শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

জিলহজ্ব ১৪৪০ হিঃ (৩/৮) | প্রথম পাতা

পাঠকের আদালত

পাঠকের আদালত

     প্রিয় পাঠক! লেখক ও সম্পাদকের জন্য পাঠকের আদালতই নাকি বড় আদালত! হয়ত তাই। এজন্য পুষ্পের মজলিসে পাঠকের আদালত কায়েম করা হলো এবং হে ‘মহামান্য পাঠক’ আপনাকে বিচারকের আসনে বসানো হলো। আশা করি আপনি ‘ইনছাফের তারাজু’ সামনে রেখে পুষ্পের লেখা, বিষয়, সজ্জা এবং অন্য যে কোন বিষয় সম্পর্কে আপনার সুচিন্তিত ও ন্যায়ানুগ ফায়ছালা জানাবেন। আমরা সে আলোকে সামনের পথ ও পন্থা নির্ধারণের চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ!

আমার পক্ষ হতে শুধু একটা পরামর্শ। আদালতে ইনছাফের চোখে সবসময় পট্টি বাঁধা থাকে, আপনি কিন্তু চোখের পট্টিটা খুলে নেবেন।  আর মর্জির খেলাফ ফায়ছালা করলে কী ‘হাশর’ হয় তার নমুনা দেখেছেন নিশ্চয়!! সুতরাং ...(-সম্পাদক)

‘সপ্তম সংখ্যার উদ্বোধনী লেখাটি সত্যি অনবদ্য। ছোট্ট পরিসরের ছোট্ট লেখাও যে হতে পারে কত মর্মপূর্ণ ও বার্তাসমৃদ্ধ তার সার্থক উদাহরণ হলো এ লেখাটি। লেখা, লেখক ও পাঠক, এর বাইরে আর কী আছে? তিনটি সম্পর্কেই রয়েছে গভীর বার্তাসম্পন্ন বক্তব্য। পরিশেষে রয়েছে পুষ্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রসঙ্গ, ‘আলোকিত লেখক ও আলোকিত পাঠকের মিলনমেলা সৃষ্টির প্রচেষ্টা, কোন পত্রিকার, হোক সাহিত্যপত্রিকা, বা গবেষণাপত্রিকা, এর চেয়ে জীবন্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আর কী হতে পারে! সমাপ্তি বাক্যে রয়েছে সবার উদ্দেশ্যে আহ্বান। কিসের আহ্বান? অবগাহনের। ‘অবগাহন’ শব্দটিই বলে দেয় সামনে রয়েছে সরোবর, কিন্তু সেটা যে আলোক-সরোবর, তা কি কল্পনায়ও ছিলো পাঠকের? (আ. ত. ম)

 

 ‘সঙ্গীর জন্য পাখীর মর্মবেদনা’ লেখাটি সত্যি অপূর্ব! অনেকবার পড়েছি। যখনই পড়ি, অদৃশ্য একটি বেদনা আমার অন্তর্সত্তাকে যেন স্পর্শ করে। জানি না, এমন কেন হয়!? হয়ত মানবহৃদয় ও ‘পাখী-হৃদয়’র মধ্যে রয়েছে বেদনার অদৃশ্য কোন বন্ধন! যে বেদনা যন্ত্রণার সঙ্গে প্রশান্তির শীতল স্পর্শও দান করে।

লেখাটির ভাষা যেমন সুন্দর তেমনি সুন্দর তার বিন্যাস ও উপস্থাপন। এর সৌন্দর্যের পরতে পরতে যেন পরম সত্তার সৌন্দর্যের কিছুটা ছায়াপাত ঘটেছে। তাতে অন্তর্জগতে যেন শুভ্রতা ও পবিত্রতার একটা স্বর্গীয় আভা ছড়িয়ে পড়ে।

