শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

কাশ্মীরসংখ্যা | কাশ্মীর সংখ্যা (বিশেষ)

কাশ্মীর সম্পর্কে যা বলেছেন মুফতিয়ে আ‘যম পাকিস্তান

 

কাশ্মীর সম্পর্কে যা বলেছেন

মুফতিয়ে আ‘যম পাকিস্তান

কাশ্মীর এখন আমাদের জীবনের বড় কঠিন ও গুরুতর সমস্যা। এ সমস্যা এত দীর্ঘ ও প্রাচীন যে, অনেকে এখন সমস্যাটির আসল হাকীকত ও প্রকৃতি ভুলেই যেতে বসেছে।

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ যখন ভাগ হয় তখন মুসলিমপ্রধান রাজ্য হিসাবে কাশ্মীর অবধারিতভাবেই পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা ছিলো। কাশ্মীরী মুসলমানদের প্রাণের দাবীও ছিলো তাই। কিন্তু একটা ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র হলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। পূর্বপাঞ্জাবের মুসলিমপ্রধান জেলা গুরুদাশপুর প্রথমে পাকিস্তানের অংশ বলে ঘোষণা করা হলো। পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করা হলো এবং আযাদির জশন বা উৎসবও পালন করা হলো। কিন্তু চারদিনের মাথায় গুরুদাশপুরের মুসলমানদের উপর যেন বজ্রপাত হলো। পরিবর্তিত ঘোষণা এলো যে, গুরুদাশপুর পাকিস্তানের নয়, ভারতের অংশ। আসল ঘটনা এই ছিলো, কাশ্মীরের সঙ্গে ভারতের কোন ভৌগোলিক সংযুক্তি ছিলো না গুরুদাশপুর জেলার চিকন ফালিটুকু ছাড়া। গুরুদাশপুর জেলার একটি এলাকা হলো পাঠানকোট। পাঠানকোট থেকে একটি রাস্তা গিয়েছে কাশ্মীরের দিকে। পাঠানকোটের সড়ক যদি চক্রান্ত করে ভারতকে না দেয়া হতো তাহলে ভারত কোনভাবেই কাশ্মীরে সৈন্য পাঠাতে পারতো না।

যাই হোক, দ্বিতীয় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শিখ-হিন্দু জঙ্গীবাহিনী মুসলমানদের বিরুদ্ধে এমন গণহত্যা শুরু করলো যে, ব্যস, আল্লাহ পানাহ। ...

তো এভাবে লাগাতার ষড়যন্ত্রের ফলে, সমস্ত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জিহাদ শুরু হলো। তখন তো আযাদ কাশ্মীর ও মাকবূযা কাশ্মীর ছিলো না। পুরোটাই ছিলো কাশ্মীর। তো কাশ্মীরী মুজাহিদীন প্রায় নিরস্ত্র অবস্থায় জিহাদ শুরু করলেন। পাকিস্তান থেকে  আফ্রীদী ও অন্যন্য গোত্রের মুজাহিদীন মাশাআল্লাহ্ কাশ্মীরের মুসলমান ভাইদের সাহায্যে ছুটে গেলেন। মুজাহিদীন শুধু ঈমান ও জিহাদের জোশে বলীয়ান হয়ে ঝড়ের গতিতে ভূখ-ণ্ডের পর ভূখ- জয় করে নিলেন। এভাবে বহু জানমালের কোরবানির বিনিময়ে অস্তিত্ব লাভ করলো আযাদ কাশ্মীর। অবশিষ্ট কাশ্মীরের বিজয়ও তখন মাত্র তিনদিনের বিষয় ছিলো, যদি শুধু ‘যুদ্ধবন্ধ’ না হতো, আর পাকিস্তান ‘সামান্য একটু’ সাহায্য করতো।

তখন পাকিস্তানের যে কমযোর ফৌজ ছিলো তারো কমান্ডার ইন চীফ ছিলো খবিছ ইংরেজ জেনারেল গ্রেসী। পাকিস্তানের বড় নাযুক অবস্থা ছিলো। কিছুই ছিলো না। সবকিছু নতুন করে তৈরী করে নিতে হচ্ছিলো।

