আফিয়া মাসূমা,রাজেন্দ্রপুর, গাজীপুরতুমি লিখেছো, ‘প্রায় সাত বছর আগে যে রকম অনুভূতি হয়েছিলো, আবারও অনেকটা সেরকম অনুভূতি হচ্ছে। কান্না করতে পারলে ভালো লাগতো।’তোমার লেখা তো ভালোই ছিলো। সবুজ অংশটা ভালো হয়নি। অনেকে এভাবে লেখে, কেন লেখে তারাই জানে! লেখা উচিৎ ‘কাঁদতে পারলে ভালো লাগতো।’আমরা লিখি, ‘লিখতে পারলে ভালো লাগতো। কখনো কি বলি, লেখা করতে পারলে ভালো হতো?!এটা ঠিক যে, কাঁদা-এর স্থলে কান্না করা অচল, কিন্তু রাঁধা-এর স্থলে রান্না করা চলে এবং ভালো -ভাবেই চলে।পক্ষান্তরে রান্না করতে পারলে ভালো হতো-এর চেয়ে ‘রাঁধতে পারলে ভালো হতো’ অধিকতর গ্রহণযোগ্য। কিন্তু কান্না করা বিলকুল অচল।তোমার প্রশ্নের উত্তরে জানতে ইচ্ছে করে, কী দুষ্টুমি করো?!তুমি যদি নিয়মিত যতেœর সঙ্গে লেখো তাহলে যথেষ্ট উন্নতি হতে পারে। তোমার ভবিষ্যত সুন্দর হোক কামনা করি।প্রিয় আবদুল্লাহ/দারুল উলূম খুলনাকতদিন আগে সবশেষ লিখেছি মনে নেই। মাঝে বেশ ক’বার লেখার আগ্রহ জেগেছিলো, কিন্তু অনেকটা গাফলতি, আর কিছুটা সময়ের অভাবে লেখা হয়নি। তবু মনের নিভৃতে লেখার প্রতি যে সুপ্ত এবং অতি সূক্ষ্ম ভালোবাসা রয়ে গিয়েছিলো সেটা আজ এ মুহূর্তে যেন কলমের বুক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। অনেক কথা জমে আছে। কোত্থেকে শুরু করবো, বুঝতে পারি না। কেন যেন লিখতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু লেখা শুরু করতেই সেগুলো যে কোথায় হারিয়ে গেলো, খুঁঝে পাচ্ছি না। আমি লিখতে চাইলেই লেখাগুলো এমন লুকোচুড়ি করতে শুরু করে। যখন হার মেনে নেই, হাল ছেড়ে দেই, কোত্থেকে এসে আমার বুকের স্বপ্নগুলোর সঙ্গে মিশে যায়।০০ তুমি মনে হয় ‘সর্বশেষ’ এবং ‘লুকোচুরি’ লিখতে চেয়েছিলে, ‘রেফ’ ছুটে গিয়েছে, আ র-এর স্থালে ড় এসে মেয়েদের হাতের চুড়ি হয়ে গিয়েছে।তোমার তো এমন হওয়ার কথা নয়! কেন হলো। আমি বলি, এটা হলো শব্দের দর্পণ, যা নিজের অজান্তেই মানুষ নিজের সামনে তুলে ধরে, আর তাতে তার প্রকৃত অবয়বটা প্রকাশ পায়।লেখার প্রতি যার অন্তরে ‘সুপ্ত এবং অতি সূক্ষ্ম’ ভালোবাসা থাকে, কলম তাকে কখনো এভাবে বে-আবরু করে না। কলমের সঙ্গে যারা রসিকতা করে, কলম তাদেরকে তাদের অজ্ঞাতেই এভাবে ‘ধরিয়ে’ দেয়।যাক, কলমের প্রতি তোমার নির্দয়তা সত্ত্বেও আমি অবাক হয়ে দেখছি তোমার কলমের কালিতে সম্ভাবনার আভাস। কলমের প্রতি সদয় হতে চেষ্টা করো; কলম তোমাকে সম্ভবত কিছু দিতে চায়, কলমের দান গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নাও; কলমকে দানের সুযোগ দাও।