপর জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ায় তালিবে ইলম, তখন থেকে এ বিষয়ে আমার প্রাথমিক চিন্তাভাবনার শুরু। পক্ষান্তরে মাদানী নেছাবের কাজ শুরু হয়েছে যেদিন الـطـريق إلـى الـعـربـيـة লিখতে শুরু করি, প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে, আর মাদানী মাক্তাবের কাজ শুরু হয় মূলত ‘বাংলায় বিসমিল্লাহ্’ লোখার মাধ্যমে, ঐ সময় যখন মাদরাসাতুল মাদীনাহও শুরু হয়নি।

তবে সেই কিশোর বয়স থেকেই আমার স্বভাবের মধ্যে, কোন বিষয়ে আলোচনা করা, অভিজাত ভাষায় যাকে বলে মতবিনিময় করা; এটা বিলকুল ছিলো না। আর তর্কবিতর্ক! এর প্রতি তো দিলের মধ্যে একরকম ওয়াহশাতই ছিলো, অথচ বিতর্কের বিষয়ে, বিশেষ করে পটিয়ায় আমার যথেষ্ট প্রশিক্ষণ অর্জিত হয়েছিলো। কিন্তু অতীতের বিভিন্ন ঘটনা এবং চারপাশের নানান অবস্থা দেখে আমার মধ্যে এ বিশ্বাস জন্মেছিলো যে, আলোচনা বা মতবিনিময় দ্বারা কাজের কাজ আসলে তেমন কিছু হয় না। পক্ষান্তরে তর্ক বা বিতর্ক দ্বারা তো সময়ের অপচয় ও বরবাদি ছাড়া আর কিছুই হাতে আসে না।

পরবর্তী সময়ে আমাদের মহান পূর্বপুরুষ হযরত মাওলানা মুহম্মদ ইলয়াস রহ. এর দাওয়াতী ও তাবলীগী মেহনতের কথা যখন কিছুটা বিশদভাবে এবং কিছুটা গভীরে গিয়ে জানার সুযোগ হলো তখন আমার এ বিশ্বাস আরো দৃঢ় হলো যে, কথা কম বলে, বা একেবারে না বলে, নীরবে কাজ করে যাওয়াই হলো কামিয়াবির সর্বোত্তম উপায়। তিনি তাঁর সময়ের বড়দের কাছে, এমনকি সমস্তরের কারো কাছেও ‘আলোচনা ও মতবিনিময়’ দ্বারা ‘কাজ’ বোঝাতে যাননি, কাজ তিনি বুঝিয়েছেন নমুনা ও নতীজা সামনে আনার মাধ্যমে। সম্ভবত এ কারণে (তবে শুধু একারণেই নয়) হযরত মাওলানা ইলয়াস রহ.-এর দাওয়াতি মেহনত খুব কম বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে বড়দের কাছে, অভূতপূর্ব গ্রহণ-যোগ্যতা অর্জন করেছে।

দেখো, তিনি তো বিশ্বব্যাপী দাওয়াতের এক বিরাট আন্দোলন গড়ে তুলেছেন নীরব কর্মসাধনার মাধ্যমে, পক্ষান্তরে এ যুগে এসে তাঁর এক অধঃস্তন পুরুষ তরতাজা একটি আন্দোলন বলতে গেলে ভেঙ্গেই ফেললেন, নীরবতা ত্যাগ করে এবং সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের জন্ম দিয়ে। বড় শিক্ষার বিষয়, আমরা যারা দ্বীনের কিছু কাজ করতে চাই, আমাদের সবার জন্য। তবে সবচে’ বড় কথা এই যে, কোন আন্দোলন ও বিপ্লবের সূচনায় নীরবতার যে প্রয়োজন, আমাকে তা আমার আল্লাহ্ বুঝিয়েছেন ছাফাপর্বতের আগে তিনবছরের নীরব দাওয়াত থেকে! 

দেখো, শুধু মক্কা, বা শুধু আরব নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্য এবং কিয়ামত পর্যন্ত পুরো মানবজাতির জন্য এত বড় একটা বিপ্লবের সূচনা হয়ে গেলো, বলতে গেলে কোরায়শের, একেবারে বুকের উপর! দীর্ঘ তিন বছর কোরায়শ তা জানতেই পারলো না! ছাফাপর্বতের মহাঘোষণার আগে কেউ কিছু মালুমই করতে পারলো ন! তো এর মধ্যে কি কোন উসওয়া ও নমুনা নেই, উম্মতের জন্য, যারা সময় ও সমাজের সুপ্রতিষ্ঠিত কোন ব্যবস্থার বিপরীতে কোন অপরিহার্য বিপ্লবের সূচনা করতে চায়! 

