কিশোর বন্ধুরা!
সালাম গ্রহণ করো। আশা করি সবাই ভালো আছো। আশাবাদের সঙ্গে অবশ্য আমি জানতে চাইবো, মানুষ ভালো থাকে কীভাবে? মানুষের মনে শান্তি আসে কখন? জানি না, এ প্রশ্নের কে কী উত্তর দিতে চাও! এও জানি না, এ প্রশ্নের কোন উত্তর তোমাদের জানা আছে কি না! তবে এ বিষয়ে আমার নিজস্ব কিছু চিন্তা আছে, বর্তমান উপলক্ষে সেটাই তোমাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। আশা করি, তাতে তোমরা ক্ষীণ আকারে হলেও একটা আলোকনির্দেশ পাবে।
আমার মনে হয়, মানুষ ভালো থাকে দু’ভাবে। যদি সে লক্ষ্যহীন এবং উদ্দেশ্যহীন জীবন যাপন করে।
মানুষের কাছে জীবনের কিছু দাবী থাকে, আবার মানুষেরও জীবনের কাছে কিছু প্রত্যাশা থাকে। তো এই দাবী ও প্রত্যাশা সম্পর্কে যার কোন চিন্তাভাবনা নেই এবং নেই কোন দায়বোধ; যার বেঁচে থাকা শুধু আহার-নিদ্রার জন্য এবং আহার-নিদ্রা শুধু বেঁচে থাকার জন্য, এমন মানুষ ভালো থাকে এবং শান্তিতে থাকে, যদি তার আহার-নিদ্রার আয়োজনে কোন বিঘœ না ঘটে।
আবার যাদের জীবনে মহৎ কোন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে, যারা স্বপ্ন দেখে সমাজ, দেশ ও জাতির কোন না কোনভাবে কিছু না কিছুৃ কল্যাণসাধনের; জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের সাধনায় যারা আত্মনিয়োগ করতে পেরেছে এবং যাদের স্বপ্ন কিছু পরিমাণে হলেও সফল হয়েছে, সত্যিকার অর্থেই জীবনে তারা সুখী। কারণ তারা জীবনের দাবী পূরণ করতে পেরেছে, আবার জীবনও তাদের প্রত্যাশা কিছু হলেও পূর্ণ করেছে। তাদের বেঁচে থাকা সফল, তাদের মৃত্যুও সার্থক।
যাদের জীবনে মহৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তো ছিলো, যাদের বুকে বড় স্বপ্ন তো ছিলো সমাজ ও জাতির কল্যাণের জন্য, কিন্তু বিভিন্ন প্রতিকূলতায় তাদের পথচলা বারবার ব্যাহত হয়েছে, আর স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় তাদের বুক হয়েছে আহত। এই মানুষগুলোর জীবনে অনেক কষ্ট, সীমাহীন যন্ত্রণা। সান্ত¡না শুধু এই যে, জীবনের ব্যর্থতার পরো আল্লাহ্র কাছে তারা কিছু প্রাপ্তির আশা করতে পারে, তাদের নিয়তের বিশুদ্ধতার কারণে এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পথে আত্মনিবেদনের কারণে।
হে কিশোর, হে তরুণ!! কামনা করি এবং প্রার্থনা করি, মহৎ কোন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যেন তুমি জীবন যাপন করতে পারো, তোমার বুকের লালিত সুন্দর স্বপ্নগুলো যেন সফল হয়। কামনা করি এবং প্রার্থনা করি, তুমি যেন ভালো থাকো, সুখে থাকো উদ্দেশ্যের প্রতি নিবেদিত হয়ে এবং স্বপ্নের প্রতি বিশ^স্ত থেকে।
