শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

রজব ১৪৩৯ হিঃ (৩/৩) | তোমাদের পাতা

তো মা দে র লে খা / আ মা দে র দে খা

 

সারা দেশে, শহরে পল্লীতে পুষ্পের যত পাপড়ি ছড়িয়ে আছে, সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বহুদিনের বিরান এই মজলিসটি আবার শুরু করতে যাচ্ছি নতুন সাজে, নতুন আঙ্গিকে এবং নতুন উদ্যম-উদ্দীপনা নিয়ে। আল্লাহ যেন কবুল করেন এবং মকবূল করেন, আমীন।

আমাদের এই যে ছোট্ট মজলিস, এর লক্ষ্য কী? উদ্দেশ্য কী?

আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর দ্বীনের জন্য নিবেদিত যে সকল তরুণ লেখা শিখতে চায়, আরো বড় করে যদি বলি, যারা বাংলাভাষা ও সাহিত্যের জগতে শক্তির সঙ্গে, প্রত্যয়ের সঙ্গে এবং অধিকারের সঙ্গে প্রবেশ করতে চায়; কী জন্য? এককথায়, আল্লাহর কালিমাকে আল্লাহর যমিনে বুলন্দ করার জন্য, ঈমানের আওয়াযকে সকল আওয়াযের উপরে তুলে ধরার জন্য, অন্য কিছুর জন্য নয়, শুধু এ জন্য যারা লেখা শিখতে চায় এবং ভাষা ও সাহিত্যের জগতে প্রবেশ করতে চায়, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের সাহায্য করা; আমাদের সীমিত সাধ্য নিয়ে যতদূর সম্ভব।

***

যারা পাঁচ মিনিটের চেষ্টায় সাঁতার   শিখতে চায়, যারা কলম হাতে নিয়েই সাহিত্যিক হয়ে যেতে চায় তাদের সাহায্য করার না আমাদের সাহস আছে, না সাধ্য আছে, তাদেরকে দূর থেকে আমার ‘সালাম’!

যারা শিখতে চায় একটু একটু করে, যারা অর্জন করতে চায় তিল তিল করে দীর্ঘ ও নীরব সাধনার মাধ্যমে, আমরা শুধু কৃতজ্ঞচিত্তে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি, তাদের সাহায্যের জন্য আমাদের দুর্বল হাত বাড়িয়ে দিতে পারি। দেশের যেখানে যে অবস্থায় এমন প্রাণবন্ত তরুণ আছে ছেলে হোক, বা মেয়ে যেখানেই তারা আছে, যে অবস্থায়ই আছে তাদের প্রতি আমাদের আকুল আবেদন। কলম হাতে তুলে নাও। লিখতে শুরু করো। বড় কোন লেখা নয়, গুরুগম্ভীর কোন বিষয় নয়। ছোট ছোট লেখা, সাধারণ বিষয়ের সাধারণ লেখা, লিখতে শুরু করো। ভালো হলো কি মন্দ হলো, এই দুশ্চিন্তা থেকে  মুক্ত হয়ে শুধু লিখতে থাকো।

পুষ্পের লেখাগুলো পড়ো। তোমাদের বয়সের যারা তোমাদের আগে লিখেছে, সেগুলো পড়ো। ঐভাবে তোমরা লিখতে শুরু করো। আশা করি, প্রতিদিন তিল তিল করে তোমাদের ভা-ারে রস সঞ্চিত হতে থাকবে। তুমি নিজেও জানবে না, কখন একসময় তোমার ভাণ্ডার এত সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে!

রোযনামচা লেখো। প্রতিদিন নিয়মিত লেখো। তোমাদের আগে যারা ছিলো তাদের একটা দুষ্ট রোগ ছিলো। তারা রোযনামচা লিখতো ত্রিশ দিনে দু’দিন, তিনদিন। লিখতো লেখা শেখার জন্য নয়। পুষ্পে নিজের লেখা ছাপার অক্ষরে দেখার অর্থহীন ইচ্ছা নিয়ে। ছাপা হলে লেখা ছেড়ে দিতো। কারণ, সে লেখক হয়ে গেছে! ছাপা না হলে লেখা ছেড়ে দিতো। কারণ, তার পক্ষে লেখক হওয়া সম্ভব নয়! তোমরা যারা নতুন যাত্রা শুরু করছো লেখাচর্চার দীর্ঘ পথে তারা দয়া করে এ রোগটা থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করো। ত্রিশ দিনে রোযনামচা লিখবে ত্রিশ রাত্র। ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট করে। প্রতি দিনে, বা রাত্রে একই সময়ে। পুষ্পে প্রকাশিত রোযনামচাগুলো তোমাকে সাহায্য করবে, একথা বুঝতে যে, কীভাবে রোযনামচা লিখতে হয়।

লিখবে এবং লিখতে থাকবে; কেন? লেখা শেখার জন্য। শুধু লেখা শেখার জন্য। নির্বাচিত কিছু লেখা আমার কাছে পাঠাবে; কেন? শুধু এ জন্য যে, আমি তোমাদের সাহায্য করতে চাই, লেখাগুলো দেখে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে।

এখন তোমরা যদি শুধু দু’টি কাজ করো; পুষ্প পড়ো, পাঠ করো এবং অধ্যয়ন করো, আর নিয়মিত রোযনামচা লেখো যতেœর সঙ্গে, মমতার সঙ্গে, নিছক দায়সারাভাবে নয়, যদি এ দু’টি কাজ করো, আর তৃতীয় কোন কাজ না করো তাহলে তোমাকে আমি একটুকরো কাগজ দেবো, যাতে লেখা থাকবে। ‘আল্লাহ রহমতে তুমি লেখক হতে চলেছো।’

কেউ যদি ঠিকমত এ কাজ দু’টো না করে, বা সঙ্গে আরো কিছু কাজ করে, তাকে আমি একটুকরো কাগজ দেবো, তাতে লেখা থাকবে, ‘ঐ যে তোমার পথ, তুমি ঐ দিকে যাও।’

আমার কথাগুলো একটু যদি রুক্ষ হয়ে থাকে, মাফ করে দিয়ো। আমার কল্যাণকামিতায় আস্থা হারিয়ো না।

আচ্ছা, এখন তোমাদের সামনে কাজের দীর্ঘ ও প্রশস্ত একটা অঙ্গন রেখে একমাসের জন্য আমি বিদায় হলাম। হায়াত যদি ‘ওয়াফা’ করে, আবার দেখা হবে। তখন আশা করি দু’তিন কদম হলেও তোমরা এগিয়ে থাকবে কলমের এ মোবারক সফরে। তখন আবার কিছু কথা হবে।