এক ছোট্টমণির ছোট্ট চিঠি!
০ দাদুভাই, আপনার কাছে চিঠি লেখার জন্য, অনেক কষ্ট করে লেখা শিখেছি!
০০ তাই তো! বাহ্, কত সুন্দর হাতের লেখা!! পড়তে কষ্ট হলেও বলবো কী, কষ্ট হচ্ছে না! চশমাটা শুধু নাকের ডগায় আরেকটু ভালো করে বসাতে হচ্ছে!!
০ আম্মু বলেন কী, আইসক্রিম খাবে, নাকি পুষ্পের লেখা শোনবে?
০০ দারুণ বুদ্ধি তো তোমার আম্মুর!!
০ আমি বলি কী! আইসক্রিম থাক, আমাকে দাদুভাইয়ের লেখাটা পড়ে শোনাও!
০ তাই! দেখি তো তোমার কথা শুনে আমি খুশী হলাম কি না! খুশী হইনি! তোমার আইসক্রিম খাওয়া হলো না, খুশী হই কীভাবে?!
নাহ, একটু খুশী হয়েছি মনে হয়! এক ছোট্টমণি আইসক্রিম ফেলে আমার লেখা শুনতে চায়, খুশির হওয়ার মত কথাই তো!!
০ দাদু ভাই! আপনার লেখা এত মিষ্টি কেন!! চিনির শরবত দিয়ে লেখেন বুঝি!!
০০ আরে না, তোমার মতন ছোট্ট নাতিন আছে তো! নামটা হলো নাযরানা! ও না, লুকিয়ে লুকিয়ে বড় বড় চমচম খাইয়ে দেয়। সেই চমচম্ম্ম্ খেয়ে লিখি তো, তাই লেখাগুলো মিষ্টি হয়!!
লুকিয়ে কেন? আমার তো ডায়াবেটিস, ওর নানু দেখলে দেবে বকা, তাই!
০ আমি আবার লিখবো, ঠিক আছে দাদুভাই?!
০০ আমি আবার পড়বো, ঠিক আছে আপু ভাই?!
একটি সুন্দর দৃশ্য
আজ সকালে একটি সুন্দর দৃশ্য দেখলাম। দৃশ্যটি দেখে মনটা অনেক খুশী হলো। একঝাঁক সাদা কবুতর ডানা মেলে আকাশে উড়ছে। কবুতরগুলোর ওড়ার মধ্যে সুন্দর একটা ছন্দ ছিলো। কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না, কেউ পিছিয়ে যাচ্ছে না। একতালে ওড়ছে! যেন একটা ছবি! কে তাদের এমন সুন্দর করে উড়তে শিখিয়েছে? তিনি আল্লাহ! অসীম তার কুদরত!!
আমার যদি দু’টি ডানা থাকতো! আমি উড়তে পারতাম কবুতরগুলোর মত। উড়ে উড়ে চলে যেতাম নবীজীর মদীনায়! মদীনাতে নাকি অনেক কবুতর আছে। মদীনার কবুতরগুলোর সঙ্গে তখন আমার অনেক ভাব হতো। কত যে মজা হতো!! আমার দু’টি ডানা হতে পারে না!! পারেই তো!! একদিন ঠিকই আমার ডানা হবে। একদিন ঠিক আমি ডানা মেলে মেঘের রাজ্যের উপর দিয়ে উড়ে যাবো সোনার মদীনায়।
মুঈনুল হাসান, হাজারীবাগ, দারুল উলূম, ঢাকা
আমার প্রিয় তালগাছটা!
আমাদের বাড়ীর সামনে একটা খোলা জায়গা আছে। সেখানে বহু পুরোনো একটা তালগাছ আছে। এত উঁচু যে চূড়াটা যেন আকাশের উচ্চতাকে ছুঁয়ে ফেলবে।
আমার কেন জানি মনে হয়, ঐ যে কবি কবিতা লিখেছেন, ‘তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে সবগাছ ছাড়িয়ে ...’ আমার কেন জানি মনে হয়, আমাদের বাড়ীর গাছটা দেখতে পেলে তার কবিতাটি হতো আরো সুন্দর! আমার মনে হয় কী! তালগাছটা নিজেই একটি সুন্দর কবিতা!! গাছটায় তাল ধরে অনেক। তালের নরম নরম বিচিগুলোও খেতে বেশ স্বাদ। আর রস এত মিষ্টি যে, জিহ্বায় যেন স্বাদটা লেগে থাকে।
আমাদের বাড়ীতে তালের রসের যে পিঠা হবে তার রস কিন্তু তৈরী হবে এই গাছের তাল থেকে। তখন পিঠার স্বাদই হয় অন্য রকম।
মেহমানের সামনে যখন তালের পিঠা পরিবেশন করা হয়, একটা খেয়েই বলবেন, বাহ, বেশ মজা তো! কোন গাছের তাল দিয়ে তৈরী?!
যখন বলা হবে, আমাদের বাড়ীতে আপনি প্রবেশ করার সময় হাতের ডানপাশে ঐ যে খুব উঁচু তালগাছটা, ঐ গাছের তালের রস দিয়ে। এর পর তিনি কী বলবেন, আমাদের মুখস্ত হয়ে গেছে। কারণ প্রত্যেক মেহমান এ পর্যন্ত একই কথা বলেছেন। বলবেন, ‘একটা তাল নিয়ে যাবো বাড়ীতে।’ আব্বু খুশী হয়ে মেহমানকে দু’টো তিনটে তাল দিয়ে দেন। মেহমান তখন বলতে থাকেন, এত কেন, এত কেন!
শেষপর্যন্ত ব্যাগে কিন্তু ভরেন তিনোটি! মেহমানের খুশি দেখে আমাদের খুব ভালো লাগে।
গাছটা লাগিয়েছেন আমার দাদা, যখন আব্বু ছোট ছিলেন তখন। দাদা নাকি বলেছেন, কেউ যদি এ গাছের তাল চায়, না বলবে না! ...
আজ আমাদের খুশির দিন!
আজ আমাদের খুশির দিন! আজ আমাদের বাগানে একটি ফুল ফোটবে!
সব ফুলের নাম থাকে, গোলাব, বেলী, চামেলী, রজনীগন্ধা, হাস্নাহেনা! আরো কত রকম নাম। আমাদের বাগানের ফুলটির নাম কী? নাম হলো পুষ্প!!
পুষ্প মানে ফুল, তবে এটা অন্যরকম ফুল! তোমাদের বাগানের ফুলগুলোর মত না! এ ফুল কখনো ঝরে না। এ ফুল কখনো শুকিয়ে যায় না। এ ফুল সবাইকে জ্ঞানের সুবাস দান করে। এ ফুলের পাপড়িতে অনেক লেখা থাকে। সুন্দর সুন্দর লেখা। পড়তে বেশ মজা। অনেক আনন্দ হয়, আবার অনেক কিছু শেখা হয়।
দেখবে তোমরা আমার বাগানের ফুল! আমার বাগানের পুষ্প!! তাহলে জলদি এসো! আমার বাগানে তোমাদের জন্য পুষ্পের দাওয়াত! এসো কিন্তু!! আমি তোমাদের জন্য অপেক্ষা করবো!! আমার পুষ্পও তোমাদের জন্য অপেক্ষা করবে!!
নাযরানা