শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

জিলহজ্ব ১৪৪০ হিঃ (৩/৮) | তোমাদের পাতা

র সে র ক ল ম দা নি

 র ম্য র  চ  না

জিভে পানি আসে এবং আসে জল!

ইহা রসে টইটুম্বুর একটি লেখা। প্রিয় পাঠক, ইহাকে বেশী কাত করিয়া পড়িও না; তাহাতে রসটুকু পড়িয়া যাইতে পারে!

এমনই অপূর্ব মাহাত্ম্য এই বস্তুটির যে, নামটা পর্যন্ত মুখে উচ্চারণ করিতে হয় না, শুধু মনে মনে একটুখানি কল্পনা করিলেই হয়, জিহ্বায় প্রথমে যে পদার্থটি আসে তাহাকে বলে পানি, অতঃপর যাহা আসে তাহা অপেক্ষাকৃত গাঢ়, তরলতা কিঞ্চিৎ কম, তাহাকে বলে জল। এই পানি বা জল যখন জিহ্বার অগ্রভাগ হইতে টস টস করিয়া ফোঁটা ফোঁটা গড়াইয়া পড়ে তখন উহাতে তরলতা খুবই কম থাকে বলিয়া প্রাজ্ঞজন উহাকে বলেন লালা। ভাবিয়া দেখ তো, কীরূপ দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য! প্রথমে পানি, অতঃপর জল, সর্বশেষ টস টস করিয়া গড়াইয়া পড়া লালা!

এই দেখ, আমি কিন্তু ঐ বস্তুটির নাম উচ্চারণ করি নাই, এমনকি যাহাকে বলে কল্পনা তাহা পর্যন্ত করি নাই; হাঁ, কল্পনার প্রথম স্তর জল্পনা, উহা অবশ্য করিয়াছি, তাহাতেই কিনা, আমার জিহ্বায় পানি আসিল, অতঃপর উহা জলে রূপান্তরিত হইল। এখন শুধু লালা হইয়া ঝরিয়া পড়িতে বাকি!

***

শৈশবে একটা দুষ্টুমির প্রচলন ছিল আমাদের মধ্যে; কাহারো জিহ্বায় পানি ও জল আনিতে হইলে হঠাৎ করিয়া বলিতাম, ‘ঐ দেখ, কী সুন্দর বয়ামে কী সুস্বাদু তেঁতুলের আচার!’

যাহাকে উদ্দেশ্য করিয়া এই অমৃত বচনের বর্ষণ, সে কত না আগ্রহের সঙ্গে নির্দেশিত দিকে দৃষ্টিপাত করিত, তেঁতুলের সাক্ষাৎ সে পাইত না, তবে আমরা তাহার জিহ্বায় পানি ও জলের দেখা পাইতাম।

বেচারা তখন কী আর করে! নিরীহভাবে ঢোক গিলিয়া বুঝাইবার চেষ্টা করিত, তাহার জিহ্বায় পানি বা জল কিছুই আসে নাই!

ঘটনা এইখানে আসিয়া থামিয়া গেলে আপত্তি ছিল না, কিন্তু তেঁতুলের এমনই বেয়াড়া গুণ যে, যে বালক ঐ দুষ্টুমি কথাটি উচ্চারণ করিত তাহার অজান্তে তাহারও জিহ্বায় পানি বা জল আসিয়া পড়িত, আর লজ্জায় পড়িয়া গেল কি না বুঝিবার জন্য একবার এই দিকে, একবার ঐ দিকে তাকাইত! কেহ দেখে নাই বুঝিলে বেশ স্বস্তি বোধ করিত।

আপেল বল, আনার, কলা বা পেয়ারা বল, এমনকি রসে ভরা আম-জাম-লিচু বল, জিভে পানি, জল বা লালা কিছুই আসে না! শুষ্ক জিহ্বা শুষ্কই থাকে। কিন্তু তেঁতুল! ওরে সর্বনাশ! ভুলেও ঐ নামটা মুখে আনিও না, এমনকি মনেও না! তুমি কিরা কসম করিয়া বন্ধুদের বলিতে পার, তেঁতুলের কথা তুমি ভুলেও মনে কর নাই, কিন্তু তোমার মুখের পানি ও জল এবং জিহ্বার অগ্রভাগের লালাই বলিয়া দিবে, তেঁতুলের কল্পনা বা জল্পনা তোমার মনের বারান্দায় অবশ্যই আনাগোনা করিয়াছে। অন্তত একবার হইলেও উদিত হইয়াছে।

