শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

জিলহজ্ব ১৪৪০ হিঃ (৩/৮) | তোমাদের পাতা

আলী মিয়াঁ রহ.-এর লেখা অবলম্বনে

আমাদের একটি সুন্দর বনভোজন

আমাদের একটি সুন্দর বনভোজন -আলী মিয়াঁ রহ.-এর লেখা অবলম্বনে

১- বনভোজন মানে কয়েক বন্ধু মিলে বনের মধ্যে গিয়ে ভোজন করা। রান্না করা খাবার সঙ্গে নিয়ে যেতে পারো, আবার বনে গিয়ে রান্না করতে পারো। সেটাই অবশ্য আসল বনভোজন এবং তাতে আনন্দটাও পূর্ণ  হয়। তবে নামে বনভোজন হলেও বনে যাওয়া কিন্তু জরুরি না। খোলা মাঠে, বড় গাছের ছায়ার নীচেও হতে পারে, আবার হতে পারে দূরের বা কাছের কোন সবুজঘেরা বাগানে।

২- কিছু দিন আগে মাদরাসায় বিরতি হলো। প্রত্যেক বিরতিতে আমরা বন্ধুরা মিলে কোন না কোন ভালো কাজ করি। কখনো জাদুঘর দেখতে যাই; কখনো হাসপাতালে রোগীদের ইয়াদাত করতে যাই। সঙ্গে ফুল বা অন্যকিছু হাদিয়া নিয়ে যাই, প্রয়োজন হলে ছোটখাটো সেবা করি। বিভিন্ন সান্ত¡নার কথা বলি। রোগীরা খুব খুশী হয়। অনেক সময় তাদের চোখে পানি এসে পড়ে।

গত বিরতিতে আমরা কয়েকটি হাসপাতালে গিয়েছি আমাদের প্রিয় শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে। তার আগের বিরতিতে ছিলো আমাদের পরিচ্ছন্নতা অভিযান।

 

৩- এবার বিরতিতে আমরা বন্ধুরা ঠিক করলাম বন-ভোজনে যাবো। হুযূরের কাছে গেলাম অনুমতির জন্য। হুযূরের মুখে মিষ্টিমধুর হাসি লেগেই থাকে। তিনি মধুর করে হেসে বললেন, ‘আমাকে নেবে না তোমাদের সঙ্গে’? আমরা বললাম, ‘আপনার সঙ্গ না হলে কি আর...’

 

৪- যার যার বাড়ী থেকে চাল ডাল, সবজি, ডিম, গোশত ও অন্যান্য জিনিস সংগ্রহ করা হলো।

এরপর আল্লাহ্ ভরসা বলে রওয়ানা হলাম শহর থেকে দূরে একটা বিরাট আমবাগানের উদ্দেশ্যে! ওখানে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্ররা দলবেঁধে আসে বনভোজনের জন্য। হুযূর বললেন, দেখো বনভোজন হলো আনন্দ ও বিনোদনের জন্য। তবে তোমাদের সবকিছু যেন হয় শালীন ও মার্জিত, যাতে সবাই বুঝতে পারে, তোমরা তালিবে ইলম। তোমরা হবে সবার জন্য আদর্শ।

৫- সবকিছু ছিলো, শুধু লাকড়ী ছিলো না, আর পানি ছিলো না। তিনজন বড় বড় পাত্র নিয়ে গেলো পানি আনতে। আমি বললাম, হুযূর, আমি এবং শফীক যাবো লাকড়ী সংগ্রহ করার জন্য। হুযূর খুশী হয়ে বললেন, আচ্ছা, যাও।

আমরা তো মাদরাসার মাতবাখে রীতিমত রান্না শিখেছি। তাই সমস্যা হলো না। তাড়াতাড়ি ঠিকমত সব রান্না হয়ে গেলো।

৬- একটি স্কুল থেকে কিছু ছাত্র বনভোজনে এসেছে। একটি ছেলের সঙ্গে পরিচয় হলো এবং অল্পসময়ে অন্তরঙ্গতা হলো। নাম, রায়হান। তাকে দাওয়াত দিলাম, সুযোগমত আমাদের মাদরাসায় এসো। সে খুশী হলো আর বললো। তোমাদের আচার-আচরণ ও শৃঙ্খলা দেখে খুব ভালো লেগেছে। আমারও ইচ্ছা ছিলো মাদরাসায় পড়বো, কিন্তু ...

 

৭- খুব সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে দস্তরখান প্রস্তত করা হলো, যেন শাহী দস্তরখান! ছোট ছোট তিনটি ছেলে, পানি ও অন্যান্য জিনিস বিক্রি করছে। বোঝাই যায়, কত গরীব ওরা! হুযূর বললেন, তোমরা যদি অনুমতি দাও, দস্তরখানে ওদের দাওয়াত দেই! হযূর সবসময় এভাবেই কথা বলেন। দাওয়াত পেয়ে ছেলে তিনটি কী যে খুশী হলো! আমরাও খুশী হলাম।

৮-  বাগানের ছায়াঘেরা সবুজ পরিবেশে বেশ আনন্দের সঙ্গে বনভোজন খাওয়া হলো। ইরফান ভাই ও তার সঙ্গে দু’জন সত্যি সুন্দর রান্না করেছেন! ঐ যে তিনটি ছেলে মেহমান হলো, বলে কী! এত মজার খানা জীবনে খাই নাই। একটি ছেলে দেখি, চোখ ছলছল করছে! প্রথমে কিছুই বলে না, শেষে খুব সঙ্কোচের সঙ্গে বলে, আমার মা ...! ছেলেটির কথায় আমাদেরও মন কেমন করে উঠলো। যা খাবার বেঁচে ছিলো....!

 

৯- এর পর হলো প্রতিযোগিতা। প্রথমে তিলাওয়াত, তারপর হামদ ও না‘ত। তারপর বানান প্রতিযোগিতা। তিলাওয়াতে প্রথম হলো ছাবের। সে আমাদের সবার ছোট এবং সবার আদরের।

হামদ ও না‘তে প্রথম হলো ইমরান ও ছালেহ। বানান প্রতিযোগিতায় প্রথম হলাম আমি। হযূর বিজয়ীদের কলম হাদিয়া দিলেন। আর অন্যদের সান্ত¡না পুরস্কার দিলেন সুস্বাদু চকোলেট।

বিভিন্ন স্কুল থেকে যারা বনভোজনে এসেছে তারা খুব আগ্রহের সঙ্গে ...।

আযান হলো, যোহর  হলো। এরপর হুযূর কয়েকটি দর্শনীয় স্থানে নিয়ে গেলেন। তার মধ্যে ছিলো একটি প্রাচীন মসজিদ

১০- সুন্দরভাবে সবকিছু সম্পন্ন হলো। প্রকৃতির মুক্ত পরিবেশে সবুজের সান্নিধ্যে শরীর মন সতেজ হলো। আমরা আল্লাহ্র শোকর আদায় করলাম। এবার ফেরার পালা। সবকিছু সুন্দর করে গুছিয়ে গাড়ীতে তোলা হলো। হযূর সংক্ষিপ্ত দু‘আ করে...।

  তোমার জীবন সুন্দর-অসুন্দর যাই হবে, মায়ের চোখের অশ্রু দ্বারাই হবে। মায়ের চোখে কখন কী কারণে অশ্রু আসে তা তো তোমাকে জানতে হবে!