আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর!
শায়খুল ইসলাম আল্লামা মুফতী মুহম্মদ তাক্বী উছমানী মু. ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পূর্বে সম্ভবত জুন মাসে ‘আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর’ নামে এই তারানা রচনা করেছেন। কাশ্মীরের বর্তমান অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, ঈমান ও বিশ্বাসে প্রদীপ্ত এবং আবেগ ও জাযবায় উদ্বেলিত এই তারানা যেমন তখন ছিলো তেমনি আজো রয়েছে একই রকম জীবন্ত ও তাৎপর্যপূর্ণ। এতে একদিকে যেমন রয়েছে ‘জান্নাতনযীর’ কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জাদুময় বর্ণনা, তেমনি রয়েছে উম্মাহর জন্য নতুন চিন্তা চেতনা, এবং নতুন দাওয়াত ও বার্তা। আল্লামা উছমানীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞা নিবেদন করে এখানে আমরা মূল তারানা ও তার অনুবাদ, প্রিয় পাঠক তোমার জন্য পরিবেশন করছি। আশা করি তোমারও দিলে ঈমান তাজ হবে, জিহাদের চেতনা ও যাজবা জাগ্রত হবে এবং মুসলিমানে কাশ্মীরের প্রতি একাত্মতা ও সংহতির অনুভূতি উদ্দীপ্ত হবে।
اے وادیٗ کشمیر ! اے وادئ کشمیر
تو حسن کا پیکر ہے ، تو رعنائی کی تصویر
مخمور بہاروں کے حسین خوابوں کی تعبیر
رخشاں ہیں تیرے ماتھے پہ آزادی کی تنویر
تو جلوہ گہ نور جہاں ، قلبِ جہانگیر
اے وادیٗ کشمیر ، اے وادیٗ کشمیر
কাশ্মীর! আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর!
সৌন্দর্যের জীবন্ত ছবি, তুমি মাধুর্যের প্রতিচ্ছবি/
তুমি ‘উজল’ রূপ বাহার-বসন্তের, সুন্দর স্বপ্নের
লালাটে তোমার ঝলমল আযাদির নূরনিশান
তুমি ছায়া নূরে জাহাঁ, তুমি কলবে জাহাঁগীর।
কাশ্মীর! আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর!
ہر لمحہ مچلتی ہیں تیرے من میں بہاریں
میخانہ در آغوش درختوں کی قطاریں
چشموں کے ترانے ہیں کہ ساون کی ملہاریں
ندیوں میں تری نغمہ آزادی کی تفسیر
اے وادیٗ کشمیر ، اے وادیٗ کشمیر
হৃদয়ে তোমার দোলে চিরবাহার বসন্তের / তুমি জলসা শরাবের, তুমি ছায়া সবুজের!
তুমি শ্রাবণের অঝোরধারা, তুমি ঝরণার সুর সঙ্গীত/
নদীর স্রোতে তোমার শুনি গান নয়া যিন্দ্গির।
কাশ্মীর! আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর!
کیوں تری فضاوٗں میں اداسی کے نشان ہیں
نکھرے ہوئے گلزار بھی کیوں محوِ فغاں ہیں
چشمے ترے کیوں نالہ کش و نوحہ کناں ہیں
کہسار ترے کیوں ہیں جگر بستہ و دِلگیر
اے وادیٗ کشمیر ، اے وادیٗ کشمیر
তোমার আকাশে বাতাসে কেন ছায়া বিষাদের!
কেন অঝোর কান্না গুলবাগে কলিদের!
এ নদী ও ঝরণা, তোমারই চোখের অশ্রুধারা!
তোমার পবর্তরাজি কেন আজ শোকে গম্ভীর!
কাশ্মীর! আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর!
شاید تجھے مسلم کی وفاوٗں سے گلا ہے
فریاد تری سچ ہے ، ترا شکوہ بجا ہے
لیکن میرے محبوب وہ وقت آن لگا ہے
گونجے گا فضاوٗں میں جب اک نعرہ تکبیر
اے وادیٗ کشمیر ، اے وادیٗ کشمیر
মুসলিমের গাফলতের আছে বুঝি অনুযোগ!
করি স্বীকার, সঙ্গত তোমার অধিকার!
তবে প্রিয়, এসেছে সময়, শোনো ঐ মিনারে আজ ধ্বনিছে আযান-তাকবীর
কাশ্মীর! আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর!
مانا کہ دلوں میں وہ تب و تاب نہیں ہے
اس قوم کی تلوار میں وہ آب نہیں ہے
اب عزمِ مسلمان وہ سیلاب نہیں ہے
گردش میں ہے برسوں سے مری قوم کی تقدیر
اے وادیٗ کشمیر ، اے وادیٗ کشمیر
জানি, দিলের জাহানে নেই অতীতের তাপ-উত্তাপ
কাউমের তলোয়ারে নেই সেই ধার, সেই ভার!