তখন পাক ফৌজের জোয়ানরা নিজেদের উদ্যোগে গোপনে মুজাহিদীনকে সাধ্যমত সাহায্য করতো। পাকফৌজের কিছু পদস্থ অফিসার ছিলেন আমার বন্ধু। তারা চোখের পানি ফেলে ফেলে আমাকে ঘটনা শুনিয়েছেন। বারামূলা দখল করার সব আয়োজন হয়ে গিয়েছিলো। বারামূলা দখলে আসার অর্থই ছিলো শ্রীনগর দখলে চলে আসা। তখন আমাদের ফৌজের ইংরেজ কামান্ডার ইন চীফ যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করে দিলো। তখন আমাদের হাতপা বাঁধা হয়ে গেলো। পুরো ফৌজ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলো যে, কাশ্মীরের বিজয় আর মাত্র একদু’দিনের মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু আমাদের বিজয়কে পরাজয়ে বদল করে দেয়া হলো শুধু চক্রান্তের মাধ্যমে।...

আমরা যখন হিজরত করে হিন্দুস্তান থেকে পাকিস্তান আসি তখন কাশ্মীরে জিহাদ চলমান ছিলো। আমার আব্বাজান হযরত মাওলানা মুফতি শফী ছাহেব এবং হযরত মাওলানা শাব্বীর আহমদ উছমানী রহ- যারা ছিলেন পাকিস্তান বানানোর আসল কারিগর, তাদের কাছে কাশ্মীরের মুজাহিদীন উলামায়ে কেরাম আসতেন। তারা বলেছেন, ‘আমাদের কাছে তোপ ছিলো না। যখন হিন্দুস্তানী উড়োজাহায আসতো আমরা সব রাইফেল একত্র করে গুলি চালাতাম। আল্লাহ্র কুদরতে হিন্দুস্তানী জাহায ‘পড়ে যেতো’! তখন আমাদের ঈমানী বল এত বেড়ে যেতো যে জোশের সঙ্গে আমরা আল্লাহু আকবার তাকবীর-ধ্বনি করতাম। ...

এভাবে কাশ্মীরের দখল যখন প্রায় সম্পন্ন তখনসমস্যাটি জাতিসঙ্ঘে নেয়া হলো। সেখানে গণভোটের প্রস্তাব হলো, সেই প্রস্তাব আজো ঝুলে আছে। ভারত কাশ্মীরের উপর জবর দখল কায়েম করে রেখেছে। আর এখন তো হিন্দুস্তান আরো ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে!

***

এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন; কাশ্মীর সমস্যার সমাধান কীভাবে সম্ভব?

এ বিষয়ে কোরআনের কিছু হিদায়াত ও নির্দেশনা রয়েছে যা আমাদের বর্তমান জীবন ও আচরণের কারণে আমার অন্তরে বড় উৎকণ্ঠা ও পেরেশানি সৃষ্টি করছে। দেখুন আল্লাহ্ তা আমাদের সম্বোধন করে তিরস্কারমিশ্রিত প্রশ্ন করছেন

তোমাদের হলো কী যে, তোমরা আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করছো না, অথচ (নিপীড়িত নির্যাতিত) দুর্বল লোকেরা পুরুষ, নারী ও শিশুনির্বিশেষে আর্তনাদ করছে, আয় রব, আমাদের উদ্ধার করুন এই জনপদের যালিম লোকদের থেকে, আর আমাদের জন্য আপনার পক্ষ হতে কোন কল্যাণকামী ও সাহায্যকারী প্রেরণ করুন। (সূরা নিসা)

আজ মুজাহিদীনে কাশ্মীর ও মযলুমানে কাশ্মীর একদিকে আল্লাহ্র কাছে ফরিয়াদ করছে, আর একদিকে আল্লাহ্ যেন ঝাঁকুনি দিয়ে আমাদের জিজ্ঞাসা করছেন যে, তোমাদের কী হলো....

তো এটা আল্লাহ্র পক্ষ হতে পুরো মুসলিম উম্মাহ্র কাছে জিজ্ঞাস! পাকিস্তান নিকটতম প্রতিবেশী হওয়ার কারণে পাকিস্তানী মুসলমানদের দায়দায়িত্ব বেশী...!

