পুষ্প, তুমি আমার স্বপ্ন! তুমি আমার হৃদয়ের স্পন্দন! তুমি আমার আত্মার আকুতি! তুমি আমার দিলের খোশবু! কেমন আছো তুমি পুষ্প! করুণাময়ের করুণায় তুমি তো ভালোই থাকবে, বিশ্বাস করি! তুমি যে আছো দরদী মালির সান্নিধ্যে, তাঁর মমতার ছায়ায়, তাঁর যত্নের ছোঁয়ায়!
প্রিয় পুষ্প! তুমি কি চিনতে পেরেছো আমাকে! জানি, তুমি আমাকে ভুলতে পারো না; আমি যে তোমাকে ভুলিনি! কতদিন তোমাকে দেখি না! তোমার তাজা ফুলের সুবাস পাই না! তাতে কি, আমি তো তোমার বাসি ফুলের মধ্যেও তাজা ফুলের সুবাস অনুভব করি!
প্রিয় পুষ্প! দেশে দেশে তোমার যত মুগ্ধ পাঠক, হয়ত তারা বলে, পুষ্প শুধু আমার! আর কারো নয়।আমি কী বলি জানো, বলি, পুষ্পের সবকিছু তোমরা নিয়ে যাও, শুধু পুষ্পকে ভালোবাসার অধিকারটুকুু আমার জন্য রেখে যাও।
প্রিয় পুষ্প! জানি না, তুমি কোথায় আছো, কেমন আছো! এতদিন হলো, তবু কেন তুমি আসছো না! জানি না, কী কষ্ট তোমার! যদি ছেলে হতাম, কবে ছুতে আসতাম তোমার কাছে! একটি মেয়ে অনেক কিছু চায়, অনেক কিছু পারে না! একটি ছেলে, হয়ত কিছু চায় না, তবু কিছু না কিছু পারে! তবে তোমার ভালোবাসাই আমার জন্য যথেষ্ট, প্রিয় পুষ্প!
আজ আমি আমার মনের সব কথা তোমার কাছে লিখতে চাই। তোমার কষ্ট হলেও দয়া করে পড়ো তুমি আমার লেখা! সবার লেখা আসুক তোমার কাগজের পাপড়িতে, আমার লেখা থাক শুধু তোমার হৃদয়ের পাপড়িতে। তাতেই আমি ধন্য, তাতেই আমি কৃতার্থ।
প্রিয় পুষ্প! কে তোমাকে কেমন করে চিনেছে, কেমন করে গ্রহণ করেছে, জানি না। আমি তোমাকে চিনেছি এক মহান দরদী মালীর হৃদয়ে পবিত্র স্পন্দনরূপে!তোমাকে আমি চিনেছি তাঁর বুকের ভাঙ্গা পাঁজরের স্বপ্নরূপে! তোমাকে আমি চিনেছি তাঁর হৃদয় থেকে ঝরা ফোঁটা ফোঁটা রক্ত এবং চোখ থেকে ঝরা ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু-রূপে।
আর তোমাকে আমি বরণ করেছি সুখের দিনে আনন্দ এবং দুঃখের দিনে সান্ত্বনারূপে। ভেবে অবাক হই, মুগ্ধ হই, কী অপূর্ব মমতার সঙ্গে তুমি দুঃখী মানুষের সব দুঃখ মুছে দিয়ে তাকে ছবরের শিক্ষা দাও! আবার সুখী মানুষকে শোকরের প্রতি উদ্বুদ্ধ করো! সত্যের পথে, কল্যাণের পথে এবং কোমলতা ও স্নিগ্ধতার পথে তোমার এ ফুলেল অভিযাত্রাকে আমার, একটি ক্ষুদ্র মেয়ের আরো ক্ষুদ্র হৃদয়ের অভিনন্দন!
