শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা
মাসিক আল-কলম-পুষ্প
জুমাদাল আখেরা ১৪৩১হিঃ (১৬) | তোমাদের পাতা
লেখার ছায়া আরশের ছায়া
ব্যথার দহন এত দিন বুদ্ধি দিয়ে বুঝেছি, এখন হৃদয় দিয়ে বুঝি। আগুনে যদি শরীর পোড়ে তুমি আর্তচিৎকার করো, সবাই ছুটে আসে এবং তোমাকে উদ্ধার করে। কিন' ব্যথার দহনে হৃদয় দগ্ধ হয়, তবু তোমার মুখে নেই কোন কাতর ধ্বনি। হৃদয়ের যন্ত্রণা কেউ বুঝতে পারে না, তাই নিজেকে যারা তোমার আপন বলে দাবী করে তারাও পাশে এসে বসে না, দগ্ধ হৃদয়ে সান-্বনার একটু শীতল প্রলেপ বুলিয়ে দেয় না। নীরবে সবার অগোচরে তুমি জ্বলতে থাকো, তোমার হৃদয় দগ্ধ হতে থাকে, মুখে যদি বুকের যন্ত্রণার ছায়া পড়ে, তাই তুমি ফুটিয়ে তোলো ক্লিষ্ট-করুণ একটু হাসি, সবাই ভাবে তুমি সুখী! কত সুন্দর এবং কত মর্মানি-ক অভিনয়!
কিন' সে! তুমি যাকে আপন বলে বিশ্বাস করো সে কেন বোঝে না! সে কেন পাশে এসে বসে না! তোমার দগ্ধ হৃদয়ের যন্ত্রণার ছাপ তার মুখে কেন ফুটে ওঠে না। সামান্য একটু হাসির ছলনা সে কেন জয় করতে পারে না!
***
যন্ত্রণার আগুনে হৃদয় আমার জ্বলতে থাকে। আমি কাতর হই, ছটফট করি, আর অসি'র প্রতীক্ষার প্রহর গুণি, সে আসবে, সে বোঝবে; পাশে বসবে এবং .. কিন' না সে আসে না।
আমার হৃদয় জ্বলতে থাকে এবং হৃদয়ের আকাশে কালো ধোঁয়া জমতে থাকে। হায়, তবু তার মুখের ছবি কল্পনা করি, যদি তাতে দগ্ধ হৃদয়ে সান-্বনার একটুখানি প্রলেপ পড়ে! বুকে যিনি মুখের ছবি আঁকেন তাঁর বুঝি দয়া হয়, তিনি আমার হাতে কলম তুলে দেন। কলম থেকে তখন কালি ঝরে এবং একটি লেখা জন্মলাভ করে। আমি বুঝতে পারি, আসলে এ কালি কলম থেকে ঝরে না, ঝরে হৃদয়ের আকাশে জমে থাকা কালো মেঘ থেকে। মায়ের মমতা দিয়ে লেখাটিকে আমি বুকে তুলে নেই। আমার হৃদয়ের যন্ত্রণা আমার কাছে ফিরে আসে জীবনের সান-্বনা হয়ে। পরম যত্নে ও মমতায় লেখার অঙ্কুরকে আমি লালন করি এবং চোখের জলে সিঞ্চিত করি। একসময় তা হয় লেখার বৃক্ষ। সেই বৃক্ষ আমাকে ছায়া দান করে। লেখার ছায়ায় আমি অনুভব করি...।
লেখার ছায়া তো মুমিনের জন্য পৃথিবীতে আরশের ছায়া! সুতরাং এ ছায়া যে লাভ করে পৃথিবীতে তার দুঃখ কিসের! এ ছায়ায় যে বাস করে সে তো জান্নাতের সুবাস ভোগ করে; সুতরাং তার কষ্ট কিসের!
জীবনকে আমি তাই বহন করে নিতে চাই কলমের আশ্রয়ে লেখার ছায়ায় থেকে। এবং আমি জানি, ব্যথার দহনে হৃদয় দগ্ধ না হলে, হৃদয়ের আকাশে কালো ধোঁয়ার মেঘ না হলে কলম থেকে কালি ঝরে না এবং চোখের জল ছাড়া লেখার অঙ্কুর সিঞ্চিত হয় না। লেখার ছায়া পেতে হলে ব্যথার দহন হাসিমুখে বরণ করতেই হবে।
আমার কলমের লেখা এবং লেখার ছায়া হে মহান, আমি উৎসর্গ করি তোমাকে, রোয হাশরে আমাকে এবং আমাদেরকে দান করো তোমার আরশের একটু ছায়া!