গল্পটির বার্তা হৃদয়ে এমন রেখাপাত করে যে, জীবনকে সুন্দরভাবে যাপনের কোমল একটি আকুতিতে আমি আচ্ছন্ন হই। কালো কালির হরফগুলো তখন আলোর বর্ণে রূপান্তরিত হয়ে আমার হৃদয় ও আত্মাকে যেন উদ্ভাসিত করে। তখন অন্তরে এ বিশস দৃঢ় হয় যে, জীবনের সার্থকতা আর কিছুতে নয়, শুধু ¯্রষ্টার প্রতি আত্মনিবেদনে এবং সৃষ্টির প্রতি প্রীতি ও মমতা পোষণে।

এ সত্য অস্বীকার করা যায় না যে, গল্পটি এরূপ মর্মস্পর্শী হওয়ার পিছনে ঘটনার বেদনাময়তার যেমন ভূমিকা রয়েছে তেমনি রয়েছে উপস্থাপনের আবেদনময়তার ভূমিকা। অনেক সময় দেখা যায়, সাধারণ একটা ঘটনাও মর্মস্পর্শী হয়ে ওঠে ভাষার মাধুর্যে এবং উপস্থাপনের আবেদনময়তায়। আবার বেদনাদায়ক ঘটনাও প্রাণহীন হয়ে পড়ে, ভাষা ও উপস্থাপন যদি হয় সাদামাটা ও আবেদনহীন।

এ গল্পের যে বিষয়টি আমাকে অত্যন্ত আপ্লুত করেছে তা এই যে, লেখক পাখী-জীবনের বেদনাকে নিজের জীবনের বেদনার সঙ্গে তুলনা করেছেন। সান্ত¡না জ্ঞাপনের এবং সহমর্মিতা প্রকাশের কী অপূর্ব চিত্তস্পর্শী বাক্য, ‘কারণ আমিও একদিন হারিয়েছি আমার তাকে’!

পাঠকেরও তাতে মনে হতে পারে, আমার জীবনেও তো রয়েছে এমন বেদনাপূর্ণ স্মৃতি! এভাবে দু’টি বেদনা একাকার হয়ে পাঠকের হৃদয়ে সুপ্ত বেদনাটিকে যেন নতুন দহনে দগ্ধ করে। এখানেই আমি মনে করি, গল্পটির আসল সার্থকতা।

গল্পের বর্ণনায় যখনই সুযোগ হয়েছে, প্রশ্নের শৈলী ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে আত্মজিজ্ঞাসার একটি সুন্দর উপলক্ষ তৈরী হয়। কারণ আমার চারপাশের মানুষের জীবনেও তো এমন ঘটনা ঘটে। এভাবে নিজেকে প্রশ্ন করার প্রেরণা জাগ্রত হয় যে, মানুষের কষ্টের সময় আমি কি আমার মানবিক দায়িত্ব পালন করি?

স্বপ্ন ও বাস্তবতার একটা রহস্য-জাল পুরো গল্পের শরীরে যেন ছড়িয়ে আছে, যা শেষ পর্যন্ত পাঠকের কৌতূহলকে ধরে রাখে। এটি, যে কোন গল্পের জন্য অপরিহার্য শিল্পগুণ, যা খুব কম গল্পের মধ্যে পাওয়া যায়। ফলে গল্পের মাঝ বরাবর না আসতেই মনে হয়, ‘নাহ, বড্ড ঘুম পাচ্ছে; পরে পড়বো না হয়!’

সঙ্গীকে হারিয়ে পাখীর অন্তরে যে মর্মবেদনা জাগ্রত হয়েছে তার বিবরণ পরম পরিণতির দিকে এগিয়ে গিয়েছে নিজস্ব গতিতে; তবে প্রসঙ্গকে অবলম্বন করে অত্যন্ত সুসঙ্গতরূপে জীবনের কিছু কিছু দর্শন তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দর্শনভারে আক্রান্ত না হয়েও গল্পের সমগ্র শরীরে জীবনদর্শনের একটি কোমল আবহ তৈরী হয়েছে। এভাবেই সম্পূর্ণ কল্পনার তৈরী একটি পাখীর গল্প হয়ে উঠেছে পূর্ণ জীবনমুখী গল্প। আসলে গল্প অনেকেই বলে এবং লেখে, কিন্তু গল্পের অবয়বে জীবনমুখিতার ছাপ রাখতে পারে ক’জন লেখক?