...কাশ্মীরে আজ অসহায় মুসলমানদের উপর যুলুম-নির্যাতনের যে সমস্ত ঘটনা ঘটছে তাতে তো গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। সত্য কথা তো এ... যে, আমাদের মধ্যে যদি ঈমানের জযবা ও চেতনা থাকে, বরং অন্তত যদি সামান্য মানবতাবোধও থাকে তাহলে তো আমাদের কারো স্থির থাকার কথা না!

এটা তো শুধু পাকিস্তানের সমস্যা না, শুধু মুসলিম উম্মাহ্র সমস্যা না, এটা তো জাতিসঙ্ঘের সমস্ত সদস্যদেশের সমস্যা। এটা তো গোটা মানবজাতির সমস্যা। ...

তো আমি আমার ঈমান ও বিশ্বাস থেকে অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে বলছি, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান আলাপ আলোচনা, ভাষণ-বক্তৃতা,প্রস্তাব ও নিন্দাপ্রস্তাব, কিংবা একঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা, এগুলোর দ্বারা হবে না, কখনো না। যদিও এগুলোর নিজস্ব মূল্য রয়েছে এবং এগুলো করে যেতে হবে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও অব্যাহত থাকবে। তবে এগুলো হবে জিহাদের অংশহিসাবে। আসল কথা হলো জিহাদ, আল্লাহর ওয়াস্তে আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ! জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ্ ছাড়া মুসলিম উম্মাহ্র কোন সমস্যারই সমাধান হবে না, না কাশ্মীরে, না ফিলিস্তীনে, না অন্যকোথাও। ....

***

একটা কথা, পাকিস্তানের ফৌজ কখনো কাশ্মীরে পুরোদমে হামলা করেনি। আমাদের বিশ্বাস, যদি আমাদের হুকূমত জিহাদ ঘোষণা করে, আর আমাদের ফৌজ শুধু আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার নিয়তে, অন্যকোন নিয়তে নয়, যদি জিহাদ শুরু করে তাহলে আমার পূর্ণ বিশ্বাস ফাতাহ ও বিজয় আমাদেরই হবে। কাশ্মীর আমাদের হবে। ...

জিহাদের জন্য সংখ্যা ও শক্তি অতীতের ইতিহাসেও কখনো বিবেচ্য বিষয় ছিলো না, এখনো নেই। ব্যস, দিল থেকে ভয় দূর করো, মউতের জন্য তৈয়ার হয়ে যাও। দুনিয়ার কোন শক্তি আমাদের পরাজিত করতে পারবে না। আমাদের ফৌজের এক জেনারেল আমাকে বলেছেন, হিন্দুস্তান ও পাকিস্তানের ফৌজের মধ্যে পার্থক্য এই যে, ওরা মরতে ভয় পায়, আর আমাদের জোয়ান মউত ও শাহাদতের জন্য সীমাহীন জোশ ও জযবার সঙ্গে ফৌজে শামিল হয়।

***

... তবে একটা কথা খুব বুঝে নিন, জিহাদ ঘোষণা করার অধিকার একমাত্র রাষ্ট্রের এবং মুসলিম শাসকের। আমি-আপনি, কোন বড় থেকে বড় আলিম, মুফতি বা কোন রাজনৈতিক নেতা, শরীয়ত কাউকে জিহাদ ঘোষণা করার অধিকার দেয়নি। সেটা জিহাদ হবে না, ফাসাদ হবে। শাসক ফাসিক হলেও, জিহাদ ঘোষণার অধিকার শুধু তার এবং তখন মুসলমানদের উপর জিহাদ ফরয হয়ে যায়।

***

মুসলিম শাসকেরও দায় রয়েছে, দায়িত্ব রয়েছে। এই যে জিহাদ করার কোরআনী আদেশ, এর প্রথম সম্বোধন তো মুসলিম শাসকের প্রতি যে, আওয়াম ও জনসাধারণ তো তোমাদের আদেশমত চলবে, তবে তোমাদের কর্তব্য হলো জিহাদ ঘোষণা করা। যদি না করো তাহলে আল্লাহ্র নাফমানির আযাব তোমাদের উপর আসবে।...