তোমরা বলতে পারো, আল্লাহর নবীর সঙ্গে তো ছিলো আল্লাহর গায়বি মদদ!

আমিও তাই বলি, উদ্দেশ্য যদি হয় দ্বীনের খেদমত, উম্মাহর কল্যাণ সাধন এবং...! তোমার মধ্যে যদি থাকে নিয়তের ইখলাছ এবং তাওয়াক্কুলের অবলম্বন তাহলে তো তুমি অবশ্যই আল্লাহর গায়বি মদদ লাভ করবে! তোমার কাজ তো পর্দার আড়াল থেকে আল্লাহ্ই করে দেবেন!

আচ্ছা, বলো তো! এমন নিঃসম্বল অবস্থায়, এত কমযোরি ও বে-বসির মধ্যেও মাদানী নেছাব ও মাদরাসাতুল মাদীনার কাজ এখন যে পর্যায়ে এসেছে তাতে কি এ বিশ্বাসই সুদৃঢ় হয় না যে, যা কিছু হয়েছে গায়বের মদদ ও সাহায্যেই হয়েছে! যা কিছু করেছেন বান্দাকে পর্দা করে আল্লাহ্ আপন কুদরতেই করেছেন!

হাঁ, কোন সন্দেহ নেই যে, যাকিছু হয় আল্লাহর কুদরত ও গায়বি মদদেই হয়, তবে আমাদের কর্তব্য হলো কৌশল ও প্রজ্ঞার সঙ্গে কাজ করা এবং করে যাওয়া। তর্ক-বিতর্ক ও বাদানুবাদ যথাসম্ভব পরিহার করে চলা।

এই প্রথম প্রকাশ্যে একটা কথা বলছি, শুরুর দিকের ঘটনা, খুব বড় এবং শ্রদ্ধেয় একজন মানুষ মাদানী নেছাব ও মাদরাসাতুল মাদীনাহর তীব্র বিরোধিতা করেছেন এবং আমি মনে করি, অন্তরের বিশ্বাস থেকেই তিনি তা করেছেন। আমার সমবয়সের একজন তো কাগজে লেখা ফতোয়া পর্যন্ত প্রচার করেছেন! কিন্তু আমি সম্পূর্ণ নীরবতা অর্জন করেছি এবং নিজের কাজেই পূর্ণ নিমগ্ন থেকেছি! পরে শুনেছি, ঐ ‘মান্যবর’ বিস্ময় প্রকাশ করে জানতে চেয়েছেন, ‘ওনি কি আমার ফতোয়া দেখেননি!’

আচ্ছা, কী হতো, যদি আমি তর্কে ও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়তাম! কী হতো, যদি মূল কাজের বিঘ্ন ঘটিয়ে আমিও ‘জওয়াব-দর জওয়াব’ ও প্রচারণায় নেমে পড়তাম!

নীরবতা এবং কাজের প্রতি একাগ্রতা আমাদের জন্য কতটা কল্যাণপ্রসূ ছিলো, তা তখন আমার কিছু শুভাকাক্সক্ষীর বুঝে না এলেও এখন তো বোঝাটা সহজ!

***

এখানে আরেকটি কথা! বড়দের কঠোর থেকে কঠোর সমালোচনা ও বিরোধিতার মুখেও তাঁদের নিয়তের বিশুদ্ধতার বিষয়ে আমার কখনো কোন দ্বিধা সন্দেহ ছিলো না। আমি জানতাম, এ বিষয়ে তাঁরা যাকিছু বলছেন, যাকিছু করছেন নিজেদের অবস্থান থেকে বিবেকের আদেশেই করছেন ও বলছেন। ‘অল্প বয়সের না-তাজরাবাকার’ একটা মানুষ শতবর্ষের সুপ্রতিষ্ঠিত একটি নেছাবের গোড়া ধরে টান দেবে, আর তাঁরা নীরব থাকবেন , তা কি হতে হতে পারে, না হওয়া উচিত!

আমার বিশ্বাস ছিলো, কাজ যদি কিছু হয় তাহলে আল্লাহর রহমতের পর মান্য আকাবিরের নেক দু‘আ ও  শুভকামনা দ্বারাই হবে। তবে তার জন্য প্রথম এবং সর্বপ্রথম প্রয়োজন হলো, আচরণ ও উচ্চারণের বিনয় দ্বারা তাঁদের আস্থা অর্জন করা, উদ্দেশ্যের সততা সম্পর্কে তাঁদের আশ্বস্ত করা; সবশেষে তাঁদের সামনে কাজের নমুনা ও নতীজা তুলে ধরা।

