মুসলিমবিশ্ব অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করছে, জাতিসঙ্ঘের ভাষায় ‘বিশ্বের সবচে’ নিষ্পেষতি জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সঙ্কট সমাধানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অমার্জনীয়রূপে বিমাতাসুলভ ও কপট আচরণ করে চলেছে শুরু থেকেই।প্রথম কিছুদিন তো আমেরিকা যেন জানতেই পারেনি, ‘কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছে’, এর চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠক চলাকালে। আমাদের বিপন্ন প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা করলেন অন্তত হাঁটার পথে রোহিঙ্গা ইস্যুটি ‘কানে’ দেয়ার জন্য। বিশ্বের সবচে’ ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট কূটনৈতিক ভব্যতার পরিচয় দিতেই যেন ব্যর্থ হলেন। আমাদের ক্ষুব্ধ হতাশ প্রধানমন্ত্রী সেখানেই প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে বললেন, আমেরিকার কাছে আমি কিছু আশা করি না। কারণ রোহিঙ্গা ইস্যুটি আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প-এর সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি আমার কথা শুনলেনই না।’ একটি বড় দেশের প্রেসিডেন্টের পক্ষ হতে একটি ছোট দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এরূপ আচরণ কী গ্রহণযোগ্য?!কিছুদিন পর শুরু হলো মার্কিন প্রশাসনের ‘উদ্বেগ প্রকাশ’। তারপর শুরু হলো মিয়ানমারের অপরাধী জেনারেল চক্রের প্রতি অনুরোধের ভাষা!এরপর হলো শুরু একটু নরম, একটু গরম নিন্দা ও প্রতিবাদ। এসময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ হতে বলা হলো, ‘মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের তারা নিন্দা করে, তবে আরসা নামের সশস্ত্র সংগঠনটির সেনা ছাউনীর উপর হামলারও নিন্দা জানায়। যুক্তরাষ্ট্রের জনৈক মন্ত্রী আরো বললেন, মিয়ানমারে মুসলমানরাই শুধু আক্রান্ত নয়, মুসলমানদের দ্বারা অন্যরাও আক্রান্ত!ইতিমধ্যে জাতিসঙ্ঘের মহাসচীব কিছু কড়া কথা বলতে শুরু করলেন, তিনি জানতে চাইলেন, মাত্র দু’মাসে একতৃতীয়াংশ মানুষ যদি বিতাড়িত হয়ে অন্য দেশে আশ্রয় গ্রহণ করে তাহলে সেটাকে গণহত্যা না বলে আর কী বলা যায়?! যুক্তরাষ্ট্র তখনো রীতিমত আলোচনা পর্যালোচনা চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের সামারিক জান্তার সশস্ত্র তৎপরতার প্রকৃতি নির্ধারণের জন্য। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট
যখন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বললেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে নীরবতা অবলম্বন করে আমেরিকা অপরাধ করছে, তখন আমেরিকা দাবী জানালো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাখাইনের উপদ্রুত এলাকায় অবাধে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হোক। সামরিক জান্তা জবাব দিলেন, মুখে নয়, রাখাইনঅঞ্চলে যেতে চাওয়া মার্কিন মন্ত্রীকে ‘পত্রপাঠ’ বিদায় জানিয়ে। মার্কিন মন্ত্রী শুধু ‘হতাশা’ প্রকাশ করলেন।সম্প্রতি বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাসঙ্কট নিরসনে চাপ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমারের উপর এখনই নিষেধাজ্ঞার মত কঠোর পদক্ষেপে যেতে চাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। কী জন্য?! না, তাতে সেখানে গণতন্ত্রায়ণপ্রক্রিয়া হুমকির মুখে পড়তে পারে। কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারেন দেশটির ক্ষমতাসীন নেত্রী অং সান সূ চী! তাই সূ চীকে রক্ষা করে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার দিকেই জোর দিতে হবে।ভদ্রলোকের ভালো কথা, তবে প্রশ্ন উঠতে পারে, মিশরে যে গণতন্ত্র বিপন্ন হলো! মিশরে যে প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসি সামরিক অভ্যুত্থানে উৎখাত হয়ে জেলে!আমরা জানতে চাই, সূ চী কী ‘ঠাসা’ হবেন সেটাই কী বড় হলো?! লাখ লাখ মুসলিম জ্বালাও পোড়াও ও হত্যা-ধর্ষণের শিকার হয়ে দেশছাড়া হলো, সূ চীর গণতন্ত্র কি এর চেয়ে দামী?সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, মুসলিম বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্রকে এত ঘৃণা কেন করে। যুক্তরাষ্ট্র তো ইরাকে গিয়েছে ভালো উদ্দেশ্যে, ইরাকীদের গণতন্ত্র উপহার দিতে!!মুসলিম বিশ্বের কাছে তুমি কী চাও হে আমেরিকা! নেতাদের কাছে পেয়েছো ভীতি, জনতার কাছে পেয়েছো ঘৃণা! ভালোবাসা পাওয়ার মত কিছু কি তুমি করেছো, ইরাকে, আফগানিস্তানে, কাশ্মীরে, ফিলিস্তীনে, সিরিয়ায়!! ভালোবাসার কথা থাক, অন্তত ঘৃণা থেকে যদি বাঁচতে চাও তাহলে কমসেকম আরাকানের মজলুম মুসলমানদের ক্ষেত্রে একটু মানবতাবোধের পরিচয় তোমাকে দিতে হবে। পারবে আমেরিকা!!