আজ সত্তর বছর হয়ে গেলো, কাশ্মীরের মুসলমানদের উপর, দুর্বল নারীদের উপর হিন্দুস্তানের বর্বর সেনাবাহিনী জঘন্যতম যুলুম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা হুমকি, ধমকি তো খুব দেই, জাতিসঙ্ঘের দুয়ারে ধরণা দেই। কিন্তু জিহাদের কথা কল্পনায়ও আসে না! জিহাদের তৈয়ারির চিন্তাও করি না।

খুব ভালো করে বুঝে নিন; জাতিসঙ্ঘ, বড় দেশ, বড় শক্তি না কখনো আমাদের সাহায্য করেছে, না করবে। আমাদের সাহায্য, আমাদের কামিয়াবি শুধু সর্বশক্তিমান আল্লাহর হাতে। আর আল্লাহ্র সাহায্য লাভের উপায় তিনি আমাদের হাতে দিয়ে রেখেছেন। খুব ভালো করে বুঝে নিন, জিহাদের এমন তাকত ও শক্তি রয়েছে যা অন্যকিছুতে নেই; এমনকি যুদ্ধের মধ্যেও নেই। যুদ্ধে আমাদের বহুবার পরাজয় হয়েছে এবং সামনেও হতে পারে। কিন্তু জিহাদের মধ্যে কী অপরাজেয় শক্তি রয়েছে তা আমাদের দুশমন, ভারত, ইসরাইল বারবার দেখেছে। এজন্যই যুদ্ধে ভয় না পেলেও জিহাদের নামে তারা ভয়ে কম্পমান। জিহাদ যখন হয় তখন তো আসমান থেকে ফিরেশতা নেমে আসে মুজাহিদীনের সাহায্যের জন্য।

পারভেয মুর্শারফ, আল্লাহ্ তাকে হেদায়াত দান করুন, তার সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি ও গোনাহ আল্লাহ্ মাফ করে দিন। তিনি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে আলাদা আলাদা ডেকেছিলেন। ওলামায়ে কেরামের মজলিসও ডেকেছিলেন, পরামর্শের জন্য, যখন আফগানিস্তানপ্রশ্নে আমেরিকার পক্ষ হতে ‘চরমপত্র’ এলো। পারভেয ছাহেব হয়রান হয়ে জানতে চাইলেন, ভারত আমাদেরচেয়ে অনেক বড়, তবে ভারতের সঙ্গে আমরা যুদ্ধ করতে পারবো, ইটের জবাব পাত্থর দিয়েও দিতে পারবো, কিন্তু আমেরিকা...!

আমি তখন আরয করলাম, জেনারেল ছাহাব! আপনি আমাদের সিপাহ্সালার। আপনি নিজে মউতের জন্য তৈয়ার হয়ে যান, পুরো কাউমকে তৈয়ার হতে বলুন। তারপর জিহাদের ইলান করুন এবং দেখুন নতীজা কী হয়! খুব ভালো করে বুঝুন জেনারেল ছাহাব, আমরা যখন মউতের জন্য তৈয়ার হয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়বো, হোক না আমেরিকার মত বড় দুশন! আমরা তো মরে শহীদ হবো, তবে এমনিতেই মরে যাবো না। তাদেরকে মেরে তারপর মরবো। ইনশাআল্লাহ্ চিরজীবনের জন্য শিক্ষা হয়ে যাবে। ...

এটাই হাকীকত যে, মুসলমান কখনো সংখ্যা ও শক্তির দুর্বলতার কারণে পরাজিত হয়নি। যখনই পরাজিত হয়েছে, নিজেদের মধ্যে বিভেদ-বিবাদ ও হানাহানির কারণে এবং গাদ্দারি ও খেয়ানাতের কারণে হয়েছে। মউতের ভয় এবং দুনিয়ার মোহ-এর কারণে হয়েছে।

***

বর্তমান শাসক ও প্রশাসন, তাদের সঙ্গে বহু বিষয়ে আমাদের ভিন্নমত রয়েছে এবং সেটারও ভিত্তি ইখলাছ ও হিতাকাক্সক্ষা। যদি কখনো সুযোগ হয় তাদেরকে সুপরামর্শ...!