তুমি লিখেছো, ‘মনের নিভৃতে লেখার প্রতি যে সুপ্ত এবং অতি সূক্ষ্ম ভালোবাসা রয়ে গিয়েছিলো...।’গ্রহণযোগ্য; তবে আরো সুন্দর হতে পারে। যেমন, ‘হৃদয়ের নিভৃতে যে কোমল ও ¯িœগ্ধ ভালোবাসা সুপ্ত ছিলো তা আজ ...।নিভৃত শব্দটি হৃদয়-এর সঙ্গে অধিক সঙ্গত মন-এর তুলনায়।‘কেন যেন লিখতে ইচ্ছে করছিলো।’তুমি যে অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটাতে চাচ্ছো তার জন্য নীচের বাক্যটি অধিক উপযোগী, ‘কেন যে লিখতে ইচ্ছে করে, জানি না।’‘কিন্তু লেখা শুরু করতেই সেগুলো যে কোথায় হারিয়ে গেলো, খুঁজে পাচ্ছি না।’তার চেয়ে ভালো হয়, যদি লেখো, ‘কিন্তু যখন কলম হাতে নিই, অভিমানী শব্দরা কোথায় যে আত্মগোপন করে, খুঁজে পাই না!চিন্তা করে দেখো, এখানে ‘অভিমানী’ শব্দটি কত তাৎপর্যপূর্ণ! কলমের প্রতি যার এত অবহেলা শব্দরা তার প্রতি অভিমানী তো হতেই পারে!আবারো বলছি, তোমার কলম সম্ভবত তোমাকে কিছু দিতে চায়, তুমি ...।আমীমুল ইহসান, (জামিয়া শার‘ইয়্যাহ, সুলতানপুর, সাতক্ষীরা)‘পাল তুলে দাও, ঝান্ড ওড়াও সিন্দাবাদ’ একটি ছবি, একটি বাক্য, জানি না কী লুকিয়ে আছে এর মধ্যে! যখনই দেখি হৃদয়ে আশ্চর্য এক শিহরণ জাগে! আমিও যেন ভাবের তরঙ্গমালায় দুলতে থাকি! হয়ত কবিহৃদয়ের আবেগ-উচ্ছ্বাস প্রবাহিত হয় পাঠকেরও হৃদয়ে!পুষ্পের তৃতীয় সংখ্যার সম্পাদকীয়তে প্রথম অনুচ্ছেদের শেষ বাক্যটি হলো, ‘কিন্তু সময়ের উজানে চলার, না আমাদের নিয়ত আছে, না আছে সাহস ও হিম্মত।ভাবছি, বাক্যটি এমন হলে তার গাঁথুুনি আরো সুন্দর ও মজবুত হবে, ‘কিন্তু সময়ের উজানে চলার না আছে আমাদের নিয়ত, না আছে সাহস ও হিম্মত।০০ তোমার পর্যালোচনা ও মন্তব্য সঠিক। এর জন্য তুমি এবার তুমি পুষ্পের দ্বিতীয় অতিথি সম্পাদক। তোমাকে অনেক অনেক জাযাকাল্লাহ্!শুধু একটা কথা, নির্দ্বিধ ও সিদ্ধান্তমূলক শব্দ ব্যবহার করার পরিবর্তে একটু সৌজন্যের সঙ্গে প্রশ্নের শৈলী ব্যবহার করা বোধহয় ভালো। যেমন, ভাবছি, বাক্যটি এমন হলে কেমন হয়!? গাঁথুনিটা কি আরো মযবূত হয়!?যাই হোক, এরূপ পর্যালোচনা-মূলক লেখা সত্যি অনেক কল্যাণ -পূর্ণ। আমি চাই সবাই যেন এদিকে মনোযোগী হয় এবং পাঠকের আদালত বিভাগের জন্য নিজ নিজ পর্যালোচনা প্রেরণ করে। আল্লাহ সবাইকে তাওফীক দান করুন, আমীন।মু‘আয্যাম হোসাইন/ফতেহপুর সুলতানিয়া মাদরাসা, ফেনী০০ তোমার চিঠি ও লেখা পেয়েছি। আমার প্রতি তোমার ‘ইযহারে মুহাব্বাত’কে দু‘আ-রূপে গ্রহণ করছি।