২৮-১২-৩১ হিঃ
একঝাঁক শব্দটি নিয়ে সম্প্রতি আমি ‘একঝাঁক’ ঝামেলার মধ্যে আছি। বড়-ছোট ভেদ নেই, সবাই লিখছেন, ‘একঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ কর্মী, একঝাঁকা সত্যান্বেষী সাংবাদিক, একঝাঁক তরুণ আলিম’, আরো কত কী! আগে ছিলো হাতে গোনা, এখন ঝাঁকে ঝাঁকে। এমনকি একজন ভদ্র লেখক লিখেছেন, ‘একঝাঁক কর্মীবাহিনী’ অর্থাৎ ঝাঁকে ঝাঁকে কর্মী নয়, ঝাঁকে ঝাঁকে রীতিমত বাহিনী! ভয়াবহ ব্যাপার!
আমার মনে হয় যদি বলি, একঝাঁক গাধা, বা গরু, তাহলে দু’জনেই না-রায হয়ে বলবে, আমরা ঝাঁক হতে যাবো কেন? আমরা তো ‘পাল’! তদ্রূপ যদি বলি, একপাল কবুতর, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ আসবে, আমরা পাল নই, ঝাঁক। সুতরাং মানুষও পাল বা ঝাঁক নয়, দল। অবশ্য বিদ্রূপ করে বলা যায়, ‘একপাল লেখক’।
আমার বক্তব্যের সঙ্গে ‘সহমত’ হওয়া অনিবার্য নয়, তবে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিলে আমি বুঝতে প্রস্ত্তত আছি।
৯-১- ৩২ হিঃ
মাঝে মধ্যে ভাবি, এত কম জেনে, এত কম বুঝে লেখার সাহস করি কীভাবে? না আছে তথ্য, না আছে তত্ত্ব! না আছে ভাষাজ্ঞান, না আছে মর্মজ্ঞান! আবার ভাবি, আল্লাহ যখন দয়া করে তাওফীক দান করছেন তখন শোকর আদায় করাই কর্তব্য।
আমার মনে হয়, পড়া-শোনার পরিমাণ কম হচ্ছে। মাওলানা আব্দুল মাজিদ দরয়াবাদী লিখেছিলেন একজন সম্পর্কে সম্ভবত ‘মুআছিরীন’ কিতাবে, ‘ও পড়হ্তে কম হেঁ, লিখতে যিয়াদা হেঁ’- তিনি পড়েন কম, লেখেন বেশী। (এজন্য তার লেখায় ব্যাপ্তি কম, গভীরতা আরো কম, আর তথ্যের রীতিমত সঙ্কট।)
আমার নিজের লেখা সম্পর্কেও অনেকটা এরকমই মনে হয়। আসলে আমার উচিত, সময়সূচী ঠিক করে নিয়মিত পড়া-শোনা করা, ভাষার উপর যেমন, তেমনি বিভিন্ন বিষয়ের উপর। অল্প হোক, নিয়মিত যেন হয়। কিন্তু হায়, আগের সেই অবসর কোথায়?!
২৫-১-৩২ হিঃ
সবকিছু এখন বাণিজ্যিকায়নের শিকার। শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিও বাদ নেই। সবাই এখন নিজ নিজ ক্ষেত্রে পাকা বণিক। খেলার জগতে খেলোয়াড় সম্পর্কে এখন নিলাম, ডাক, বিক্রি ও দাম, এজাতীয় গরুর হাটের শব্দ ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের এক ক্রিকেটার কত কোটি টাকায় যেন আইপিএল-এর নিলামে বিক্রি হলেন, আরেকজন অবিক্রিত রয়ে গেছেন। নিলামে কোন ক্রেতা তার দাম হাঁকেনি। যিনি বিক্রিত তিনি খুশী, যিনি অবিক্রিত তিনি হতাশ। শিক্ষক ও লেখকদের ক্ষেত্রে অতটা অধঃপতন সম্ভবত এখনো হয়নি।
১-২- ৩২ হিঃ
একজন মাননীয় ব্যক্তি বলেছেন, ‘কাওমী মাদরাসার সনদের সরকারি স্বীকৃতি দাবীকে ছোট করে দেখা হবে চরম নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। এটি বর্তমান সময়ের ঐতিহাসিক দাবী।’
সময়ের দাবী, ঠিক আছে; বর্তমান সময়ের দাবী, তাও ঠিক আছে; বর্তমান সময়ের ‘ঐতিহাসিক’ দাবী, ...?!
