(ধারাবাহিক)
যেমন ছালাত সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে- ‘তোমরা ছালাত কায়েম করো, আর মুশরিকদের কাতারে গণ্য হয়ো না।’
আর যাকাত সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে- ‘ঐ মুশরিকদের জন্য বরবাদি যারা যাকাত আদায় করে না, আর তারা আখেরাতকে অস্বীকার করে।’
এই ঘটনা থেকেও যাকাতের মহাগুরুত্ব অনুধাবন করা যায় যে, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালল্লামের ওয়াফাতের পর কিছু কিছু গোত্র ছালাত আদায় করলেও যাকাত করতে রাজী হলো না। তখন খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন, অথচ তখন পরিস্থিতি এতই নাযুক ছিলো যে, জিহাদ করার কোন সামর্থ্য বাহ্যত উম্মতের ছিলো না। হযরত ওমর (রা.)-এর মত কঠিন মানুষও অনুরোধ করেছিলেন ঐ লোকদের প্রতি কিছুটা নমনীয় হতে। কিন্তু ছিদ্দীকে আকবার (রা.), যিনি ইরতিদাদের ফিতনার সময় বলেছিলেন, ‘আমি বেঁচে থাকবো, আর দ্বীনের নোকছান হবে?!’ তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করলেন, তারা যদি ঐ রশিটাও দিতে অস্বীকার করে যা তারা নবী ছাল্লালল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায় আদায় করতো তাহলেও আমি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবো। পরে হযরত ওমর (রা.)সহ সকল ছাহাবা কেরাম তাঁর সঙ্গে একমত হয়েছিলেন।
যাকাত আদায় না করার আযাব
আলকোরআনের এই আয়াতটি দেখুন, যাকাত আদায় না করার ক্ষেত্রে কী ভয়ঙ্কর আযাবের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে- আর যারা স্বর্ণ-রৌপ্য সঞ্চয় করে রাখে, আল্লাহর রাস্তায় তা খরচ করে না তাদের আপনি ‘দরদনাক’ আযাবের খোশখবর দান করুন, যেদিন তপ্ত করা হবে সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে, অনন্তর তা দ্বারা দাগানো হবে তাদের কপাল, পার্শ্ব ও পিঠ, (আর বলা হবে,) এ তো ঐ সম্পদ যা তোমরা জমা করেছো নিজেদের জন্য, সুতরাং যা জমা করেছো তার স্বাদ আস্বাদন করো।’
হাদীছ শরীফেও এসেছে একই রকম ভয়ঙ্কর আযাবের হুঁশিয়ারি। যেমন যারা যাকাত আদায় করে না, কেয়ামতের দিন তাদের সম্পদ ভয়ঙ্কর বিষধর সাপের ছূরত ধারণ করবে এবং তার গলা পেঁচিয়ে ধরবে, আর দংশন করে করে বলবে, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ! আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ!
আল্লাহ তা‘আলা যাদেরকে দয়া করে সম্পদ ও সচ্ছলতা দান করেছেন, বিভিন্ন নায-নেয়ামত দান করেছেন তারা যদি এর শোকর আদায় না করে এবং যাকাত আদায় না করে আল্লাহর হুকুমের নাফরমানি করে, তারা যদি গরীবের প্রতি দয়া না করে, বরং এতীম, মিসকীন ও অভাবিদের প্রতি নির্দয় আচরণ করে তাহলে তাদের চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? এমন কঠিন শাস্তিই তো তাদের প্রাপ্য হওয়ার কথা?!
প্রত্যেক মালদার মুসলমানকে আল্লাহ যেন তাওফীক দান করেন যাকাত আদায় করার এবং আখেরাতের ভয়াবহ আযাব থেকে বেঁচে থাকার, আমীন।
যাকাত আদায়ের আজর-ছাওয়াব
যাকাত আদায় না করার জন্য যেমন কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি এসেছে তেমনি যাকাত আদায় করার ক্ষেত্রে বান্দার জন্য আল্লাহ তা‘আলা বড় বড় আজর ও ছাওয়াবের ঘোষণা দান করেছেন। এটা পরম দয়ালু ও মেহেরবান আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে বান্দার প্রতি অপরিসীম দয়া। কারণ বান্দা তো মালের মালিক নয়; সম্পদের মালিকানা তো একমাত্র আল্লাহর। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা তাদের দান করো ঐ মাল থেকে যা তিনি তোমাদের দান করেছেন। সুতরাং আল্লাহর হুকুমে আল্লাহর মাল থেকে যদি দান করে তাহলে তার আবার প্রতিদান কিসের! তবু তিনি তাঁরই দেয়া মাল খরচ করার উপর বান্দাকে পুরস্কার দান করার কথা বলেছেন; যেন দয়া ও ইহসান বান্দার প্রতি আল্লাহর নয়, বরং আল্লাহর প্রতি বান্দার! সুবহানাল্লাহ!
