শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

শাবান ১৪৩৯ হিঃ (৩/৪) | কাশগর ও কায়রো

ইসরাইলী কসাইয়ের হাতে গাজায় আবার জবাই হলো মানবতা!

 

‘মার্চ ফর রিটার্ন’ কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছিলো প্রায় ত্রিশ হাজার ফিলিস্তীনী উদ্বাস্তু গত ৩০/৩/১৮তারিখে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের দাবী ছিলো, নিজেদের ভূখ-ে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা যেন করা হয়। সেদিন তাদের লক্ষ্য ছিলো ইসরাইলী সীমান্তের কাছে তাঁবু স্থাপন করে কিছু সময় অবস্থান করা। এভাবে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিলো।

বিনিময়ে তারা পেয়েছে বর্বর ইসরাইলী সেনাদের নির্বিচার গুলিবর্ষণ, যা বহুশত ফিলিস্তীনী তরুণের বুক ঝাঁঝরা করে দিয়েছে। সতেরজন শহীদের রক্ত ঝরেছে গাজার মাটিতে এবং ঝরেছে কয়েকশ আহত ব্যক্তির রক্ত।

ফিলিস্তীনের ভাগ্যাহত মানুষগুলোর অপরাধ কী ছিলো? অপরাধ ছিলো পরাধীনতা ও দাসত্বের বিরুদ্ধে তাদের শান্তিপূর্ণ ও জোরালো প্রতিবাদ।

ফিলিস্তীনিদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ এবং ইসরাইলের নৃশংস দমন-নির্যাতনের ঘটনা নতুন কিছু নয়।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় সবধরনের প্রতিবাদ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ফিলিস্তীনী জনগণ ইহুদি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিবাদ বিক্ষোভের কর্মসূচী পালন করে আসছে তখন থেকেই। প্রতিটি বিক্ষোভকে নৃশংস পন্থায় দমন করা হয়েছে ‘আইন-বিরোধী সহিংস কর্মকা-’ বলে। প্রত্যেকবার ঘটেছে হতাহতের ঘটনা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বরাবর ছিলো নিশ্চুপ।

১৯৮৭ থেকে ৯৪ সাল পর্যন্ত ইসরাইলের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী তেইশ হাজার ফিলিস্তীনীকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে আটক করে তাদের উপর চরম নির্যাতন চালিয়েছে। এবারের সর্বশেষ ‘গাজাহত্যাকা-’ সেই রক্তাক্ত ইতিহাসের ধারাবাহিকতারই অংশ।

গাজায় বসবাসকারিদের সত্তর শতাংশই উদ্বাস্তু, যাদের ভূমি ভিটা দখল করেছে ইহুদীবাদী সন্ত্রাসীরা ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত। ঐ জবর দখলকরা ভূমির উপরই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইসরাইলের অবৈধ রাষ্ট্র। এর পর থেকে নতুন নতুন ভূমি দখল এবং ইসরাইলের সীমানা সম্প্রসারণের কাজ অব্যাহত ভাবেই চলেছে, বলতে গেলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখের সামনে। ফিলিস্তীনীরা তাদের জবরদখল করা ভূমি ফিরে পেতে চায়। এটা কীভাবে অপরাধ হতে পারে? কেন এটা ফিলিস্তীনী জনগণের স্বাধীনতার জন্মগত অধিকার বলে স্বীকৃতি পাবে না?

যারা ইহুদীবাদী ইসরাইলের রষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বকে এই বলে বৈধতা দিতে চায় যে, ভূমিচ্যুত ফিলিস্তীনিদের সহিংস কর্মকা-ই এ জন্য দায়ী; যারা এটা বলতে চায় আসলে তারা ভুলে যায়, কিংবা ভুলে যেতে চায় যে, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মুকাবেলায় ফিলিস্তীনিদের রয়েছে অহিংস আন্দোলনের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি; ইহুদী আগ্রাসন থেমে থাকেনি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও নড়ে চড়ে বসেনি। আমরা জানতে চাই, যারা একথা বলে তারা কি আসলে জালিম ও মযলূমের চিরন্তন লড়াইকেই অস্বীকার করছে না? পৃথিবীর কোথাও কি এপর্যন্ত সশস্ত্র স্বাধীনতাসংগ্রাম ঘটেনি?

***

গত শুক্রবার ছিলো ইহুদিদের ‘পাসওভার হলি ডে’ উৎসবের দিন। নবী মূসা আ.-এর নেতৃত্বে মিশর থেকে বনী ইসরাঈলের বের হয়ে আসার দিনটি ইহুদিদের কাছে পাসওভার হলি ডে নামে পরিচিত। ঐ দিন প্রতিটি ইহুদি পরিবার সুর করে যে গান গায় তার মূলকথা হলো, ‘প্রত্যেক প্রজন্মে আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য হলো, নিজেকে সেই দিনের মুক্তি-কাফেলার একজন বলে কল্পনা করা। .... আর কোন দাসত্ব নয়, আমাদের লোকদের যেতে দাও, আমাদের মুক্ত হতে দাও।...’

তাহলে এখন আমরা কি প্রশ্ন করতে পারি, ফিলিস্তীনে যাদের ভূমি জবর দখল করা হয়েছে, যারা ভূমিহারা ও রাষ্ট্রহারা জীবন যাপন করছে, যারা আজ উন্মুক্ত কারাগারে বাস করছে তাদের মুক্তি আসবে কোন্ পথে?

গাজার বাসিন্দাদের উন্মুক্ত কারাগারের বন্দী বলেছি, তাতে অবাক হচ্ছেন? একবার চিন্তা করুন, আপনি সেখানে বাস করছেন, আর ইহুদীরা নিয়ন্ত্রণ করছে জীবনের প্রতিটি গতিবিধি, প্রতিটি পদক্ষেপ এবং জীবনের প্রতিটি মৌলিক চাহিদা! আপনি খাদ্য-পানি পাবেন কি না; বিদ্যুৎ পাবেন কি না, শিক্ষার সুযোগ পাবেন কি না, এসবই নির্ভর করছে ইহুদিদের দয়ার উপর, তার উপর রয়েছে যখন তখন গুলি খাওয়ার আশঙ্কা, তাহলে?

ঔপনিবেশিক শক্তির কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অস্ত্রধারণকে বৈধতা দেয়, এমনকি ‘আমাদের’ জাতিসঙ্ঘ, তাহলে ফিলিস্তীনের জনগণ কেন সে অধিকার থেকে আজ বঞ্চিত? কেন তাদের উপদেশ দেয়া হচ্ছে অহিংসবাদী গান্ধীর অনুসারী হওয়ার? অথচ গান্ধী নিজেও লিখেছেন, ‘ভীরুতা ও আক্রমণের একটিকে বেছে নিতে হলে আমি আক্রমণকেই বেছে নেবো। ... লাঞ্ছনার অসহায় দর্শক না হয়ে মর্যাদা রক্ষার জন্য ভারত অস্ত্র তুলে নিক, সেটাই আমি চাইবো।...’

শেষ কথা একটাই, দখলদার ও আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেয়া ছাড়া নিপীড়িত জনগণের মুক্তি ও স্বাধীনতা এসেছে, ইতিহাসে তার একটি নযিরও নেই। যুগে যুগে দেশে দেশে স্বাধীনতাকামিদের একটাই ছিলো শ্লোগান,‘ অস্ত্রেই শক্তি, অস্ত্রেই মুক্তি’; সুতরাং ...