শিশু-কিশোর ও নবীনদের পত্রিকা

মাসিক আল-কলম-পুষ্প

রমযান ১৪৩০ হিঃ (১৩) | কিশোর পাতা

(ধারাবাহিক)

আমার ভ্রমণকাহিনী

লিখেছেনঃ মুহম্মদ বিন আবু তাহের

নানা-নানু আমাদের পেয়ে খুব খুশী হলেন। যদি জানতে চাও, বেশী খুশী কে হয়েছেন? তাহলে বলবো, নানু। যদি বলো, আরো বেশী খুশী কে হয়েছেন? বলবো, নানা। আবার যদি জানতে চাও, বলবো, নানু, আবার, বলবো, নানু। যদি জানতে চাও, এই ‘নানু- নানা’ কতক্ষণ চলবে? বলবো, যতক্ষণ তোমার জানতে চাওয়া চলতে থকবে। তাই আর জানতে চেয়ো না। তার চেয়ে শোনো আমার ভ্রমণকাহিনী। না, না, এখন শোনাবো আমার ‘ভোজন-কাহিনী’! মনে হলো, আমরা যেন বেড়াতে গিয়েছি পরীর দেশে। নানু যেন পরীর দেশের রাণী। গল্পে পড়েছিলাম; কবে? কেন, যখন আমি ছোট ছিলাম! এখন? কেন, এখন তো আমি বড়! দশ এবং বিশের ঠিক মাঝখানে আমার বয়স। দশের দিকে তাকালে বলতে পারো, আমি এখনো ছোট, কিন্তু বিশের দিকে তাকালে, পারবে আমাকে বড় না বলে! তো কী পড়েছিলাম পরীর দেশের গল্পে? ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা পরীর দেশে বেড়াতে গিয়েছে মেঘের পিঠে সওয়ার হয়ে। অনেক দূরের পথ তো, তাই সবার খুব ক্ষুধা পেয়ে গেলো। ছেলেরা মেয়েদের বললো, তোমাদের ক্ষুধা পেয়েছে বেশী, তোমরা যা দুর্বল! মেয়েরা প্রতিবাদ করলো, ইস! তোমাদের ক্ষুধা পেয়েছে বেশী, তোমারা যা পেটুক! আমরা তো সারা জীবন না খেয়েই থাকি! পরীদের রাণী হেসে বললেন, থাক, আর তর্ক করতে হবে না। তোমাদের কারোই ক্ষুধা পায়নি। তা এবার চোখ দু'টো বন্ধ করো তো! সাবই চোখ বন্ধ করলো; ছেলেরাও, মেয়েরাও। চোখ বন্ধ তো বন্ধই! এর মধ্যে ওদের নাকে গেলো সুস্বাদু খাবারের অপূর্ব ঘ্রাণ। রাণী বললেন, এবার চোখ খোলো। চোখ খুলে তো অবাক! ছেলেরাও অবাক, মেয়েরাও অবাক! কত রকম খাবার! যত রকম গোশত তত রকম মাছ! যত রকম ঝাল তত রকম মিষ্টি! রাণী হেসে বললেন, নাও, যাদের বেশী ক্ষুধা পেয়েছে তারা খাবে আগে, যাদের ক্ষুধা কম তারা খাবে পরে। তখন ছেলেরা বললো, ‘আমাদের ক্ষুধা পেয়েছে বেশী। ছেলেদের তো সহ্য কম তাই ছেলেদের ক্ষুধা পায় বেশী।’ মেয়েরা বললো, ‘ইস বললেই হলো! ছেলেরা তো বসেই থাকে। রান্না ঘরে রান্না করে তো মেয়েরা! তাই সব দেশে মেয়েদেরই ক্ষুধা লাগে বেশী। ...’ যাক গে, অত লম্বা গল্প, শেষ করে কাজ নেই। নানুর দস্তর- খানে এত পদের এবং এত স্বাদের খাবার দেখে আমার মনে পড়ে গিয়েছিলো পরীর দেশের রাণীর কথা। একবার ইচ্ছে হলো জিজ্ঞাসা করি, নানু, তুমি কি পরীর দেশের রাণী, না পরীদের রাণী তোমার সই! চিংড়িমাছ ছিলো কত বড় জানো! হাতের বুড়ো আঙ্গুল আর ছোট আঙ্গুল দু’দিকে ফাঁক করো, তার চেয়ে লম্বা! একটা খেলেই পেট ভরে যায় চারভাগের একভাগ! বড় মামা খেলেন তিনটা, আমি খেলাম শুধু মাথাটা। মগজটার স্বাদ কী আর বলবো, তার চেয়ে শোনো একটা গল্প বলি। চিংড়িমাছের মাথা, আর মগজ খেতে গিয়েই গল্পটা মনে পড়লো। রাজকুমারী আর রাক্ষসের গল্প। রাক্ষস রাজকুমারীকে বন্দী করে রেখেছে। রাজকুমারী প্রতিদিন রাক্ষসের জন্য রান্না করে। না করে উপায় নেই। যেদিন রাজকুমারী খাবার রান্না করবে না, রাক্ষস সেদিন রাজকুমারীকেই আস্ত চিবিয়ে খাবে। রাক্ষসের খাবার রান্না করা কী সোজা কথা! রাজকুমারীর তো জান যায়! একদিন হলো কী! রাক্ষসের ইচ্ছে হলো, চিংড়িমাছ খাবে। যেই না ইচ্ছে হলো, অমনি সাগর থেকে বড় বড় চিংড়ি তুলে আনলো। তখন রাজকুমারীর মাথায় এলো এক বুদ্ধি! চিংড়ির মাথা থেকে মগজটা বের করে নিজে খেয়ে ফেললো, আর সেখানে মরিচবাটা রেখে দিলো। মগজ ভেবে মরিচবাটা খেয়ে রাক্ষসের তো মরে মরে অবস্থা! এই না সুযোগে রাজকুমারী রাক্ষসের জাদুর আঙটিটা দখল করে নিলো এবং রাক্ষসের হাত থেকে উদ্ধার পেলো। তো চিংড়ির মাথা ও মগজ খেতে খেতে, রাক্ষসের মরিচবাটা খেয়ে কী মজার দৃশ্যটা হয়েছিলো তা মনে পড়ে গেলো, আর তোমাদেরও শুনিয়ে দিলাম। যদি তোমরা তখন থাকতে, মরিচবাটা নয়, আসল মগজেরই ভাগ দিতাম। যাক, খেয়ে দেয়ে এবং দেয়ে খেয়ে আছর পর্যন্ত বিশ্রাম করলাম। তারপর বের হলাম, ফয়েজ লেক দেখতে। নানার বাসা থেকে ফয়েজ লেক আধা ঘণ্টার পথ। অল্পক্ষণের মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম। চট্টগ্রামের সোহেল মামা আমাদের জন্য টিকেট কাটলেন। সুন্দর, সুসজ্জিত তোরণের সামনে টিকেট দেখিয়ে আমরা ভিতরে প্রবেশ করলাম। সুন্দর করে ছাঁটা বিভিন্ন আকারের গাছগুলো দেখতে খুব সুন্দর। দেখার সৌন্দর্য তো ঠিক আছে, কিন্তু গাছগুলোর কত কষ্ট হয়! ফয়েজ লেকের পুরো এলাকায় আনন্দের অনেক রকম ব্যবস্থা। লেকটা ঘিরে গড়ে উঠেছে বিশাল বিনোদন-পার্ক। আমরা সোজা চলে গেলাম মূল লেকের কাছে। বিভিন্ন বয়সের বহু মানুষ ছোট ছোট নৌকায় করে লেকের পানিতে ঘুরছে। আমরাও বোট ভাড়া করলাম। বড় মামা, আম্মু ও নানুরা উঠলেন একটায়; আমি, আর সোহেল মামা উঠলাম পায়ে চালানো ছোট একটি বোটে। সাইকেলের মত পা দিয়ে চালাতে হয়। খুব মজা লাগছিলো চালাতে। খুব আনন্দের সাথে আমরা ফয়েজ লেকের পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে এবং বাঁকে বাঁকে ঘুরে বেড়ালাম। অপূর্ব সুন্দর ও মনোরম সব দৃশ্য! এখানে সেখানে পানির উপর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে ঘন সবুজে ঢাকা সব পাহাড়। পড়ন্ত বিকেলে লেকের