***

লালা আকর্ষণের বিষয়ে কাঁচা তেঁতুল ও পাকা তেঁতুলে কি কোন পার্থক্য আছে? প-িত ব্যক্তিগণ বিস্তর গবেষণা করিয়া, এমনকি ‘হাতেমুখে’ অভিজ্ঞতা অর্জন করিয়াও তেমন কোন পার্থক্য খুঁজিয়া পান নাই। আমি অধম নিজেও একবার কাঁচা তেঁতুল এবং একবার পাকা তেঁতুল কল্পনা করিয়া দেখিয়াছি, তেমন কোন পার্থক্য হয় নাই। পানি ও জলের পরিমাণে কিঞ্চিৎ হ্রাসবৃদ্ধি ঘটিয়াছে, এই যা।

***

সেই আদিকালের ব্রাহ্মণ প-িত হইতে শুরু করিয়া, বৈদ্য, কবিরাজ, হাকীম, এমনকি আধুনিক কালের ডাক্তার মহাশয়, সকলে বিস্তর গবেষণা করিয়া তেঁতুলের ‘লালারহস্য’ উদ্ঘাটনের চেষ্টা করিয়াছেন, কিন্তু কেহ তেমন সফলকাম হইতে পারেন নাই।

অসফলতার একটা বড় কারণ সম্ভবত এই যে, তাহাদের গবেষণা ছিল তেঁতুলকেন্দ্রিক। অর্থাৎ তাহারা শুধুই তত্ত্বতালাশ করিয়াছেন যে, তেঁতুলের মধ্যে এমন কি উপাদান আছে যাহা মনুষ্যসন্তানের জিহ্বায় পানি, জল ও লালা আকর্ষণ করিতে সক্ষম!?

কোন সদাশয় গবেষক মহাশয় যদি মনুষ্যসন্তানের জিহ্বার উপর, এবং জিহ্বার পথে আরো কিঞ্চিৎ অগ্রসর হইয়া উভয় লিঙ্গের উদর-অভ্যন্তর পর্যন্ত গবেষণা করিতেন, আশা করি তিনি সফলতার মুখ দেখিতেন, পুরা মুখম-ল না হইলেও উহার কিয়দাংশ অবশ্যই দেখিতে পাইতেন।

আমি অধম, প্রিয় পাঠক, তোমার দোয়ায় আমার গরীবানা হালাতের গবেষণাটি প্রথম হইতেই ত্রিমুখী ছিল। অর্থাৎ কিনা তেঁতুলের সঙ্গে জিহ্বা, অতপর জিহ্বার সঙ্গে লালা, যুগপৎ এই তিনটি বিষয় ছিল আমার গবেষণার বিষয়। তাহাতে দেখা গেল, মূল কারণ শুধু তেঁতুলের মধ্যে নহে, মূল কারণ তেঁতুলের মধ্যে যেমন তেমনি মনুষ্যসন্তান ও তাহার জিহ্বারও মধ্যে! আমার গবেষণার আরেকটি বিষয় ছিল, তেঁতুলে যেমন জিহ্বায় পানি ও জল আসে এবং লালা ঝরে, আর কিছুতে কি জল আসে, লালা ঝরে? গবেষণার কী ফল দাঁড়াইল? সবিস্ময়ে লক্ষ্য করিলাম, আরেকটি বস্তুতেও তেঁতুলের গুণ রহিয়াছে। ঐ বস্তুটিও দেখিবামাত্র এবং মনে মনে কল্পনা করিবামাত্র জিহ্বায় জল আসে, অতঃপর জিহ্বার অগ্রভাগ হইতে লালা ঝরে! ঠিক যেমন ঋষ্টপুষ্ট হরিণ দেখিলে নেকড়ের জিহ্বায় জল আসে ও লালা ঝরে।

জানিতে চাও ঐ বস্তুটির পরিচয়! আপাতত ছবরের লেজ ধরিয়া ঝুলিয়া থাক, বিদায়ের পূর্বে অবশ্যই পরিচয় বলিব, তখন লেজ ছাড়িয়া নামিয়া পড়িও। তবে এখন শুধু জানিয়া রাখ, ঐ বস্তুটি বৃক্ষে ঝুলিয়া থাকে না, ভূমিতে বিচরণ করে, আর কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায় উহাতে তেঁতুলগুণ বিদ্যমান থাকে।

***

আচ্ছা, গবেষণা এবং উহার নতিজার কথা এখন থাক। আগে শোন আমার কিশোর জীবনের একটি ‘অর্ধসত্য’ ঘটনা।