চরম নির্বুদ্ধিতার পরিচয়, এর পরিবর্তে ‘চরম ভুল’ বললে কেমন হতো? চরম মুহূর্তেও চরম শব্দগুলো এড়িয়ে যাওয়া পরম বুদ্ধিমত্তার পরিচয়।
এই যে সময়ের দাবী, এরও আগে আমাদের কাছেও ছিলো সময়ের কিছু দাবী; আমরা কি জানি, আমাদের কাছে সময়ের কী দাবী ছিলো? আমরা কি পুরো করেছি সময়ের দাবী?
জা‘ফর ইকবালের মত ব্যক্তি আমাদের পুরো সমাজকে উন্মুক্ত বিতর্কের আহবান জানিয়েছেন এবং চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন যে, এ আহবান গ্রহণ করার মত সাহস আমাদের নেই? আমাদের কি সাহস আছে? কেন আমরা স্বাগত জানাচ্ছি না তার আহবানকে?
পাকিস্তানে ড্রোন হামলায় নিহতদের বেশীর ভাগই বেসামরিক, এ তথ্য পাওয়া গেছে সিএমসি (করফ্লিক্ট মনিটরিং সেন্টার)-এর পরিবেশিত তথ্যে। কী বলা যায়, এ নিষ্ঠুর হত্যকান্ড সম্পর্কে?!
কাজী জাকের হোসেন আজকের নয়দিগন্তে লিখেছেন, ‘শ্রদ্ধেয় ‘আলেম’ সমাজকে বলছি’। কী বলেছেন? বলেছেন, আলেম সমাজের পান-জর্দা খাওয়া ছেড়ে দেয়া উচিত। হাঁ, বর্তমান সমাজের অনেক বড় সমস্যা বটে!
২-১- ৩২ হিঃ
বিএসএফ-এর হাতে এপর্যন্ত কত বাংলাদেশী নিহত হয়েছে, দেশের কারো কাছে কি কোন পরিসংখ্যান আছ? সর্বশেষ হত্যা করা হলো কাঁটাতার পার হতে গিয়ে আটকা পড়া একটি কিশোরীকে, যার নাম ছিলো ফেলানি। ফেলানিরা কি এতই ফেলনা! জানি, কাজটা বেআইনী, কিন্তু তাকে তো গ্রেফতার করার সুযোগ ছিলো। এমন নিষ্ঠুরতার কী জবাব আছে? আসলে শক্তিমানের কাছে দুর্বলের জবাব চাওয়ার অধিকারই তো নেই।
নয়াদিগন্ত শিরোনাম করেছে, ‘কিশোরীকে কাঁটাতারে গুলি করে হত্যা করলো বিএসএফ’ শিরোনামটি সুন্দর হয়নি। কে হত্যা করলো, তা অনুক্ত থাকলে পাঠক চমকিত হয়ে খবরের ভিতরে প্রবেশ করবে। এভাবে হতে পারতো, ‘এবার কাঁটাতারে ঝুলন্ত কিশোরীকে গুলি করে হত্যা’
আল্লাহ এই হতভাগিনীকে জান্নাত নছীব করুন, আমীন। দেশের ভিতরে আমাদের নিজেদের হাতে এরকম কত ‘ফেলানি’ আরো কত লোমহর্ষক বর্বরতার শিকার হয়! কত শবনূর, কত ইয়াসমিন হারিয়ে গেলো দু’দিনের খবর হয়ে!