পাহাড়ে, পানিতে সূর্যের কমলা আলো পড়ে আশ্চর্য সুন্দর ও মায়াবী পরিবেশ তৈরী হয়েছে। দূরে পাহাড়ের উপর ছবির চেয়ে সুন্দর ছোট ছোট কটেজ। ‘প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাঝে হারিয়ে যাওয়া’, এরকম একটা কথা আছে। ফয়েজ লেকের সেই মনোরম পরিবেশে আমাদের মনের যে অবস্থা হয়েছিলো সেটাকেই মনে হয় বলে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া। এবার ফেরার পালা, আর তখনই ঘটলো বিপদ। আসলে মানুষের জীবনে কখন কী ঘটবে, মানুষ একমুহূর্ত আগেও তা বলতে পারে না। তারপরো আমরা কথাটা মনে রাখি না। মনে রাখতে পারলে আমাদের মধ্যে আল্লাহর উপর ভরসা রাখার এবং বিসমিল্লাহ বলে কাজ করার অভ্যাস হতো। ঘুরতে ঘুরতে কখন যে একটা পাহাড়ের একেবারে কাছে এসে পড়েছি, খেয়াল ছিলো না; আমারও না, সোহেল মামারও না। তখন পাহাড়ের কিনারে পানির নীচে ডুবন্ত লতাপাতায় আমাদের বোটের চাকা এমন পেঁচিয়ে গেলো যে, যতই চেষ্টা করি, বোট আর চলে না, লতায় পাতায় আরো পেঁচিয়ে যায়। এদিকে সূর্য আড়ালে চলে গেছে এবং দিনের আলো ফুরিয়ে আসছে। আশেপাশের কয়েকটি নৌকার লোকেরা চেষ্টা করলো। তারাও ব্যর্থ হলো এবং বোটের লোকজনকে খবর দেবে বলে চলে গেলো। কিন্তু কোথায় লোকজন! তাদের বদলে এসে হাজির হলো কয়েকটা বাঁদর। আমাদের দুর্দশা দেখে ওরা যেন বেজায় খুশি! হবেই তো বাঁদর যে! কিছুক্ষণ ভেংচি কেটে ওরা গায়েব হয়ে গেলো। একসময় অন্ধকার আরো ঘনিয়ে এলো। তখন মনে হলো, দুষ্ট বানরগুলো ছিলো, ভালোই তো ছিলো! সোহেল মামা ভয়ে ভয়ে আমাকে অভয় দেন, তাতে আমার ভয় আরো বেড়ে যায়! আম্মু একটু পর পর ফোন করছেন। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বলি, আম্মু, আমি ভয় পাচ্ছি না, তুমি চিন্তা করো না। এখন তো লিখছি হাসতে হাসতে, তোমরাও পড়ছো কাশতে কাশতে! তখন কী যে ভয় পেয়েছিলাম। কখনো এমন অবস্থায় পড়িনি তো! ভয়ে ভয়ে কাঁদো কাঁদো অবস্থায় অনেক সময় পার হলো। তারপর বোটের লোকদের দয়া হলো। তারা এসে আমাদের উদ্ধার করলো। আম্মু ও নানুরা আমাদের পেয়ে চিন্তামুক্ত হলেন। এভাবে মোটামুটি ভয় ও আনন্দের মাঝেই শেষ হলো আমাদের ফয়েজ লেক ভ্রমণ। বাসায় ফিরে এসে এতই ক্লান্ত ছিলাম যে, এশার নামায পড়েই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম। ভোররাতে ঘুম থেকে উঠে দেখি, ক্লান্তির কোন চি?