‘যবে থেকে’ নয়, যখন থেকে। সম্ভবত উর্দূ ‘জব সে’ বাংলায় অনুপ্রবেশ করেছে।তুমি লিখেছো, ‘নৈরাশ’ হয়ে যেতাম। সঠিক শব্দটি হলো ‘নিরাশ’। ব্যক্তিটি হলো নিরাশ, আর গুণটি হলো নিরাশা ও নৈরাশ্য।নীরব শব্দটির বানান লিখেছো ‘’ি দিয়ে, হবে দীর্ঘ ঈকার। তোমার তো এ ভুলটা হওয়ার কথা ছিলো না! ছেঁড়া-এর চন্দ্রবিন্দু ঠিক আছে, কিন্তু কুড়িয়ে নেয়া! তাতে চন্দ্রবিন্দু কেন? তোমার হাতের কাছে কি বাংলা লোগাত আছে?না‘ঈমুর-রহমান, তেজগাঁও, ঢাকা‘এ কেমন পরিহাস’ শিরোনামে তোমার লেখাটি আমি একাধিক-বার পড়েছি। পড়ে বুঝতে চেষ্টা করেছি তোমার ভিতরের তোমাকে। বোধহয় সম্ভাবনার আলো জ্বলছে মিটিমিটি। এখন এই মিটি মিটি আলোটিকে সময়ের ঝড়-দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব সবার আগে তোমার। তারপর আমাদের দায়িত্ব, যত দূর সম্ভব তোমার জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা। পুষ্পের মাধ্যমে এবং মাদানী নেছাবের মাধ্যমে সে চেষ্টাই করছি।কিন্তু জাতি, সমাজ ও পরিবারের বড় দুর্ভাগ্য, প্রায় প্রতিটি সম্ভাবনা তার নিজের হাতেই ...!তুমি লিখেছো, ‘নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে এ কেমন পরিহাস।কোন অভিজাত, আবেদনপূর্ণ এবং দুঃখের ও শোকের ক্ষেত্রে এ শব্দটার ব্যবহার বড় শ্রুতিকটু ও রীতিবিরুদ্ধ।এখানে তুমি লিখবে, নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর প্রতি এ কেমন পরিহাস।কী ব্যাপার, চুপচাপ বসে আছো যে? এটা ঠিক আছে। কী ব্যাপার, এরই মধ্যে শিক্ষকের উপদেশ ভুলে গেলে! এটা ঠিক নয়। তুমি বলবে, কী বিষয়/ কী হলো, এরই মধ্যে ...এটা তুচ্ছ ঘটনা, এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।এটা অনেক বড় ঘটনা, এ বিষয়ে আমি নীরব থাকতে পারি না।আরেকটা কথা, ব্যাপার-এর স্থলে বিষয়/সম্পর্ক ইত্যাদি সহজেই ব্যবহারযোগ্য, কিন্তু বিষয়/সম্পর্ক ইত্যাদির স্থলে ব্যাপার-এর ব্যবহার ঠিক নাও হতে পারে।লগ্ন শব্দটির ব্যবহার সাধারণত শুভ, শুভ্র ও সুন্দর ক্ষেত্রে এবং আনন্দের ক্ষেত্রে হয়; অশুভ, অসুন্দর ও অপ্রীতিকর বিষয়ে নয়। তুমি বলতে পারো, ‘আজকের এ শুভদিনের শুভ- লগ্নে তোমাকে অভিনন্দন।’ কিন্তু এটা বলতে পারো না, ‘আজকের এ দুর্যোগলগ্নে তোমাকে সতর্ক করতে চাই।’তুমি কিন্তু লিখেছো, ‘উম্মাহর দুর্যোগলগ্নে শেষ পুঁজিটুকু রক্ষা করার জন্য একসঙ্গে জ্বলে ওঠার প্রয়োজন ছিলো।’