***

এবার কিছু বাক্য ও শব্দ সম্পর্কে আমার কিছু নিজস্ব মত-

* ‘কাঁদিস কেন পাখীভাই’! পাখীকে ভাই বলে সম্বোধন করা কেমন হয়েছে?

** ভাতিজা বলার চেয়ে ভালো হয়নি! আসল কথা হলো, ‘ভাই’ বললেই তো আর মায়ের পেটের ভাই হয়ে যায় না! বাঘকে মামা বললে যদি বাঘ এবং তুমি কেউই আপত্তি না করো তাহলে আশা করি পাখীও আপত্তি করবে না। তাছাড়া তুমি তো ‘মানবহৃদয় ও পাখী-হৃদয়ের মধ্যে বেদনার বন্ধন অনুভব করছো’; ভাই শব্দে তোমার আপত্তি হবে কেন?আসলকথাকীজানো,বাঙ্গালীও                                                                                                                            তার ভাষার স্বভাবের মধ্যে আত্মীয়তা পাতানোর একটা প্রবণতা রয়েছে গোড়া থেকেই। দেখো না, ইংরেজ যেখানে আঙ্কেল আর কাজিনে আটকে আছে সেখানে আমাদের আত্মীয়তার শব্দ কত! চাঁদকে মামা বলার পাগলামী এবং বাঘকে মামা ডাকার দুঃসাহস আর কোন্ জাতি করেছে বলো!

* যদি বলা হয়, ‘পাখীরে, কাঁদিস কেন’ তাহলে কেমন হয়?

** চলতে পারে, তবে সমস্যা হবে, পাখী যখন জানতে চাইবে, আমার কান্না নিয়ে তোমার মাথাব্যথা কেন? আমি তোমার কে হই?

* ‘বললাম ঃ ক্ষুধা তো পেয়েছে, খেয়ে নে, তারপর কোথায় তোর বাসা, যা বাসায় গিয়ে শুয়ে থাক’। বাক্যটির শেষ অংশে কি অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্যের ভাব রয়েছে?

** না তো! ‘তুই’ যেমন মমতার জন্য, তেমনি ‘শুয়ে থাক’ও মমতার জন্য।

* যদি বলা হতো, ‘... খেয়ে নে, তারপর কোথায় তোর বাসা, সেখানে না হয় চলে যাস’, তাহলে কেমন হতো?

** তাতে ‘চিনি’ কিছুটা কম হতো! কারণ তারগীবের দিকটা দুর্বল হয়ে যেতো, যা এখানে উদ্দেশ্য। মূলত এখানে বোঝানো হয়েছে, মানুষের জন্য ঘর, পশুর জন্য গুহা, পাখীর জন্য নীড় হচ্ছে শান্তির স্থান। তাই পাখীটি যদি নীড়ে ফিরে যায় তাহলে হয়ত তার মনে শান্তি আসবে।

হাঁ, ‘বাসা’ এর পুনরুক্তি খারাপ লাগতে পারে। যে জন্য তুমি লিখেছো, ‘সেখানে গিয়ে’। এটা ঠিক আছে, তবে বাক্যটির আবহ দাবী করে ‘ওখানে’। এভাবে লিখলে আরো ভালো হয়, ‘যা গিয়ে শুয়ে থাক’।

* আরেকটা কথা,  ‘শোয়া’ দ্বারা যে কল্পচিত্রটি ভেসে ওঠে তা পাখীর ক্ষেত্রে কীভাবে ব্যবহার করা যায়?