হ্ন নেই। আমরা সবাই সতেজ। নামায পড়েই রওয়ানা হলাম পতেঙ্গা সৈকতের উদ্দেশ্যে। পৌঁছেও গেলাম অল্প সময়ের মধে। গাড়ী থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে সৈকতে চলে এলাম। আমাদের সামনে তখন সীমাহীন সমুদ্র। মনের মধ্যে অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়। সমুদ্রের মত বিশাল হতে ইচ্ছে করে। তখনো সূর্য উঠেনি, তাই মানুষের আনাগোনা খুব কম। জোয়ারের সমুদ্রে তেমন গর্জন নেই। প্রায় নিঃশব্দ পরিবেশ। চারদিকে একটা তন্ময় ভাব। খুব ভালো লাগলো। আমরা সবাই সৈকতের কাছে একটা পাথরের উপর চাদর বিছিয়ে বসলাম। কয়েক বছর আগে আব্বুর সঙ্গে এখানে এসেছিলাম। তখনকার সবকিছু অবশ্য মনে নেই। তবে বোঝা যায়, অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সবকিছুতে অনেক উন্নতি হয়েছে। এত গাছগাছালি এবং সবুজের সমারোহ তখন ছিলো না। বসে থাকতে আমার মোটেই ভালো লাগছিলো না। কিন্তু এখন জোয়ার চলছে, তাই পানিতে নামা নিরাপদ নয়। তবু ভয়ে ভয়ে পানির একেবারে কাছে গিয়ে আবার ফিরে এলাম। নামতে সাহস হলো না। একজন দু’জন অবশ্য জোয়ারের পানিতেই নেমে সাঁতার কাটছে। এরা কি সাহসী, না বোকা! যাই হোক, আমরা ভাটার অপেক্ষা করলাম এবং একসময় ভাটা শুরু হলো। সমুদ্রের পানি যে এত দ্রুত কমতে পারে, না দেখলে তা বিশ্বাস হবে না। আবার সামুদ্রিক ঝড়ের সময় যখন জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয় তখন পনি এত দ্রুত ফুলে ওঠে যে, সেটাও না দেখলে বিশ্বাস করার উপায় নেই। জোয়ার-ভাটা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস এবং সাগরের নিম্ন চাপ, লঘুচাপ এসবই আল্লাহর কুদরত। সাগর-মহাসাগর আল্লাহর কুদরতের খুবই সামান্য প্রকাশ। কিছু দিন আগে যে সুনামি হলো, শুনেছি তখন বঙ্গোপসাগরের পানি নাকি ফুলে উঠেছিলো। এমনকি আমাদের দেশের পুকুর-জলাশয়ের পানিতেও আলোড়ন হয়েছিলো! সুনামিটা কী? কেন, কীভাবে হয় তা অবশ্য আমার জানা নেই। ভাটার টানে দেখতে দেখতে সাগরের পানি অনেক দূরে চলে গেলো এবং বহু দূর পর্যন্ত বালুর সৈকত জেগে উঠলো। ভেজা নরম বালুতে হাটতে কী যে ভালো লাগে! বালুর উপর নিজের ছোট ছোট, না, না, বড় বড় পায়ের ছাপ দেখতে নিজের কাছেই অদ্ভুত লাগে। এখন এখানে আমার পায়ের ছাপ, অথচ একটু আগে এখানেই পানি ছিলো আমার মাথার উপর; ভাবতেই তো কেমন গা ছমছম করে। ভোরের রাঙ্গা সূর্যের সোনালী আলোতে সৈকতের ভেজা বালু চিক চিক করছে। দেখতে খুব ভালো লাগছিলো। আমার সাহস নেই ভাবছো তো! এবার শোনো। পতেঙ্গা সৈকত থেকে আমরা স্পীডবোটে উঠেছিলাম। স্পীডবোট মানেই তো স্পীডবোট! শা- করে যায়, শা- করে আসে! কিছু দূর গিয়ে আবার তীরে ফিরে এলাম। খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করলাম। সাগরের ঢেউয়ে আছাড় খেয়ে একবার পড়ে, যেন ডুবে গেলো, আবার সামনের অংশটা পানি থেকে