আল্লাহ্র ইচ্ছায় কত সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখি! ইচ্ছে হয়, প্রতিটি স্বপ্ন সুন্দর করে লিখে রাখি কাগজের পাতায়! ঘুম থেকে জেগে ভাবি, একটা দু’টো জরুরি কাজ সেরে নিই, তারপর লিখবো! কখনো ভাবি, মনে তো আছে, ভুলে তো যাচ্ছি না, এখন না হয় পরে লিখবো, আজ না হয় কাল লিখবো! শেষে আর লেখাই হয় না। একসময় বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করি, উজ্জ্বল স্বপ্নটা কখন যেন আবছা হয়ে পড়েছে। কিছুটা মনে পড়ে, অনেকটাই মনে পড়ে না। একসময় দেখি, পুরো স্বপ্নটাই হারিয়ে গেছে স্মৃতির পাতা থেকে।
আজকের স্বপ্নটাকে, এই মাত্র যা দেখে জেগে উঠলাম, এ স্বপ্নটাকে আর হারিয়ে যেতে দেবো না। খুব সংক্ষেপে হলেও এটাকে কাগজের পাতায় জমা রেখে তারপর অন্য কাজ।
দেখি, আমার প্রিয় মুরশিদ হযরত পাহাড়পুরী হুযূর একা বসে আছেন। কী যেন পড়ছেন! কাছে গিয়ে শুনি বড় করুণ ও বিষণœ কবিতা। স্বপ্নেই মনে হলো, হুযূরের স্ত্রী ইন্তিকাল করেছেন, তাই বড় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন। নিঃসঙ্গতার অনুভূতি থেকেই বিরহের কবিতা আবৃত্তি করছেন। আমাকে দেখে হুযূর এমনভাবে উঠে দাঁড়ালেন, যেন আমার ইন্তিযারে ছিলেন! সালাম-মুছাফাহার পর হুযূর বললেন, যেদিন বাড়ী যাবেন তার আগের দিন স্বপ্নে হলেও আমার কাছে আসবেন।
আমি তো অবাক! ইচ্ছে মত কি স্বপ্নে আসা যায়! আমি বললাম, বাড়ী যাওয়ার মানে কী? মনে হলো, আমার বুঝতে না পারাটা তাঁর কষ্টের কারণ হয়েছে। তখন মনে হলো, তিনি হয়ত আল্লাহ্র ঘরে যাওয়ার কথা বলছেন।
হুযূরের মুখম-লের দিকে তাকিয়ে দেখি, হাসিতে উজ্জ্বল। মনে হলো, আমার চিন্তাটা তিনি অনুভব করতে পেরেছেন এবং খুশী হয়েছেন। ভাবতে ভাবতেই চোখটা খুলে গেলো।
কিছু দিন আগে আরেকটা স্বপ্ন দেখেছিলাম, বড় সুন্দর এবং অর্থপূর্ণ স্বপ্ন। সুযোগ হলে কোন এক অবসরে...।
৬/৭/৪০ হি. ১৩/৪/১৯ খৃ.
একটি আলোর কণা
একটি আলোর কণা, জোনাকির মত ক্ষুদ্র আলোর কণাও তোমাকে পথ দেখাতে পারে আঁধার রাতে, যদি দৃষ্টি তোমার থাকে প্রসারিত; যদি অন্তরে তোমার থাকে পথের সন্ধান লাভের এবং গন্তব্যের দিকে পথ চলার আকুতি!
সূর্যের চোখ ধাঁধানো আলো এবং চাঁদের ¯িœগ্ধ কিরণ তোমাকে পথ দেখাতে পারে না, যদি তুমি সেজে থাকো অন্ধ; যদি আলোর চেয়ে অন্ধকারই হয় তোমার প্রিয়। এমন প্রাণীও আছে, আলোর চেয়ে অন্ধকারেই যারা স্বাচ্ছন্দ্য বেধ করে; তুমি যদি হও সেই প্রাণীর মত।
পিপাসায় তুমি কাতর? এক আঁজলা পানিতেই দূর হতে পারে তোমার পিপাসা, যদি তুমি যেতে পারো শীতল ঝর্ণার প্রবাহের কাছে। যদি তুমি ভুল পথে চলে যাও সাগরের কাছে, সাগরের অথৈ জলেও দূর হবে না তোমার পিপাসা! মিঠা পানি পিপাসা দূর করে, নোনা পানি শুধু বাড়ায় পিপাসার যন্ত্রণা।
মাটিতে পড়ে থাকা একটি ফুলের পাপড়ি তোমাকে দিতে পারে সুবাস এবং পারে এমনকি তোমার জীবনকে সুবাসিত করতে, যদি তুমি যতেœর সঙ্গে তুলে নাও অযতেœ পড়ে থাকা পাপড়িটি!
বাগানের সবফুল ‘ছিঁড়ে’ এনেও তুমি পাবে না একফোঁটা সুবাস, সুবাসিত জীবন তো দূরের কথা!
