শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

মুহররম ১৪৩২ হি: (১৮) | তোমাদের পাতা

আমাকে

আমি বৃক্ষ। বহুদিন আগে এখানে এই বাড়ীর প্রাঙ্গনে আমাকে রোপণ করেছিলেন একজন দয়ালু মানুষ। মানুষের প্রতি তার দয়া ছিলো, পশুপাখীদের প্রতি মায়া ছিলো, গাছগাছালির প্রতি দরদ ছিলো। যেন দয়া, মায়া ও দরদ দিয়ে গড়া ছিলো তার হৃদয়! এমন মানুষ কম হয় সংসারে।  সেই দরদী মানুষটির সযত্ন পরিচর্যায় ধীরে ধীরে আমি বড় হলাম। আমার শাখা-প্রশাখা হলো, সবুজ পাতা হলো। আমি বড় হলাম, সবুজ হলাম এবং ছায়াদার হলাম। আমার শীতল ছায়ায় বসে তিনি কত শান্তি পেতেন! বাড়ীর ছেলেরাও আসতো, আমার ছায়ায় বসতো। কিন্তু তারা ছিলো অন্যরকম। তারা ভাবতো না, আমার প্রাণ আছে! মানুষের মমতা আমি অনুভব করি এবং অনুভব করি তাদের নিষ্ঠুরতা। তারা অনেক উপদ্রব করতো। পাতা ছিঁড়তো, ডাল ভাঙ্গতো। আমার কষ্ট হতো। বুকে আমার ব্যথা ছিলো, কিন্তু মুখে ভাষা ছিলো না। দরদী মানুষটি তাদের বলতেন, যে গাছ ছায়া দেয় তার পাতা ছিঁড়তে নেই, ডাল ভাঙ্গতে নেই। গাছের প্রতি মানুষের মমতা যত গভীর হবে, গাছের ছায়া তত শীতল হবে।

কিন্তু তারা শোনে না, তাদের উপদ্রব থামে না। আমি কী করতে পারি! নীরবে দাঁড়িয়ে থাকি, কাঁদি, আর্তনাদ করি। সেই দরদী মানুষটি ছাড়া কেউ শুনতে পায় না আমার কান্না ও আর্তনাদ।

তারা কষ্ট দিতো, তবু আমি ছায়া দিতাম। আমি তো শত্রুকেও ছায়া দেই, যদি কাছে আসে, আমার ছায়ায় বসে।

একদিন তিনি আমার শাখায় পাতায় হাত বুলিয়ে বললেন, তুমি কিন্তু ছায়া হয়ে থেকো ওদের মাথার উপর।

এখন তিনি নেই। এখনো তারা আসে, আমার ছায়ায় বসে এবং কষ্ট দেয়, আগের চেয়ে বেশী কষ্ট দেয়। এখন তো কেউ তাদের তিরস্কারও করে না!

আমি কী করতে পারি! নীরবে দাঁড়িয়ে থাকি, কাঁদি, আর্তনাদ করি। কিন্তু আমার কান্না ও আর্তনাদ শোনার তখন কেউ ছিলো না।

আমার ছায়ায় বসে একদিন ওরা বলে, গাছটা কেটে ফেললে কেমন হয়? কত জ্বালানী হয়?

আশ্চর্য! তারা ভাবলো ছায়াদার একটি বৃক্ষকে হত্যা করার কথা?! কত নির্বোধ হলে, নিষ্ঠুর হলে মানুষ তা ভাবতে পারে?!

আমাকে ঘিরে আছে এ কিসের কালো ছায়া? মৃত্যু?! কেমন হয় গাছের মৃত্যু?! কিংবা ঘাতকের ছায়া?!

কেউ কি বাঁচাতে পারে আমাকে এই কালো ছায়ার হাত থেকে? বড় গাছকে, বুড়ো গাছকে দূরে নেওয়া যায় না? এমন উর্বর মাটি নেই কোথাও? কেউ কি আছে আমাকে সাহায্য করার?! দূরে নিয়ে যাওয়ার?! আমি যে বাঁচতে চাই! আমি যে ছায়া দিতে চাই!!