তোমার পুরো লেখাটাই এখানে তুলে দেয়ার মত ছিলো। এবং এর চেয়ে কম পরিসরেই সেটা সম্ভবও ছিলো । কিন্তু মনে হলো, তার চেয়ে এ আলোচনা বেশী জরুরি, তোমার জন্য এবং অন্য সবার জন্য।সানজিদা আফরোয/ জামেয়া উম্মুল কোরা মহিলা মাদরাসা, মাইজদী, নোয়াখালী০ তোমার লেখায় সুন্দর ভবিষ্যতের সম্ভাবনার প্রতি আলোক-ইঙ্গিত রয়েছে। আমরা তোমার কল্যাণ কামনা করি। পুষ্পের অঙ্গনে তোমাকে এবং তোমার মত সবাইকে সবসময়ের জন্য আহলান ওয়া সাহলান। তুমি লিখেছো, ‘... জীবনের আলো যত দিন আছে, আমাদের কর্তব্য, তার ¯িœগ্ধতা নিজেও গ্রহণ করা এবং সবার মধ্যে তা বিতরণ করা। ...গোলাব ঝড়ে যাওয়ার আগে সবাইকে সুবাস দান করে; মোম গলে গলে নিঃশেষ হওয়ার আগে সবার মাঝে আলো বিতরণ করে...সুন্দর লিখেছো। বানানের প্রতি আরো যত্নবান হতে হবে। ‘সামান্য ঝড়ে গাছ থেকে গোলাব ঝরে যায়’ কী বুঝলে বলো তো?আব্দুর-রহীম,ঢালকা নগর, ঢাকতোমার রোযনামচাগুলো পড়েছি। বেশ ভালো এবং তাতে বেশ অযতেœর ছাপ। মাঝে মধ্যেই শব্দ ছুটে গিয়েছে। দ্বিতীয়বার দেখার সুযোগ হয়নি বোধহয়! তুমি লিখেছো, ‘আজ একটি সুন্দর শিশুকে দেখেছি, মাত্র ছয়দিন তার বয়স। সে জানে না, ‘জীবনযুদ্ধ কাকে বলে?’ জীবনের ক্ষুদ্র অঙ্গনে তবু সে একজন যোদ্ধা! নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তার মত করে সে যুদ্ধ করে। কান্না হলো তার অস্ত্র!’ কত সুন্দর কথা, পড়ে কার না হৃদয় আপ্লুত হবে! সেই তুমি কিনা লিখলে, ‘গুনাহের অন্ধকার থেকে পণ্যের আলোর দিকে আমি ছুটছি। কোন পাঠক কি আমার সহযোগী হবেন?প্রথম কথা হলো। এটা তাহলে তোমার জীবনের রোযনামচা নয়, পুষ্পের জন্য লেখা রোযনামচা! হায় রে কপাল।তাছাড়া এটা তরল আহ্বান, যার কোন অর্থ নেই।কথা আরো আছে; পুণ্য লিখতে গিয়ে পণ্য হলো কেন? এটাকেই আমি বলি ‘শব্দের দর্পণ’, যা লেখককে তার অজান্তেই স্বরূপে তুলে ধরে।তুমি লিখেছো, ‘অত্যাচারের মাধ্যমে যে সা¤্রাজ্যের গোড়াপত্তন, সেটা আসলে গুনে খাওয়া...’এখন যদি বলি, এ লেখাটা আসলে ঘুণে খাওয়া হরফ দিয়ে লেখা! কীভাবে হতে পারে নিজের লেখার প্রতি এমন অযত্ন!!শাব্বির আহমদ ইলয়াস, ফরিদাবাদ মাদরাসা, ঢাকা তুমি লিখেছো, ‘প্রায় দু’মাস পেরিয়ে গেছে, অথচ পুষ্পের দেখা নেই। ‘তিনার’ও কোন খোঁজ-খবর নেই। কী ব্যাকুল প্রতীক্ষায় দিনগুলো কাটছে, ‘তিনি’ যদি তা বুঝতেন ...!’তুমি কি তোমার বক্তব্যে ‘সিরিয়াস’ না এটা নিছক নির্দোষ রস-পরিহাস?পুষ্পের আকার-আকৃতি ও প্রকার-প্রকৃতি কি তোমাকে কিছুই বলে না! কোন বার্তাই কি তোমার সামনে তুলে ধরে না!!