পাবে না তুমি, এমনকি ফুলের সামান্য সৌন্দর্য, যদি তোমার অন্তর্সত্তা ফুলের প্রতি, ফুলের কোমলতা ও ¯িœগ্ধতার প্রতি মিনতি নিবেদন করতে না পারে।
ফুল ছেঁড়া মানে তো ফুলকে খুন করা! ফুলের ‘খুনী’ ফুলের কাছে আশা করে সুবাস! এ আশা দুরাশা ছাড়া আর কী, বলো!
সামনে যাওয়ার আগে এখানে একটি কথা বলে রাখি তোমাকে! হয়ত তা হবে জীবনের পথে চলার জন্য তোমার সঞ্চয়ে সামান্য পাথেয়। ফুলকে কখনো অসম্মান করো না! ফুলের স্পর্শ পর্যন্ত লাভ করার যোগ্যতা যার নেই, এমন নোংরা মানুষের গলায় কখনো ফুলের মালা পরিয়ো না।
কেউ জানে না, জানলেও বিশ্বাস করে না, ফুলের অভিশাপ বড় কঠিন।
অল্পেতুষ্টির ‘সম্পদ’ যদি থাকে তোমার কাছে সোনাদানা ও দিরহাম-দীনার ছাড়াও তুমি হতে পারো শ্রেষ্ঠ ধনী!
যাদের অন্তরে রয়েছে সম্পদের লিপ্সা, কারুনের খাজানার সোনাদানাও পারে না তাদের ভিতরের অভাব দূর করতে এবং পারে না, কবরের মাটি ছাড়া আর কিছু তাদের উদর পূর্ণ করতে। আদমের বেটা তো এমন যে, এক উপত্যকা স্বর্ণ দাও, তার লালসার জিহ্বা লকলকিয়ে ওঠবে দ্বিতীয় উপত্যকার জন্য!
এবার গরীবের কাছে জীবনের শেষ সময়ের এই উপদেশটুকু শোনো, আলোর প্রতি, আলোর ক্ষুদ্র একটি কণারও প্রতি কৃতজ্ঞ হও! ফুলের প্রতি, ফুলের পড়ে থাকা একটি পাপড়িরও প্রতি নিবেদিত হও! বিত্তে সংযমী হও, আর চিত্তে হও উদার, অকুণ্ঠ!
তারপর মৃত্যুর মাধ্যমে অনন্ত জীবনের শুভউদ্বোধনের প্রস্তুতি গ্রহণ কর।
‘আপনি আমার
‘আপনি আমার পিতার মত, মায়ের মত, ভাই ও বড় ভাইয়ের মত; তুমি আমার সন্তানের মত, মেয়ের মত, বোনের মত।’ বিভিন্ন উপলক্ষে মানুষ মানুষকে এমন কথা বলে। শুনতে ভালো লাগে, অন্তরে কোমলতার অনুভূতি জাগে এবং ...
তবে তিক্ত হলেও সত্য এই যে, এগুলো খুব কমই হয় মানুষের মনের কথা, বরং নিছক কথার কথা, শুধু সৌজন্যের প্রাণহীন প্রদর্শন। এভাবে জীবনকে স্পর্শ না করেই মানুষ জীবনের কাছ থেকে কিছু পেতে চায়।
আমরা কি বুঝতে পারি, এ শব্দগুলোর ধার ও ভার কত? প্রতিটি শব্দের দায় কী? দায়িত্ব কী? প্রতিটি শব্দ কিছু সুবিধা যেমন দেয় তেমনি আরোপ করে কিছু দায় ও দায়িত্ব। আমরা শব্দের দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে শুধু সুবিধাটুকুই পেতে চাই। যদি আমরা শব্দের দায় অনুধাবন করতাম এবং দায় গ্রহণ করতাম তাহলে আমাদের সম্পর্কগুলো হতো অনেক সজীব ও প্রাণবন্ত।
জীবনের সান্ত¡না এই যে, সম্পর্কে যত শব্দ আমার সামনে এসেছে, আমি সেগুলোর দায়গ্রহণ করেছি এবং মর্যাদা রক্ষার চেষ্টা করেছি, যদিও সামনের মানুষটির কাছ থেকে ...!