আমার পেয়ারে তালেবানে ইলম! সম্পূর্ণ শোকরের জাযবা থেকে বলছি, আল্লাহর দয়ায়, তারপর আমার বড়দের নেক দু‘আর বরকতে আমার সামনে আজ বড় সুখকর একটি বাস্তবতা দেখতে পাচ্ছি! যে দরসে নেযামি সম্পর্কে হযরত আলী মিয়া রহ. বলেছেন, ‘শতবর্ষের শত চেষ্টায়ও তাকে ‘ট্যস থেকে ম্যস করা যায়নি’, সেই দরসে নেযামির পাশে মাদানী নেছাব ও মাদরাসাতুল মাদীনাহ্ আজ একটি গ্রহণযোগ্য বাস্তবতারূপে বিরাজমান! কাজ তো এখনো শুরুর স্তরই পার হয়নি, তারপরো আলহামদু লিল্লাহ্ যতটুকু নতীজা ও নমুনা সামনে এসেছে তাতে এতটুকু বলা যায় যে, বড়রা আশ্বস্ত হয়েছেন, আর সমকালের বন্ধুরা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন, যদিও আকাশে এখনো ‘মেঘ’ আছে! তবে মেঘ আছে বলেই আশা করি, আল্লাহ্র রহমতে ‘মেঘের কোলে একসময় রোদ হাসবে’ এবং...!

এই সামান্য সময়ের মধ্যে আল্লাহ্ অনেক কুদরত ও কারিশমা দেখিয়েছেন। যারা সমালোচনা ও বিরোধিতা করেছেন, হাঠাৎ দেখি, তাঁদের অনেকের মধ্যে চিন্তার পরিবর্তন! আর তখন তাঁরা নিজেদের সন্তান বা পরবর্তী প্রজন্মকে মাদানী নেছাবে ও মাদরাসাতুল মাদীনায় দাখেল করেছেন, এমনকি এর স্বপক্ষে যথেষ্ট জোরালো বক্তব্য রেখেছেন! উদাহরণ হিসাবে কিছু শ্রদ্ধেয় নাম এখানে উল্লেখ করা যায়, তবে মনে হয়, প্রয়োজন নেই। কারণ সময় সবার সামনে অনেক কিছু স্পষ্ট করে দিয়েছে।

***

পেয়ারে তালিবানে ইলম, এতক্ষণ আমার ভিতরটা ছটফট করছিলো যে দু’টি পবিত্র নাম উচ্চারণ করার জন্য, আমার পরম প্রিয় মুরশিদ হযরত হাফেজ্জী হুযূর রহ. এবং আমার যিন্দেগির বড় মুহসিন, আমার ‘স্যরতাজ’ হযরত পাহাড়পুরী হযুর রহ.। এখানে তোমাদের সামনে আমি আমার দিলের শোকর ও অন্তরের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি যে, মাদানী নেছাব  মাদরাসাতুল মাদীনাহর যাকিছু অর্জন ও সফলতা, তা সম্ভব হয়েছে শুধু এবং শুধু আল্লাহর রহমত ও গায়বি মদদের বরকতে, তারপর হযরত হাফেজ্জী হুযুর রহ এবং হযরত পাহাড়পুরী হুযূর রহ. এর রূহানী তাওয়াজ্জুহ ও ‘হাকীমানা’ তারবিয়াতের কল্যাণে। আল্লাহ্ তাঁদের কবরকে নূরে শিশিরে সুসিক্ত রাখুন।

(আমার যিন্দেগীর সমস্ত মুহসিনীন, আল্লাহ্ তাঁদের সবাইকে আজরে আযীম দান করুন, আমীন।)

***

আমার পেয়ারে তালিবানে ইলম! বিশেষ করে যারা ইলমের ময়দানে এবং শিক্ষার অঙ্গনে, আরো বিশেষ করে যারা তা‘লীমের ময়দানে এবং শিক্ষকতার অঙ্গনে কিছু অর্জন করতে চায়, আমার যারা তালিবানে ইলম তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই! অবশ্য কথা তো আজ নতুন করে বলছি না, দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরেই বলে আসছি, তবে কাউকে তেমন করে শোনাতে পেরেছি বলে মনে হয় না! তারপরো শেষ নিঃস্বাস পর্যন্ত কথাটা আমি বলেই যাবো। কারণ আল্লাহর কালামের বার্তা অনুযায়ী আশা ও প্রত্যাশা বুকে ধারণ করে পথ চলতে থাকাই তো মুমিনের শান!