প্রতীক্ষায় দিন/সময় কাটে না, পার হয়, বা অতিক্রান্ত হয়। ‘গুলো’ এখানে অপ্রয়োজনীয়। তুমি লিখতে পারো, কী ব্যাকুল প্রতীক্ষায় আমাদের সকাল-সন্ধ্যা পার হয়...!বিন শাব্বীর/ জামেয়া উছমানিয়া, চাটখিল, নোয়াখালীতোমার লেখাটি পেয়েছি এবং পড়েছি। তোমার কলমের গতি বেশ সাবলীল। এখন যা প্রয়োজন তা হলো, কলমের নিয়মিত যত্ন ও পরিচর্যা। সেটার কিন্তু বেশ অভাব আছে, মনে হয়। তুমি লিখেছো, ‘শৈশবের অবুঝ মনে নানা অবুঝ প্রশ্ন উঁকি দিতো/দেখা দিতো/জাগতো। মেঘ আর চাঁদের মত লুকোচুরি খেলা চলতো প্রশ্নগুলোর সঙ্গে আমার মনের। কখনো ভাবতাম, আকাশে রঙধনু কেন হাসে; কেন সাতটি রঙে সাজে? সাঝের বেলা কেন জোনাকির মেলা? এই জ্বলে, এই নিভে, জোনাকি আসলে কী বলে? বাগানে এত ফুল কেন ফোটে? রাতের আকাশে কেন জ্বলজ্বল করে এত তারা? ...শৈশবে তুমি যাদের কথা শুনেছো এবং যাদের মত হতে চেয়েছো, কামনা করি, তুমি তাদের চেয়ে বড় হও এবং হও আরো আলোকিত।মুহাম্মদ না‘ঈমুর-রহমান/ জামাতে কাফিয়া, তেজগাঁও, ঢাকাতোমার চিঠি পেয়েছি। তুমি লিখেছো, ‘জানি, ? অদ্যোপান্ত পড়ার পূর্বে বা পরে আমার চিঠিটা পরিত্যক্ত কাগজের ঝুড়িতে ফেলে দেবেন। অপদার্থের চিঠি বলে জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করবেন না। ...০০ তোমার ধারণামতই তোমাকে ভেবেছি, তবে দেখতেই পাচ্ছো জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেছি। তোমার লেখার প্রতি তোমার নিজেরই এত অনাস্থা কেন? লেখার মধ্যে যদি আদব, সৌজন্য, শালীনতা ও দরদ থাকে, পাঠক গ্রহণ না করলেও অবজ্ঞা-ভরে ফেলে দিতে পারে না।আমার কথা যদি শোনো, বলবো, তোমার বয়সের স্তরে এটা কলম ধরার বিষয় না। এখন যারা প্রবীণ, এরূপ বিষয় তাদের জন্য রেখে দাও, আর নিজে তুমি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হও।কাফিয়ার জামাতে যদি পড়ে থাকো, বালাগাতের কিছু ছোঁয়া নিশ্চয় পেয়েছো! আমার লেখায় কি কারো নাম ছিলো? তো যে আবরণটা আমি রক্ষা করেছি, তুমি ‘বাচ্চা মানুষ’ সেটা ছিঁড়ে ফেললে কেন?বিনিময়ে আমি যত ‘সন্দেশ’ পেয়েছি, জবাবে কোনা ‘চমচম’ পাঠাইনি এটা কি তোমাকে চিন্তার কোন খোরাক যোগায়নি?দুঃখিত, শেষ পর্যন্ত না বলে পারলাম না, তোমার ‘উষ্ণতা’ আমাকে ব্যথিত করেছে। সম্ভবত এটা তোমার ঘারানার সাধারণ ‘গুণ’। তোমার কিছুটা হলেও সংশোধন হতে পারে, এই ক্ষীণ আশা থেকেই তোমার ‘রুচিহীন ভাষায় লেখা’ পত্রের উত্তর দিলাম। তুমি নিশ্চয় জানো, কোটকরা অংশটুকু আমার নয়, তোমার নিজের।আমি তোমার বড়দের লেখাও পড়ে দেখিনি। তোমার কথা সত্য, আসলেই সময়ের বিষয়ে আমি বড় কৃপণ।