হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, বনী ইসরাঈল যখন বিভিন্ন নাফরমানিতে লিপ্ত হইল তখন তাহাদের আলিমগণ তাহাদিগকে নিষেধ করিল, কিন্তু তাহারা নিষেধ মানিল না। ইহার পরও আলিমগণ তাহাদের সহিত ওঠা-বসা ও পানাহার অব্যাহত রাখিল। ফলে আল্লাহ তাহাদের সকলের অন্তর অভিন্ন করিয়া দিলেন এবং দাঊদ ও ঈসা ইবনে মারয়ামের যবানিতে তাহাদিগকে অভিসম্পাত দিলেন। উহা এই জন্য যে, তাহারা নাফরমানি করিয়াছে এবং সীমালঙ্ঘন করিয়াছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেলান দেওয়া অবস্থা হইতে উঠিয়া বসিলেন এবং বলিলেন, ঐ যাতের কসম, যাহার হাতে আমার জান, কিছুতেই তোমরা রেহাই পাইবে না যতক্ষণ না তোমরা তাহাদিগকে হকের দিকে টানিয়া আন। (তিরমিযি)
ফায়দা-
হাদীছের লফয হইল, ضرب الله قلوب بعضهم ببعض এর একটি অর্থ হইল, সকলের অন্তরকে অভিন্ন করিয়া দেওয়া, অর্থাৎ নাফরমানির অভিমুখী করিয়া দেওয়া। যাহারা নাফরমানি করিত না, বরং নিষেধ করিত, তবে সম্পর্ক আগের মতই রক্ষা করিয়া চলিত, তাহাদের দিলও ক্রমে নাফরমানির দিকে ঝুঁকিয়া পড়িত। আরেকটি অর্থ হইল তাহাদের অন্তর পরস্পর কলহে লিপ্ত হইয়া পড়িত, অর্থাৎ ওঠা-বসা ও একত্র পানাহার তো করিত সম্পর্ক রক্ষা করিবার জন্য, কিন্তু দিল তো আল্লাহর হাতে, তিনি তাহাদের দিলগুলিকে কলহমুখী করিয়া দিতেন।
হাদীছে বনী ইসরাঈলের আলিমদের কথা বলা হইয়াছে, উদ্দেশ্য হইল আমরা যেন নিজেদের অবস্থাকে উহার আলোকে বুঝিতে পারি। আমাদের অবস্থা যেন বনী ইসরাঈলের আলিমদের মত না হয়। বর্তমানে আমরা যাহারা আলিম পরিচয় ধারণ করিতেছি তাহাদের ভাবিয়া দেখিতে হইবে যে, আমাদের আমল কি? ওয়াযে, মাহফিলে, লেখায়, বিবৃতিতে তো আমরা জোরেশোরে অন্যায় কাজ হইতে নিষেধ করিতেছি, কিন্তু বাস্তব জীবনে তাহাদের সহিত আমাদের ওঠা-বসা সমানেই চলিতেছে।
সকল নাফরমানি ও পাপাচার সম্পর্কে একই কথা। তবে বর্তমানে যেহেতু নারী-উন্নয়ননীতিমালা সম্পর্কে আলোড়ন চলিতেছে সেহেতু এ সম্পর্কেই কথা বলিব। উত্তরাধিকারে সমানাধিকার, একটি বড় ধরনের নাফরমানি, সন্দেহ নাই। আমরা উহার প্রতিবাদ করিতেছি, ঠিক আছে। কিন্তু যাহারা বোনের হক দিতেছে না তাহাদের সহিত কি আমরা সম্পর্ক ছিন্ন করিয়াছি? একটি মাদরাসার যিম্মাদার একলক্ষটাকা চাঁদা গ্রহণ করেন নাই, কারণ ঐ দাতা বোনদের হক আদায় করে নাই। আমরা কতজন এই রূপ করি, করিতে পারি?
বিশ্ব নবী সম্পর্কে
এই উম্মতের অসহায় নারিসমাজের প্রতি নবীর চেয়ে দরদী আর কে হতে পারে? মা খাদীজা ও মা আয়েশার তিনি স্বামী ছিলেন। কেমন স্বামী, মা খাদীজা তা বলেছেন, মা আয়েশা তা বলেছেন। মা ফাতেমার তিনি বাবা ছিলেন। কেমন বাবা, মা ফাতেমা তা বলেছেন। সুতরাং হে উম্মতের নারীকুল! কেউ যদি তোমাদের কাছে নবীর চেয়ে দরদী সাজতে চায়, তাকে প্রত্যাখ্যান করো, বলে দাও, নবীর চেয়ে বেশী দরদের প্রয়োজন নেই। নবী আমাদের যা দিয়েছেন সেটুকু শুধু আদায় করে দাও।