দেখুন, বহু স্থানে মাল ও সম্পদের মালিকানাকে আল্লাহ নিজের পরিবর্তে বান্দার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন এবং বলেছেন,أموالكم তোমাদের মাল। أموالهم তাদের মাল। যেমন স্নেহশীল পিতা তার সন্তানকে কিছু দিয়ে বলে, ‘তোমার ঐ জিনিসটা থেকে আমাকে কিছু দাও, আমি তোমাকে আরো অনেক বেশী দেবো! সুবহানাল্লাহ! এমনকি আল্লাহ তো একাধিক স্থানে ‘করয’ শব্দ ব্যবহার করেছেন-
‘কে আছে যে আল্লাহকে উত্তম করয দান করবে, আর তিনি তাকে বাড়িয়ে দেবেন অনেক বাড়িয়ে দেয়া!’
সূরাতুল বাকারায় আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের মাল খরচ করে, তাদের খরচ করার উদাহরণ হলো একটি দানা, যা সাতটি শীষ উৎপন্ন করে; প্রতিটি শীষে রয়েছে একশটি দানা; আর আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা করেন তাকে অনেক বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ তো প্রশস্ততার অধিকারী, সর্বজ্ঞ।’
তো এটা নফল ছাদাকার ক্ষেত্রে যেমন তেমনি ফরয ছাদাকা, তথা ছাদাকাতুল ফিতর ও যাকাতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যাকাত ও ছাদাকাতুল ফিতর আদায় করো বা নফল দান করো, সবই আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার অন্তর্ভুক্ত। বরং ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, নফলের বৃদ্ধি হবে নফলের মত, আর ফরযের বৃদ্ধি হবে ফরযের মত। অর্থাৎ একটি যাকাত অন্তত সাতশটি যাকাতের সমতুল্য হবে।
তারপর কী পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হবে তা আল্লাহ তা‘আলা নির্দিষ্ট করে বলেন নি। তবে বান্দা যেন নিজের ক্ষুদ্রতার কারণে বৃদ্ধির পরিমাণকে নিজের মত করে ধারণা না করে সে জন্য তিনি বলেছেন, আর আল্লাহ তো প্রশস্ততার অধিকারী। অর্থাৎ বৃদ্ধির পরিমাণকে তোমার সীমাবদ্ধ ধারণা দিয়ে ভাবতে যেয়ো না; আমার ভান্ডারের ব্যাপ্তি ও প্রশস্ততা দিয়ে ভাবতে চেষ্টা করো। আমার দানের পরিমাণ তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না। সুবহানাল্লাহ!
তারপর বান্দা যেন মনে না করে যে, নাউযু বিল্লাহ, আমার দানের বিষয় যদি আল্লাহর ইলমে না থাকে! মুমিন তো এমন ভাববে না, ভাবতে পারে না, তবু আল্লাহ তাঁর বান্দাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বলেছেন, তুমি যখন যেখানে যেভাবেই খরচ করো আমি তা জানবো। কোন কিছু আমার জানার বাইরে হতে পারে না। আসমান যমীনের কোন কিছুই আমার কাছে গোপন থাকে না।
যাকাতের হাকীকত কী?