যাক, তোমার জীবন সুন্দর হোক, কামনা করি।আলআমীন শামস/তারাকান্দি, মোমেনশাহী তোমার সবক’টি লেখা পেয়েছি। একই কথা বারবার বলতে হয়, সম্ভাবনার ছাপ আছে, সেই সঙ্গে আছে অযতেœর ছাপ। ভাষা যার এমন স্বচ্ছন্দগতির, তার এত বানানভুল কেন হবে!? ঝড়– হওয়া নয়, ঝড়ো হাওয়া। ‘বৃষ্টি হলে আকাশ সচ্ছ হয়ে যায়’, তা তো ঠিক, কিন্তু সে জন্য তো চাই স-এর নীচে ছোট্ট একটি ¦! আরো আছে, শুধু একটা বলি, ‘ফুল ফোঁটানোর ইচ্ছা সবসময় ছিলো।’ বৃষ্টির ফোঁটা, চন্দ্রবিন্দু আছে; কিন্তু ফুল ফোটা!কলমের প্রতি একটু যত্নবান হও এবং পর্যাপ্ত পরিচর্যার মাধ্যমে নিজের সম্ভাবনাকে ফুলের মত ফুটতে দাও এবং দয়া করে চন্দ্রবিন্দু ছাড়া!মাহমূদুল হাসান/আমানতপুর, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালীতোমার চিঠি পেয়েছি, ভ্রমণকাহিনী এখনো পাইনি। তুমি লিখেছো, ‘এই ভ্রমণের সময় আমরা একটি প্রাকৃতিক ঝর্ণার আপূর্ব সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করি, যাকে বলা হয় জলপ্রপাত। এটি ছিলো আসলেই আল্লাহ তা‘আলার কুদরতের অপূর্ব নিদর্শন। ঐ যে আপনার ভাষায় ‘অন্তর-নদীর তরঙ্গ’ ঐ রকম ঈমান ও বিশ্বাসের অপূর্ব এক তরঙ্গ যেন আমার ভিতরে সৃষ্টি হলো। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম, ফিরে গিয়ে একটি সফরনামা লিখবো ইনশাআল্লাহ। এবং তাতে আমার অন্তরের অনুভব-অনুভূতির একটি সবুজ উদ্যান তৈরী করবো।’তোমার শেষ বাক্যটি তো খুবই সুন্দর! বোঝা যায়, তোমার কলম সম্ভাবনাপূর্ণ। তোমার সফরনামার অপেক্ষায় থাকছি।রুমাইসা ইসলাম(খাদীজা)তোমার আম্মুর লেখা ‘কবিতা’ তুমি পাঠিয়েছো, আম্মুকে না জানিয়ে। কাজটা ঠিক হলো কি না, সে প্রসঙ্গ থাক। মায়ের প্রতি তোমার আকুতিটি তো সত্য। সেটারই প্রতি সম্মান জানিয়ে এখানে তুলে দিচ্ছি, যদিও কবিতা আমি বুঝি না এবং পুষ্পের পাতায় কবিতা ছাপা হয় না! ...তুমি সুন্দর, তুমি সাবলীল/তুমি শুভ্র, তুমি অনাবিল/ তোমার পরশে সময় আমাদের /জীবন্ত, সজীব, ব্যঙ্গ্যময়/অচেতন হৃদয়ে তুমি জাগ্রত চেতনা/ তোমার পরশে পুষ্পিত মোদের ভাবনা/তুমি বিবেক, উম্মাহর তুমি কণ্ঠস্বর/তুমি পথ ও পাথেয়, চিরভাস্বর/তুমি শীতল জল মরুর পিপাসায়/ তুমি আলো মোদের চোখের তারায়/প্রশংসা তার, চিরদয়া যার/নাই সীমা তার করুণার/লও কৃতজ্ঞতা এক আমাতুল্লাহর/আছি কাছে আড়ালে পরদার/ পেয়ে তোমার সুবাস, হৃদয়ে যে উচ্ছ্বাস/ পারে কি করিতে প্রকাশ শব্দের উদ্ভাস/যুগের আঁধারে যেখানে যত নিঃস্ব রিক্ত/ তোমার পরশে হয় যেন চিরসিক্ত/রুমাইসা, তুমি লিখেছো, ‘পুষ্পের পাতায় তোমার আম্মুর কবিতা যদি ছাপা হয়, তিনি কত খুশী হবেন! এটা কি দোষের? ছোটদের মত বড়দেরও কি নেই ইচ্ছা, কিছু আকুতি। আমার আম্মুকে তুমি খুশী করো হে আল্লাহ!’