নিরাপত্তাহীনতা, স্বাভাবিক মৃত্যুর অনিশ্চয়তা, এর চেয়ে অভিশাপ বোধ হয় দেশ, জাতি ও ব্যক্তির জীবনে আর কিছু হতে পারে না। সেই অভিশাপই এখন ভোগ করে চলেছে প্রতিটি ব্যক্তি ও পরিবার এবং দেশ ও জাতি। নিখোঁজ মানুষগুলোর পরিবার যখন পথের পাশে অসহায়ভাবে মানববন্ধনে দাঁড়ায়, অন্যদের মনেও তখন অন্যরকম একটা হতাশা, ভীতি ও উৎকণ্ঠা এবং সবকিছু ছাড়িয়ে একটা অসহায়ত ¡...!যখন তখন জলজ্যান্ত মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে! শুধু রাতের অন্ধকারে নয়, পথের উপর প্রকাশ্য দিবালোকে! নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাদের দায়িত্ব তাদের নির্লিপ্ত আচরণ এবং আয়েসি মন্তব্য শোকার্ত মানুষের কষ্ট ও অসহায়ত্ব যেন আরো বাড়িয়ে দেয়।এখন এসব কথার অবতারণা করতে হচ্ছে এ কারণে যে এবার গুম ও নিখোঁজের তালিকায় যুক্ত হয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী র্যাব-এর সাবেক অধিনায়কের নাম।গত বুধবার (৮ই আগস্ট) রাতে মিরপুর সেনানিবাসের ডিওএইচএস থেকে র্যাবের সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল হাসিনুর-রহমান নিখোঁজ হয়েছেন। উক্ত এলাকার ১১ নম্বর রোডের ৭৯২ নম্বর বাড়ির সামনে থেকে রাত ১০টা ২০ মিনিটে একটি মাইক্রোবাসে করে তাকে তুলে নেয়া হয়েছে।পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, অপহরণ-কারীরা নিজেদের ডিবি পুলিশ বলে পরিচয় দিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে নিখোঁজ ব্যক্তির অনুমোদিত পিস্তলটি পুলিশ উদ্ধার করেছে।নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবার তার কোন খোঁজ না পেয়ে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় পার করছে। স্বামীর সন্ধান পাওয়ার জন্য প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অপহৃতের স্ত্রী শামীমা খানম। শেষে উপায়ান্তর না দেখে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।স্বামীকে সৎ, নিষ্ঠাবান ও সাহসী, মন্তব্য করে শামীমা হাসীন বলেন, আমার স্বামী আইনের ঊর্ধ্বে নন। তিনি যদি অপরাধকরে থাকেন তাহলে আইন অনুযায়ী তাকে নিন এবং বিচার করুন। আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু এটা কেমন বিচার যে, আমরা জানতেই পারছি না, আমাদের মানুষটা এখন কোথায়, কী অবস্থায় আছেন! আদৌ বেঁচে আছেন কি না? তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে আমাদের প্রতিটা মুহূর্ত মৃত্যুযন্ত্রণার মত কাটছে।তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় তার স্বামীকে নিয়ে ভিত্তিহীন খবর ছাপা হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা মনে হয়। আমি আবারও পরিষ্কার ভাষায় বলবো, ‘তিনি অপরাধ করে থাকলে তাকে আইনের সোপর্দ করুন, আইন অনুযায়ী তার বিচার করুন।’পরিশেষে আমরা সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আকুল আবেদন জানাবো, একজন অসহায় স্ত্রী হিসাবে শামীমা হাসীন অবশ্যই মানবিক বিবেচনার হকদার। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাকে আশ্বস্ত করা হোক।মানুষের নিরাপত্তাহীনতা ও অসহায়ত্ব অনুধাবনের চেষ্টা করুন। সমাজের এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যিনি এই সেদিন নিরাপত্তা সংস্থায় দায়িত্ব পালন করেছেন তারই যদি কোন নিরাপত্তা না থাকে তাহলে আমাদের মত আম মানুষের অবস্থা কী হতে পারে!আমরা নিরাপদে আইনের অধীনে বাঁচতে চাই, দয়া করে সে ব্যবস্থা করুন। ‘আপনজন হারানোর শোক তাহলে আর কে বোঝবে?!’