আধুনিক যুগের মুসলিম বুদ্ধিজীবিদের বিরাট অংশ সম্ভবত যুগের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে, বরং অন্যান্য জাতির ভয়ে ভীত ও হীনমন্যতার শিকার হয়ে আরকানে ইসলামের ক্ষেত্রে রাজনীতি, অর্থনীতি, স্বাস্থনীতি ও সমাজনীতির আধুনিক পরিভাষা ব্যবহার করতে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। তারা মনে করে, এভাবে তারা ইসলামের বিরাট খেদমত করছে। তাদের এই সরলতার প্রতি সত্যি করুণা হয়। তারা বুঝতেই পারে না যে, এভাবে ইসলামের কত বড় সর্বনাশ করা হচ্ছে।
তো যাকাতের ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। তাদের লেখা থেকে বোঝা যায়, যাকাত একটি অর্থনৈতিক বিধান, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে দারিদ্র্য- বিমোচন। এর পর তারা গর্ব করে অন্যান্য জাতির উদ্দেশ্যে বলে, দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য ইসলাম যে অর্থনৈতিক বিধান জারি করেছে এর চেয়ে উত্তম, এর চেয়ে ন্যায়ভিত্তিক ও ইনছাফ -পূর্ণ ব্যবস্থা পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত অন্য কোন অর্থব্যবস্থায় পেশ করা সম্ভব হয়নি।
এভাবে আসলে যাকাতের মূল প্রাণ, আসল হাকীকত ও রূহ হারিয়ে যায়। তারা ভুলে যায় যে, যাকাতের আসল হাকীকত হচ্ছে ইবাদত ও বন্দেগি এবং আল্লাহর মুহববত ও কুরবত, তথা নৈকট্য ও ভালোবাসা অর্জনের ঐকান্তিক আকুতি। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে লোভ-লালসা, সম্পদলিপ্সা ও কৃপণতা এবং অন্তরের নির্দয়তা ও নিষ্ঠুরতা, এই সকল রোগ-ব্যাধি হতে বান্দার কলবকে পাকছাফ করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও কবুলিয়াত, অতপর গরীব-মিসকিনের ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা ও দু‘আ অর্জনের মাধ্যমে মালের মধ্যে বরকত পয়দা করা। এসকল উদ্দেশ্যই কোরআন-সুন্নায় গুরুত্বসহকারে বলা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে- ‘আপনি তাদের মাল থেকে ছাদাকা গ্রহণ করুন, যা দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং সংশোধন করবেন।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা যাকাত ফরয করেছেন শুধু এজন্য যে, তোমাদের অবশিষ্ট মাল যেন উত্তম ও পবিত্র হয়ে যায়। (আবু দাউদ)
তবে হাঁ, এই মৌলিক ও বুনিয়াদি উদ্দেশ্যের পরে জাগতিক দিক থেকেও কিছু পার্শ্ব উদ্দেশ্য অবশ্যই রয়েছে। যেমন দরিদ্রদের মৌলিক প্রয়োজন পূর্ণ করা এবং ধনী-গরীবের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনা এবং উভয় শ্রেণীর মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষের পরিবর্তে প্রীতি ও সম্প্রীতির সম্পর্ক সৃষ্টি করা। হযরত মুআয বিন জাবাল (রা.) কে যখন ইয়ামানে প্রেরণ করা হচ্ছিলো তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আখেরি হিদায়াত দিয়ে বলেছিলেন-
‘তুমি তাদের অবহিত করো যে, আল্লাহ তাদের উপর ‘ছাদাকাহ’ ফরয করেছেন যা তাদের ধনিদের থেকে নেয়া হবে, আর তাদের গরীবদের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে।’
এগুলো অবশ্যই যাকাতের উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত, তবে স্তরতারতম্য অবশ্যই মনে রাখতে হবে। পূর্ববর্তী ওলামায়ে উম্মত, যারা দ্বীনের ছহীহ সমঝ, তথা ফিক্হ ফিদ্দীন অর্জন করেছিলেন তাঁদের লেখায় ও বক্তব্যে এ বিষয়টি পরিষ্কার ছিলো।
যাকাতে নূরানিয়াত কীভাবে আসে
যাকাত যেহেতু আগাগোড়া একটি ইবাদাত, এবং শুধু ইবাদতই নয়, বরং ঈমানের পর ইসলামে দ্বিতীয় রোকন। সুতরাং নামায, রোযা ও হজ্বের মত এখানেও নিয়ত অপরিহার্য। নিয়ত ছাড়া যদি সমস্ত মালও কেউ দান করে দেয়, তাতে যাকাতের ফরযিয়ত আদায় হবে না। তবে পার্থক্য এই যে, ছালাত তো নিয়ত ছাড়া বাতিল হয়ে যায়, কিন্তু যাকাত আদায় না হলেও তা দান ও হেবা বলে গণ্য হবে এবং সেটারও আলাদা ছাওয়াব হবে।
