একটি শিশুর জন্ম আমি দেখেছিলাম আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে। পঞ্চাশ বছর মানে অর্ধশতাব্দী! সময় তাহলে কম নয়!! কিন্তু মনে আছে সব স্পষ্ট! এখনো চোখে ভাসে সেই সব দৃশ্য! এখনো কানে বাজে সেই সব শব্দ! একটি কান্না এবং অনেকগুলো হাসির মিশ্র কোলাহল!!
শিশুটির প্রথম কান্না যখন শুনি, আশ্চর্য রকম উদ্বেলিত হয়েছিলাম! ভিতরে, আমার সর্বসত্তায় ভাবের অপূর্ব এক তরঙ্গদোলা জেগেছিলো। শিশুটির অবোধ কান্না, আমার মনে হয়েছিলো যিন্দেগীর আযান! পৃথিবীর আলোবাতাসে জান্নাত থেকে আসা নতুন অতিথি যেন আত্মার জগতের কোন বার্তা ঘোষণা করেছিলো সেদিন! হয়ত সে বলতে চেয়েছিলো তার চারপাশের আপনপর সবাইকে, আমাকে বাঁচতে দিয়ো শুভ্রতার সঙ্গে, পবিত্রতার সঙ্গে, আলো ও কল্যাণের সান্নিধ্যে। হয়ত বলতে চেয়েছিলো, সকল মলিনতা থেকে, সকল অশুভ ও অসুন্দর হতে আমাকে তোমরা রক্ষা করো। তোমাদের বাগানে আমাকে তোমরা ফুল হয়ে ফুটতে দিয়ো, কিছু সুবাস ছড়াতে দিয়ো। আমাকে তোমরা সব অন্ধকার থেকে দূরে রেখো; আমাকে তোমরা কিছু আলো গ্রহণ করতে দিয়ো!
পৃথিবীর আলোবাতাসে শিশুটি ধীরে ধীরে বড় হলো। শিশু থেকে কিশোর হলো এবং তারুণ্যের সীমানা পার হয়ে যৌবনে উপনীত হলো। তখনো তার শুভ্রতা ও পবিত্রতা অক্ষুণœ ছিলো, তখনো সে সকল মলিনতা থেকে মুক্ত ছিলো। তাকে দেখে আপন পর সবাই মন্তব্য করতো, এমন ছেলেই ভবিষ্যতে মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করে এবং দেশ ও সমাজের জন্য গৌরব বয়ে আনে। কিন্তু একদিন...! পঞ্চাশ বছর আগের সেই নিষ্পাপ শিশুটি জানি না আজ কোথায়?!