** তোমার গল্পে পাখীটি তো আর নিছক পাখী নেই! লেখক ও পাখী তো এখানে রীতিমত একাত্ম হয়ে উঠেছেন। লেখক ইচ্ছে করলে এখানে বলতে পারতেন, ‘ক্ষুধা তো পেয়েছে, খেয়েনে। তারপর আয় আমার পাশে শুয়ে থাক। বলেননি শুধু পাখীর অন্তরে নীড়ে ফেরার আকুতি জাগিয়ে তোলার জন্য। ঘরের প্রতি এবং নীড়ের প্রতি আকুতি, এটা জীবনের সত্য। ঘরের পরিবেশ, নীড়ের পরিবেশ সান্ত¡না দান করে।

*** প্রিয় মিফতাহুল ইসলাম, গল্পটির উপর তোমার পর্যালোচনা যথেষ্ট সুন্দর ও তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে। সম্পাদনার সঙ্গে তোমার লেখাটি মিলিয়ে দেখো, আশা করি উপকৃত হবে।

তুমি এবং তোমরা এভাবে যদি লিখতে থাকো, তাহলে ইনশাআল্লাহ কোন একদিন আমি এখান থেকে অবসর নিয়ে অন্য কাজে মনোনিবেশ করতে পারবো।

লক্ষ্য করো, এমন মন্তব্য কিন্তু এর আগে আর কারো লেখা সম্পর্কে করিনি। তোমার কর্তব্য আমার এ মন্তব্যের যথাযোগ্য কদর করা। আমি তোমার এবং তোমাদের সবার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি। আগামী দিনের জন্য একটি সুন্দর কাফেলা গড়ে উঠুক, এ ব্যাকুলতার মধ্যেই তো আমার সন্ধ্যা সকাল হয়, আর সকাল হয় সন্ধ্যা!

কামনা করি, জীবনের সূর্যাস্তের আগেই যেন দেখে যেতে পারি তোমার এবং তোমাদের জীবনের সুন্দর সূর্যোদয়।

আর ক’দিন আছে জীবনের জানি তো না! তোমরা যদি দ্রুত এগিয়ে না আসো তাহলে পরবর্তী কাজের কী হবে? ঝাপসা চোখে আর কত দিন তোমাদের পথ চেয়ে থাকবো!

তোমাদের সবার কলমের প্রতি আমার শুভকামনা। *

‘ভুলতে পারি না সেই পাখীটিকে’ 

এ সংখ্যা (৭ম) ৯০ এর পাতায় একটি লেখা এসেছে ‘ভুলতে পারি না সেই পাখীটিকে’ শিরোনামে’। লেখাটির শেষ দিকের কিছু অংশ এরকম-

‘এবং একটি পাখী কয়েকদিন পর মুক্তির পথ বেছে নিলো। সেটি ছিলো পুরুষপাখী। যদিও আমার কষ্ট হলো যে, পাখীটি একা কেন গেলো, সঙ্গিনীকে নিয়ে কেন গেলো না! পাখীরাজ্যের পুরুষেরাও কি তাহলে ...

একজন পাঠক আমাকে বললো, ‘এখানে তো প্রচ্ছন্নভাবে মানব-সমাজের পুরুষদের স্বার্থপররূপে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু সংখ্যায় মেয়েরাও তো...!

দ্বিতীয় প্রশ্ন, এমনো তো হতে পারে যে, পাখীটি তার সঙ্গিনীর ভবিষ্যতমুক্তির কথা চিন্তা করে..! কিন্তু ফিরে আসার পথে কোন বিপদ...!

তৃতীয় প্রশ্ন, নির্বাক প্রাণীর জগত, যে জগতের কোন অনুভব অনুভূতি আমরা নিশ্চিত-ভাবে জানতে পারি না, এমন অনিশ্চিত বিষয়ের উপর মানব-জগতের সংবেদনশীল কোন বিষয়কে কীভাবে তুলনা করা যেতে পারে?...’