তো যে কথাটি বলতে চাই তা এই যে, যিন্দেগির কামিয়াবির রায এবং জীবনের সফলতার রহস্য হলো, উচ্চারণে এবং তার চেয়ে বেশী আচরণে উস্তাদ ও মুরুব্বিকে কখনো অতিক্রম না করা, বরং সবসময় উস্তাদ ও মুরুব্বির পিছনে তাঁদের অনুসরণ করে পথ চলা। আমার পেয়ারে তালিবানে ইলম, এটা অবশ্য আমার পক্ষ হতে বলা নতুন কোন কথা নয়! আদেশ বলো, উপদেশ বলো, অথবা বলো দিকনির্দেশ, এটা কল্যাণশতক থেকেই প্রত্যেক উস্তাদ তাঁর শাগিরদকে এবং প্রত্যেক শায়খ তাঁর মুরীদকে দিয়ে এসেছেন এবং দিয়ে আসছেন।

সম্ভবত মহান তাবেঈ হযরত হাসান বছরী রহ. বলেছিলেন:

اعـتـزل عـنـا واصل

(ওয়াছিল তো আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে)

আর এখান থেকেই ওয়াছিল ও তার অনুসারীদের নামই হয়ে গেলো, মু‘তাযিলা। সবাই জানে, উম্মতের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসে ‘ইতিযাল’র চেয়ে বড় ফিতনা আর কিছু ছিলো না।

ব্যস,  اعـتـزل عـنـا এটাই হলো তালিবে ইলমের যিন্দেগীর কামিয়াবি এবং বরবাদির মাপকাঠি। যে ভাগ্যবান এটা পরিহার করবে সে কামিয়াব, আর যে দুর্ভাগা এ ফিতনায় লিপ্ত হবে সে বরবাদ।

ইমাম আবু হানীফা রহ.র শাগিরদান তাঁর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন, কিন্তু:

لـم يـعـتـزلـوا عـنـه

তো তোমার উস্তাদ ও মুরুব্বির মুখ থেকে কখনো যেন এমন কঠিন কথা শুনতে না হয়:

اعـتـزلـتَ عَـنَّـا يـا...

এখন ঠিকমত মনে পড়ছে না, সম্ভবত ইমাম আযম আবূ হানীফা রহ.র জীবনীতে পড়েছি, একবার তিনি তাঁর প্রাণপ্রিয় উস্তাদ হাম্মাদ রহ.র দরস থেকে আলাদা হয়ে নিজের হালকা কায়েম করেছিলেন, পরে যখন তিনি বুঝতে পারলেন, এটা তিনি সময়ের আগে করে ফেলেছেন, তখন তিনি সৎসাহসের সঙ্গে নিজের হালকা বন্ধ করে উস্তাদের হালকায় ফিরে এসেছিলেন। হযরত হাম্মাদের জীবদ্দশায় তিনি নিজের আলাদা হালকা আর করেননি। সমকালের সমস্ত ইমাম ও মুজতাহিদীনের মাঝে তিনি যে, ইমামে আযাম ও শ্রেষ্ঠ ইমামের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছেন, এখানেই লুকিয়ে আছে তার রায ও রহস্য,

***

মোট কথা, এ উপদেশ ও দিকনির্দেশ কল্যাণশতক থেকেই দিয়ে আসা হয়েছে এবং এখনো দেয়া হচ্ছে,  তবে পার্থক্য এই যে, সময়ের পরিবর্তনে বলার ধার ও ভার যেমন কমে আসছে তেমনি কমে আসছে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে, কৃতার্থতার সঙ্গে তা মান্য করার আকুতি। আফসোস, এখন তো বরং মনে করা হয়...!

আসলে যা মনে করা হয়, তা তো এখন তালিবানে ইলমের উচ্চারণে এবং তার চেয়ে বেশী তাদের আচরণে অত্যন্ত পরিষ্কার! তো যা সবাই জানে, শোনে এবং দেখে তা আমি আর মুখে উচ্চারণ করতে যাই কেন! আমি শুধু সতর্ক করতে চাই, শোনো হে ভাই ও বন্ধু! মাদানী নেছাবের এবং মাদরাসাতুল মদীনার কাফেলায় যারা মুসাফির ও সহযাত্রী! আমার এ উপদেশ, বরং আমার এ মিনতি অন্তর দিয়ে গ্রহণ করো, তাতে তোমাদেরই জীবন আলোকিত হবে ইনশাআল্লাহ্! আল্লামা ইকবাল কত সুন্দর বলেছেন:

বৃক্ষের সঙ্গে যুক্ত থাকো হে বৃক্ষশাখা, তাহলেই আশা করতে পারো সজীব বসন্তের!

***

আমার পেয়ারে তালিবানে ইলম! এখানে আমার বর্তমান জীবনের বড় এক সৌভাগ্যের কথা বলতে চাই। তারপরই মূল প্রসঙ্গ শুরু করবো ইনশাআল্লাহ্!

