আমি যদি সফলতা ও কামিয়াবির গন্তব্যে পৌঁছতে চাই তাহলে জীবনের শুরু থেকে আমাকে চলতে হবে পথের সরল রেখা অনুসরণ করে। জীবনে আলো যেমন আছে তেমনি আছে আলেয়া। আলো ও আলেয়ার পার্থক্য আমাকে অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে। আলেয়ার মোহ ও মায়া থেকে আমাকে সতর্ক থাকতে হবে। আলোর সঙ্গ গ্রহণ করেই জীবনের প্রতিটি বাঁক আমাকে অতিক্রম করতে হবে।
জীবন শুধু শুভ্রতার নাম নয়, জীবনে শুভ্রতা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে বিভিন্ন রকম আবিলতা ও মলিনতা। জীবনের সকল আচরণে ও উচ্চারণে আমাকে শুভ্রতা ধারণ করতে হবে এবং সর্বপ্রকার মলিনতা ও আবিলতা পরিহার করতে হবে। আমার বাইর যেমন হবে শুভ্র, আমার ভিতরও যেন হয় তেমনি শুভ্র।
জীবনে সত্য যেমন আছে তেমনি আছে মিথ্যা। জীবনের চলার পথে সত্যের অনুসারী যদিও কম, মিথ্যার অনুসারী বহু; সত্যের উপস্থিতি কম, শুধু মিথ্যার ছড়াছড়ি; মিথ্যা যেন এক মরুভূমি, আর সত্য সেই মরুভূমির মাঝখানে এক মরূদ্যান! মিথ্যার মরুভূমিতে আমাকে খুঁজে বের করতে হবে সত্যের মরূদ্যান। সেখানেই আমি পাবো শীতল ছায়া, শীতল পানি এবং পাবো সবুজের ছোঁয়া। যারা সত্যের মরূদ্যান খুঁজে পায় না, কিংবা খোঁজার কষ্টটাই স্বীকার করে না তারা হারিয়ে যায় মিথ্যার আগুনঝরা মরুভূমিতে। তারা মরীচিকার হাতছানিতে হয় বিভ্রান্ত। ফলে পিপাসা ও মৃত্যুই হয় তাদের একমাত্র পরিণতি। মিথ্যার সর্বপ্রকার অন্ধকার ত্যাগ করে আমি বাস করতে চাই সত্যের চিরসুন্দর, চির¯িœগ্ধ আলোতে। আমার জীবন যেন হয় মিথ্যার অভিশাপ থেকে মুক্ত এবং সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত।
আমাকে বুঝতে হবে, যত মনমুগ্ধকর রূপ নিয়েই আসুক, জীবনকে মিথ্যা শুধু ধ্বংসের পথেই নিয়ে যায়; আর সত্য, তার বাইরের আবরণ যত কষ্টের হোক, জীবনকে তা নিয়ে যায় মুক্তির রাজপথে এবং জীবনকে তা পৌঁছে দেয় সৌভাগ্যের গন্তব্যে, কামিয়াবির আখেরি মানযিলে।
আমাকে মনে রাখতে হবে, এ জীবন ¯্রষ্টার পক্ষ হতে আমার জন্য আমানত। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আমাকে ¯্রষ্টার সন্তুষ্টির পথে যাপন করতে হবে।
আমাকে তিনি সৃষ্টি করেছেন; তারপর জীবনের চলমান কাফেলায় আমাকে তিনি শামিল করে দিয়েছেন তাঁর বিধান মান্য করে জীবনের পরম গন্তব্যে উপনীত হওয়ার জন্য। জীবনের গন্তব্য কী? মৃত্যু! কবর! হাশর! জান্নাত এবং ...
জাহান্নাম জীবনের গন্তব্য নয়, জীবনের চলার পথে ভ্রষ্টতার পরিণতি! যারা আলোর পথ ত্যাগ করে আলেয়ার পথে চলতে থাকে তাদেরই পরিণতি হয় জাহান্নাম এবং জাহান্নামের দাউ দাউ আগুন।
জীবনের মন্দ পরিণতি থেকে আমাকে বাঁচতে হবে, বাঁচতেই হবে; জান্নাতের গন্তব্যে আমাকে পৌঁছতে হবে, পৌঁছতেই হবে। আমাকে মনে রাখতে হবে, জীবন আয়েশে বিলাসে, আমোদে প্রমোদে নিঃশেষ করে দেয়ার জন্য নয়; জীবন সত্যের জন্য, সুন্দরের জন্য, শুভ্র ও কল্যাণের জন্য নিরন্তর সংগ্রামসাধনার নাম। সত্যের জন্য কিছু ত্যাগ করার নাম; সুন্দরের জন্য কিছু বিসর্জন দেয়ার নাম এবং শুভ ও কল্যাণের জন্য কিছু উৎসগ করার নাম।
আমাকে মনে রাখতে হবে, জীবন শুধু ভোগের জন্য নয় এবং নয় শুধু সঞ্চয়ের জন্য; জীবন কিছু অর্জনের জন্য এবং তা বিতরণের জন্য।
এই যে জগতসংসার, এই যে বিপুল বিশাল প্রকৃতি, এখানে আমার জন্য রয়েছে কিছু বাণী ও বার্তা। নীরব বার্তা ও নৈশব্দের বাণী সবাই শুনতে পায় না; আমাকে তা শুনতে হবে এবং মান্য করতে হবে। কারণ আমাকে প্রকৃতির ¯্রষ্টার কাছে ফিরে যেতে হবে এবং তার সামনে দাঁড়াতে হবে প্রাপ্তির আশা ও আকুতি নিয়ে।
জীবনের চলার পথে বহু মানুষের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, পরিচয় হয়েছে এবং তাদের কিছু না কিছু অনুগ্রহে আমার জীবন সমৃদ্ধ হয়েছে। তাদের কথা আমাকে মনে রাখতে হবে; তাদের প্রতি আমাকে কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। কৃতজ্ঞতা জীবনকে শুভ্র সুন্দর করে, অকৃতজ্ঞতা জীবনকে পশুর চেয়েও নীচে নিয়ে যায়! অকৃতজ্ঞ মানুষের চেয়ে কৃতজ্ঞ কুকুর উত্তম, একথা আমাকে মনে রাখতে হবে।
জীবনের কাছ থেকে যা পেয়েছি, আরো সমৃদ্ধরূপে আগামী জীবনের কাছে আমাকে তা অর্পণ করে যেতে হবে। তাহলেই বিদায়কালে জীবন আমাকে উপহার দেবে পুষ্পের হাসি!!