এত উপরে উঠে যায়, যেন উলটে গেলো! সে বড় অদ্ভুত অনুভূতি! ভয়ের কথা কি জানো, আমি না সাঁতার জানি না! সাঁতার না জেনে সাগরে নামা, আবার স্পীডবোটে ওঠা, তওবা, তওবা! সেদিন আমাদের মাদরাসার পাশে যে ছোট্ট বুড়িগঙ্গা নদী, তাতে নৌকায় করে বেড়াতে গিয়েছিলাম বলেই আব্বুর কী কড়া ধমক, আর এ খবর শুনলে তো উপায় নেই! আসলে সাঁতারটা শিখে ফেলা উচিত। আব্বু তো সবসময় বলেন, কেন সাঁতার শেখাটা হচ্ছে না! এবার দেখো, ঠিক শিখে ফেলবো। ভাটা যখন পুরোপুরি শুরু হলো তখন সেকি বড় বড় ঢেউ! আর কী ভীষণ গর্জন! ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে। অনেক দূরে দেখলাম কয়েকটা সাম্পান ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে তীরের দিকে আসছে। দেখে আশ্চর্য লাগলো। এই লোকগুলোর বুকে কি ভয়-ডর নেই! আসলে এরা তো সাগরপারের মানুষ। মেঘনাপারের ছেলে যেমন মেঘনার ঢেউকে ভয় পায় না। ঐ যে সুন্দর কবিতাটা, ‘আমি মেঘনা পারের ছেলে!’ এরা হয়ত বলবে, ‘আমি সাগরপারের মাঝি!’ একটু বেলা হতেই মানুষের ভিড় বাড়তে লাগলো এবং একসময় লোকে লোকারণ্য হয়ে গেলো। এত লোকের মধ্যে পানিতে দাপাদাপি করতে খারাপ লাগলো। তাই উঠে এলাম। সৈকতে বহু দোকান আছে, সেখানে ঝিনুকের মালাসহ অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস পাওয়া যায়। কিছু কিছু পছন্দের জিনিস কেনা হলো। আমার খুব ইচ্ছে ছিলো বড় ঝিনুকে আজকের তারিখ দিয়ে আমার নামটা লিখিয়ে নেই, যেমন আগেরবার আব্বুর সঙ্গে লিখিয়েছিলাম। সেটাই একমাত্র স্মৃতি আমার জীবনের প্রথম পতেঙ্গাভ্রমণের। এবার তা হলো না। চট্টগ্রাম থেকে দু’ঘণ্টা বাসের পথে আমরা ফেনী পৌঁছলাম। আমার দু’খালা সেখানে থাকেন। একদিন সেখানে বেড়িয়ে এবং কোন কিছু না দেখে বাসে করে সোজা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। সারাটা পথে দেখলাম খুব অল্প, ঘুমালাম অনেক বেশী। আর পথে যারা ঘুমায় তাদের লেখার কিছু থাকে না, আমারও লেখার কিছু নেই। ঘুমিয়ে কী একটা স্বপ্ন মনে হয় দেখেছিলাম, মনে নেই। থাকলে সেটা লেখা যেতো। একটা কথা, রাস্তার দু’পাশে সবুজ গাছের সারি দেখতে খুব ভালো লেগেছে। গাছগুলো এখন এত বড় হয়েছে যে, পুরো রাস্তায় ছায়া থাকে। ঢাকা যতই কাছে আসতে লাগলো, প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য, সবুজ গাছের ছায়া এবং বিশুদ্ধ আবহাওয়া ততই যেন ‘ঢাকা’ পড়ে যেতে লাগলো। অবশেষে আবার ফিরে এলাম আমার সেই চেনা পরিবেশে, যেখানে ধোঁয়ায়, ধূলায় শ্বাস নেয়াই কষ্টকর। পিছনে পড়ে রইলো রাঙ্গামাটির কিছু রাঙ্গা স্মৃতি, যা কোনদিন আমি ভুলবো না।