দু’দিন আগে আমার উস্তাযে মুহতারাম হযরত মাওলানা সুলতান যাওক নদবী ছাহেব (মুদ্দা যিল্লুহুল ‘আলী) অপ্রত্যাশিতভাবে তাহাজ্জুদের সময় ফোন করেছেন! আমি তো অবাক এবং হতবাক! ফোন তো তিনি তাঁর এ অভাগা শাগিরদকে করেন, বিভিন্ন উপলক্ষে এবং কোন উপলক্ষ ছাড়া, কিন্তু এমন সময়! অন্তরে বড় উৎকণ্ঠা নিয়ে ফোন ধরলাম। আমার প্রিয় উস্তাদের সেই সুপরিচিত বিষণ্ন ও ‘ভারাক্রান্ত’কণ্ঠস্বর:

কেমন আছো! ..

এতক্ষণ তোমার জন্য, তোমার মুহম্মদের জন্য এবং তোমার ‘মানহাজের’ জন্য দিল থেকে অনেক দুআ করেছি!....

আল্লাহর কাছে তো আশা করি, তোমার সমস্ত আমল আমার আমল -নামায়ও জমা হবে....

এমনকি হুযূর এবারই প্রথম ‘দরদী মালীর কথা শোনো’ কিতাব সম্পর্কে কিছু বলেছেন দুআ ও মুহব্বতের সঙ্গে। ভালো করে বুঝতে পারিনি, সম্ভবত বলেছেন, ‘আমার ছাত্রদের এটা পড়ার জন্য তাকিদ করেছি!’

আরো অনেক কথা হুযূর বলেছেন, শফকতের কথা, আশাবাদের কথা এবং ...! সব কথা প্রকাশ করা কল্যাণকর নাও হতে পারে! তাই এখানেই ইতি টানছি!

মূল কথা হলো, কর্মের অঙ্গনে এবং কাজের ময়দানে যারা কামিয়াবি হাছিল করতে চায়, তাদের অবশ্যকর্তব্য হলো উস্তাদ ও মুরুব্বির স্নেহছায়া এবং দুআর ছত্রচ্ছায়া ত্যাগ না করা এবং আদবের আঁচল হাত থেকে ছেড়ে না দেয়া। আল্লাহর শোকর যিন্দেগির শুরু থেকে আজকের এই বার্ধক্যের সময় পর্যন্ত আমি চেষ্টা করেছি, নিজেরই প্রয়োজনে চেষ্টা করেছি উস্তাদের স্নেহছায়া ও দুআর ছত্রচ্ছায়ার মধ্যে থেকে কাজ করার এবং আল্লাহর শোকর এর সুফল আমি পেয়েছি।

***

আমার পেয়ারে তালিবানে ইলম!

এবার তোমাদের সামনে আমার দিলের বড় একটা কষ্টের কথা বলবো! আসলে এ কষ্টের কথাটা বলার জন্যই এ দীর্ঘ ভূমিকার অবতারণা।

দীর্ঘ দীন থেকে মনের গভীরে এ কষ্টটা লালন করে এসেছি। দিন দিন কষ্টটা বেড়েছে এবং বেড়েই চলেছে, কিন্তু কখনো প্রকাশ করিনি। বুকের কষ্ট বুকেই চেপে রেখে এতদিন পথ চলেছি এবং যতদূর পেরেছি কাজ করে গিয়েছি। একটা তিক্ত সত্য এই যে, মানুষ বাইরের লোকদের থেকে পাওয়া কষ্ট যত সহজে বলতে পারে এবং পারে সে সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করতে, কাছের এবং ভিতরের লোকদের থেকে পাওয়া কষ্ট তত সহজে প্রকাশ করতে পারে না! কোথায় যেন সঙ্কোচে বাধে! কোথায় যেন গায়রত বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া মানুষ পরের বিরোধিতায় ততটা কাবু হয় না, যতটা না আপনজনের, আপন সন্তানের বিরোধিতায় কাবু হয়ে পড়ে, বরং বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। যুগ যুগে এটা যেমন সত্য ছিলো, আজো তা একই মাত্রায় সত্য এবং বড় তিক্ত সত্য। এ সত্যের তিক্ততাই এতদিন আমি বুকের ভিতরে বহন করে আসছি।

যখন মাদানী নেছাব ও মাদরাসাতুল মদীনার জন্য পথচলা শুরু করেছি তখন তো আমি একেবারে নিঃসঙ্গ ছিলাম। আমার সমস্ত নীরবতা সত্ত্বেও সমালোচনা ও বিরোধিতা থেকে পূর্ণ মুক্ত থাকতে পারিনি। বরং দিন দিন তা বেড়েছে, আর তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর শোকর, সমালোচনা ও বিরোধিতায় কখনো আমি বিচলিত হইনি, তা যত বেড়েছে, যত তীব্র হয়েছে কাজের প্রতি আমার উদ্যম-উদ্দীপনা এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি আমার দৃঢ়তা ও অবিচলতা তত শক্তি অর্জন করেছে। আল্লাহর রহমতে আমি এগিয়ে চলেছি এবং কাজ ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করেছে।