তো আশা করি, আল্লাহ তোমার আম্মুকে খুশী করেছেন!খাইরুল বাশারতোমার চিঠি পেয়েছি, তোমার হৃদয়ের আকুতি হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছি। তোমার এ অনুভূতি অবশ্যই সত্য- ‘প্রাপ্তির আসল তৃপ্তি তো হয় পর্দার আড়ালে। চোখের দেখা তো নয়, সবটুকু দেখা। হৃদয় ও আত্মার অনুভব করার মধ্যেই তো প্রকৃত সার্থকতা।’আমি তোমার সর্বাঙ্গীন কল্যাণ কামনা করি।আমার একটি বিড়াল এবং একটি টিয়াপাখী আছে। বিড়ালটা আমাকে দেখলে মিঁউ মিঁউ করে। আর টিয়াপাখীটি আমাকে দেখলে ডানা ঝাপটায়। আমি যখন কোথাও যাই তখন বিড়ালটা আমার পিছে পিছে আসে, আর টিয়াপাখীটি আমার কাঁধে বসে। আমার বিড়াল কাউকে খামচি দেয় না। শুধু মিঁউ মিঁউ করে। মিঁউ মিঁউ হলো বিড়ালের যিকির। টিয়াপাখীটিকে আমি আল্লাহ বলা শিখিয়েছি। আমি যখন মসজিদে যাই। তখন টিয়াপাখীটি বলে, ‘আল্লাহ’। টিয়াপাখীটি যেন আমাকে বলে, ‘যাও, আল্লাহর নামে মসজিদে যাও।নিয়ত করেছি; এবার বিরতিতে বাসায় গিয়ে টিয়াপাখীটিকে ছেড়ে দেবো। তাতে আল্লাহ খুশী হবেন। যদি না যায় তাহলে কিন্তু আমার দোষ নেই! (ইসমাঈল বিন শহীদ)
সেদিনের কথা মনে পড়লে এখনো আমার কান্না পায়। আব্বু হজ্বের সফরে যাচ্ছেন, দুই চাচা বিমানবন্দরে গিয়েছেন আব্বাকে বিদায় জানাতে। ফেরার পথে একটা নিষ্ঠুর গাড়ী এক চাচাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিলো। আরেক চাচা তাকে হাসপাতালে নিলেন। কিন্তু ...সব ঘটনা শুনে আব্বু তো জারজার হয়ে কাঁদলেন। আব্বুর কান্নায় কোন শব্দ ছিলো না, শুধু চোখ থেকে অশ্রু ঝরেছে। আব্বুর কান্না দেখে আমরাও কাঁদলাম। আব্বু চাচার জন্য অনেক দু‘আ করলেন। আমিও অনেক দু‘আ করলাম। হে আল্লাহ, আমার চাচাকে তুমি মাফ করে দাও, আর জান্নাত দাও। (মাহমূদুর-রহমান) সাইদুল ইসলাম, তোমার লেখা ভালো। লিখতে লিখতে আরো ভালো হবে ইনশাআল্লাহ।তুমি একটি মৌমাছিকে দেখেছো, ফুল থেকে মধু আহরণ করছে। তুমি ভেবেছো, মৌমাছির মত তুমিও ইলমের মধু আহরণ করবে তোমার উস্তাযের কাছ থেকে। তোমার চিন্তা খুব সুন্দর।তুমি লিখেছো, তোমাদের উস্তায বলেছেন, তোমরা এখন ছোট্ট মাসূম বাচ্চা। তোমাদের শরীরে মনে এখন গোনাহের কোন দাগ নেই। চেষ্টা করো, সারা জীবন যেন এমন মাছূম, নিষ্পাপ ও দাগহীন থাকতে পারো। (কত সুন্দর উপদেশ!)
