ইতিহাসের শুরু থেকে এ উম্মাহ সমগ্র মানবতাকে সম্বোধন করেছে শিক্ষকের অবস্থান থেকে। আর এটাই ছিলো স্বাভাবিক। কারণ আসমানের সঙ্গে এ উম্মাহর রিশতা বা বন্ধনই তৈরী হয়েছে পড়ার আদেশ দিয়ে। সর্বোপরি ইসলামের নবী সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন, ‘আমি শুধু মু‘আল্লিম ও শিক্ষক (এবং দীক্ষক) রূপে প্রেরিত হয়েছি। সুতরাং তা‘লীম ও তাযকিয়া হলো নবুয়তের বিরাছাত-সূত্রে এই উম্মাহর উপর অর্পিত আসমানী দায়িত্ব।উম্মাহ তার সোনালী যুগে শিক্ষক ও দীক্ষকের অবস্থান থেকেই মানব-জাতিকে সম্বোধন করেছে। যখন যে জনগোষ্ঠী এই উম্মাহর সংস্পর্শে এসেছে শিক্ষকের আসনেই উম্মাহকে গ্রহণ করেছে। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই সমগ্র জনগোষ্ঠীর জীবনে আমূল বিপ্লব এসেছে। তাদের জীবন দর্শনের মধ্যেই মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। এমনকি, আকীদা ও বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিতেও পরিবর্তন এসেছে।এটাই ছিলো বিশ্বের জাতিসমূহের দরবারে উম্মাতে মুহাম্মাদিয়্যার সঠিক অবস্থান।ইতিহাসের এক ব্যাখ্যাহীন বিস্ময় এই যে, মুসলিম উম্মাহ নিজেই একসময় অবক্ষয়ের শিকার হলো এবং ধীরে ধীরে শিক্ষক ও দীক্ষকের অবস্থান থেকে তার বিচ্যুতি ঘটলো। এমন বিচ্যুতি যে, সে ভুলেই গেলো, একসময় সে শিক্ষকের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে অধিষ্ঠিত ছিলো।হযরত আলী মিয়াঁ মুসলিম উম্মাহর সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রথম ব্যক্তি যিনি ‘শিক্ষকের অবস্থান থেকে’ উম্মাহকে ডাক দিয়েছেন, পূর্ণ যোগ্যতা ও পূর্ণ দিপ্তি নিয়ে মানবসম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষকের আসনে ফিরে আসার এবং তা কীভাবে সম্ভব সে পথনির্দেশনাও উম্মাহর সামনে তিনি রেখেছেন। আল্লাহ তাঁকে উম্মাহর পক্ষ হতে ... (ইবনে মেছবাহ)মুসলিম উম্মাহ সম্পর্কে চিন্তার নতুন দিকআমার জীবনের মোড়পরিবর্তনকারী কিতাব সম্পর্কে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে প্রথম সুযোগেই আমি বলবো, সেটি হচ্ছে ماذا خسر العالم ...বস্তুত এই কিতাব থেকেই আমি লাভ করেছি মুসলিম উম্মাহ সম্পর্কে চিন্তার নতুন কিছু দিক, যার উপর ভিত্তি করে মুসলিম উম্মাহর ক্ষুদ্রতম সেবকরূপে নিজের কর্ম ও কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট একটি রূপরেখা গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে।এ কিতাব থেকে প্রথম যে বার্তাটি আমি লাভ করি তা এই যে, ইসলামের নবজাগরণের পথে নিজের জীবন-যৌবন সবকিছু আমাকে উৎসর্গ করতে হবে। ‘নবজাগরণ’ এ আকর্ষণীয় শব্দটি এর আগেও শুনেছি এবং বহুবার বহুভাবে শুনেছি। এমনকি তরুণহৃদয়কে আকৃষ্টি করার মত কিছু ব্যাখ্যার সঙ্গেও পরিচিত হয়েছি। কিন্তু এ কিতাবটি আমাকে আবেগধর্মিতার চোরাবালি থেকে উদ্ধার করে বাস্তবটার কঠিন পাটাতনের উপর এনে দাঁড় করিয়েছে।অত্যন্ত বাস্তবানুগ বিচার পর্যালোচনার মাধ্যমে আমাকে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ধারণা দিয়েছে যে, কাকে বলে গণজাগরণ? কী তার হাকীকত ও তাৎপর্য? তারপর উম্মাহর জীবনে কাক্সিক্ষত নবজাগরণের পথ ও পন্থা কী হবে?এককথায়, এ কিতাব আমাকে শ্লোগানসর্বস্ব চিন্তার মরীচিকার পিছনে পথহারানো থেকে উদ্ধার করেছে এবং বাস্তবানুগ পথ ও পন্থা অনুসরণ করার সাহস ও প্রেরণা যুগিয়েছে। এ কিতাব আমার জীবনে সে ভূমিকাই পালন করেছে যা পালন করে নতুন পর্যটকের জন্য ‘নগর-মানচিত্র’।(আবু তাহের মিছবাহ)