এখানে পরম কৃতজ্ঞতার সঙ্গে একথা আমি স্কীকার করি যে, শত নিঃসঙ্গতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও আমার পরম প্রিয় মুহসিন উস্তায হযরত পাহাড়পুরী হুযূর (রহ.) জীবনের শেষদিন পর্যন্তর আমার জন্য মযবূত ঢাল হয়ে বিরাজ করেছেন। আমার  এবং আমার কাজের বিষয়ে এমনকি হযরত হাফেজ্জী হুযূর রহ.র কাছেও অভিযোগের অন্ত ছিলো না (এখানে আরো গুরুতর শব্দটা ইচ্ছা করেই এড়িয়ে গেলাম বড়দের নিয়তের প্রতি সম্মান রক্ষার জন্য)।

মাঝে মধ্যে তো হযরত হাফেজ্জী হুযূর রহ. বেশ বিচলিত হতেন এবং নারাযির ভাব এসে যেতো। কিন্তু.. একাধিকবার হযরত রহ. বলেছেন, ‘এত এত কথা ভালো ভালো মানুষের কাছ থেকে কানে আসে যে, মওলবি আবূ তাহেরের প্রতি নারায হতে চাই, কিন্ত পারি না, মাঝখানে মৌলবি আব্দুল হাই আইসা পড়ে!’

আমার পেয়ারে তালিবানে ইলম, চিন্তা করে দেখো, আমার  জন্য এ কত বড় সৌভাগ্য ও সান্ত্বনার বিষয়!

তো নিঃসঙ্গতা সত্ত্বেও এবং তীব্র থেকে তীব্রতর সমালোচনা ও বিরোধিতার মধ্যেও আমি আমার কাজের প্রতি পূর্ণ বিশ্বস্ত ছিলাম এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি পূর্ণ অবিচল ছিলাম। কারণ পথ ও পথের মানযিলের প্রতি কখনো আমার  অন্তরে কোন দ্বিধা ছিলো না, বরং পূর্ণ শরহে ছদর ছিলো, আশ্বস্তি ছিলো এবং ছিলো বক্ষোদ্ভাস! (আল্লাহর রহমতে এখনো তা আছে পূর্ণ মাত্রায়!)

বুকভরা আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে আমি ভাবতাম, বরং স্বপ্ন দেখতাম, পথচলার এ নিঃসঙ্গতা তো বেশী দিন থাকবে না!

আমার প্রিয় শাগিরদান একসময় বড় হবে, যেমন বয়সে তেমনি যোগ্যতায়। তখন তারা শক্তি হয়ে, ভরসা ও অবলম্বন হয়ে আমার পাশে দাঁড়াবে, তখন...!

এবং তাই হলো...! একসময় আমার ‘সহোদর’ভাইয়েরা বড় হলো! তারাও তো আমার ছাত্রই ছিলো! আর আমার ছাত্ররা তো ছিলো সন্তানতুল্য, তারাও বড় হলো! সীমিত সাধ্য ও যোগ্যতা নিয়ে তখন তারা আমার পাশে দাঁড়ালো! তাতে আমার শক্তি ও সাহস যেন অনেক বেড়ে গেলো! কাজের গতি ও বিস্তার আরো বাড়লো। আমার মনে হলো, সেদিন বেশী দূরে নয় যখন মাদারাসাতুল মাদীনাহ্ ও মাদানী নিসাবকে কেন্দ্র করে আমার বুকে যত স্বপ্ন ঘুমিয়ে আছে, একটা একটা করে জেগে ওঠবে এবং প্রতিটি স্বপ্ন বাস্তবের অঙ্গনে পেখম মেলবে, ময়ুর যেমন পেখম মেলে।

কিন্তু ..

আমার পেয়ারে তালিবানে ইলম! এই ছোট্ট ‘কিন্তু’টির আগে যেমন ছিলো অনেক কথা, অনেক ব্যথা, যা খুব সংক্ষেপে এবং সংযমের সঙ্গে বলার চেষ্টা করেছি, তেমনি কিন্তুটির পরেও আছে অনেক কথা, অনেক ব্যথা। তবে এখানেও আমি তা সংক্ষেপে এবং সংযম রক্ষা করে বলার চেষ্টা করবো।

কিন্তু আমার সুখের স্বপ্ন এবং স্বপ্নের সুখ ধীরে ধীরে ‘পেখম’ গুটিয়ে নিলো! আমার হৃদয়ের আকাশে একসময় জলভরা যে মেঘ জমেছিলো এবং ঝিরঝির বৃষ্টির, তারপর ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির, এমনকি মুষলধারে বৃষ্টির যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিলো, বিপরীত বাতাসের বেগে সেই মেঘেরা কোথায় যেন ভেসে গেলো, হারিয়ে গেলো!

