শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

জুমাদাল উলা ১৪৩২ হিঃ (২০) | রোযনামচার পাতা

পেতে পারে না একটু সহানুভূতি!

লিখেছেনঃ সৌরভ / মাদরাসা বাইতুল উলূম, ঢাকা।

 

মাগরিবের পর বাসে উঠলাম বাড়ীর উদ্দেশ্যে। বাসে কত ফেরিওয়ালা ওঠে, নামে। তা নিয়ে কে আর মাথা ঘামায়। কিন্তু একটি ছোট্ট ছেলে, কতটুকুই বা বয়স, আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো, যখন সে আমার কোলে দু’টি চকোলেট রেখে গেলো। অন্যান্য যাত্রীর ক্ষেত্রেও একই দৃশ্য দেখলাম। আমার মনে হলো সে উপহার দিলো। একটি গরীব ছেলে, যার ‘শুকনো মুখটি সাক্ষী দিছে, অনাহারে ক’দিন গেছে।’ যদি দু’টি চকোলেট উপহার দিতে পারে, বলতে হবে, অনেক বড় আত্মা তার। অন্তত দারিদ্র্যের এই নির্মম কষাঘাতের মধ্যে থেকেও উপহারদানের ভনিতাটুকু তো করতে পেরেছে! কেউ পয়সা দিলো, কেউ দিলো না। আমি আরো তিনটি চকোলেট নিয়ে পাঁচটাকা তার হাতে দিলাম, আর জিজ্ঞাসা করলাম, দৈনিক কত আয় হয়। অমস্নান মুখে বললো, আল্লাহ যা দেয়।

তার কথায় অবাক হলাম, খুশীও হলাম, বললাম, এখন তো আল্লাহর কথা বলছিস, বড় হয়েও আল্লাহকে স্মরণ রাখিস।

সে বললো, মা, আর আল্লাহ ছাড়া কে আছে আমার, যে আল্লাহরে আমি ভুইলা যামু!

অসহায় ছোট্ট ছেলেটির কথা শুনে আমার চোখে পানি এসে গেলো। ....

দু’একজন যাত্রী দেখি ওকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছে। মিছেমিছি চকোলেটগুলো কেড়ে নেয়ার ভয় দেখাচ্ছে। অন্যের কাছে যাই হোক, ওর কাছে তো এগুলো জীবিকার পুঁজি! সে কাঁদো কাঁদো হয়ে কাকুতি-মিনতি করতে লাগলো।

পায়ে হয়ত আগে থেকেই জখম ছিলো; তাতে একজনের জুতোর আঘাত লেগে ব্যথা পেয়ে চিৎকার করে উঠলো, মাগো! ওর ‘মা’ আর্তনাদটি আমার বুকে যেন ছুরির ফলার মত এসে বিঁধলো।

কী করবো ভাবছি, কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই চালক গাড়ীর গতি কমিয়ে ওকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দিলো। জানালা দিয়ে দেখলাম, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ছেলেটি যাচ্ছে। হয়ত আরেকটি বাসে ওঠবে, উঠতেই হবে এবং হয়ত আবার ...।

এই ছেলেটির মত এমন কত অসহায় ছেলে-মেয়ে আছে আমাদের এ হৃদয়হীন সমাজে, যাদের আমরা সাহিত্য করে বলি, ‘পথশিশু’। হয়ত এ জন্য বলি যে, আমাদের মনের গোপন ইচ্ছে, চিরকাল ওরা পথের ধূলোতেই পড়ে থাক।

সম্পাদক- তোমার নামটি তো বেশ! যে দিনকাল পড়েছে, কে জানে ভবিষ্যতে হয়ত আমাদের বলতে হবে, হযরত মাওলানা সৌরভ মুদ্দা যিলস্নুহুল আলী! দেখো তো নামটিকে অন্যরকম ‘খোশবু’  দেয়া  যায় কি না!

তোমার লেখাটি ভালো, তবে বুঝতে পারলাম না, ছেলেটিকে তুই করে বললে কেন?!