তাকে বললাম, এককাজ করো, ‘পাঠকের আদালতে’ তুমি লেখিকার নামে একটা মামলা ঠুকে দাও।

সে ভয় পাওয়া গলায় বলে উঠলো, না বাবা, না, মামলার ঝক্কিঝামেলায় আমি নেই। তোমার সাহস আছে, তুমিই না হয় করো।

আমি বললাম, মামলার ফ্যাসাদে আমিও নেই।

০০ তোমরা দুই বন্ধু ভীরুতার কারণে যে মামলা দায়ের করো নাই, আদালত সে মামলাটি গ্রহণ করেছে, মানে আমলে নিয়েছে। তারপর লেখিকার কাছথেকে জবাব তলব করেছে। লেখিকার বক্তব্য হলো। পুষ্পের পাতায় ছাপা হওয়ার পর কোন বক্তব্যের জন্য লেখক লেখিকা নিজে দায়ী থাকে না, সমস্ত দায়  অতপর সম্পাদকের উপর বর্তায়। সুতরাং আদালতের পরোয়ানা সম্পাদকের নামেই জারি করা যুক্তিসঙ্গত।

আদালতের তলবনামা পেয়ে সম্পাদক যে বক্তব্য দাখিল করেছেন তা এই যে-

* লেখিকার অভিযোগ, বাদীর বক্তব্যমতে যদি প্রচ্ছন্ন হয়ে থাকে তাহলে সেটা প্রচ্ছন্ন রাখাই তো সঙ্গত। সেটাকে প্রকাশ্য আদালতে টেনে আনা সঙ্গত নয়। তাছাড়া এ বাস্তবতাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অভিযোগের বিষয়টি পুরুষদের ক্ষেত্রে স্বভাবগত, পক্ষান্তরে মেয়েদের ক্ষেত্রে হচ্ছে বিচ্ছিন্ন। সেটারও দায় ‘কাওয়াম’ পুরুষেরই উপর বর্তায়।

* দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব, হতে পারে, নাও হতে পারে। তবে সঙ্গিনী পাখীর পরবর্তী অবস্থা প্রমাণ করে যে, তার কষ্ট বিচ্ছেদের ছিলো না, ছিলো প্রিয়জনের সঙ্গত্যাগের। মনুষ্য-সমাজে আইন ও ফিক্হের পরিভাষায় বলা হয় ইহতিমালে বা‘ঈদ এবং ইহতিমালে কারীব। তো বাদীপক্ষ যা বলছেন সেটা হলো ইহতিমালে বা‘ঈদ, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

* তৃতীয় অভিযোগের জবাব, নির্বাক প্রাণীজগতের ঘটনাবলীর মাধ্যমে মনুষ্যজগতের ঘটনাবলী তুলে ধরার বিষয়টি তো লেখিকার নিজস্ব উদ্ভাবন নয়। এ ধারা তো চলে আসছে দূর অতীত থেকে, যার উৎকৃষ্ট নমুনা হলো ঈষপের গল্প, আর উৎকৃষ্টতম নমুনা হলো কালীলা ও দিমনা।

০০০ উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত মামলা খারিজ করছে। *

 

পত্রিকা মানেই হলো বিজ্ঞাপন।

 আলহামদু লিল্লাহ পুষ্পের প্রতিসংখ্যায় বিভিন্ন ঐতিহাসিক মসজিদের পরিচিতি তুলে ধরা হচ্ছে। পুষ্পের এই সুন্দর উদ্যোগ মসজিদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরো যেন জীবন্ত করে তুলেছে।

তারপর বড় একটা আনন্দের বিষয় এই যে, পত্রিকা মানেই হলো বিজ্ঞাপন। আদীব হুযূর (পুষ্পের ক্ষেত্রে) যেটাকে মনে করেন পত্রিকার দেহ...। কিন্তু আল্লাহর শোকর, আমাদের পুষ্পের প্রতিটি পাপড়ি বিজ্ঞাপন থেকে মুক্ত। এমনকি পত্রিকার এই পৃষ্ঠায় তো বিজ্ঞাপন থাকা খুবই স্বাভাবিক মনে করা হয়, কিন্তু পুষ্প এটাকে ব্যবহার করেছে মসজিদের খেদমতে, যাতে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক গভীর ও নিবিড় হয়। এর চেয়ে সুন্দর বিষয় আর কী হতে পারে!

