ঈশ্বর মানুষের রূপ ধারণ করতে পারেন, কিন্তু তিনি তা করবেন না, কারণ তাহলে তিনি আর ঈশ্বর থাকবেন না। কেননা ঈশ্বর এবং মানুষের গুণাবলী অনেক ক্ষেত্রে বিপরীত এবং সে জন্যই ঈশ্বরের ‘মানুষত্ব’ চিন্তা করাটাই অযৌক্তিক, অন্যায়। দেখুন, ঈশ্বর হলেন চিরঞ্জীব, আর মানুষ হলো মরণশীল। একারণেই আপনি পাবেন না একজন ঈশ্বর-মানব বা মানব-ঈশ্বর। অর্থাৎ একজন অমরণশীল এবং একজন মরণশীল একই সময়ে এবং একই সত্তায়, এটা অর্থহীন। তদ্রূপ ঈশ্বরের কোন শুরু নেই, কিন্তু মানুষের শুরু আছে, শেষও আছে। এমন কোন সত্তা আপনি পাবেন না যার শুরু আছে, আবার শুরু নেই, তদ্রূপ যার শেষ আছে, আবার শেষ নেই। এসব চিন্তাভাবনা ও প্রশ্নোত্তর একেবারেই অর্থহীন।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের খাওয়ার প্রয়োজন হয় না, কিন্তু মানুষের জীবন ধারণের জন্য পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন হয়।
‘এবং তিনিই সকলকে আহার দান করেন, কিন্তু কেউ তাকে আহার দেয় না।'
( পবিত্র কোরআন, ৬:১৪)
‘তিনি চিরজাগ্রত, স্বয়ম্ভর, শাশ্বত। না তন্দ্রা বা নিদ্রা তাকে স্পর্শ করে। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু বিদ্যমান সবই তাঁর।
( পবিত্র কোরআন, (২:২৫৫))
মানুষের পূজা নিষ্ফ
ঈশ্বর-এর মানুষ হওয়ার ধারণাটি যদি অগ্রহণযোগ্য হয়, আমাদের তাহলে এটাও অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, অন্য একজন মানুষের পূজা করার কোন অর্থ নেই। ঈশ্বর যদি মানবরূপী হন এবং মানবের গুণাবলী ধারণ করেন তাহলে তিনি আর ঈশ্বর থাকেন না। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন প্রতিভাবান প্রফেসর কোন দুর্ঘটনায় অপূরণীয় স্মৃতিভ্রষ্টতার শিকার হন তাহলে ছাত্রদের জন্য তার কাছ থেকে এ বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ অব্যাহত রাখা বোকামি হবে।
উপরুন্তু যদি ঈশ্বর মানবরূপ ধারণ করেন তাহলে সেই মানুষ পরবর্তীতে ঈশ্বর হতে পারে না। কেননা মানুষ তার সংজ্ঞায় ঈশ্বর হওয়ার ক্ষমতা ধারণ করে না। তাই মানবরূপী ঈশ্বরের পূজা একটি ভ্রান্ত যুক্তি এবং এর সকল রূপ বর্জনীয়। একারণেই পবিত্র কোরআন ঈশ্বর-এ মানুষের দেহ বা ব্যক্তিত্ব আরোপের সকল রূপ-এর বিপক্ষে কথা বলে।
‘তাঁর তুল্য কোন কিছু নেই।
(পবিত্র কোরআন, ৪২:১১)
ঈশ্বর পাপ করতে পারেন না
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর-এর গুণ ও বৈশিষ্ট্যগুলো পাপ-এর প্রতিবন্ধক। কারণ তিনি ন্যায়, সুবিচার, ক্ষমা ও সত্যের উৎসমূল। ঈশ্বর সম্পর্কে কখনো ধারণা করা যায় না যে, তিনি পাপ কাজ করছেন। তাই আমরা কল্পনা করতে পারি না যে, তিনি মিথ্যা বলছেন, অবিচার করছেন, ভুল করছেন, ভুলে যাচ্ছেন এবং তাঁর এমন অন্যান্য মানবীয় ব্যর্থতা রয়েছে। একই ভাবে ঈশ্বর চাইলে অবিচার করতে পারেন, কিন্তু তিনি কখনো অবিচার করবেন না। কারণ অন্যায়কারী হওয়া পাপকাজ।
পবিত্র কোরআন বলে-‘আল্লাহ কখনো অণু পরিমান যুলুম করেন না।(পবিত্র কোরআন, ৪:৪০)
ঈশ্বর ভুলেন না, ভুলও করেন না
ঈশ্বর কোন কিছু ভোলবেন না, কেননা ভুলে যাওয়া অ-ঈশ্বরসুলভ গুণ যা মানবীয় সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতার প্রতিফলন। একই ভাবে ঈশ্বর কোন ভুল করবেন না, কারণ ভুল করা অ-ঈশ্বরসুলভ কাজ।
‘আমার প্রভু কখনোই ভুল করেন না, না ভুলে যান।(পবিত্র কোরআন, ২০:৫২)