যদি শুনতে পেতাম আমার প্রান্তরে না হলেও, অন্য কোন প্রান্তরে মেঘেরা বৃষ্টি বর্ষণ করেছে এবং ভূমি হয়েছে সবুজ সজীব। ফুলে ফলে ও ফসলে জীবন হয়েছে সমৃদ্ধ যেমন আমার আশা ও কামনা ছিলো; যদি শুনতে পেতাম তাহলে আল্লাহ্কে সাক্ষি রেখে বলছি, খুশী হতাম, সান্ত্বনা পেতাম! কারণ বুকভরা শান্তি নিয়ে আমি বলতে পারতাম:

أَمْـطِري حَـيْـثُ شِـئْـتِ فَـسَـيَـأْتِـي إلـىَّ خَـراجُكِ

যেখানে ইচ্ছা বর্ষণ করো, তোমার খারাজ ও রাজস্ব তো আমার কাছেই আসবে।

(তোমার নেক আমল তো আমারো আমলনামায় জমা হবে!)

সম্ভবত তা হয়নি, অন্তত আমার শ্রবণে আসেনি! আসল কথা হলো, তারা যা কিছু করেছে সময়ের অনেক আগে করেছে এবং আদব ও সৌজন্য ছাড়াই করেছে এবং করে চলেছে!

আমি বারো বছর আমার মুহসিন উস্তাদের ছত্রচ্ছায়ায় এবং তাঁর পূর্ণ তারবিয়াত মান্য করে কাজ করেছি এবং আজীবন করে যাওয়ার নিয়ত ও প্রত্যয় ছিলো। কিন্তু মুরব্বি যখন বুঝেছেন, সময় হয়েছে, তখন তিনি নিজেই আমাকে আদেশ করে বসিয়ে দিয়েছেন, মাদরাসাতুল মাদীনায়। ভিত্তিপ্রস্তরও তাঁরই পবিত্র হাতে স্থাপিত হয়েছে। তবে কথা কী! জিসমানি দূরত্ব হয়েছে ঠিকই, তবে রূহানী ও কলবানি দূরত্ব কখনো হয়নি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমার  প্রতি তাঁর প্রজ্ঞাপূর্ণ শাসন ও তারবিয়াত অব্যাহত ছিলো। এটা তো শুধু আমার দাবী নয়, তোমরা এবং যামানা এর সাক্ষী!

তো এটাই হলো কাজের এবং জীবনের পথচলার সঠিক পন্থা ও কল্যাণকর উপায়! কিন্তু আফসোস! আমার প্রিয় ছেলেরা, আমার পেয়ারে তালিবান তা রক্ষা করেনি। সময়ের আগেই, নিজেদের মত করেই তারা আমাকে ত্যাগ করেছে। ফলে পথের শুরুতে যেমন আমি একা ও নিঃসঙ্গ ছিলাম, এখন পথের মাঝেও তেমনি একা ও নিঃসঙ্গ আছি।

কত সৌভাগ্য তাদের যারা বলতে পারে:

میں اکیلا ہی چلاتھا جانب منزل مگر لوگ ساتھ آتے گئے اور کارواں بنتا گیا

মানযিলপানে একাই ছিলো পথচলা আমার/একে একে এলো অনেকে রূপ নিলো কাফেলার!

এদিকে আমার অবস্থা হলোÑ

زندگی شاید اسی کا نام ہے

دوریاں، مجبوریاں، تنہائیاں

কে জানে, হয়ত এরই নাম জীবন! /দূরত্বের বেদনা, ব্যর্থতার যন্ত্রণা, নিঃসঙ্গতার দহন!

দোষ বোধহয় আমার প্রিয় ভাইদের নয়! দায় বোধহয় আমার কলিজার টুকরো ছেলেদের নয়; দোষ বলি, দায় বলি, বা সীমাবদ্ধতাই বলি, তার সবই এ দুর্ভাগার! নিষ্ফলা মাঠের এই কৃষকের! আমার একজন প্রিয় তালিবে ইলম আমাকে বলেছে! তখন কষ্ট পেয়েছি, তবে এখন, জীবনের আরো কিছুদূর পথ পাড়ি দেয়ার পর মনে হয়, তার কথা সত্য ‘উস্তাদের দায়িত্ব হলো ছাত্রকে নিজের কাছে ধরে রাখা। ছাত্র যদি না থাকে, উাস্তাদেরই ব্যর্থতা!’