কুতুবখানার প্রতি কৃতজ্ঞতা
আমার ছোট্ট কুতুবখানাটি আমার জীবনের অমূল্য সম্পদ। যখনই কুতুবখানায় এসে বসি কিতাবের একটু সান্নিধ্য গ্রহণ করার জন্য তখন আমার অন্তর্জগতে যে ভাব ও ভাবনা সৃষ্টি হয়, এমন কোন শব্দ আমার জানা নেই যা দ্বারা অন্তরের সেই ভাব ও ভাবনা প্রকাশ করা সম্ভব। মনে হয়, এ শুধু একান্তে অনুভব করার বিষয়। নিজেকে তখন বড় সমৃদ্ধ মনে হয়। হয়ত কোন কিতাব খুলে তখন কিছু পড়ি না, তাকে তাকে সাজিয়ে রাখা কিতাব শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি, মুহব্বতের নযরে, ভালোবাসার দৃষ্টিতে, তাতেই যেন আমার হৃদয় ও আত্মা কোন অদৃশ্যলোক থেকে আলো গ্রহণ করতে থাকে। অন্তহীন এক আলোর স্রােতে আমার সর্বসত্তা যেন অবগাহন করতে থাকে। তখন স্পষ্ট অনুভব করি, পরম সত্তার পক্ষ হতে ঝিরঝির করে মমতা ও করুণার এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞার শিশির বর্ষিত হতে থাকে। তাতে আমি সিক্ত হই এবং ¯ত হই! তাতে আমি আপ্লুত হই এবং উদ্বেলিত হই! আমার হৃদয়-পাত্র তখন যেন উপচে পড়ে!!
কোন একটি কিতাব যখন খুলে পড়ি ...বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন কিতাব পড়ার প্রয়োজন তো সবসময়ই হয়। পড়া ছাড়া একজন তালিবে ইলমের জীবন তো জীবনই নয়। তো একজন সামান্য তালিবে ইলমের পরিচয়ে এবং সেই পরিচয়ের দাবীতে যখন প্রয়োজন এবং সুযোগ হয়, বিভিন্ন কিতাব আমারও পড়া হয়। ঐ পড়া অবশ্যই জীবনকে সমৃদ্ধ করে, চিন্তায় চেতনায়, জ্ঞানে প্রজ্ঞায় এবং জানাশোনা ও তথ্যের প্রাচুর্যে। তবে যখন শুধু একান্তে বসে অনুভবের জগতে কুতুবখানার সান্নিধ্য গ্রহণ করি তখনকার অর্জন আকারে, অবয়বে এবং প্রকারে প্রকৃতিতে সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু! মনে হয় অন্তর্জগতে তখন একসঙ্গে বহুমুখী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। হৃদয়ের সরোবরে তখন যেন অজ¯্র ধারায় জ্ঞান ও অন্তর্জ্ঞানের স্রােত এসে মিলিত হয়। ছোট্ট হৃদয়টা তখন যেন পরিণত হয় অজ¯্র স্রােতের মিলনমোহনায়!
বিশেষ করে গভীর রাতের নির্জনতায় যখন আমি কুতুবখানায় কিছু একান্ত সময় যাপন করি তখন অদ্ভুত এক অনুভূতি আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। অদ্ভুত-এর পরিবর্তে যদি বলি, অপূর্ব এক অনুভূতি তাহলে বোধহয় সত্যের আরো কাছাকাছি হয়। তখন মনে হয় আমার চারপাশে অশরীরী কারা যেন আলোকিত সত্তায় সমবেত হয়। কখনো মনে হয়, যেন অসংখ্য আলোর ছায়া, কিংবা ছায়ার আলো। সেই আলো-ছায়াগুলো কখনো অস্পষ্ট, যেন বহু দূরের; কখনো স্পষ্ট, যেন অত্যন্ত নিকটের। এত স্পষ্ট যে প্রতিটি আলো ও ছায়া যেন একটি করে অবয়ব ধারণ করে। প্রতিটি আলো ও ছায়াকে তখন এত আপন মনে হয় যেন ...!