বাড়ী ও স্কুলে আসা-যাওয়ার পথটি মধ্যরাতে যেমন নির্জন ছিল তেমনি নির্জন ছিল মধ্যদুপুরেও। ঠিক অর্ধেক পথে একটি তেঁতুলবৃক্ষ ছিল। উহাতে তেঁতুল ধরিয়া থাকিত এবং ঝুলিয়া থাকিত, কিন্তু তাহাতে কাহারো জিহ্বায় পানি বা জল কিছুই আসিত না, বরং সকলেরই গা ছমছম করিত। কারণ লোকেরা বলাবলি করিত, ঐ তেঁতুলবৃক্ষে যিনি বাস করেন, এককালে তিনি কাহার যেন পত্নী ছিলেন, এখন তিনি পেত্নী হইয়া ঐ তেঁতুলবৃক্ষে অধিষ্ঠান গ্রহণ করিয়াছেন। লোকেরা বলে ‘তেঁতুলপেত্নী’। যাহাকেই জিজ্ঞাসা কর, বলে, আমি নিজেই দেখি নাই, তবে কান্দি বাড়ীর চান্দি নাকি দেখিতে পাইয়াছিল এবং সেই রাত্রেই ভয়ে জ¦র উঠিয়া মারা গিয়াছিল।

বৃক্ষটি ছিল অতিশয় বড়। লোকেরা বলিত ‘তিনি’ বাস করেন বৃক্ষটির মগডালে। লোকেরা আরো বলিত, সুযোগ মত তিনি মনুষ্যসন্তানের ঘাড় মটকাইয়া থাকেন। ইহা নাকি তাহার অতিশয় প্রিয় কর্ম। তবে কবে কাহার ঘাড় মটকান হইয়াছে, সেই তথ্য কাহারো নিকট ছিল না। অবশ্য ভয় পাইবার পক্ষে, তথ্যের আবশ্যকতা নাই, জনশ্রুতিই যথেষ্ট।

***

আমার স্কুলজীবনের সঠপাঠী নন্দু আমাকে বড্ড ভালোবাসিত এবং ভালোবাসিত বলিয়া, আমাকে আলাদা গ্লাসে ‘পানি’ দিলেও, কখনো উহাকে গোবরজলে পবিত্র করিত না, আর আমি তাহার স্কন্ধে হস্ত স্থাপন করিলে ¯œানের প্রয়োজন বোধ করিত না; এক ফোঁটা গোচনাকেই যথেষ্ট মনে করিত।

তো নন্দু একদিন বলিল, বন্ধু! তোমাকে একটা ঘটনা বলিব, বিশ^াস করিতে পার, আবার অবিশ^াসও করিতে পার; গত রাতে তেঁতুলপেত্নীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হইয়াছে। জোসনা রাত ছিল। দূর হইতেই দেখা গেল,  বিধবারা পরিধান করে ঐরূপ ধবধবে সাদা শাড়িতে ঠিক তেঁতুলবৃক্ষের মগডালে ‘তিনি’ বিরাজ করিতেছেন!

নন্দু অকপটেই বলিল, যদি বলি, তেঁতুলপেত্নীকে সাক্ষাৎ সামনে দেখিয়া আমার গা ছমছম করে নাই এবং পা ঝাড়িয়া দৌড় দেই নাই, মিথ্যা হইবে। ভয়ে অবশ্যই দৌড় দিয়াছিলাম, তবে কিনা অগ্রসর হইতে পারি নাই। তিনি মগডাল হইতেই খপ করিয়া আমাকে ধরিয়া ফেলিলেন এবং একটানে উপরে তুলিয়া আনিলেন।

তেঁতুলপেত্নী বেশ আদুরে কণ্ঠে কহিলেন, তোরা আমাকে এত ভয় পাস কেন রে! দেখিতে আমি কি অসুন্দর, ভয়ঙ্কর?

নন্দু আমাকে দিব্য করিয়া বলিল, বন্ধু! বিশ^াস কর, আমার গা তখন ছম ছম করিল না, কেমন যেন ঝিম ঝিম করিল! ভিতরে একটু যেন লোভ জাগিল, জিহ্বায় একটু যেন জল আসিল। কোন রকম ঢোক গিলিয়া কহিলাম, না, ভয় করিব কেন! তুমি তো দেখিতে বেশ ‘সুন্দরী’!

তেঁতুল পেত্নী খুশী হইয়া আদুরে গলায় জানিতে চাহিল? তুমি কি তেঁতুল বৃক্ষের এই মগডালে আমার সঙ্গে...!

নন্দুকে আমি তিরস্কার করিয়া কহিলাম, ছি! পেত্নীর সঙ্গে!

