এক ছোট্টমণির ছোট্টচিঠি!
০ নানা ভাই! আমার নাম শুকরানা!
০০ মাশাআল্লাহ্, কেতনা পেয়ারা নাম হ্যয়!
০ আমার কিন্তু আরেকটা নাম আছে, রায়হানা!
০০ সুবহানাল্লাহ্! ছোট্ট মেয়ের দু’দুটো নাম!
০ আমার আসল নাম হলো আমাতুল্লাহ্ মারয়াম!
০০ আচ্ছা, তুমি তাহলে মারয়াম! তা কী মনে করে হঠাৎ বুড়োর দুয়ারে!
০ হঠাৎ করে এলাম কেন জানেন! আমার মনে না অনেক কষ্ট!
০০ আহারে! এমন ফুলের মত ছোট্ট মেয়েটিকে কে কষ্ট দিলো! খেলনাটা নিয়ে গিয়েছে বুঝি!
০ আমার কষ্ট হলো, আম্মুর কাছে শুনেছি, একটা দেশ আছে কাশ্মীর!
০০ আছেই তো! আমিও শুনেছি! দেশটা হলো আমাদের এখান থেকে ঠিক ...
০ কাশ্মীর মুসলিমানের দেশ! হিন্দুরা নাকি খুব যুলুম করে! ছোট ছোট বাচ্চাদের ধরে ধরে খেয়ে ফেলে। একেকটা নাকি ইয়া বড়া দৈত্ত!
০০ হবে হয়ত, তুমি যখন বলছো! তবে লোকেরা ওদের মানুষই বলে।
০ কাশ্মীর দেশটা ভারত কীভাবে দখল করে নিলো নানা ভাই! কাশ্মীরে কি মুজাহিদীন নেই?
০০ আছে। আছে বলেই তো পুরো কাশ্মীর দখল করতে পারেনি। আর মুজাহিদীন জিহাদ করছে বলেই তো যখন দৈত্তগুলো মারতে আসে তখন নিজেরাও মারা পড়ে মুজাহিদীনের হাতে।
০ কাশ্মীর সম্পর্কে আমি অনেক কিছু জানতে চাই নানাভাই! কাশ্মীরের শিশুদের কথা, কাশ্মীরের আম্মুদের কথা, আব্বুদের কথা!
০০ আচ্ছা তোমার জন্য লিখে রাখবো কিছু সুন্দর লেখা, যখন বড় হবে তখন পড়ো!
কে তি নি?
মুজাহিদীন যখন জিহাদ করেন, সংখ্যা অল্প, শক্তি সামান্য! ঢাল নাই, তলোয়ার নাই! তোপ-কামান নাই! টেঙ্ক-বিমান নাই!
আর দুশমন! সংখ্যা অনেক, শক্তি বিপুল! ঢাল আছে, তলোয়ার আছে! তোপ-কামান, টেঙ্ক-বিমান-ক্ষেপণাস্ত্র সবই আছে!
লড়াই শুরু হয়। দুর্বল মুজাহিদীন সবল দুশমনের উপর জয়ী হন! কারো বিশ্বাস হতে চায় না, এটা কীভাবে সম্ভব হয়!
সম্ভব হয়, কারণ মুজাহিদীন গায়ব থেকে সাহায্য লাভ করেন!
গায়ব থেকে সাহায্য করেন, কে তিনি?
তিনি আল্লাহ্! তিনি সর্বশক্তিমান! তিনি সে যুগেও মুজাহিদীনকে সাহায্য করেছেন, বদরে, অহুদে, ইয়ারমুকে! এখনো তিনি সাহায্য করেন, ফিলিস্তীনে, কাশ্মীরে! মুজাহিদীন ইনশাআল্লাহ্ জয়ী হবেন একদিন!
একটি ছোট্ট মেয়ে
একটি ছোট্ট মেয়ে, কাশ্মীরের ছোট্ট এক গ্রামে তার বাড়ী। তার বাবাকে হিন্দু হায়েনা ধরে নিয়ে গিয়েছে। বাবার কথা তার মনে নেই। সে শুধু জানে, তার মা আছেন, বাবা নেই! সে আরো জানে, যদি সে কান্নাকাটি না করে, যদি ঠিকমত লেখাপড়া করে তাহলে তার বাবা দৈত্তের হাত থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে আসবেন। তখন থেকে সে কান্নাকাটি করে না! শান্ত হয়ে থাকে। বাবার কথা মনে হলে চোখে পানি আসে, তবু সে কাঁদে না!
সে ঠিকমত লেখাপড়া করে, যেন বাবা এলে বলতে পারে, দেখ বাবা, আমি কত কিছু পড়েছি! এখন আমি কত কিছু জানি!
কিন্তু মুশকিল হলো এখন সে মাদরাসায় যেতে পারে না! কারণ...
হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। চুপি চুপি সে আল্লাহ্কে বললো, আমি যখন ঘুমিয়ে থাকি তখন পরীখুকিকে পাঠিয়ে দিয়ো। পরীখুকি আমাকে ঘুমের মধ্যে পড়িয়ে যাবে।...
এবং... (এবং এর পরেরটুকু তোমরা কল্পনা করে নাও। আমাকে শুধু বলো, তোমরা কি জানতে চাও, ফুলের মত সুন্দর এই কাশ্মীরী মেয়েটির নাম?)
ছোট্ট একটি কবর!
কাশ্মীরের সবুজ ভূমিতে ছোট্ট একটি গ্রামে ছোট্ট একটি কবর! ঐ কবরে ঘুমিয়ে আছে ছোট্ট একটি শিশু! মায়ের বড় আদরের মেয়ে! মায়ের কোলেই ছিলো শিশুটি। খিলখিল করে হাসছিলো। এমন হাসিতে মায়ের মন জুড়িয়ে যায়, কিন্তু ময়ের বুকটা সেদিন ধক ধক করে উঠলো। চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ ফুটে উঠলো। কে জানে, মায়ের মনে তখন কী অশুভ চিন্তা জেগে উঠেছিলো! কেন জানি মায়ের মনে হচ্ছিলো, এই হাসিটাই হয়ত তার খুকুমণির শেষ হাসি!
তাই হলো। মা বাড়ীর ওঠোনে ছিলেন। হঠাৎ রাস্তায় শোরগোল হলো, আর মা কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা গুলি এসে বিঁধলো তার সোনামণির বুকে। মা আহত হলেন, আর তার সোনামণি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো।...
মা-দিন রাত কবরের কাছে বসে থাকেন। কেউ কথা বললে, ঠোঁটে আঙুল রেখে সতর্ক করেন, কথা বলো না; দেখছো না, আমার সোনামণি ঘুমিয়ে আছে! ...