আমাদের ঈমানে নেই সেই তরঙ্গজোয়ার
যামানার গার্দিশে ঘুমিয়ে আজ কাউমের তাকদীর
কাশ্মীর! আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর!
مانا تری مٹی پہ بہت خون بہا ہے
تو نے غم وآلام غلامی کو سہا ہے
لیکن مرے ہمدم ! مرا دل بول رہا ہے
ہمت کی حرارت سے پگھل جائے گی زنجیر
اے وادیٗ کشمیر ، اے وادیٗ کشمیر
জানি, মাটিতে তোমার বহু, ঝরেছে লহু/ জীবনে সয়েছো কত
যিল্লতি গোলামির
তবে বন্ধু আমার, দিলের ডাক শোনো একবার/হিম্মতের উত্তাপে গলবে এবার জিঞ্জির।
কাশ্মীর! আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর!
تکبیر کا نعرہ تری عصمت کا امیں ہے
چھٹنے کو ہے تاریکیٗ غم ، مجھ کو یقین ہے
کیا ظلمتِ شب صبح کی تمہید نہیں ہے؟
کیا خونِ شفق رنگ نہیں مثردہٗ تنویر ؟
اے وادیٗ کشمیر ، اے وادیٗ کشمیر
তাকবীরের বজ্রধ্বনি, তোমার ইছমতের নিগাহবানি
দূর হবে দুঃখের আঁধার নিশ্চয় জানি।
রাতের আঁধারে নেই কি প্রভাত-আলোর আভাস!
শরতের শেষে নেই কি বসন্ত, গান বুলবুলির।
কাশ্মীর! আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর!
اب وقت ہے سینوں میں عزائم کو جگا لیں
ہم جام و سبو توڑ کے تلوار اٹھالیں
ہر راہ گلستان کو کمیں گاہ بنا لیں
کمزور ہی ، لیکن ابھی ٹوٹی نہیں شمشیر
اے وادیٗ کشمیر ، اے وادیٗ کشمیر
ওঠো, জাগো, সময় এখন নতুন হিম্মতের!
ছাড়ো জামে শরাব, সময় এখন তল্ওয়ারের!
সময় এখন পথে পথে হাতাহাতি লড়াইয়ের!
বাহু দুর্বল, তবু ভাঙ্গেনি হাতের শমশীর
কাশ্মীর! আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর!
ہیں یاد ابھی تک خالد ؓ وطارقؒ کے فسانے
کچھ دور نہیں احمد ؒ و ٹیپو ؒ کے زمانے
اٹھو ، کہ چلیں ظلم کو دنیا سے مٹانے
پھر زندہ کریں دہر میں یہ اسوہ شبیر
اے وادیٗ کشمیر ، اے وادیٗ کشمیر
দিলে যিন্দা আজো আফসানা খালিদ-তারীকের
দূরে তো নয় যামানা মহিসূর বালাকোটের ।
ওঠো, চলো, মিটাবো আজ নাম নিশান জুলুমের ।
যামানা দেখবে আবার ইনছাফের ঐ তাছবীর।
কাশ্মীর! আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর!
ہم کو ترے شاداب نظاروں کی قسم ہے
جہلم کے دلآویز کناروں کی قسم ہے
پھولوں کی ، درختوں کی چناروں کی قسم ہے
کاٹیں گے ترے پاؤں سے ہر ظلم کی زنجیر
اے وادیٗ کشمیر ، اے وادیٗ کشمیر
কসম তোমার গুলযারের, কসম তোমার ঝিলামতীরের।
শপথ তোমার ঝর্ণার, তোমার সবুজ গালিচার।
শপথ তোমার পর্বতের শুভ্র তুষারের। গাইব মুক্তির গান। ভাঙ্গবো গোলামির জিঞ্জির!
কাশ্মীর! আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর!
سر حرمتِ توحید پہ کٹوا کے رہیں گے
ہم کفر کے طوفان سے ٹکرا کے رہیں گے
طاغوت کے ایوان کو اب ڈھا کے رہیں گے
پیوندِ زمیں ہو گی ہر اک کفر کی تعمیر
اے وادیٗ کشمیر ، اے وادیٗ کشمیر
বুকের তাজা খুন দেব, রাখিব ঈমানের লাজ/ কুফুরের ঝড়তুফানে ভয় করি না আজ।
ধুলায় মিশাবো তাগুতের কেল্লা, যালিমের বালাখানা।
ওঠো, চলো, শতকণ্ঠে বলো জিহাদের তাকবীর।
কাশ্মীর! আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর!
اک غلغلہ ، نعرہ تکبیر اٹھا کر
یہ برقِ تپا خرمن باطل پہ گرا کر
توپوں سے برستے ہوئے شعلوں میں نہا کر
ہم خون سے لکھیں گے تری آزادی کی تحریر
اے وادیٗ کشمیر ، اے وادیٗ کشمیر
তাকবীরের বজ্রধ্বনিতে ভুবন কাঁপিয়ে/ বিজলীর আগুনে বাতিলের আশিয়ানা জ্বালিয়ে।
আগুন-বারুদের তুফান পাড়ি দিয়ে।
খুনের হরফে লিখিব দাস্তান তোমার আযাদীর!