নন্দু কহিল, কিন্তু পেত্নীকে আমার তখন পেত্নী মনেই হয় নাই। মনে হইয়াছে আমাদের পাড়ার অজে’দার পত্নী! তাছাড়া ইহা তো স্বপ্নের ঘটনা!

***

সত্য কথা যদি বলি, নন্দুর ঐ স্বপ্নটাই ছিল আমার গবেষণার ভিত্তি। পেত্নীকে তাহার পত্নী কেন মনে হইল, আর তেঁতুলের মত মুখে জলই বা কেন আসিল?

ইচ্ছা ছিল আজ সকালে আমার সমাপ্ত গবেষণার ফল তোমাদের সম্মুখে প্রকাশ করিব, কিন্তু ইতিমধ্যে দেশ জুড়িয়া ঘটিয়া গেল তুমুল কা-! আমাদের ‘বড় হুযূর এবং বুড়া হুযূর’ ওয়াজ ফরমাইতে গিয়া নাকি বলিয়াছেন, ‘মেয়েরা তেঁতুলের মত, বেশী কাছে গেলে জিহ্বায় পানি আসে, সুতরাং দূরত্ব রক্ষা করিয়া চলাই নিরাপদ, ইত্যাদি...

ব্যস, পত্রপত্রিকায় ঝড় শুরু হইল, এমনকি সংসদে পর্যন্ত তুফান উঠিল! অমুকের স্ত্রী, তমুকের পত্নী সাক্ষাৎ ...র মত নর্তন কুর্দন করিয়া জানিতে চাহিল, হুযূর কোন্ পথে মাতৃগর্ভ হইতে অবতরণ করিয়াছেন? বেচারা বুড়া হুযূরের হালত দেখিয়া আমি সত্যই দমিয়া গেলাম। অবাক ইহয়া শুধু ভাবি, আমি যাহা বিস্তর গবেষণা করিয়া জানিলাম, বুড়া হুযূর কোন প্রকার গবেষণা ছাড়া কীরূপে উহা অবগত হইলেন! আছল মে বড়ে লোগোঁ কি বড়ী বাত!!

***

আমার বড্ড জানিতে ইচ্ছা করে, ঐ যে মেয়ে মানুষটি লিখিল, ‘আমার দেখিয়া বহু নামী-দামী পুরুষের দৃষ্টির জিহ্বায় লালা ঝরে।’

তিনি তো নিজেকে আসলে তেঁতুলই সাব্বস্ত করিলেন, তাহাকে তো কেহ তেঁতুলকন্যা কহিল না!

আর ঐ যে ‘সৈয়দ কবি’ নারীর নিতম্ব স্পর্শ করিয়া কবিতা লিখিলেন, তাহাকে ত কেহ ‘নিতম্ব কবি’ কহিল না!

বেচারা বুড়া হুযূর পর্দার জরুরত বুঝাইবার জন্য তেঁতুলপ্রসঙ্গ উচ্চারণ করিয়া এমন কি অন্যায় করিলেন যে, পত্নী-পেত্নী সকলে

‘তেঁতুল হুযূর’ বলিয়া চিৎকার জুড়িয়া দিল!

নন্দুর স্বপ্নটি কি তবে অসত্য! তেঁতুলপেত্নী এককালে অমুকের পত্নী ছিল এবং সুন্দরী ছিল বলিয়া তাহার জিহ্বায় জল কেন আসিল!

আর ‘লজ্জাবস্ত্র’ ত্যাগ করিয়া তিনিই বা কেন কহিলেন, ‘দৃষ্টির জিহ্বায় লালা ঝরে’!

শিল্পীরা নারীর নগ্ন মূর্তি গড়িয়া পুরস্কার লাভ করিবেন, আর বেচারা বুড়া হুযূর নগ্নতার উপর ‘তেঁতুলের’ আবরণ দিতে গিয়া জিজ্ঞাসিত হইবেন, ‘তুমি কোন পথে... ইহা কি ন্যায্য কথা হইল?

তেঁতুলপেত্নীর দেখা পাইলে তাহাকে প্রশ্ন করা যাইত! কিন্তু ...!

 

নাছীরুদ্দীন হোজ্জা, 

নাছীরুদ্দীন হোজ্জা, শুনিতে পাই কিছুদিন যাবত তিনি দিনের আঁধারে এবং রাতের আলোতে আমাদের রাজধানীশহর ঢাকার বুকে বিচরণ করিতেছেন। কী উদ্দেশ্য, তাহা সম্পূর্ণ অজ্ঞাত। একে তো মধ্যযুগের নাছীরুদ্দীন হোজ্জা, কবর জগতের ফেরারী আসামী, তদুপরি রহস্যপূর্ণ উদ্দেশ্যে ঢাকা শহরে বিচরণ, সর্বোপরি দিনের আঁধারে এবং রাতের আলোতে! সুতরাং অন্তত একটি ঝলকের জন্য হইলেও তাহার দর্শন সৌভাগ্য লাভ করিবার কৌতূহল অন্তরে জাগ্রত হইবে, ইহাতে তাজ্জব বনিবার কী আছে!