৬-২-৩২ হিঃ
আজ প্রথম আলোতে ‘পৌর নির্বাচনের গতি-প্রকৃতি’ সম্পর্কে একটি উপসম্পাদকীয় ছাপা হয়েছে। মোটামুটি চিন্তাশীল ও নিরপেক্ষ লেখা, যা ঐ পত্রিকাটির ক্ষেত্রে দেখা যায় না। পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রভাব এবং দলীয় কোন্দল আসলেই বড় একটা অশুভ ইঙ্গিত। সৎ, যোগ্য ও দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিরা এখন স্থানীয় নেতৃত্ব থেকেও নির্বাসিত হবেন।
শেয়ার বাজারে ভয়াবহ ধ্বস নেমেছে। লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পথে বসেছেন। ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। অর্থমন্ত্রী পরিহাস করে বলছেন, তাকে মিষ্টিমুখ করানো হয়নি কেন? আরেক মন্ত্রী বলছেন, শেয়ার বাজার গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। অর্থাৎ রোম জ্বলছে, নিরোরা বাঁশী বাজাচ্ছেন।
প্রথম আলোতেই মুস্তফা জামান আববাসী লিখেছেন, ‘লেখার জন্ম বেদনার মধ্যে’। বিষয়বস্ত্ত ভালো, ভাষা ও উপস্থাপন অন্যরকম হতে পারতো। তিনি লিখেছেন ‘ব্যস্ত লেখকদের রাজা হুমায়ূন আহমদ’, রাজা শব্দটি তিনি কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন? শিরোমণি, শীর্ষপুরুষ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা যেতো না?
তাকে ধন্যবাদ, ‘ফোন দেয়া’ না লিখে ‘ফোন করা’ লিখেছেন।
তিনি লেখাকে প্রসববেদনার মত বলেছেন, যা বলেননি তা হলো, ‘সুতরাং প্রসবের পর প্রয়োজন তার দীর্ঘ পরিচর্যা ও প্রতিপালন; তবেই তা উপযুক্ত হয়ে একসময় মানুষের সমাজে বরণীয় হতে পারে।’
কিন্তু আমরা কী করি! সদ্যপ্রসূত লেখা বাজারে নিয়ে আসি! আমাদের জন্য বোধ হয় মানায় না লেখাকে প্রসববেদনার সঙ্গে তুলনা করা, তাতে মাতৃত্বের অবমাননা হয়।
এ সম্পর্কে আমার দু’টি লেখা আছে, ‘সৃষ্টির প্রসববেদনা’ এবং ‘লেখার প্রতি আমার মমতা’; দুটিকে এটির সঙ্গে তুলনা করে আমার ছেলেরা পড়তে পারে।
৮-২-৩২ হিঃ
সুদানে শেষ পর্যন্ত কী হতে যাচ্ছে? আমাদের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী আছে?
পুষ্পের ওয়েবসাইট এখনো পুরো প্রস্ত্তত হয়নি, তবু বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথিদের ভ্রমণ শুরু হয়েছে এবং তাদের সংখ্যা নিয়মিত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাই এরশাদুল হক, চেষ্টা করছেন, আল্লাহ তাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। তিনি আরেকটু উদ্যোগী হলে, আরেকটু খুশী হতাম। আধুনিক প্রযুক্তি হচ্ছে দু’ধারী তলোয়াল, আল্লাহ যেন খায়রটুকু দান করেন, আর সকল প্রকার শর থেকে হেফাযত করেন, আমীন।
১০-২-৩২ হিঃ
পুষ্পের লেখা শুরু করেছি; এখনো প্রবাহ শুরু হয়নি। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি, কখন বৃষ্টি হয়! একটু মেঘের আনাগোনা অবশ্য দেখা যায়। বাকি আল্লাহর মেহেরবানি। যখন প্রবাহ থাকে না তখন লিখতে গিয়ে কষ্টের অন্ত থাকে না। আর যখন প্রবাহ শুরু হয়, জোয়ার আসে, তরঙ্গ জাগে তখন লেখার যে কী আনন্দ! ইচ্ছে হয়, অর্ধেক নয়, পুরো বুখারাই আল্লাহর রাস্তায় দান করি।
১১-২-৩২ হিঃ
ফ্রান্স থেকে সাবমেরিন ক্রয়ের সময় বিশাল অঙ্কের ঘুষ নিয়েছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জারদারি। ফ্রান্সের আদালত এসম্পর্কিত দলিলপ্রমাণ হাতে পেয়েছে। জারদারির পক্ষ হতে কোন প্রতিবাদ নেই। থাকার কথাও নয়। ঘুষের কারবারি হিসাবে তার নাম-ডাক তো অনেক আগে থেকে, যেমন নাম-ডাক কারযাঈ-এর, কিন্তু মুরুবিবদের তো এমন লোকই দরকার!