তদ্রূপ নিয়ত দ্বারা ফরযিয়াত আদায় হয়ে যায়, কিন্তু নিয়তের ইখলাছ ছাড়া ছাওয়াব ও ফযীলত কিছুতেই হাছিল হবে না। যার নিয়ত যত উত্তম হবে, ইবাদত হিসাবে তার যাকাত তত উত্তম থেকে উত্তম হবে। প্রথমত যাকাত আদায় করতে হবে সন্তুষ্ট চিত্তে, নিজের দুনিয়া আখেরাতের সৌভাগ্য মনে করে। বস্ত্তত এখানেই যাকাতের সঙ্গে দুনিয়ার অন্যান্য অর্থব্যবস্থার পার্থক্য। মানুষ কর ও ট্যাক্স আদায় করে আইনের চাপে এবং শাস্তির ভয়ে। তাই আদর্শ থেকে আদর্শ নাগরিকের মনেও কর এড়িয়ে যাওয়ার, কিংবা অন্তত কর লাঘব করার মানসিকতা কাজ করে থাকে। পক্ষান্তরে একজন মুমিনের দিলে শাওক ও তামান্না থাকে যাকাত আদায়ের সৌভাগ্য অর্জনের। যেমন হাদীছ শরীফে আছে, বেদুঈন পলস্নীতে এক ব্যক্তির কাছে যখন উশুলকারী পৌঁছলেন তখন তিনি খুশী হয়ে বললেন, এই পশুপাল থেকে যা ইচ্ছ নিয়ে নিন। উশুলকারী নিয়মমত মাঝারি আকারের পশু নির্বাচন করলেন, আর আদায়কারী বললেন, এই প্রথম আল্লাহ আমাকে যাকাত আদায় করার তাওফীক দান করেছেন, আর আমি এই সামান্য পরিমাণ যাকাত দেবো! না, এটা নিয়ে কী হবে, আপনি সবচেয়ে হৃষ্টপুষ্টটা নিন। কিন্তু তিনি বললেন, আমি তো নিয়ম ভঙ্গ করতে পারি না, তবে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকটেই অবস্থান করছেন। আপনি তাঁর কাছে চলুন।
ছাহাবী সেখানে হাযির হয়ে আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার পক্ষ হতে যাকাত উশুলকারী আমার কাছে এসেছে। আল্লাহ আমাকে এই প্রথম যাকাত আদায় করার তাওফীক দান করেছেন, আমি হৃষ্টপুষ্ট পশু দিতে চাই, কিন্তু আপনার প্রেরিত ব্যক্তি বলছে, আমার উপর শুধু মধ্যম আকারের পশু ফরয হয়েছে।
নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাহাবীর দিলের জাযবা দেখে সন্তুষ্ট হলেন এবং তার মালের জন্য বরকতের দু‘আ দিয়ে বললেন, তোমার উপর ফরয তো সেটাই যা আমার প্রেরিত ব্যক্তি বলেছে, তবে তুমি যদি উত্তমটি দিতে চাও দিতে পারো।
পক্ষান্তরে হাদীছ শরীফে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে, এমন একসময় আসবে যখন মানুষ যাকাতকে আর্থিক দন্ড মনে করে আদায় করবে। তো বলুন, উভয় যাকাত কী সমান হতে পারে!
দ্বিতীয়ত যাকাত আদায় করাকে গরীবের উপর দয়া ও অনুগ্রহ কিছুতেই যেন মনে না করা হয়, বরং যেন মনে করা হয় যে, তার কারণে এত বড় একটি ফরয এবং এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি রোকন আদায় করা সম্ভব হয়েছে। অন্তরের এই অনুভূতি মুখের কথায় যেমন প্রকাশ করা উচিত তেমনি আচার-আচরণেও প্রকাশ করা উচিত।
তৃতীয়ত ছালাতের মধ্যে যেমন ইহসানের ভাব ও ভাবনা থাকা চাই তেমনি যাকাতের মধ্যেও থাকা চাই। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা আমার যাকাত আদায় করা দেখছেন; আমার অন্তরের নিয়ত যেমন দেখছেন, তেমনি তাঁর বান্দার প্রতি আমার আচরণও দেখছেন। হে আল্লাহ, তুমি আমার এ আমল অনুগ্রহ করে কবুল করে নাও।
এভাবে যদি যাকাত আদায় করা হয় তাহলে অবশ্যই তা নূরানিয়াতে পরিপূর্ণ যাকাত হবে এবং ঐ সকল ফায়দা ও বরকত হাছিল হবে যার সুসংবাদ হাদীছ শরীফে এসেছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যারা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে, তারপর যা খরচ করেছে তার পিছনে অনুগ্রহ ফলানো, বা কষ্ট দেয়ার আচরণ না করে, তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদের জন্য রয়েছে তাদের আজর, আর তাদের কোন ভয় নেই, আর তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।
হাদীছ শরীফে এসেছে, ‘ছাদাকা দ্বারা মাল কখনো কমে না।’ আরো এসেছে, ‘নিশ্চয় ছাদাকা গোনাহ (এর আগুন) নিভিয়ে দেয় যেমন পানি আগুন নিভিয়ে দেয়।’ আরো এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা বান্দার ছাদাকাকে ডান হাতে গ্রহণ করেন, তারপর তা ছাদাকার মালিকের অনুকূলে বাড়াতে থাকেন।’