 তো দিবাচর ও নিশাচর উভয় পক্ষ উঠিয়া পড়িয়া এবং পড়িয়া উঠিয়া লাগিল তাহার খোঁজে। মামা কদম হাজী ও তাহার ভাগিনা মদক পাজি বড়ই বুদ্ধির পরিচয় দিল। অর্থাৎ মামা ভিড়িল দিবাচর-দলে, ভাগিনাকে ভিড়াইল নিশাচর-দলে। উদ্দেশ্য হয় মামা, না হয় ভাগিনা কেহ না কেহ যেন হোজ্জার দর্শন লাভ করিতে এবং মহাশয়ের কর্মকা- ও কা-কর্ম সম্পর্কে সরেজমিনে এলেম হাছিল করিতে পারে। এই কৌশলটি অবশ্য মামা-ভাগিনা রাজনীতির ময়দান হইতে অর্জন করিয়াছে, অর্থাৎ মামা-ভাগিনা আওয়ামী লীগ-বিএনপি করে ভাগাভাগি করিয়া।

সাতদিন পার হইল। মামা ও ভাগিনা একত্র হইল। মামা জানিতে চাহে, কী খবর ভাগিনা? ভাগিনা জানিতে চাহে, কী খবর মামা? অর্থাৎ কেহ নাছীরুদ্দীন হোজ্জার খবর প্রাপ্ত হয় নাই। তবে উভয়ে একটি গুজবের নাগাল পাইয়াছে, কবরস্তানে নাকি দু’টি দলে নির্বাচনী লড়াই শুরু হইয়াছে, নাছীরুদ্দীন হোজ্জা ভোটের বাংলাদেশী সংস্করণ সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের উদ্দেশ্যে আগমন করিয়াছিলেন এবং পর্যাপ্ত জ্ঞান প্রাপ্ত হইয়া যথাসময়ের পূর্বেই যথাস্থানে গমন করিয়াছেন।

বলাবাহুল্য, গুজবের কোন সূত্র পাওয়া যায় নাই। কারণ গুজবের প্রধান খাছিয়াত হইল, উহা শতভাগ সূত্রমুক্ত। সমর্থিত বা অসমর্থিত কোন সূত্রই তাহার কেশাগ্র পর্যন্ত স্পর্শ করিতে পারে না। কারণ সূত্র দ্বারা লেজের দিক বর্ধিত হয়, পক্ষান্তরে গুজবের পছন্দ হইল ডালপালা!

***

তিনি নাসীরুদ্দীন হোজ্জা! প্রাচীন কালের জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তি। তবে চলনে বলনে বড্ড বেশী রস ধারণ করিতেন। তাহার কথাকে লোকেরা বলিত অমৃত বচন! যাহাই বলিতেন তাহাতে জ্ঞানের আর্দ্রতা যেমন থাকিত তেমনি থাকিত রসের সিক্ততা। লোকেরা অবশ্য জ্ঞানের অংশটুকু তেমন গ্রহণ করিত না, শুধু রসের অংশটুকু চাটিত। তাহাতে হাসির উদ্রেক হইত। তাহারা কখনো হি হি, কখনো হা হা এবং কখনো হু হু করিয়া হাসিত এবং হাসিয়া খুন হইত।

 সেই নাসীরুদ্দীন হোজ্জা সম্পর্কে জানা গেল, কী এক মহৎ উদ্দেশ্যে তিনি নাকি পৃথিবীতে, আরো খাছ করিয়া যদি বলি, আমাদের বাংলাদেশে আগমন করিয়াছেন, তবে কিনা ভিসা-পাসর্পোট ছাড়া। তাই প্রকাশ্যে তাহার দেখা পাওয়া যায় না। কপাল ভাল, আমি তাহার দেখা পাইলাম, আহ্লাদিত হইয়া জিজ্ঞাস করিলাম, কী উদ্দেশ্যে জনাবের আগমন, তাও আমাদের এই পোড়া দেশে? তিনি গম্ভীর হইয়া কহিলেন, আপন দেশকে পোড়া বলিও না, ইতিমধ্যেই বহু বিষয়ে তোমরা রোল মডেল আখ্যাপ্রাপ্ত হইয়াছ! আরো কিছু কথা হইল, যদি সুযোগ...