শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা
মাসিক আল-কলম-পুষ্প
জুমাদাল আখেরা ১৪৩১হিঃ (১৬) | তোমাদের পাতা
আমাকে
আমি যখন মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাই, জীবনের কোলাহলে ডুবে থাকি, দৃশ্য-অদৃশ্য অসংখ্য বন্ধনে জড়িয়ে পড়ি তখন আমি আসলে আমাকেই হারিয়ে ফেলি। আমার সঙ্গে আমার তখন একটি বেদনাদায়ক বিচ্ছেদ সৃষ্টি হয়। কে সেই আমি?
আমার চারপাশে যখন কেউ থাকে না, কোন কিছু থাকে না, শব্দ থাকে না, কোলাহল থাকে না, থাকে শুধু একটি নিঝুম নির্জনতা তখন আমি আবার ফিরে পাই আমাকে, তখন আমি আমার খুব কাছে আসি, আসতে পারি; আমাকে আমি তখন অন-রঙ্গ- ভাবে অনুভব করি, করতে পারি। কে সেই আমি?
কে যেন আমার খুব কাছে আসে! আমাকে কোমল স্নিগ্ধ একটি স্পর্শ দান করে! আমাকে আদর করে, সোহাগ করে এবং .. এবং আমাকে তিরস্কার করে। আমার খুব ভালো লাগে। মনে হয়, সে অন্য কেউ নয়, সে আমি! কে সেই আমি?
আশ্চর্য এক তন্ময়তা আমাকে তখন আচ্ছন্ন করে রাখে, আমার চারপাশের নির্জনতা তখন মুখরিত হয়ে ওঠে। পাখী নেই, তবু মনে হয় পাখী গান গায়! শিশু নেই, তবু যেন একটি নিষ্পাপ শিশুর কান্না শুনি! কে যেন ডাকে আমাকে? কে ডাকে? কার ডাক কানে আসে?
বৃক্ষ নেই, তবু যেন আছে সবুজ পাতা, শীতল ছায়া! ফুল নেই, তবু যেন আছে ফুলের বর্ণ ও সুবাস! ঝর্ণা নেই, তবু যেন আছে স্বচ্ছ পানি ও কুলকুল ধ্বনি! কিছু নেই তবু যেন সব আছে! সব- কিছুর মাঝে কে যেন ডাকে আমাকে? কার ডাক কানে আসে?
বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে বাইরের আমি তখন তাকিয়ে থাকি ভিতরের আমার দিকে। ব্যাকুল হয়ে দেহের আমি তখন চিনতে চেষ্টা করি আত্মাকে আমাকে। তখন বুঝতে পারি, বাইরের আমি কেউ নই, ভিতরের আমিই আসল আমি! দেহের আমি কেউ নই, আত্মার আমিই আসল আমি!
বাইরের আমি শুধু একটি মরীচিকা; জীবনের কোলাহল ও কর্মমুখরতা সব মিথ্যা। পরম সত্য হলো দেহের ভিতরে আমার আত্মার আমি।
আশ্চর্য, সেই আমাকে ভুলে থাকি আমি! জীবনের স্বচ্ছ শীতল সরোবর হাতছানি দেয় আমাকে, আর আমি ছুটে যাই জীবনের মরীচিকার দিকে!