...কাশ্মীরের বিষয়ে, জিহাদের বিষয়ে কোন ইখতিলাফ নেই। বর্তমান শাসক যদি জিহাদের এলান করেন তাহলে আমার মত বুড়ো সবার আগে তার ঝাণ্ডার নীচে দাঁড়াবে। মাদারেসের তালিবানে ইলম তার ফৌজনের পিছনে গিয়ে দাঁড়াবে। সমস্ত মুফতিয়ানে কেরাম জিহাদের পক্ষে ফতোয়া দেবেন। পুরা কউম তার পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হবে। আমি তো এই বুড়ো বয়সেও দু‘আ করি, হে আল্লাহ্ জিহাদের শক্তি দান করো। আমাদের শাহাদতের মর্যাদা দান করো।

স্বয়ং আমাদের নবী কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিহাদ ও শাহাদাতে তামান্না যাহির এবং দু‘আ করেছেন।

শাহদাত তো প্রত্যেক মুমিনের দিলের তামান্না ও মাকছাদে হায়াত

আমাদের হুকূমত খুব ভালো করে বুঝে নিন। আমি আবারো বলছি, জিহাদের এলান আওয়ামের কাজ নয়, ব্যক্তির কাজ নয়। এতে তো শক্তি বিক্ষিপ্ত হবে; অথচ আমাদের কর্তব্য তো হলো শক্তি সঙ্ঘবদ্ধ রাখা। জিহাদের মধ্যে এ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যে, যখন আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদের এলান হয় তখন তো অপরিসীম শক্তির উদ্বোধন ঘটে। একতা সৃষ্টি হয়, বিভেদ বিবাদ দুর হয়ে যায়।...

খুব বুঝে নিন; হুকুমতের কাছে আমাদের দাবী ও মুতালাবা এই যে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করুন, পর্যালোচনা করুন এবং বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।  আমরা এটা বলি না যে, এখনই আমাদের জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। বাস্তব পরিস্থিতি তা নয়। তবে কউম ও হুকুমতের অবশ্যকর্তব্য যে, এখন থেকেই জিহাদের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। জিহাদ আমাদের করতেই হবে। জিহাদ ছাড়া কাশ্মীরের আযাদির আর কোন পথ নেই। আর কাশ্মীরকে আমাদের আযাদ করতেই হবে। কারণ হাকীকত এই কাশ্মীর আমাদের ‘শাহরগ’। কায়েদে আযম একথা শুধু আবেগের তোড়ে বলেননি যে, কাশ্মীর আমাদের শাহরগ। কাশ্মীরের উপর, কাশ্মীরের নদী ও পানির উপর দখলদারির মাধ্যমে ভারত আসলে আমাদের শাহরগের উপর কবযা করে ফেলেছে। ভারত এখন পাকিস্তানকে পানিতে মারার চক্রান্ত করছে। সুতরাং কোনভাবেই আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। প্রথমত কাশ্মীরের মযলুম ভাইদের পাশে দাঁড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত আমাদের কাউমি শাহরগকে ভারতের কবযা থেকে মুক্ত করতে হবে। এজন্য আমাদের জিহাদ করতে হবে। জিহাদের তৈয়ারি করতে হবে।

একটা কথা খুব ভালো করে বুঝে নিন। জিহাদ ছাড়া কাশ্মীর আমাদের হাতে আসবে না।

আবার বলছি, খুব ভালো করে বুঝে নিন। যখন কোন ব্যক্তি বা জাতি মউতের জন্য তৈয়ার হয়ে যায় তখন তাকে মেরে ফেলা এত সহজ হয় না।

ভাই, বর্তমানে মাকবূযা কাশ্মীরে মুসলামনদের উপর যেভাবে বিপদ-মুছীবত ও যুলুম-নির্যাতনের পাহাড় ভেঙ্গে পড়ছে তাতে আমাদের দিল ক্ষতবিক্ষত। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন, যেন সত্যি সত্যি আমরা কাশ্মীরের মযলূম মুসলমানদের পাশে দাঁড়াতে পারি জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ্-এর মাধ্যমে। শুধু ভাষণ-বক্তৃতা দ্বারা নয়, শুধু প্রস্তাব ও নিন্দাপ্রস্তাব দ্বারা নয় এবং শুধু পাঁচমিনিট রাস্তায় দাঁড়িয়ে সংহতি প্রকাশ দ্বারা নয়। *