কাশ্মীর! আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর!
دشمن کے عزائم تیری مٹی میں ملیں گے
مدّت سے جو رستے ہیں ، ترے زخم سلیں گے
اس خاک یہ الفت کے حسیں پھول کھلیں گے
صیاد جو اب تک تھا وہ بن جائے گا نخچیر
اے وادیٗ کشمیر ، اے وادیٗ کشمیر
শত্রুর দর্প, হবে খর্ব লুটাবে তোমার পায়!
বুকের যখমে লহু, ঝরেছে বহু, ঝরবে না আর।
ফুলশাখে ফোটবে ফুল প্রীতি ও শুভেচ্ছার।
শিকারী এবার হবে শিকার, হবে খিঞ্জীর
কাশ্মীর! আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর!
پھوٹیں گے تری خاک سے پھر نور کے دھارے
ظلمت کدہ کفر سے اٹھیں گے شرارے
گونجے گی آذانوں کی صدا ڈل کے کنارے
پھر جاگ اٹھے گی تری سوئی ہوئی تقدیر
اے وادیٗ کشمیر ، اے وادیٗ کشمیر
বুক থেকে তোমার বইবে নতুন আলোর ধারা
জুলমতের আঁধার ফুঁড়ে, জাগবে নতুন চাঁদ-তারা
তোমার পাহাড়চূড়ে আযানধ্বনির হবে প্রতিধ্বনি!
ওঠবে জেগে তোমার শতাব্দীর ঘুমিয়ে থাকা তাকদীর
কাশ্মীর! আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর!
تو خاتمِ دنیا کا اک انمول نگیں ہے
تو حسن کا مسکن ہے ، تو بہاروں سے حسیں ہے
آسی کی نگاہوں میں تو فردوسِ بریں ہے
فردوس تو ہوتی نہیں شیطان کی جاگیر
اے وادئ کشمیر ، اے وادئ کشمیر !
অমূল্য নাগিনা তুমি আঙুলে রূপসী পৃথিবীর!
বসন্তের বাহার তুমি, তুমি ‘জান্নাত নযীর’!
জেগেছে অরুণ তরুণ, ভাঙ্গবে পিঞ্জর গোলামীর,
এবার দেখো, হবে তছনছ ইবলিসের জায়গীর
কাশ্মীর! আয় ওয়াদিয়ে কাশ্মীর!
একটি কাশ্মীরী তারানা অবলম্বনে
কাশ্মীর তো জান্নাত, না মা! জান্নাতে এত ঝড় কেন, তুফান কেন মা!
এত খুন কেন, এত আগুন কেন?!
পশুদেরও তো আছে বেঁচে থাকার অধিকার!
মানুষ হয়েও জীবন কেন এত বঞ্চনার, এত লাঞ্ছনার?
কেন, কেন. মা!
কাশ্মীর জান্নাত আমার। শোনে হে দুনিয়া, এখানে থাকার অধিকার শুধু আমার!
হে সুখী মানুষ! হে সুখী সংসার! আমারও আছে কিছু বলার!
দুঃখ সবার মনে আছে তোমার। ভুলে যাও শুধু দুঃখের কাহিনী আমার?
কেন ভুলে যায় ওরা, কেন মা!?
এখানে ওখানে স্বাধীন সবে, নেই স্বাধীনতা আমার! কেন? কী অপরাধ আমার?
কেন? কেন? জিজ্ঞাসা করি মা, একবার?!
এত এতীম, এত বিধবা কেন এ জনপদে?! এত রক্ত কেন ঝরে এখানে? বন্দুক হাতে ঐ যে দ্বিপদ দাঁড়িয়ে! বলো মা, আছে কি জবাব ওর কাছে?
কার ভয়ে কোলের শিশু ঘুম পাড়াতে চাও মা! কিসের ভয়ে ঘুমপাড়ানি গান ভুলে যাও মা!
এই যে বুকের ক্ষত, এই যে আর্তনাদ শত! কেন লুকোতে হয় মা! কার ভয়ে মা!!
হাতগুলো পিছমোড়া করে কেন বাঁধা মা, বজ্রমুষ্টি ঊর্ধ্বে তোলা কি অপরাধ মা!
আমার ঘরে আমাকে শাসায়, কেন মা! কিছু যদি বলতে চাই, বলে, ‘চুপ’! কেন মা!
কী অপরাধে মা! রোয রোয এত আঘাত কেন সইতে হবে মা!
এভাবেই কি চলবে মা, আমাদের সময় কি আসবে না মা!
কেউ কি সান্ত¡নার কথা বলতে পারে না, মা! বলতে পারে না, এ নিশি ভোর হবে! পূর্বদিগন্ত রাঙা হবে! ফুলের হাসি, চাঁদের জোসনা আবার দেখা হবে!
অনেক লাল হয়েছে এ রাজপথ, আর কত রক্ত ঝরবে মা!