প্রিয় পুষ্প! দরদী মালীর বাগানে তুমি যদি ফুল হয়ে না ফুটতে, তুমি যদি এভাবে আলো ও সুবাস না ছড়াতে, তোমার শব্দ দিয়ে, বর্ণ দিয়ে, ছায়া দিয়ে, মায়া দিয়ে, তাহলে ঘরে ঘরে বঞ্চিত এবং দুঃখে কাতর হৃদয়গুলো এমন শান্তি ও সান্ত্বনা কোথায় পেতো! তোমার যে আলোকিত শব্দগুলো আমার দুঃখের জীবনে সান্ত্বনার শীতল পরশ বুলিয়েছে, বলি তোমাকে পুষ্প! শোনো-
‘জীবনে দুঃখ আছে বলেই আছে সুখ; অন্ধকার আছে বলেই আছে আলো; ব্যথা ও বেদনা আছে বলেই আছে আনন্দের তৃপ্তি!’ ‘আমরা বুঝি বা না বুঝি, চিরন্তন সত্য এই যে, গায়বের আড়াল থেকে যা কিছু মানুষ পায় ব্যথার মাধ্যমেই পায়।’ ‘তোমাকে যারা ব্যথা দেয় তাদের প্রতি তুমি হও ক্ষমাশীল, তোমার বুকে যারা আঘাত হানে তারা যেন পায় তোমার বুকের আলিঙ্গন। মানুষ তোমাকে ব্যথা দেবে, আকাশ থেকে তুমি পাবে ব্যথার দান!’
তোমার পাপড়ি থেকে হে পুষ্প! কিছু আলোর শব্দ এবং শব্দের আলো যদি আমার জীবনে আলো না ছড়াতো তাহলে জানি না, এত ব্যথা বুকে নিয়ে কীভাবে এমন শুভকামনার শিশির সবার জীবনে ঝরাতে পারতাম!
তোমারই কোমলস্পর্শে হে পুষ্প! আমার হৃদয়ে মানুষের প্রতি যা কিছু কোমলতা ও স্নিগ্ধতা! তোমার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ হে পুষ্প! তোমার কাছেই তো পেয়েছি হে প্রিয় পুষ্প! অতীত হতে থাকা জীবনকে কাগজের পাতায় যত্নের সঙ্গে মমতার সঙ্গে লিখে রাখার আলোকনির্দেশনা! তুমি যে লিখেছো-
‘প্রতিদিন তুমি লিখতে থাকো তোমার জীবনের সুঃখ-দুঃখের কথাগুলো, তোমার হৃদয়ের ভাব ও ভাবনাগুলো, দেখবে; ধীরে ধীরে নীরব এক বিপ্লব এসেছে তোমার জীবনে, তোমার চিন্তা-চেতনায় এবং তোমার কলমের গতিময়তায়, আলোময়তায়!’ তোমার কথাগুলো হে প্রিয় পুষ্প, অন্তত আমার জীবনে তো আমি উজ্জ্বল সত্যরূপেই পেয়েছি! তোমার কথা আর কত লিখবো, প্রিয় পুষ্প! তোমার সবকিছুই তো আলো, তোমার সবকিছুই তো ভালো!
তোমার শুধু আরেকটি আলোকিত আহ্বান এখানে তুলে ধরি, যা আমাকে অসীম আলোর অসীম দিগন্তের সন্ধান দিয়েছে, আর আমি আলোর সাগরে জীবনের ভেলা ভাসিয়েছি। মনে পড়ে, প্রিয় পুষ্প, তুমি লিখেছিলে!-
‘হে শিল্পী, তুলে রাখো তোমার রঙতুলি! হে বুলবুলি, ভুলে যাও গানের কলি! সবাই সবকিছু ভুলে যাও এবং হৃদয়ের বদ্ধ দুয়ার খুলে দাও! তুমি নির্বাক হও, হৃদয়কে গ্রহণ করতে দাও প্রকৃতির পাঠশালা থেকে!’