পরিশেষে একটি বিষয়; মসজিদুন্-নাজ্জাশীর পরিচিতিতে এর নির্মাণকাল লেখা হয়েছে ৬৩০ হি. (হবে খৃ,)। খুব সম্ভব মুদ্রণপ্রমাদ। কিন্তু সাধারণ পাঠকের জন্য বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে।

আরেকটি বিষয়, মসজিদটি যে দেশে অবস্থিত তার মোটামুটি পরিচয় তুলে ধরলে কেমন হয়? (ফ, শ, আলম)

** মুদ্রণপ্রমাদের জন্য দুঃখিত। এটা প্রাসঙ্গিক নয়, বিশেষত সীমিত পরিসরের স্থানে।

 

 সম্পাদকের আদালত

ভাই ইয়াসীন! এ পর্যন্ত যতগুলো মন্তব্যমূলক লেখা আপনার কলম থেকে ‘নির্গত’ হয়েছে, প্রায় সবগুলো এখন আমার আদালতে হাযির। সেগুলো পাঠকের আদালতে প্রেরণ করাই হয়ত সঙ্গত ছিলো, কিন্তু আমার ইচ্ছে হলো, আপনাকে অন্তত একবার সম্পাদকের আদালতে কাঠগড়ায় হাযির করা, তারপর ...

আদালত শুনলেই ভয় ধরে যায় তো! যাওয়াই স্বাভাবিক! তবে এখানে ভয়ের কিছু নেই। কারণ সম্পাদকের আদলত বড় নিরীহ আদালত। বিশেষত যারা সম্পাদকের মেজাজের গতি প্রকৃতি খেয়াল করে কলম চালনা করে। আর এ বিষয়ে আপনার যে পারঙ্গমতা, জানি দুশমনও তা অস্বীকার করবে না।

তো আমি পুষ্পের ‘নগণ্য মহামান্য’ সম্পাদক আপনার প্রতি সদয় হয়ে আগামী সংখ্যার জন্য আপনাকে একটি দায়িত্ব ‘দান’ করছি। হাঁ, রীতিমত দান! বিলকুল হাতিম তাঈ টাইপের!

দায়িত্ব এই যে, বর্তমান সংখ্যায় সম্পাদকের কোন্ লেখাটি আপনার খারাপ লাগেনি এবং কেন খারাপ লাগেনি তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দশটি কর্মদিবসের মধ্যে আদালত বরাবর দাখিল করতে বাধ্য থাকবেন। যথাসময়ে কার্য সম্পন্ন না হলে আদালতে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে সময়বৃদ্ধির জন্য আর্জি পেশ করা যাবে...

সম্পাদকের রোযনামচা আমার ভাবনা

পুষ্পের নতুন সংখ্যা পেলে সবার আগে আমি সম্পাদকের রোযনামচা পড়ি; একবার নয়, কয়েকবার এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে।প্রত্যেক পাঠকের নিজস্ব ভাবনা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আমি শুধু আমার ভাবনার কথা বলতে পারি, পুষ্পের সব লেখাই সুন্দর, যেমন শব্দের সুচয়নে এবং ভাষা ও শৈলীর শিল্পগুণে তেমনি চিন্তা ও চেতনার আলোতে এবং বহুমুখী শিক্ষার উপাদানে, তবে সম্পাদকের রোযনামচা আমার কাছে মনে হয় অন্যরকম। এখানে সম্পাদক তাঁর অন্তর্সত্তায় এমনই জীবন্ত যে, খুব সহজেই আমি তাঁর চিন্তা-চেতনা ও অনুভব-অনুভূতি যেন স্পর্শ করতে পারি। এখানে তাঁকে মনে হয় অনেক সহজ, স্বচ্ছন্দ, সাবলীল এবং উন্মুক্ত। এরকম লেখাকে কখনো মনে হয় না আমার নাগালের বাইরে, বরং মনে হয়, এ তো আমার পাশের বাড়ীর সেই ছেলেটি, যার সঙ্গে ইচ্ছে করলেই বন্ধুত্ব হতে পারে এবং হতে পারে হৃদয়ের বিনিময়। এখানে তিনি যেন অনেক উচ্চা থেকে একেবারে আমার সমতলে নেমে আসেন এবং আমি তাকে স্পর্শ করার আগে তিনিই যেন আমাকে স্পর্শ করেন।