আমার ঐ তালিবে ইলমের দাড়ি এখন অবশ্য একেবারে সাদা, মানে বিলকুল সফেদ! তো আমার বড্ড জানতে ইচ্ছে করে, সে কি তার ছাত্রদের নিজের পাশে ধরে রাখতে পেরেছে! যদি পেরে থাকে তাহলে জানতে ইচ্ছে হয়, কী কৌশলে! যাতে বুড়ো বয়সে হলেও আমিও তা অনুসরণ করতে পারি!

***

আমার পেয়ারে তালিবানে ইলম!

বিষয়টা যদি এখানেই থেমে যেতো! আমাকে ত্যাগ করে চলে যাওয়ার পর যদি, নতুন করে আর কোন কষ্টের বিষয় না ঘটতো তাহলে হয়ত নীরবেই সব সয়ে যেতাম। কিন্তু কষ্টের ঘটনা তো বহু দূর চলে গিয়েছে এবং এখনো থামছে না। গায়র তো শুধু সমালোচনা করেছে, কিন্তু আমার ছেলেরা তো অধিকারের দাবীতে আমার মাদানী নেছাবের মধ্যে, আমার কলিজার ভিতরে ইচ্ছেমত ‘কাটাচেরা’ করছে! একজন তো সোজা বই লিখে বসেছে, ‘এসো আরবী শিখি কীভাবে পড়াবো’! তুমি কীভাবে আরবী পড়াবে তা যত খুশী লেখো না! কিন্তু এসো আরবী শিখি কীভাবে পড়াবো তা তুমি লিখতে যাবে কেন, আমার অনুমতি ছাড়া, আমার সঙ্গে কোন যোগাযোগ ছাড়া! তাছাড়া তুমি যা লিখেছো তাতে তো আমার মূল চিন্তাটাই দাফন হয়ে গিয়েছে! মূল চিন্তাই তো ছিলো ব্যাকরণের জটিলতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থেকে আরবীভাষা শিক্ষা করা। তুমি তো আরো কয়েকগুণ বেশী করে ব্যাকরণের জটিলতাকেই ফিরিয়ে এনেছো! তোমার যদি মনে হয়, ব্যাকরণের জটিলতাই ভালো, তাহলে সেটা নিজের মত করে করো না, আমার গরীব ও দুর্বল কিতাবটার উপর তা চাপিয়ে দিলে কেন! আমাকে এ ভাবে কষ্ট দিয়ে তোমার কি লাভ!

এদিকে আমার কিছু ‘কাবেল’ শাগিরদ মাদানী নেছাবকে এর সঙ্গে, ওর সঙ্গে সমন্বয় করছে! হয়ত তারা বুঝতে পারছে না, এটা আমার উপর কত বড় যুলুম! তাদের এ আচরণ আমার দিলকে কেমন ক্ষতবিক্ষত করে!

আমি বলি, মাদানী নেছাবকে তোমার যদি মনে হয় অসম্পূর্ণ, অগ্রহণযোগ্য, তাহলে তুমি মাদানী নেছাবের নামটা ব্যবহার করছো কেন! যা করার. নিজের পক্ষ হতে করো না কেন! তাতে তো আমারো কষ্ট হয় না, তোমারো কাজ হয়ে যায়! মাদানী নেছাবের ইছলাহ তো তোমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না!

***

আমার পেয়ারে তালিবানে ইলম! কথা অনেক ছিলো, আর ব্যথা তো আরো বেশী! তবে যতটুকু বলেছি, তাতেই নিজের কাছে নিজেকে লজ্জিত মনে হচ্ছে। তবে আল্লাহ্ সাক্ষি! যা কিছু বলেছি, আমার প্রিয় ছাত্রদের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই বলেছি! আমার কষ্টের পথ থেকে, আর নিজেদের ক্ষতির পথ থেকে তারা যেন বেঁচে থাকতে পারে, অন্তত আগামী প্রজন্মের ছাত্ররা যেন শুরু থেকেই সতর্ক হতে পারে!

বাকি আমার আল্লাহর উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস ও ভরসা আছে! ইনশাআল্লাহ্ আমাকে এবং আমার কাজকে আল্লাহ্ গায়ব থেকে হিফাযত করবেন। আমার বড়রা, আমার  আসাতিয়া কিরাম, আমার মা-বাবা এবং বাওয়াফা তালিবানে ইলম এবং আল্লাহর বহু নেক বান্দা, তাদের নেক দুআ, নেক তামান্না আমার সঙ্গে রয়েছে!

আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন, আমাদের সবার উপর তিনি তার রহমতের ছায়া অব্যাহত রাখুন, আমীন।

وآخـر دعـوانـا أن الـحـمـد لله رب العالـمـيـن