লিখেছেনঃ
বাশার বিন আব্দুর-রহমান, জামিয়া সিদ্দীকিয়া, মুসলিম নগর, হেমায়েতপুর, সাভার, ঢাকা
গভীর রাতে পাঠ ও অধ্যয়ন শেষ করে আমরা দু’জন পাশাপশি বিছানায় গেলাম ঘুমোতে; আমি ও আলমগীর। অল্পক্ষণেই ঘুম এসে গেলো। তখনো কি কল্পনা করতে পেরেছিলাম, আজকের রাতের গহ্বরে কী বেদনাদায়ক ঘটনা লুকিয়ে আছে আমাদের জন্য!
ঘুমের মাঝে সুন্দর এক স্বপ্ন দেখলাম। আমাদের ডানা আছে। আমি ও আলমগীর ডানা মেলে উড়ে চলেছি মেঘের রাজ্যে। তারপর গিয়ে নামলাম এক আঙুর বাগানে। এমন সুন্দর বাগান জীবনে কখনো দেখিনি। আমি ফিরে আসবো, আলমগীর যেন আসতে চাচেছ না। আমি ডানা মেলে উড়াল দিলাম, আর তখনই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো, হুজুরের ঘুম থেকে জাগানোর আওয়াযে। চোখ মেলে দেখি আলমগীর তার বিছানায়। মৃদু হেসে উঠলাম। ভাবলাম অযু সেরে এসে ওকে জাগাবো এবং স্বপ্নের কথা বলবো, আর জিজ্ঞাসা করবো, বাগান থেকে ফিরে আসতে চাচ্ছিলে না কেন?! বেশ মজা হবে!
এমন সময় .. হুযূরের কী মনে হলো তিনি কাছে গিয়ে দু’তিন বার নাম ধরে আলমগীরকে ডাকলেন, কিন্তু তার ঘুম ভাঙ্গলো না। এতো গভীর ঘুম তো তার নয়! এক দু’ ডাকেই তো সে উঠে যায়! ভিতরটা আমার কেমন যেন ধুক ধুক করে উঠলো। হুযূর গায়ে হাত দিয়ে ডাকতে গিয়েই বেদনার্ত কণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন’। আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম, জানি না কতক্ষণ! কখন আমার চোখ থেকে দরদর করে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে, তাও জানি না! আমার একেবারে পাশের বিছানা থেকে আমার অতি প্রিয় বন্ধু আখেরাতের সফরে রওয়ানা হয়ে গলো, আমি বুঝতেও পারিনি! যখন সময় হয়, এভাবেই বুঝি মানুষকে রওয়ানা হতে একেবারে নীরবে নিভৃতে!
আমার আজও বুঝে আসে না, স্বপ্নটা আসলে কি স্বপ্ন ছিলো, না রূহের জগতের বাস্তব কোন ঘটনা! আমরা দু’জন কি আলমে আখেরাতের দিকে রওয়ানা দিয়েছিলাম? আমার সময় হয়নি বলে, আমার রূহকে ফেরত পাঠানো হয়েছে! আর সময় হয়ে গিয়েছিলো বলে, আলমগীরের রূহ ফিরে আসেনি! কী এর রহস্য! আঙুরের বাগানটি কি ছিলো জান্নাতের উদ্যান! আল্লাহই উত্তম জানেন।
আর কখনো মৃত্যু আমার এত কাছে আসেনি। মৃত্যু আমাদের চারপাশ দিয়ে ঘুরে যায়, অথচ আমরা গাফেল। আমাদের গাফলত দেখে মালাকুল মাউত নাকি অবাক হন! হে আল্লাহ মৃত্যুকে স্মরণ করার এবং মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হওয়ার তাওফীক আমাদের দান করুন, আমীন।