হৃদয় ও আত্মা তখন এমনই অভাবিতপূর্ব একটি আচ্ছন্নতায় বিভোর হয় যে, বাস্তব জগতের সবকিছু অনুভব-অনুভূতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এমনকি আমার স্থূল সত্তাটি তখন যেন অশরীরী রূপ ধারণ করে; চারপাশের আলো-ছায়াগুলোর মত আমিও যেন একটি আলো-ছায়ার রূপ লাভ করি! তখন প্রতিটি আলো-ছায়াকে যেন নিজ নিজ অবয়বে চিনতে পারি। নির্জন রাতের ঐ নৈশব্দের শুভলগ্নে এমনই অনাস্বাদিতপূর্ব একটি একাত্মতা অনুভূত হয় যে, ...!
প্রতিটি দৃষ্টি যেন আমাকে ¯েœহে মমতায় সুসিক্ত করে, প্রতিটি হৃদয় থেকে যেন একটি করে আলোর স্রােত আমার হৃদয়সরোবরে এসে একাকার হয়। অদৃশ্যলোক থেকে কে যেন তখন বলে, ‘ভালোবাসার সুবাস দিয়ে, আত্মার আকুতি ও হৃদয়ের মিনতি একত্র করে তুমি যত কিতাব সংগ্রহ করেছো, এঁরা সেই কিতাবের...! তোমার ছোট্ট কুতুবখানায় এঁদের ছায়াপাত তোমারই ভালোবাসার দানে তোমাকে সমৃদ্ধ করার জন্য। এই সুযোগে তুমিও তোমার হৃদয়ের উদ্যান থেকে ভক্তি ও শ্রদ্ধার কিছু ফুল এঁদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করো।’
হৃদয় ও আত্মার সেই আচ্ছন্নতা থেকে যখন ফিরে আসি স্থূল সত্তার বাস্তবতায় তখন দেখি, কোথায় কী! আমি ছাড়া কেউ তো নেই, কিছুই তো নেই এখানে আমার চারপাশে!!
কেউ কি তাহলে ছিলো না, কিছুই কি তাহলে ছিলো না এখানে এতক্ষণ? এই যে কিসের যেন সুবাস! এই যে কেমন যেন একটু আলোর উদ্ভাস! এটা তাহলে কী? তখন বুঝতে পারি, এতক্ষণ যা দেখেছি, শুনেছি এবং যা অনুভব করেছি তা এ জগতের কিছু না হলেও অন্য জগতের অন্য কিছু অবশ্যই। এটা আসলে আকাশের অশেষ দান এবং ঊর্ধ্বলোকের অপার করুণা!!
আমার প্রিয় ছোট্ট কুতুবখানাটির প্রতি এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। শুধু কি ছোট্ট এই কুতুবখানাটির প্রতি? না, আমি কৃতজ্ঞ, পৃথিবীর যেখানে যত কুতুবখানা আছে, ছোট-বড়, ক্ষুদ্র-বৃহৎ, এবং সমৃদ্ধ ও বিশাল প্রতিটি কুতুবখানার প্রতি। কারণ আমি বিশ্বাস করি; কুতুবখানা, ঊর্ধ্বজগতের পক্ষ হতে এর রয়েছে একটি অশরীরী সত্তা, যার প্রকাশ ঘটে বিভিন্নখানে বিভিন্ন অবয়বে।
আমি বিশ্বাস করি, একটি কুতুব-খানার সঙ্গে ভালোবাসার বন্ধন আমাকে পৃথিবীর প্রতিটি কুতুবখানার সঙ্গে হৃদয় ও আত্মার একাত্মতার বন্ধনে আবদ্ধ করে, করতে পারে। একটুখানি কৃতজ্ঞতার অনুভূতি দ্বারা আমি হতে পারি জগতের সকল কুতুবখানার ধনে ধনী! এমনকি বাগদাদের যে সকল সমৃদ্ধ কুতুবখানা জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে সারখার করেছে হালাকুখানেরা, আল্লাহ্র ইচ্ছায় সেগুলোরও জ্ঞান ও প্রজ্ঞার স্পর্শ থেকে আমি, তুমি; আমরা বঞ্চিত হবো না, যদি শুধু কিতাব ও কুতুবখানার প্রতি থাকে ‘শাওকে দীদার’!
হে তালিবে ইলম, আমার কথাগুলো তুমি বিশ্বাস করতে পারো। সারা জীবনের প্রচেষ্টায় যা অর্জিত হয়নি, একটি বিশস, একটি মিনতি ও নিবেদন তোমাকে তা এনে দিতে পারে। *