সম্প্রতি নিহত সালমান তাসিরও নাকি ছিলেন চরম দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি। কিন্তু ব্লাসফেমি আইনের বিরোধিতা করে তিনি এখন পশ্চিমা বিশ্বের হিরো, আর তাকে হত্যাকারী ইসলামপন্থিদের হিরো। আমরা আইনবহির্ভূত যে কোন হত্যাকাণ্ডের তীব্র বিরোধিতা করি, তবে..।
১৩-২-৩২ হিঃ
পৌরসভা নির্বাচন হয়ে গেলো। ‘জনগণের সরকার’ ভরাডুবির শিকার হয়েছেন, ‘জনবিচ্ছিন্ন’ বিরোধিদলের হাতে। এখনো যদি হুঁশ হয়! ব্যথাটা বোধকরি বেশী বেজেছে প্রথম আলোর অন্তরে।
সংবাদ পরিবেশনের অদ্ভুত কৌশল! প্রথম আলোর পরিসংখ্যানে আওয়ামী লিগের সংখ্যা বেশী, আর নয়াদিগন্তের হিসাবে বেশী বিএনপির সংখ্যা! দু’টোই ঠিক। রহস্য আর কিছু নয়, বিজয়ী বিদ্রোহীদের সংখ্যা আওয়ামী লিগের বেশী। প্রথম আলো তাদের ধরে হিসাব করছে। গরয বড় বালাই কিনা!
এখনকার বিজ্ঞাপনে মুনাফালোভের কদর্যতা ঢেকে রাখার কোন চেষ্টা করা হয় না। এমনকি ন্যূনতম রুচিবোধেরও পরিচয় থাকে না। একটি মোবাইল কোম্পানির বিজ্ঞাপন হলো ‘আপনি কথা বলুন, আর সব গোল্লায় যাক’। খাঁটি বিজ্ঞাপন বটে! সত্যি তো, আমরা কথা বলছি, আর সব গোল্লায় যাচ্ছে! টাকাটা অবশ্য যাচ্ছে ওদের গোলায়।
আজকের নয়দিগন্তে দেশ-মহাদেশ পাতায় একটি লেখা এসেছে ‘সুদানবিভক্তির অন্তরালে’ নামে। বিষয় আর কিছু না, দক্ষিণ সুদানের তেল! তবু কি হুঁশ হবে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের!
৩-৩-৩২ হিঃ
এবারের অতিথি সম্পাদক হলেন মাওলানা আব্দুর রশীদ, পুষ্পকে ভালোবেসে আশি বছর বয়সে যিনি কলম ধরেছেন এবং পুষ্পকে উপহার দিয়েছেন, ‘একটি গাছের আত্মকথা’ নামে একটি সুন্দর লেখা। পৃথিবীতে যত ফুল ফোটে, সব ফুল যেন তাঁকে সুবাস দেয়।
দ্বিতীয় অতিথি কিশোর আহমদ ছালেহ তাওছীফ। এবার ‘কে তিনি?’ কীভাবে লিখবো, সে চিন্তায় যখন অস্থির, হঠাৎ তার লেখাটি এলো আমার হাতে, আর আকাশ থেকে নেমে এলো এবারের ‘কে তিনি?’ লেখাটি। পৃথিবীতে যত ফল ধরে সব ফলের স্বাদ যেন সে পায়। তার লেখাটি হলো-
‘অন্তহীন অসীম কুদরতের অধিকারী এক আল্লাহ, যিনি উপরে আছেন, তাকে কী ভাবে ভুলে থাকা সম্ভব? এত প্রমাণের কী প্রয়োজন? এতটুকুই কি যথেষ্ট নয় যে, কখনো মুষোলধারে বৃষ্টি হয়, কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনো শিলাবৃষ্টি, কখনো তুষারঝড়, কখনো মেঘে ছেয়ে যাওয়া আকাশ, আবার পরক্ষণেই একেবারে পরিষ্কার, মেঘের চিহ্নমাত্র নেই! কেউ কি দেখে না এসব দৃশ্য? হাঁ, দেখে তো সবাই, তবে শিক্ষাগ্রহণ করে শুধুবিবেকবানেরাই।’
‘কে তিনি?’ লেখাটি এর সঙ্গে মিলিয়ে পড়া যেতে পারে, তাহলেই বোঝা যাবে, পুষ্পের লেখক বন্ধুরা তাদের কাঁচামাল দিয়ে আমাকে কতটা সাহায্য করে। তাদের জাযা ও পুরস্কার আল্লাহর কাছে।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)