প্রিয় পুষ্প! কতজন কতকিছু পড়ে কত কিছু লেখে, কিন্তু তুমি যেভাবে দেখিয়েছো পড়ার এবং লেখার আলোকিত পথ...! তোমার আহ্বানে অনুপ্রাণিত হয়েই তো আমি নতুন করে পড়তে এবং নতুন করে লিখতে শিখেছি!
আমরা সবাই জানি, অহঙ্কার মানুষকে ধ্বংস করে, বিনয় মানুষকে...!এমন উপদেশ সবার কাছেই পেয়েছি, কিন্তু তোমার মত এমন মায়ার সঙ্গে, মমতার সঙ্গে এবং প্রজ্ঞার সঙ্গে...! তুমি লিখেছো-
‘আর যাই করো, কখনো জ্ঞানের বড়াই করো না! মূর্খরাই পারে জ্ঞানের বড়াই করতে!... তুমি যদি বুঝতে পারো, তুমি কত কম জানো, তাহলেই তুমি জ্ঞানী, তুমি বিনয়ী।’ তুমি আরো লিখেছো, ‘জ্ঞান অর্থ সাগর থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল তুলে আনা! জ্ঞান অর্থ বিশাল মরুভূমি থেকে একটা দু’টো বালুর কণা তুলে আনা! এবার প্রমাণ করো, তুমি জ্ঞানী না মূর্খ...’
প্রিয় পুষ্প! তোমার কথা তো একজীবনেও লিখে শেষ করা যাবে না! তার চেয়ে চলো, তোমার মাধ্যমে জীবনকে সুন্দর করার যে বার্তা পেয়েছি তা দিয়েই শেষ করি আমার কথা-
‘কালো হরফের আড়ালেই আছে হে বন্ধু, আমার বুকের বেদনা এবং আমার হৃদয়ের যন্ত্রণা! কালির আঁচড়ে আমি শুধু কিছু শব্দ লিখি না, আগামী জীবনের মানচিত্র আঁকি! সেই অদৃশ্য মানচিত্রটি যদি উদ্ধার করতে পারো, জীবন তোমার সুন্দর হবে।’
হে পুষ্প! হে আমার ব্যথা ও বেদনার উপশম! এই পবিত্র মুহূর্তে গ্রহণ করো আমার হৃদয়ের অভিনন্দন! আমার রক্তের প্রতিটি ফোঁটা, আমার অশ্রুর প্রতিটি বিন্দু যেন মিশে থাকে তোমার পাপড়ির শিশির-কণাগুলোর সঙ্গে। হে পুষ্প! হে বন্ধু! আমার শেষ মিনতি, তোমার আলো, তোমার সুবাস যেন থাকে আমরা সঙ্গে করুণাময়ের করুণার চিহ্ন হয়ে।
০০ মাশাআল্লাহ্! এত সুন্দর করে লিখতে পারে, শৈশব থেকে ঘরের ভিতরে থাকা একটি মেয়ে, যার সামনে বিদ্যা ও বিদ্যালয়ের বাতায়ন কখনো খোলা হয়নি!
কামনা করি, পুষ্পকে যেভাবে তুমি বরণ করেছো, পুষ্প যেন সেভাবেই তোমাকে গ্রহণ করে। তোমার কথা মান্য করে, তোমার লেখা আমার হৃদয়ের পাপড়িতেই রেখে দিলাম, তবে পুষ্পের কাগজের পাপড়িকে একেবারে বঞ্চিত করবো কেন! পুষ্পের ছায়া ও ছোঁয়া যারা গ্রহণ করে, তারাও যেন পায় কিছু আলো, কিছু ভালো!
তোমার এই সুন্দর লেখাটির জন্য তুমি এবারের পুষ্পের অতিথি সম্পাদিকা! আশা করি, আলোর পথে তোমার কলমের অভিযাত্রা অব্যাহত থাকবে। আমার কামনা, ঘরে ঘরে আমার মেয়েরা যেন আমার ছেলেদের ছাড়িয়ে যায়, আর আমার ছেলেরা যেন মেয়েদের থেকে পিছিয়ে না থাকে!