তবে সত্য কথা হলো, যে কোন লেখা, যত সুন্দরই হোক এবং হোক যত সমৃদ্ধ, পাঠ যদি না হয় পাঠের মত, অর্থাৎ পাঠ যদি না হয় হৃদয় ও আত্মার গভীর থেকে উৎসারিত আকুতি দ্বারা সমৃদ্ধ তাহলে ঐ লেখা এবং ঐ পড়া পাঠকের হৃদয়ে না রেখাপাত করতে পারে, আর না কোন আবেদন সৃষ্টি করতে পারে।  তখন পাঠক পড়া শেষ করে বড় জোর বলতে পারে, ‘লেখাটা ভালোই’!

পাঠ যখন হৃদয়ের আকুতি দ্বারা ঋদ্ধ হয়, পাঠক তখন লেখকের চিন্তা ও চেতনার গভীরে প্রবেশ করতে পারে। একসময় লেখকের সঙ্গে পাঠকের এমন একাত্মতা সৃষ্টি হয় যে, লেখা পাঠকের নিজস্ব সম্পদে পরিণত হয়। আর একটি লেখার এবং সেই লেখা পাঠ করার পরম সার্থকতা এখানেই।

আমার ক্ষুদ্র পরিসরে আমি চেষ্টা করি লেখকের চিন্তা অনুসরণ করে এবং তাঁর চেতনার গভীরে প্রবেশ করে পাঠ করার। আমি চেষ্টা করি লেখকের অনুভব-অনুভূতির সঙ্গে যদ্দুর সম্ভব একাত্ম হওয়ার।

পুষ্পের পরম প্রিয় সম্পাদক পুষ্পের জন্য যে স্তরের পাঠক কামনা করেন, আমি চেষ্টা করি, আমার পাঠ যেন সেই স্তরে উত্তীর্ণ হয়।

যখনই সম্পাদকের রোযনামচার পাতা পড়ি আমার চিন্তা কোন না কোনভাবে সমৃদ্ধ হয়; স্পষ্ট অনুভব করি, আমার কলমও প্রাণের ছোঁয়া লাভ করে।

তবে অকুণ্ঠ/কৃতজ্ঞ চিত্তে স্বীকার করি, চতুর্থ সংখ্যার রোযনামচা পাঠের মাধ্যমে যে হৃদ্যতা ও ঋদ্ধতা অর্জিত হয়েছে তার কোন তুলনা নেই। চিন্তার এক নতুন দিগন্ত যেন আমার সামনে উদ্ভাসিত হয়েছে।

পুরো সংখ্যাটি পড়ে আমার যে অনুভূতি হয়েছে তা এই যে, প্রতিটি পাতায় এবং প্রতিটি পাপড়িতে রয়েছে তাঁর যতেœর এবং মমতার ছাপ। সর্বান্তকরণে কামনা করি, পুষ্পের সম্পাদককে আল্লাহ ‘হায়াতে তাইয়েবা’ দান করুন। শিশু-কিশোর ও তরুণ পাঠক-লেখকদের  চলার পথে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি যেন আলো ছড়িয়ে যেতে পারেন, আমীন।

সপ্তম সংখ্যায় পুষ্পকলি বিভাগের লেখা, ‘সম্পাদক ভাইয়ার সঙ্গে খুনসুটি’ পড়েছি, আর অবাক হয়ে শুধু ভেবেছি, এমন শিশুও হতে পারেন এমন মাপের একজন মানুষ। আসলে এমন শিশু হতে পারলেই শুধু সম্ভব শিশুদের জন্য কিছু লেখা। প্রথমে একটা কথা বলা, তারপর যখন প্রশ্ন হয়, কী বললে? তখন কথাটা ঘুরিয়ে অন্যকথায় চলে যাওয়া, এটা ছোট বড় সবার স্বভাবের মধ্যে রয়েছে। এটার অত্যন্ত সুন্দর ও সার্থক প্রয়োগ হয়েছে এখানে। ...