মুহাম্মদ বিন বযলুর-রহমান! বিরতির সময় বাসায় যাওয়ার পথে তোমার আমড়া খেতে ইচ্ছে হয়েছিলো, কিন্তু শেষ পর্যন্ত উস্তাযের নছীহত তোমার মনে পড়েছে, আর তুমি আমড়াটা খাওনি। একটি ছেলেকে দিয়ে দিয়েছো। আমি খুব খুশী হয়েছি। দু‘আ করি আল্লাহ যেন তোমাকে এবং সবাইকে ছহীহ সমঝ দান করেন, আমীন।আম্মার বিন হারুন, তোমার লেখা ভালো। নিয়মিত লিখলে তোমার লেখা আরো ভালো হবে ইনশাআল্লাহ। মু‘আয বিন আব্দুল কবীর! তোমার কথা কত মূল্যবান, ‘যার কাছে ইলমের ধন আছে সেই আসল ধনী।দুনিয়ার ধন দান করলে শেষ হয়ে যায়, ইলমের ধন দানে আরো বাড়ে।’ তুমি নিয়মিত যতেœর সঙ্গে লিখতে থাকো। কামনা করি, অনেক বড় হও। আমার আম্মু আমার জন্য অনেক কষ্ট করেন। আমি আম্মুকে অনেক ভালোবাসি। আম্মুর জন্য অনেক দু‘আ করি। আমার জন্মের আঠার দিন পর আমার নানু ইনতিকাল করেছেন। নানুর কথা মনে করে আম্মু নীরবে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদেন। আম্মুর কষ্ট আমি বুঝতে পারি। আমারো তখন কান্না পায়। আমি কাঁদি না, আম্মুকে সান্ত¡না দেই।আমার মনে চায়, সবসময় আম্মুর পাশে থাকি। কিন্তু মাদরাসায় তো আসতেই হবে। মেহনত করে দ্বীনের ইলম তো শিখতেই হবে। আম্মুর যে স্বপ্ন, আমি বড় আলিম হবো!! (মনযূর বিন মুজীবুর-রহমান)ুুচাঁদ-সূর্য যদি সারা পৃথিবীকে করতে পারে আলোকিত; আমিকেন পারবো না?! ফুল যদি পারে সবার মাঝে সুবাস ছড়াতে, আমি কেন পারবো না জ্ঞানের সুবাস ছড়াতে?!ভোরের পাখীরা যদি পারে এতসুন্দর যিকির করতে আল্লাহর, আমরা মানুষ কেন পারবো না?! মৌমাছি যদি এত পরিশ্রম করতে পারে মধু আহরণের জন্য, আমরা কেন পারবো না ইলমের মধু আহরণ করতে?!মানুষ যদি সাধনা করে তাহলে তো সে হতে পারে সকল সৃষ্টির সেরা। এখন থেকে আমরা সাধনা করবো। (মু‘আয বিন মুখতার)
দেয়ালের লিখন কখনো হয় অস্পষ্ট, কখনো হয় খুব স্পষ্ট। তো স্পষ্ট হোক, বা অস্পষ্ট, দেয়ালের লিখন পড়তে পারা এবং বুঝতে পারা উচিৎ। দেয়ালের লিখন ব্যক্তির জীবনে হতে পারে, আবার হতে পারে, পরিবার, সমাজ ও জাতির জীবনে। দেয়ালের লিখন যারা পড়ে, বোঝে এবং শিক্ষা গ্রহণ করে তারা বড় বড় বিপর্যয় থেকে বেঁচে যায়। যারা দেয়ালের লিখন পড়ে না, বা পড়তে চায় না তারা ..! আমরা মনে হয় দেয়ালের লিখন পড়তে ভুলে গিয়েছি, ব্যক্তিজীবনে তো বটেই, জাতীয় জীবনেও। আজকের দেয়ালের লিখন হলো, ‘অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না’